মায়ানমারের গোলা ‘ভুলক্রমে’ বাংলাদেশে এসে পড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার যে অঙ্গীকার ইয়াঙ্গুন করেছে, তা তারা পূরণ করবে বলে বিশ্বাস করতে চান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
মায়ানমার প্রশ্নে বাংলাদেশের আরও ‘স্ট্রং’ অবস্থান নেয়া উচিত কি না এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কী করলে সেটা ‘স্ট্রং’ হবে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে যথেষ্ট শক্ত অবস্থান নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন হেনে এক সাংবাদিককে মন্ত্রী বলেছেন, তিনি যুদ্ধ বাঁধাতে চান কি না। তবে নতুন করে কোন রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের ‘স্ট্রং’ অবস্থানের কথা আবারও জানিয়েছেন মোমেন।
জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন আছেন নিউইয়র্কে। সেখানেই গত মঙ্গলবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে মায়ানমারের প্রসঙ্গ আসে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ব্রিফিংয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি নিজে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সভা ও বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, সেসব কথাও বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা সাপ্তাহিকের একজন সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, মায়ানমারের গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে; ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশ এ বিষয়টি জাতিসংঘে তুলবে কি না, এ বিষয়ে সরকারের ‘স্ট্যান্ড আরও স্ট্রং হওয়া’ উচিত কি না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে সেই সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করেনÑ ‘আপনি কী ধরনের স্ট্রং মনে করেন? কী হইলে স্ট্রং মনে করেন?’
সেই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা সেনাবাহিনী আছে...।’ জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘আপনি কি যুদ্ধ বাঁধাতে চান?’ সাংবাদিক উত্তরে বলেন, ‘আমি সেটা বলছি না। বাংলাদেশের স্ট্যান্ডটা আমি জানতে চাচ্ছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেন, ‘এই যে সংঘাত হচ্ছে, এটা মায়ানমারের সংঘাত। তাদের এখানে দুই দল মারামারি করছে আর যেহেতু অনেকগুলো লোক রোহিঙ্গা, এসব লোক বর্ডার এলাকায়, নোম্যান্স ল্যান্ডে। বর্ডার এলাকার নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকে।’
মোমেন বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের ওই এলাকার বর্ডারটা খুব ক্রিসক্রস। কখনো এটা বোঝা মুশকিল। তো সেই কারণে ওরা বলেছে যে তারা টার্গেট করে আমাদের এখানে কিছু ফেলছে না। একটা দুটো যে পড়েছে, সেইগুলো বাই মিসটেক।
‘সুতরাং আমরা তাদের ডেকেছি। তারা আমাদের অঙ্গীকার করেছে যে তারা এ ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করবে।’
মায়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ কীভাবে ‘স্ট্রং’ অবস্থান নিয়েছে, ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মায়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন।
তাদের ফেরত নিতে দুই দেশের সরকার চুক্তিবদ্ধ হলেও পাঁচ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি, আর সেজন্য মায়ানমারকেই দায়ী করে আসছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
এর মধ্যে গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মায়ানমারের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর নতুন করে সংঘাত শুরু হয়।
শুরুর দিকে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়িসহ বিভিন্ন সীমান্তে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গোলাগুলির খবর আসছিল। পরে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মায়ানমার সীমান্তজুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ে।
ওই এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই দিনে ও রাতে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। মাঝে মধ্যে হেলিকপ্টার ও জেট ফাইটার থেকেও ছোড়া হচ্ছে গোলা।
গত শুক্রবার রাতে মায়ানমার থেকে আসা গোলা সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরিত হলে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। ওইদিন সকালেই ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ‘মাইন’ বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যায়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মায়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে।
বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৬ আশ্বিন ১৪২৯ ২৪ সফর ১৪৪৪
নিজস্ব বার্তা পরিবেশক
মায়ানমারের গোলা ‘ভুলক্রমে’ বাংলাদেশে এসে পড়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও সতর্ক থাকার যে অঙ্গীকার ইয়াঙ্গুন করেছে, তা তারা পূরণ করবে বলে বিশ্বাস করতে চান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন।
মায়ানমার প্রশ্নে বাংলাদেশের আরও ‘স্ট্রং’ অবস্থান নেয়া উচিত কি না এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের উত্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পাল্টা প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কী করলে সেটা ‘স্ট্রং’ হবে। বাংলাদেশ এ বিষয়ে যথেষ্ট শক্ত অবস্থান নিচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে পাল্টা প্রশ্ন হেনে এক সাংবাদিককে মন্ত্রী বলেছেন, তিনি যুদ্ধ বাঁধাতে চান কি না। তবে নতুন করে কোন রোহিঙ্গা যাতে বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, সে বিষয়ে বাংলাদেশের ‘স্ট্রং’ অবস্থানের কথা আবারও জানিয়েছেন মোমেন।
জাতিসংঘ অধিবেশন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এখন আছেন নিউইয়র্কে। সেখানেই গত মঙ্গলবার রাতে এক ব্রিফিংয়ে মায়ানমারের প্রসঙ্গ আসে।
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি এদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ব্রিফিংয়ে এসে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন কর্মসূচির বিষয়ে লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি নিজে এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সভা ও বৈঠকে যোগ দিয়েছেন, সেসব কথাও বলেন।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রকাশিত একটি বাংলা সাপ্তাহিকের একজন সাংবাদিক পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেন, মায়ানমারের গোলা বাংলাদেশে এসে পড়ছে এবং প্রাণহানি হচ্ছে; ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মায়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশ এ বিষয়টি জাতিসংঘে তুলবে কি না, এ বিষয়ে সরকারের ‘স্ট্যান্ড আরও স্ট্রং হওয়া’ উচিত কি না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে সেই সাংবাদিককে পাল্টা প্রশ্ন করেনÑ ‘আপনি কী ধরনের স্ট্রং মনে করেন? কী হইলে স্ট্রং মনে করেন?’
সেই সাংবাদিক বলেন, ‘বাংলাদেশের একটা সেনাবাহিনী আছে...।’ জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকে বলেন, ‘আপনি কি যুদ্ধ বাঁধাতে চান?’ সাংবাদিক উত্তরে বলেন, ‘আমি সেটা বলছি না। বাংলাদেশের স্ট্যান্ডটা আমি জানতে চাচ্ছি।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন বলেন, ‘এই যে সংঘাত হচ্ছে, এটা মায়ানমারের সংঘাত। তাদের এখানে দুই দল মারামারি করছে আর যেহেতু অনেকগুলো লোক রোহিঙ্গা, এসব লোক বর্ডার এলাকায়, নোম্যান্স ল্যান্ডে। বর্ডার এলাকার নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকে।’
মোমেন বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশের ওই এলাকার বর্ডারটা খুব ক্রিসক্রস। কখনো এটা বোঝা মুশকিল। তো সেই কারণে ওরা বলেছে যে তারা টার্গেট করে আমাদের এখানে কিছু ফেলছে না। একটা দুটো যে পড়েছে, সেইগুলো বাই মিসটেক।
‘সুতরাং আমরা তাদের ডেকেছি। তারা আমাদের অঙ্গীকার করেছে যে তারা এ ব্যাপারে সর্তকতা অবলম্বন করবে।’
মায়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশ কীভাবে ‘স্ট্রং’ অবস্থান নিয়েছে, ব্যাখ্যা দিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইন রাজ্যে মায়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গাদের ঢল নামে। সব মিলিয়ে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার অধিকাংশই সীমান্ত জেলা কক্সবাজারে শরণার্থী শিবিরে রয়েছেন।
তাদের ফেরত নিতে দুই দেশের সরকার চুক্তিবদ্ধ হলেও পাঁচ বছরেও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি, আর সেজন্য মায়ানমারকেই দায়ী করে আসছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা।
এর মধ্যে গত আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে মায়ানমারের রাখাইনদের সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর নতুন করে সংঘাত শুরু হয়।
শুরুর দিকে বাংলাদেশের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু, কোনারপাড়া, উত্তরপাড়া ও বাইশফাঁড়িসহ বিভিন্ন সীমান্তে মায়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের গোলাগুলির খবর আসছিল। পরে পুরো নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মায়ানমার সীমান্তজুড়ে তা ছড়িয়ে পড়ে।
ওই এলাকায় প্রায় প্রতিদিনই দিনে ও রাতে থেমে থেমে গোলাগুলি চলছে। মাঝে মধ্যে হেলিকপ্টার ও জেট ফাইটার থেকেও ছোড়া হচ্ছে গোলা।
গত শুক্রবার রাতে মায়ানমার থেকে আসা গোলা সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিস্ফোরিত হলে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হন। ওইদিন সকালেই ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে ‘মাইন’ বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশি যুবকের পা উড়ে যায়।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মায়ানমারের দুটি যুদ্ধবিমান ও দুটি ফাইটিং হেলিকপ্টারে গোলা বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে এসে পড়ে।
এর আগে গত ২৮ আগস্ট দুপুরে বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে মায়ানমার থেকে দুটি অবিস্ফোরিত মর্টার শেল এসে পড়ে।