প্রশ্ন ফাঁস : আরও ২ শিক্ষক ও অফিস সহকারী গ্রেপ্তার

এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষক ও এক অফিস সহায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ওই স্কুলটির প্রধান শিক্ষকসহ মোট ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন।

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্থানীয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড এবং জেলা শিক্ষা অফিসের পৃথক তদন্ত কমিটি গতকাল কার্যক্রম শুরু করেছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক সোহেল আল মামুন, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম এবং অফিস সহায়ক সুজন মিয়া।

সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে ২১ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়; এরপর গতকাল তাদের প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর একই স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল দুপুরে নতুন গ্রেপ্তারকৃত তিন জনকে কুড়িগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের (মাউশি) পক্ষে তিনি গতকাল নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কেউ রেহাই পাবে না-জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত শিক্ষা বিভাগের কারো কোন দায়িত্বে অবহেলা, অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের ভূরুঙ্গামারী কোটের্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল এ মামলার তদন্তকর্মকর্তা ভূরুঙ্গামারী থানার পরিদর্শক আজাহার আলী এক নম্বর আসামি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয় আদালতে।

বিচারক সুমন আলী রিমান্ড এবং জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ১ম এবং ২য় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও সাংবাদিকদের নজরে এলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসএসসির চারটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন। চারটি বিষয় হলো-গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন।

এরপর রাতে প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজির শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক জুবায়ের হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে চারজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে ভূরুঙ্গমারী থানায় একটি মামলা করা হয়। আর পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।

চার বিষয়ের পরীক্ষার নতুন সূচি :

প্রশ্ন ফাঁসের কারণে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে স্থগিত হওয়া এসএসসির চারটি বিষয়ের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়।

গতকাল দুপুরে প্রকাশিত সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর গণিত, ১১ অক্টোবর কৃষি শিক্ষা, ১৩ অক্টোবর রসায়ন এবং ১৫ অক্টোবর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা নেয়া হবে।

যদিও গতকাল সকালে দিনাজপুর বোর্ড ১০ থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ওই চার বিষয়ের পরীক্ষা নেয়ার কথা জানিয়েছিল। এর দুই ঘণ্টা পর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটে সংশোধিত রুটিন প্রকাশ করা হয়।

পরীক্ষার দিন পরিবর্তন হলেও সময় আগের মতই সকাল ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত থাকছে। চার বিষয়ের পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন হওয়ায় ব্যবহারিক পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে।

নতুন সূচি অনুযায়ী, আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ফরাজউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল এ কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম।

শিক্ষা কর্মকর্তা বরখাস্ত

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা এবং অসদাচরণের দায়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত আদেশে আবদুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৭ আশ্বিন ১৪২৯ ২৫ সফর ১৪৪৪

প্রশ্ন ফাঁস : আরও ২ শিক্ষক ও অফিস সহকারী গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন বালিকা বিদ্যালয়ের আরও দুই শিক্ষক ও এক অফিস সহায়ককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় ওই স্কুলটির প্রধান শিক্ষকসহ মোট ছয়জন গ্রেপ্তার হলেন।

এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে স্থানীয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড এবং জেলা শিক্ষা অফিসের পৃথক তদন্ত কমিটি গতকাল কার্যক্রম শুরু করেছে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া তিনজন হলেন নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক সোহেল আল মামুন, পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক হামিদুল ইসলাম এবং অফিস সহায়ক সুজন মিয়া।

সর্বশেষ গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনকে ২১ সেপ্টেম্বর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আসা হয়; এরপর গতকাল তাদের প্রশ্ন ফাঁসের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর একই স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল দুপুরে নতুন গ্রেপ্তারকৃত তিন জনকে কুড়িগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন।

কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার শামছুল আলম জানান, প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের (মাউশি) পক্ষে তিনি গতকাল নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছেন। সহকারী প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমানসহ অন্য শিক্ষকদের জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কেউ রেহাই পাবে না-জানিয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত শিক্ষা বিভাগের কারো কোন দায়িত্বে অবহেলা, অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কুড়িগ্রাম মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের ভূরুঙ্গামারী কোটের্র দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, গতকাল এ মামলার তদন্তকর্মকর্তা ভূরুঙ্গামারী থানার পরিদর্শক আজাহার আলী এক নম্বর আসামি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক লুৎফর রহমানের তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেছেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে জামিনের আবেদন করা হয় আদালতে।

বিচারক সুমন আলী রিমান্ড এবং জামিন আবেদনের শুনানির জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে আদেশ দেন।

ভূরুঙ্গামারী উপজেলায় চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি ১ম এবং ২য় পত্রের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও সাংবাদিকদের নজরে এলে নড়েচড়ে বসে স্থানীয় প্রশাসন।

গত ২০ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভূরুঙ্গামারী নেহাল উদ্দিন পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কক্ষ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা এসএসসির চারটি বিষয়ের প্রশ্নপত্র উদ্ধার করেন। চারটি বিষয় হলো-গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন।

এরপর রাতে প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব লুৎফর রহমান, ইংরেজির শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক জুবায়ের হোসাইনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে চারজন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে ভূরুঙ্গমারী থানায় একটি মামলা করা হয়। আর পরিস্থিতি বিবেচনায় ২১ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের গণিত, কৃষিশিক্ষা, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণা দেয়া হয়।

চার বিষয়ের পরীক্ষার নতুন সূচি :

প্রশ্ন ফাঁসের কারণে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে স্থগিত হওয়া এসএসসির চারটি বিষয়ের পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়।

গতকাল দুপুরে প্রকাশিত সংশোধিত রুটিন অনুযায়ী, ১০ অক্টোবর গণিত, ১১ অক্টোবর কৃষি শিক্ষা, ১৩ অক্টোবর রসায়ন এবং ১৫ অক্টোবর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষা নেয়া হবে।

যদিও গতকাল সকালে দিনাজপুর বোর্ড ১০ থেকে ১৩ অক্টোবরের মধ্যে ওই চার বিষয়ের পরীক্ষা নেয়ার কথা জানিয়েছিল। এর দুই ঘণ্টা পর পদার্থ বিজ্ঞান পরীক্ষার তারিখ পরিবর্তন করে ওয়েবসাইটে সংশোধিত রুটিন প্রকাশ করা হয়।

পরীক্ষার দিন পরিবর্তন হলেও সময় আগের মতই সকাল ১১ থেকে ১টা পর্যন্ত থাকছে। চার বিষয়ের পরীক্ষার রুটিন পরিবর্তন হওয়ায় ব্যবহারিক পরীক্ষাও পেছানো হয়েছে।

নতুন সূচি অনুযায়ী, আগামী ১৬ অক্টোবর থেকে ২০ অক্টোবরের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা খতিয়ে দেখতে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ফরাজউদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল এ কমিটি কাজ শুরু করেছে বলে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক কামরুল ইসলাম।

শিক্ষা কর্মকর্তা বরখাস্ত

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলা এবং অসদাচরণের দায়ে ভূরুঙ্গামারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (সাধারণ প্রশাসন) বিপুল চন্দ্র বিশ্বাস স্বাক্ষরিত আদেশে আবদুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে কুড়িগ্রাম জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন।