এক যুগ পর উন্নয়নের ছোঁয়া আন্তর্জাতিকমানের হচ্ছে আশুগঞ্জ নৌবন্দর

শ্রীঘ্রই শুরুয হচ্ছে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নৌ- বন্দর নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত শুরু হবে বন্দরের দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ।

দেশের উত্তর- পূর্বাঞ্চলের অন্যতম নৌ-বন্দর হচ্ছে আশুগঞ্জ নৌ- বন্দর। কিন্তু দীর্ঘ ১ যুগেও বন্দরে লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া।

বন্দরে থাকা দুটি জেটি দিয়েই চলছে অভ্যন্তরীণ পণ্য লোড- আনলোডের কার্যক্রম। এতে করে প্রায়ই নৌ-বন্দরে কার্গোজটের সৃষ্টি হয়। ফলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় ব্যবসিয়ীরা। এ অবস্থায় নৌ-বন্দরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, অচিরেই শুরু হবে আন্তর্জাতিক মানের নৌ- বন্দর নির্মাণ কাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১০ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অবস্থিত নৌ-বন্দরটিকে অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দর হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

কিন্তু ১ যুগ ধরে নৌ-বন্দরে কোন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়নি। বন্দরের দুটি জেটি দিয়েই কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য উঠা নামার কাজ করা হয়। এতে করে প্রায়ই নৌ- বন্দরে কার্গোজটের সৃষ্টি হয়। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহার করেই (আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে) ভারত গত ২০১১ সালে তাদের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য ভারী মালামাল পরিবহন করে। পরে কয়েক দফায় ভারত এই আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহার করে খাদ্যশস্যসহ ষ্ট্রীল জাতীয় পণ্য পরিবহন করে। গত ১২ বছরে অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বন্দরে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় বন্দর ব্যবহারকারীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্দরটিতে আন্তর্জাতিকমানের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান। আশুগঞ্জ নৌ- বন্দরের ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, বিআইডব্লিওটিএ যে ইজারা দিয়েছে তাতে কোন ঘাট নেই। তিনি বলেন, বন্দরে দুটি জেটি আছে এর মধ্যে একটি জেটি ভারতের মালামাল নেয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের কার্গো জাহাজ বন্দরে থাকার সময় ভারতের কোনো কার্গো জাহাজ বন্দরে আসলে আমাদেরকে দ্রুত ঘাট ছেড়ে দিতে হয়। তিনি বলেন, সিমেন্টের জন্য একটি নির্ধারিত ঘাট আছে। কিন্তু সারের জন্য কোনো ঘাট নেই। আমরা কোন রকম ভাবে পণ্য লোড- আনলোড করি। তিনি বলেন, বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাব। এতে করে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

নৌ-বন্দরের ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া বলেন, এই বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। বন্দর দিয়ে পণ্য লোড- আনলোড জটিলতা অনেকটাই কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত রাস্তার ফোর লেনের কাজ শেষ হলেই আমরা সহজে ভারতে মালামাল পাঠাতে পারব। এতে করে দুই দেশের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক আরো বাড়বে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, আশুগঞ্জ থেকে মহাসড়ক চারলেনে সম্প্রসারনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চারলেনের কাজ শেষ হলে আশুগঞ্জ নৌ- বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে করে আশুগঞ্জ উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থায় চলে যাবে। এতে করে ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে কর্মচঞ্চল্য ফিরে আসবে। ব্যবসা- বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ভারতের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বন্দরটি পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করছি খুব দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) ভৈরব- আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আশুগঞ্জ নদী বন্দরের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানে নৌ-বন্দর নির্মাণের জন্যে ইতিমধ্যেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত শুরু হবে বন্দরের দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ। আশুগঞ্জ নৌ- বন্দরটির অবকাঠামোগত নির্মান কাজ শেষ হলে মোংলা - পায়রা এবং চট্টগ্রাম নৌ- বন্দর থেকে আসা অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার বন্দরটি দিয়ে উঠানামা করবে। এতে করে এই বন্দরটি আঞ্চলিক ও উপ- আঞ্চলিক নৌ যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করি দ্রুত বন্দরের নির্মানকাজ শুরু হলে অল্প সময়ে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রায় ৩১.৫ একক জমির উপর প্রস্তাবিত আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ নৌ- বন্দরটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২শত ২৫ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৬ আশ্বিন ১৪২৯ ২৪ সফর ১৪৪৪

এক যুগ পর উন্নয়নের ছোঁয়া আন্তর্জাতিকমানের হচ্ছে আশুগঞ্জ নৌবন্দর

জেলা বার্তা পরিবেশক, ব্রাক্ষণবাড়িয়া

image

ব্রাক্ষণবাড়িয়া : আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে কার্গো জাহাজ থেকে খালাস করা হচ্ছে সার -সংবাদ

শ্রীঘ্রই শুরুয হচ্ছে আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নৌ- বন্দর নির্মাণ কাজ। ইতিমধ্যেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত শুরু হবে বন্দরের দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ।

দেশের উত্তর- পূর্বাঞ্চলের অন্যতম নৌ-বন্দর হচ্ছে আশুগঞ্জ নৌ- বন্দর। কিন্তু দীর্ঘ ১ যুগেও বন্দরে লাগেনি কোন উন্নয়নের ছোঁয়া।

বন্দরে থাকা দুটি জেটি দিয়েই চলছে অভ্যন্তরীণ পণ্য লোড- আনলোডের কার্যক্রম। এতে করে প্রায়ই নৌ-বন্দরে কার্গোজটের সৃষ্টি হয়। ফলে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় ব্যবসিয়ীরা। এ অবস্থায় নৌ-বন্দরের কর্মকর্তাসহ স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, অচিরেই শুরু হবে আন্তর্জাতিক মানের নৌ- বন্দর নির্মাণ কাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২০১০ সালে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অবস্থিত নৌ-বন্দরটিকে অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দর হিসেবে ঘোষণা করে সরকার।

কিন্তু ১ যুগ ধরে নৌ-বন্দরে কোন ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়নি। বন্দরের দুটি জেটি দিয়েই কার্গো জাহাজ থেকে পণ্য উঠা নামার কাজ করা হয়। এতে করে প্রায়ই নৌ- বন্দরে কার্গোজটের সৃষ্টি হয়। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহার করেই (আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে) ভারত গত ২০১১ সালে তাদের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য ভারী মালামাল পরিবহন করে। পরে কয়েক দফায় ভারত এই আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর ব্যবহার করে খাদ্যশস্যসহ ষ্ট্রীল জাতীয় পণ্য পরিবহন করে। গত ১২ বছরে অভ্যন্তরীণ নৌ-বন্দরের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু বন্দরে কোন উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগায় বন্দর ব্যবহারকারীরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে বন্দরটিতে আন্তর্জাতিকমানের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি জানান। আশুগঞ্জ নৌ- বন্দরের ব্যবসায়ী জালাল উদ্দিন বলেন, বিআইডব্লিওটিএ যে ইজারা দিয়েছে তাতে কোন ঘাট নেই। তিনি বলেন, বন্দরে দুটি জেটি আছে এর মধ্যে একটি জেটি ভারতের মালামাল নেয়ার জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায় আমাদের কার্গো জাহাজ বন্দরে থাকার সময় ভারতের কোনো কার্গো জাহাজ বন্দরে আসলে আমাদেরকে দ্রুত ঘাট ছেড়ে দিতে হয়। তিনি বলেন, সিমেন্টের জন্য একটি নির্ধারিত ঘাট আছে। কিন্তু সারের জন্য কোনো ঘাট নেই। আমরা কোন রকম ভাবে পণ্য লোড- আনলোড করি। তিনি বলেন, বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হলে আমরা আমাদের চাহিদা অনুযায়ী সুযোগ-সুবিধা পাব। এতে করে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে।

নৌ-বন্দরের ব্যবসায়ী আলমগীর মিয়া বলেন, এই বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করলে আমাদের অনেক সুবিধা হবে। বন্দর দিয়ে পণ্য লোড- আনলোড জটিলতা অনেকটাই কমে যাবে। তিনি আরো বলেন, আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থল বন্দর পর্যন্ত রাস্তার ফোর লেনের কাজ শেষ হলেই আমরা সহজে ভারতে মালামাল পাঠাতে পারব। এতে করে দুই দেশের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক আরো বাড়বে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার অরবিন্দু বিশ্বাস বলেন, আশুগঞ্জ থেকে মহাসড়ক চারলেনে সম্প্রসারনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চারলেনের কাজ শেষ হলে আশুগঞ্জ নৌ- বন্দরে আন্তর্জাতিক মানের নৌ-বন্দর নির্মাণ কাজ শুরু হবে। এতে করে আশুগঞ্জ উপজেলা অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী অবস্থায় চলে যাবে। এতে করে ব্যবসা বানিজ্যের ক্ষেত্রে কর্মচঞ্চল্য ফিরে আসবে। ব্যবসা- বানিজ্যের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। তিনি বলেন, আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে বন্দরে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। ভারতের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বন্দরটি পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করছি খুব দ্রুত নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ) ভৈরব- আশুগঞ্জ নৌ-বন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আশুগঞ্জ নদী বন্দরের কাজ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে জমি অধিগ্রহণের কাজও শেষ হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানে নৌ-বন্দর নির্মাণের জন্যে ইতিমধ্যেই দরপত্র আহবান করা হয়েছে। দরপত্রের প্রক্রিয়া শেষ হলে দ্রুত শুরু হবে বন্দরের দৃশ্যমান উন্নয়ন কাজ। আশুগঞ্জ নৌ- বন্দরটির অবকাঠামোগত নির্মান কাজ শেষ হলে মোংলা - পায়রা এবং চট্টগ্রাম নৌ- বন্দর থেকে আসা অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার বন্দরটি দিয়ে উঠানামা করবে। এতে করে এই বন্দরটি আঞ্চলিক ও উপ- আঞ্চলিক নৌ যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আমরা আশা করি দ্রুত বন্দরের নির্মানকাজ শুরু হলে অল্প সময়ে কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, প্রায় ৩১.৫ একক জমির উপর প্রস্তাবিত আশুগঞ্জ অভ্যন্তরীণ নৌ- বন্দরটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২শত ২৫ কোটি টাকা।