ঋতুপর্ণা-রুপনার সাফল্যে এলাকাবাসী পাচ্ছে সড়ক আর সেতু

অনেক বছর ধরে সড়কের জন্য আবেদন করেও সাড়া পায়নি এলাকাবাসী। নারী দলের সাফ শিরোপা জিতে নেয়ার পর বদলে গেল অনেক কিছু। সাফ ফুটবল বিজয়ী দলের রাঙামাটির দুই কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা আর রুপনা চাকমা তাদের এই সাফল্যে এলাকাবাসী উপহার পাচ্ছে সড়ক-সেতু।

ঋতুপর্ণার বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ির দুর্গম গ্রামে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তার বাড়ি যেতে হাঁটতে হয় প্রায় তিন কিলোমিটার পথ। সেই পথের একটা বড় অংশে ধানি জমি। আইল ধরে হেঁটে বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে হয় ঋতুপর্ণাদের। মগাছড়ি এলাকার সবাইকেই বর্ষা মৌসুমে পথ চলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গত মঙ্গলবার যান ঋতুপর্ণার বাড়িতে। পথের অবস্থা দেখে ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিনকে তিনি সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এতে দুর্গম ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের পথ তৈরি হলো।

ইউপি চেয়ারম্যান আজিম বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের প্রত্যাশায় পুরো পাড়ার মানুষ দিনের পর দিন ঘুরেছেন এখানে সেখানে। সেই সড়কটি হঠাৎ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তারা।’

ঋতুপর্ণার মা বসুবতি চাকমা বললেন, ‘আমার মেয়ের সাফল্যে গ্রামের মানুষ যদি সড়ক পায়, এটা তো খুবই আনন্দের। আমাদের সবার জন্য সড়কটা খুব দরকার। বর্ষা মৌসুমে খুব কষ্ট হয় আমাদের। সড়ক নির্মাণ হলে খুব উপকার হবে।’

সাফজয়ী দলের রুপনা চাকমার ওপর দায়িত্ব অনেক, তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের গোলপোস্ট সামলান। কিন্তু নিজের বাড়ির পথে তাকে এতদিন যাতায়াত করতে হতো ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে। সেই সাঁকোর জায়গায় এখন সেতু নির্মাণের তোরজোর শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ৫ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়াদম এলাকার গাছামনি চাকমা ও কালা সোনা চাকমার মেয়ে রুপনা জন্মের পর বাবার মুখ দেখেননি। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট । আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় তাদের জরাজীর্ণ বাড়িতে।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশের পর নানিয়ারচর উপজেলা প্রশাসক রুপনা চাকমার বাড়ির পথে সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিষয়টি জেনে এলাকার লোকজনর পাশাপাশি খুশি রুপনার মা কালাসোনা চাকমা বললেন, ‘এই সাঁকো খুবই বিপজ্জনক। সেতু হলে এলাকার মানুষের অনেক উপকার হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘রুপনা ও ঋতুপর্ণা আমাদের রাঙামাটির গর্ব। তাদের এই অর্জনে সারাদেশের মানুষ গর্বিত। রুপনার পরিবারের একটা ঘর এবং এলাকার ব্রিজ প্রয়োজন। আর ঋতুপর্ণার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা প্রয়োজন। আমি বিষয়গুলো দেখছি এবং যতটুকু করা সম্ভব তার সবই করবো।’

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে রুপনাকে ঘর করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তার বাড়ি যাওয়ার পথের সেতুটি এবং ঋতুপর্ণার বাসায় যাওয়ার সড়ক করে দিতে নির্দেশ দিয়েছি আমি। আশা করছি, শীঘ্রই এসব কাজ শুরু হবে। মেয়ে দুটির জন্য কিছু করতে পারলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে।’

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৭ আশ্বিন ১৪২৯ ২৫ সফর ১৪৪৪

ঋতুপর্ণা-রুপনার সাফল্যে এলাকাবাসী পাচ্ছে সড়ক আর সেতু

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

অনেক বছর ধরে সড়কের জন্য আবেদন করেও সাড়া পায়নি এলাকাবাসী। নারী দলের সাফ শিরোপা জিতে নেয়ার পর বদলে গেল অনেক কিছু। সাফ ফুটবল বিজয়ী দলের রাঙামাটির দুই কন্যা ঋতুপর্ণা চাকমা আর রুপনা চাকমা তাদের এই সাফল্যে এলাকাবাসী উপহার পাচ্ছে সড়ক-সেতু।

ঋতুপর্ণার বাড়ি রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের মগাছড়ির দুর্গম গ্রামে। রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে তার বাড়ি যেতে হাঁটতে হয় প্রায় তিন কিলোমিটার পথ। সেই পথের একটা বড় অংশে ধানি জমি। আইল ধরে হেঁটে বাড়ি থেকে যাতায়াত করতে হয় ঋতুপর্ণাদের। মগাছড়ি এলাকার সবাইকেই বর্ষা মৌসুমে পথ চলতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান গত মঙ্গলবার যান ঋতুপর্ণার বাড়িতে। পথের অবস্থা দেখে ঘাগড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজিম উদ্দিনকে তিনি সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। এতে দুর্গম ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণের পথ তৈরি হলো।

ইউপি চেয়ারম্যান আজিম বলেন, ‘সড়ক নির্মাণের প্রত্যাশায় পুরো পাড়ার মানুষ দিনের পর দিন ঘুরেছেন এখানে সেখানে। সেই সড়কটি হঠাৎ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন তারা।’

ঋতুপর্ণার মা বসুবতি চাকমা বললেন, ‘আমার মেয়ের সাফল্যে গ্রামের মানুষ যদি সড়ক পায়, এটা তো খুবই আনন্দের। আমাদের সবার জন্য সড়কটা খুব দরকার। বর্ষা মৌসুমে খুব কষ্ট হয় আমাদের। সড়ক নির্মাণ হলে খুব উপকার হবে।’

সাফজয়ী দলের রুপনা চাকমার ওপর দায়িত্ব অনেক, তিনি বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের গোলপোস্ট সামলান। কিন্তু নিজের বাড়ির পথে তাকে এতদিন যাতায়াত করতে হতো ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পার হয়ে। সেই সাঁকোর জায়গায় এখন সেতু নির্মাণের তোরজোর শুরু হয়েছে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে।

রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ৫ নম্বর ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূঁইয়াদম এলাকার গাছামনি চাকমা ও কালা সোনা চাকমার মেয়ে রুপনা জন্মের পর বাবার মুখ দেখেননি। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট । আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ আর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকো পার হয়ে যেতে হয় তাদের জরাজীর্ণ বাড়িতে।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশের পর নানিয়ারচর উপজেলা প্রশাসক রুপনা চাকমার বাড়ির পথে সেতু নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিষয়টি জেনে এলাকার লোকজনর পাশাপাশি খুশি রুপনার মা কালাসোনা চাকমা বললেন, ‘এই সাঁকো খুবই বিপজ্জনক। সেতু হলে এলাকার মানুষের অনেক উপকার হবে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘রুপনা ও ঋতুপর্ণা আমাদের রাঙামাটির গর্ব। তাদের এই অর্জনে সারাদেশের মানুষ গর্বিত। রুপনার পরিবারের একটা ঘর এবং এলাকার ব্রিজ প্রয়োজন। আর ঋতুপর্ণার বাড়িতে যাওয়ার রাস্তা প্রয়োজন। আমি বিষয়গুলো দেখছি এবং যতটুকু করা সম্ভব তার সবই করবো।’

প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে রুপনাকে ঘর করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘তার বাড়ি যাওয়ার পথের সেতুটি এবং ঋতুপর্ণার বাসায় যাওয়ার সড়ক করে দিতে নির্দেশ দিয়েছি আমি। আশা করছি, শীঘ্রই এসব কাজ শুরু হবে। মেয়ে দুটির জন্য কিছু করতে পারলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে।’