ইভ্যালির সামনে শত শত পাওনাদারের ভিড়

শত কোটি টাকার দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-কমার্স সাইট ইভ্যালির মূল মালিক মোহাম্মদ রাসেলের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার খবরে ঢাকার ধানমন্ডিতে এ কোম্পানির কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেছেন শত শত পাওনাদার।

গতকাল ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী ও কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন আদালত গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন বলে জানিয়েছেন ওই পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন।

ধানমন্ডিতে ইভ্যালির অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যালয় খোলার খবর পেয়ে সকালেই সেখানে শত শত পাওনাদার জমায়েত হয়েছেন। নিজেদের পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের মুক্তির দাবিও জানাচ্ছেন তারা।

‘ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজিউমার কো-অর্ডিনেশন’ কমিটির ব্যানার নিয়ে হাজির হয়েছেন এই পাওনাদাররা। ইভ্যালি চালু করার জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা ব্যানারও ছাপিয়েছেন।

সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডিতে ইভ্যালি কার্যালয়ে অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীরকে দেখা গেলেও তখনও উপস্থিত হননি শামিমা নাসরিন। সাবেক এই চেয়ারম্যান দুপুরের পর আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

মাহবুব কবীর সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা উদ্ধার করার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়নি। ইভ্যালিতে কেন সমস্যা হয়েছে, কতটা সমস্যা হয়েছে, উত্তরণের উপায় কী এসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতেই আমাদেরকে বলা হয়েছিল। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেলে এই প্রতিষ্ঠান আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজিউমার কো-অর্ডিনেশন কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক সাকিব হাসান তাদের পাওনা টাকা উদ্ধারের প্রত্যাশাও করছেন।

তিনি বলেন, ‘রাসেল পরিবারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করায় আমরা আশাবাদী। ইভ্যালি ব্যবসা চালাতে পারলে আমাদের টাকাগুলো ধীরে ধীরে উদ্ধার হয়ে আসবে।’

তবে আদালত গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এ বিষয়ে একমত নন।

তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্যই রাসেল সাহেব ইভ্যালি নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। ব্যবসার প্রতিটি স্তরেই তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই পরিবারের নেতৃত্বে এ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।’ গতবছর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মোট চলতি দায় ছিল তখন ৫৪৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে মার্চেন্ট বা পণ্য সরবরাহকারীরা পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পাওনা ৩১১ কোটি টাকা।

গ্রাহক ঠকানোর মামলায় ইভ্যালির উদ্যোক্তা রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল। শামীমা গত এপ্রিল মাসে জামিনে বের হতে পারলেও এখনও বন্দীই আছেন রাসেল।

গত বছরের অক্টোবরে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান করে ইভ্যালির জন্য একটি পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল আদালত। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব মিলনকে করা হয়েছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পর্ষদে সদস্য হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

মূলত প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত দায়-দেনা, কাজের ধরন ও শত কোটি টাকার বকেয়া থেকে উদ্ধারের পথ বের করার উপায় আছে কি না, তা দেখাই ছিল এই পর্ষদের উদ্দেশ্য।

পর্ষদ তাদের কাজ শেষ করায় এখন আবার মূল মালিকদের কাছেই ফেরত যাচ্ছে ইভ্যালি।

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৭ আশ্বিন ১৪২৯ ২৫ সফর ১৪৪৪

ইভ্যালির সামনে শত শত পাওনাদারের ভিড়

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

শত কোটি টাকার দেনার দায়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-কমার্স সাইট ইভ্যালির মূল মালিক মোহাম্মদ রাসেলের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার খবরে ঢাকার ধানমন্ডিতে এ কোম্পানির কার্যালয়ের সামনে ভিড় করেছেন শত শত পাওনাদার।

গতকাল ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের স্ত্রী ও কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন আদালত গঠিত পরিচালনা পর্ষদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেবেন বলে জানিয়েছেন ওই পর্ষদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীর মিলন।

ধানমন্ডিতে ইভ্যালির অফিসের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, কার্যালয় খোলার খবর পেয়ে সকালেই সেখানে শত শত পাওনাদার জমায়েত হয়েছেন। নিজেদের পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি ইভ্যালির প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ রাসেলের মুক্তির দাবিও জানাচ্ছেন তারা।

‘ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজিউমার কো-অর্ডিনেশন’ কমিটির ব্যানার নিয়ে হাজির হয়েছেন এই পাওনাদাররা। ইভ্যালি চালু করার জন্য আদালতকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা ব্যানারও ছাপিয়েছেন।

সকাল ১০টার দিকে ধানমন্ডিতে ইভ্যালি কার্যালয়ে অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবীরকে দেখা গেলেও তখনও উপস্থিত হননি শামিমা নাসরিন। সাবেক এই চেয়ারম্যান দুপুরের পর আসতে পারেন বলে জানা গেছে।

মাহবুব কবীর সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘গ্রাহকের টাকা উদ্ধার করার দায়িত্ব আমাদের দেয়া হয়নি। ইভ্যালিতে কেন সমস্যা হয়েছে, কতটা সমস্যা হয়েছে, উত্তরণের উপায় কী এসব বিষয়ে যাচাই-বাছাই করতেই আমাদেরকে বলা হয়েছিল। আমরা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছি। আমি বিশ্বাস করি, প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ পেলে এই প্রতিষ্ঠান আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।’

ইভ্যালি মার্চেন্ট অ্যান্ড কনজিউমার কো-অর্ডিনেশন কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক সাকিব হাসান তাদের পাওনা টাকা উদ্ধারের প্রত্যাশাও করছেন।

তিনি বলেন, ‘রাসেল পরিবারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করায় আমরা আশাবাদী। ইভ্যালি ব্যবসা চালাতে পারলে আমাদের টাকাগুলো ধীরে ধীরে উদ্ধার হয়ে আসবে।’

তবে আদালত গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এ বিষয়ে একমত নন।

তিনি বলেন, ‘গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্যই রাসেল সাহেব ইভ্যালি নামক প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন। ব্যবসার প্রতিটি স্তরেই তিনি প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন। এই পরিবারের নেতৃত্বে এ প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতে পারবে বলে আমার মনে হয় না।’ গতবছর বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ইভ্যালির পাঠানো সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির মোট চলতি দায় ছিল তখন ৫৪৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে মার্চেন্ট বা পণ্য সরবরাহকারীরা পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। আর গ্রাহকদের পাওনা ৩১১ কোটি টাকা।

গ্রাহক ঠকানোর মামলায় ইভ্যালির উদ্যোক্তা রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল। শামীমা গত এপ্রিল মাসে জামিনে বের হতে পারলেও এখনও বন্দীই আছেন রাসেল।

গত বছরের অক্টোবরে আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারক এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিককে চেয়ারম্যান করে ইভ্যালির জন্য একটি পর্ষদ গঠন করে দিয়েছিল আদালত। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব মিলনকে করা হয়েছিল ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

পর্ষদে সদস্য হিসেবে ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব মো. রেজাউল আহসান, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ফখরুদ্দিন আহম্মেদ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ।

মূলত প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত দায়-দেনা, কাজের ধরন ও শত কোটি টাকার বকেয়া থেকে উদ্ধারের পথ বের করার উপায় আছে কি না, তা দেখাই ছিল এই পর্ষদের উদ্দেশ্য।

পর্ষদ তাদের কাজ শেষ করায় এখন আবার মূল মালিকদের কাছেই ফেরত যাচ্ছে ইভ্যালি।