টাঙ্গাইলে এবার ১৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে

টাঙ্গাইলে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষক দামও পাচ্ছে ভালো। তাই পাট চাষ করে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাট চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। গত বছর জেলার ১২টি উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৯ বেল্ট পাট। চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ১৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ বেল্ট। এর মধ্যে সদর উপজেলার দুই হাজার ৭৪০ হেক্টর, বাসাইলে ৪২৯ হেক্টর, কালিহাতীতে এক হাজার ১৯৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯০০ হেক্টর, নাগরপুরে এক হাজার ৭৫৬ হেক্টর, মির্জাপুরে এক হাজার ১৬৮ হেক্টর, মধুপুরে ৯১ হেক্টর, ভূঞাপুরে চার হাজার ১২৫ হেক্টর, গোপালপুরে দুই হাজার ৯৪০ হেক্টর, সখীপুরে ১৪০ হেক্টর দেলদুয়ারে এক হাজার ৪৫৬ হেক্টর ও ধনবাড়ীতে ২১৭ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে।

কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানায়, টাঙ্গাইলে দেশি, তোষা, মেশতা, রবি-১ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ বেশি হয়েছে। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে ১০ মণ পাট পাওয়া গেছে। পাট বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার হুগড়া, কাতুলী, দাইন্যা, মগড়া, গালাসহ বিভিন্ন গ্রামে পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার বর্ষায় নদী-নালা, খাল-বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের মালতিপাড়া গ্রামের কৃষক হোসেন বলেন, এ বছর আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।

আবহাওয়া ভালো থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে ১২ মণ পাট ও ১২০০ আটি পাট কাঠি পেয়েছি। প্রতি মণ পাট তিন হাজার ৮০০ টাকা ও প্রতি আটি পাট কাঠি পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করেছি। কৃষক ছোরমান মিয়া বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আমার তিন বিঘা জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে পাটের দামও গত বছরের তুলনায় বেশি। আশা করি পাটের দাম আরও বাড়বে।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গা হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, চাষিরা পাট বিক্রি করতে এসেছেন। ভাল মানের পাট চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কালিহাতীর মশাজান গ্রামের কৃষক লিটন মিয়া জানান, এক একর জমিতে পাট চাষ করে ২০ মণ পাট পেয়েছেন। প্রতি মণ চার হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন। ভালো ফলন হওয়ায় লাভবান হয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, ৩০০ পাট চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রবি-১ নামে পাট বীজ উৎপাদন করার জন্য চাষিদের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চাষিদের যে কোন সম্যস্যা সমাধানের জন্য কৃষি বিভাগের কর্মীরা মাঠে কাজ করেছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছে।

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ০৭ আশ্বিন ১৪২৯ ২৫ সফর ১৪৪৪

টাঙ্গাইলে এবার ১৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

image

পাট জাগ দিতে ব্যস্ত চাষিরা

টাঙ্গাইলে এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষক দামও পাচ্ছে ভালো। তাই পাট চাষ করে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাট চাষে সফল হয়েছেন চাষিরা। গত বছর জেলার ১২টি উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছিল। উৎপাদন হয়েছিল এক লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৯ বেল্ট পাট। চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ১৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ বেল্ট। এর মধ্যে সদর উপজেলার দুই হাজার ৭৪০ হেক্টর, বাসাইলে ৪২৯ হেক্টর, কালিহাতীতে এক হাজার ১৯৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯০০ হেক্টর, নাগরপুরে এক হাজার ৭৫৬ হেক্টর, মির্জাপুরে এক হাজার ১৬৮ হেক্টর, মধুপুরে ৯১ হেক্টর, ভূঞাপুরে চার হাজার ১২৫ হেক্টর, গোপালপুরে দুই হাজার ৯৪০ হেক্টর, সখীপুরে ১৪০ হেক্টর দেলদুয়ারে এক হাজার ৪৫৬ হেক্টর ও ধনবাড়ীতে ২১৭ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে।

কৃষি অফিস ও স্থানীয় কৃষকরা জানায়, টাঙ্গাইলে দেশি, তোষা, মেশতা, রবি-১ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা জাতের পাট চাষ বেশি হয়েছে। প্রতি বিঘায় ছয় থেকে ১০ মণ পাট পাওয়া গেছে। পাট বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার হুগড়া, কাতুলী, দাইন্যা, মগড়া, গালাসহ বিভিন্ন গ্রামে পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার বর্ষায় নদী-নালা, খাল-বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের মালতিপাড়া গ্রামের কৃষক হোসেন বলেন, এ বছর আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি।

আবহাওয়া ভালো থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে ১২ মণ পাট ও ১২০০ আটি পাট কাঠি পেয়েছি। প্রতি মণ পাট তিন হাজার ৮০০ টাকা ও প্রতি আটি পাট কাঠি পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করেছি। কৃষক ছোরমান মিয়া বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আমার তিন বিঘা জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে পাটের দামও গত বছরের তুলনায় বেশি। আশা করি পাটের দাম আরও বাড়বে।

টাঙ্গাইলের কালিহাতীর এলেঙ্গা হাটে সরেজমিনে দেখা যায়, চাষিরা পাট বিক্রি করতে এসেছেন। ভাল মানের পাট চার হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। কালিহাতীর মশাজান গ্রামের কৃষক লিটন মিয়া জানান, এক একর জমিতে পাট চাষ করে ২০ মণ পাট পেয়েছেন। প্রতি মণ চার হাজার টাকা করে বিক্রি করছেন। ভালো ফলন হওয়ায় লাভবান হয়েছেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের উপপরিচালক আহসানুল বাশার বলেন, ৩০০ পাট চাষিকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রবি-১ নামে পাট বীজ উৎপাদন করার জন্য চাষিদের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চাষিদের যে কোন সম্যস্যা সমাধানের জন্য কৃষি বিভাগের কর্মীরা মাঠে কাজ করেছে। উৎপাদন ভালো হওয়ায় কৃষক লাভবান হচ্ছে।