বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পঞ্চকরনের দেবরাজ গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠিকানায় এখন সুখের হাসি। মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলেছে গৃহিহীন ও ভূমিহীন হতদরিদ্র ৬০ পরিবারের। কিন্তু ঘর পেলেও জীবিকা সংকটে ভুগছেন আশ্রয়ণের এই পরিবারগুলো।
স্বপ্নেও কখনও ভাবেনি তাদের মাথাগোজার ঠাঁই হবে, মিলবে আপন ঠিকানা, ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই ভাল আছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করলেন ‘তিনিতো মমতাময়ী মা আমাদের মত গরিব মানুষের বেঁচে থাকার শক্তি’ এ কথাগুলো বললেন, সুবিধাভোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
সরেজমিন পানগুছি নদীর তীরবর্তী উপজেলার পঞ্চকরনের দেবরাজ গ্রাম। আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তৃতীয় ধাপে নির্মাণ হয়েছে ৬০টি ঘর। এ নতুন ঘরে গত এক মাস ধরে বসবাস শুরু করেছেন ৪৫টি পরিবার। বাকি ১৫টি ঘরে আংশিক কাজ বাকি রয়েছে। বিদ্যুৎ, সংযোগের কাজ চলছে।
খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন হার্ভেসটিং (টেংকি) সব ঘরে এখনও পায়নি। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। তবুও আপন ঠিকানায় সুখের স্বপ্ন বুনছেন তারা।
কথা হয় সামছুল আলম খান (৬৫), পরিবারে একমাত্র স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে নিয়ে দুই জনের সংসার। একটি মাত্র মেয়ে ছিল বিয়ে দিয়েছেন। ৩ বছর ধরে অসুস্থ লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে এক সময়ে পথে পথে দিনযাপন করতেন। এখন আপন ঠিকানা পেয়ে সকল কষ্ট ভুলে গিয়ে বুকভরা আর্তনাত আনন্দের হাসি। স্বামি পরিত্যাক্তা রাশিদা বেগম (৪৫), দুই ছেলে থেকেও তারা খোজ নিচ্ছেনা এ মায়ের।
নদীতে কোন মতে নেট বেয়ে পোনা মাছ ধরে সংসার চালায়। সাজেদা বেগম (৩০), স্বামী দিনমজুর জাহাঙ্গীর শেখ খুলনায় ক্ষুদে ব্যবসা করে পরিবারের জন্য কিছু টাকা পাঠিয়ে সপ্তাহে একবার বাড়িতে আসেন। এই পরিবারের ৩টি সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে জান্নাতি এবারে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন। ২য় শ্রেণীর ছাত্রী মনিরা ও প্রথম শ্রেনীতে মরিয়ম।
আনোয়ার হোসেন মিঠু, খলিলুর রহমানসহ আশ্রয়ণের একাধিক বাসিন্দারা সংবাদ কর্মীদের দেখে ছুটে এসে তাদের জীবন-জীবিকা সুখ-দুঃখের কথা ব্যক্ত করেন। সরকারের প্রতি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের দাবি এলাকা ভিত্তিক কর্মসংস্থান তৈরি করে দিলে তাদের সংসার চালাতে আর হিমসিম খেতে হবে না। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও তা রয়েছে ২ কিলোমিটার দূরাত্বে। কাছাকাছি বিদ্যালয় নির্মাণ করার ও স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থারও দাবি জানান তারা। তাহলেই তাদের জীবনযাত্রার মান আরো সমৃদ্ধ হবে।
এ বিষয়ে পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মুজিব বর্ষের উপহার তার ইউনিয়নে দেবরাজ গ্রামে ৬০টি গৃহিহীন পরিবার পেয়েছে নতুন ঘর। তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. অমিরুল আলম মিলন মহোদয়ের সহযোগিতায় বাজার পর্যন্ত ইটসোলিং রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, এদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরার কার্যক্রম ও হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল খামার প্রকল্প উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাদের দৈনিক আয়ের উৎস বেড়ে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে দিন কাটাতে পারবেন।
এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহঙ্গীর আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুজিব বর্ষের উপহার গৃহিহীন ও ভূমিহীনদের নতুন ঘর নির্মাণে এ উপজেলায় ৩টি ধাপে ৩১৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে দেবরাজে ৬০ ঘরের মধ্যে ৪৫টি ঘরে বসবাস করছেন। এদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতোমধ্যে মহিলাদের সেলাই মেশিন, মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আত্মকর্মসংস্থানের বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি, মৎস্য নকশিকাথা প্রশিক্ষণনেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা রয়েছে।
শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৭ আশ্বিন ১৪২৯ ২৫ সফর ১৪৪৪
প্রতিনিধি, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে পঞ্চকরনের দেবরাজ গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভূমিহীনদের স্বপ্নের ঠিকানায় এখন সুখের হাসি। মাথাগোঁজার ঠাঁই মিলেছে গৃহিহীন ও ভূমিহীন হতদরিদ্র ৬০ পরিবারের। কিন্তু ঘর পেলেও জীবিকা সংকটে ভুগছেন আশ্রয়ণের এই পরিবারগুলো।
স্বপ্নেও কখনও ভাবেনি তাদের মাথাগোজার ঠাঁই হবে, মিলবে আপন ঠিকানা, ছেলে মেয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে খুবই ভাল আছেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দু’হাত তুলে ফরিয়াদ করলেন ‘তিনিতো মমতাময়ী মা আমাদের মত গরিব মানুষের বেঁচে থাকার শক্তি’ এ কথাগুলো বললেন, সুবিধাভোগী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা।
সরেজমিন পানগুছি নদীর তীরবর্তী উপজেলার পঞ্চকরনের দেবরাজ গ্রাম। আশ্রয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তৃতীয় ধাপে নির্মাণ হয়েছে ৬০টি ঘর। এ নতুন ঘরে গত এক মাস ধরে বসবাস শুরু করেছেন ৪৫টি পরিবার। বাকি ১৫টি ঘরে আংশিক কাজ বাকি রয়েছে। বিদ্যুৎ, সংযোগের কাজ চলছে।
খাবার পানির জন্য বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য রেইন হার্ভেসটিং (টেংকি) সব ঘরে এখনও পায়নি। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার দাবি আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের। তবুও আপন ঠিকানায় সুখের স্বপ্ন বুনছেন তারা।
কথা হয় সামছুল আলম খান (৬৫), পরিবারে একমাত্র স্ত্রী ফিরোজা বেগমকে নিয়ে দুই জনের সংসার। একটি মাত্র মেয়ে ছিল বিয়ে দিয়েছেন। ৩ বছর ধরে অসুস্থ লিভার সিরোসিস রোগে ভুগছেন। নদীগর্ভে সবকিছু হারিয়ে এক সময়ে পথে পথে দিনযাপন করতেন। এখন আপন ঠিকানা পেয়ে সকল কষ্ট ভুলে গিয়ে বুকভরা আর্তনাত আনন্দের হাসি। স্বামি পরিত্যাক্তা রাশিদা বেগম (৪৫), দুই ছেলে থেকেও তারা খোজ নিচ্ছেনা এ মায়ের।
নদীতে কোন মতে নেট বেয়ে পোনা মাছ ধরে সংসার চালায়। সাজেদা বেগম (৩০), স্বামী দিনমজুর জাহাঙ্গীর শেখ খুলনায় ক্ষুদে ব্যবসা করে পরিবারের জন্য কিছু টাকা পাঠিয়ে সপ্তাহে একবার বাড়িতে আসেন। এই পরিবারের ৩টি সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে জান্নাতি এবারে দাখিল পরীক্ষা দিচ্ছেন। ২য় শ্রেণীর ছাত্রী মনিরা ও প্রথম শ্রেনীতে মরিয়ম।
আনোয়ার হোসেন মিঠু, খলিলুর রহমানসহ আশ্রয়ণের একাধিক বাসিন্দারা সংবাদ কর্মীদের দেখে ছুটে এসে তাদের জীবন-জীবিকা সুখ-দুঃখের কথা ব্যক্ত করেন। সরকারের প্রতি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের দাবি এলাকা ভিত্তিক কর্মসংস্থান তৈরি করে দিলে তাদের সংসার চালাতে আর হিমসিম খেতে হবে না। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার জন্য একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও তা রয়েছে ২ কিলোমিটার দূরাত্বে। কাছাকাছি বিদ্যালয় নির্মাণ করার ও স্বাস্থ্য চিকিৎসা ব্যবস্থারও দাবি জানান তারা। তাহলেই তাদের জীবনযাত্রার মান আরো সমৃদ্ধ হবে।
এ বিষয়ে পঞ্চকরণ ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক মজুমদার বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার মুজিব বর্ষের উপহার তার ইউনিয়নে দেবরাজ গ্রামে ৬০টি গৃহিহীন পরিবার পেয়েছে নতুন ঘর। তাদের যোগাযোগের ব্যবস্থার জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. অমিরুল আলম মিলন মহোদয়ের সহযোগিতায় বাজার পর্যন্ত ইটসোলিং রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। তবে, এদের স্থায়ী কর্মসংস্থানের জন্য নদীতে জাল দিয়ে মাছ ধরার কার্যক্রম ও হাঁস-মুরগি গরু-ছাগল খামার প্রকল্প উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তাদের দৈনিক আয়ের উৎস বেড়ে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ভালভাবে দিন কাটাতে পারবেন।
এ সম্পর্কে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. জাহঙ্গীর আলম বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুজিব বর্ষের উপহার গৃহিহীন ও ভূমিহীনদের নতুন ঘর নির্মাণে এ উপজেলায় ৩টি ধাপে ৩১৭টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে দেবরাজে ৬০ ঘরের মধ্যে ৪৫টি ঘরে বসবাস করছেন। এদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ইতোমধ্যে মহিলাদের সেলাই মেশিন, মৎস্য চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও আত্মকর্মসংস্থানের বৃদ্ধির লক্ষে কৃষি, মৎস্য নকশিকাথা প্রশিক্ষণনেরও ব্যবস্থা গ্রহণ করার পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা রয়েছে।