পঞ্চগড়ে করতোয়ায় নৌকাডুবি নারী-শিশুসহ ২৪ জনের লাশ উদ্ধার

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে শিশু, নারীসহ ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ রয়েছে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গতকাল দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছিল।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অন্য পাড়ে) মহালয়া উপলক্ষে এক বিশাল ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন শ্যালো ইঞ্জিনচালিতে একটি নৌকাযোগে মন্দিরে যাচ্ছিলেন। নদীর মাঝপথে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি উল্টে যায়।

এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও বেশিরভাগ নারী ও শিশু পানিতে ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে সবাই এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এ রিপোর্ট লিখার সময় উদ্ধার তৎপরতা চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, করতোয়ার পাড়ে শিশু ও নারীসহ ১৭ জনের লাশ দেখেছেন। এছাড়া উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা ২৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম রাজিউল করিম রাজু বোদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও নারীসহ সাতজনের লাশ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী নৌকাডুবিতে ২৪ জনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের সৎকারে ২০ হাজার করে এবং আহত প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল নৌকায়, নদীপাড়ে আহাজারি

ডুবে যাওয়া নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের মতো যাত্রী তোলা হয়েছিল। মূলত ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আউলিয়া ঘাট এলাকায় বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে ঝরে গেছে ২৪ জনের প্রাণ। নদীপাড় থেকে ভেসে আসছে স্বজনদের আহাজারির শব্দ। কাছে যেতেই দেখা গেলো স্বজনদের কান্নার রোল। তাদের কান্না আশপাশের পরিবেশ ভারী করে তুলেছিল।

মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অন্যপাড়ে) যাচ্ছিলেন। মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের বেশি যাত্রী নেয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, সকাল থেকে ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় ৮০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ নারী-শিশু পানিতে ডুবে যান। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করেন। পরে জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে সবাই এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম রাজিউল করিম রাজু বলেন, ‘এখানে ১০ জনকে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে নারী ও শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের চিকিৎসা চলছে।’

উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১০ আশ্বিন ১৪২৯ ২৮ সফর ১৪৪৪

পঞ্চগড়ে করতোয়ায় নৌকাডুবি নারী-শিশুসহ ২৪ জনের লাশ উদ্ধার

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক দিনাজপুর ও প্রতিনিধি পঞ্চগড়

image

পঞ্চগড় : করতোয়া নদীর তীরে স্বজনহারাদের আহাজারি

পঞ্চগড়ে করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে শিশু, নারীসহ ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ রয়েছে। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক নিখোঁজ রয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। গতকাল দুপুরে বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের আউলিয়ার ঘাট এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। গতকাল রাতে এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিটের কর্মীরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছিল।

পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অন্য পাড়ে) মহালয়া উপলক্ষে এক বিশাল ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে জেলার বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন শ্যালো ইঞ্জিনচালিতে একটি নৌকাযোগে মন্দিরে যাচ্ছিলেন। নদীর মাঝপথে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নৌকাটি উল্টে যায়।

এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠে আসতে পারলেও বেশিরভাগ নারী ও শিশু পানিতে ডুবে যায়। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করে। পরে জেলা, উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে সবাই এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। এ রিপোর্ট লিখার সময় উদ্ধার তৎপরতা চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, করতোয়ার পাড়ে শিশু ও নারীসহ ১৭ জনের লাশ দেখেছেন। এছাড়া উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধারকারীরা ২৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। তবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম রাজিউল করিম রাজু বোদা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শিশু ও নারীসহ সাতজনের লাশ রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সোলেমান আলী নৌকাডুবিতে ২৪ জনের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর মধ্যে ১২ নারী, আট শিশু ও চার পুরুষের লাশ রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, নৌকাটিতে অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মৃতদের সৎকারে ২০ হাজার করে এবং আহত প্রত্যেককে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ যাত্রী ছিল নৌকায়, নদীপাড়ে আহাজারি

ডুবে যাওয়া নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের মতো যাত্রী তোলা হয়েছিল। মূলত ছোট নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

আউলিয়া ঘাট এলাকায় বিকেলে সরেজমিন দেখা গেছে, অল্প সময়ের ব্যবধানে ঝরে গেছে ২৪ জনের প্রাণ। নদীপাড় থেকে ভেসে আসছে স্বজনদের আহাজারির শব্দ। কাছে যেতেই দেখা গেলো স্বজনদের কান্নার রোল। তাদের কান্না আশপাশের পরিবেশ ভারী করে তুলেছিল।

মাড়েয়া বামনহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু আনছার মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহালয়া উপলক্ষে মাড়েয়া বাজার এলাকার আউলিয়া ঘাট থেকে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাযোগে ৮০ জনের বেশি যাত্রী বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে (নদীর অন্যপাড়ে) যাচ্ছিলেন। মাঝ নদীতে নৌকাটি ডুবে যায়। এ সময় কয়েকজন সাঁতরে তীরে ওঠেন।

তিনি বলেন, ‘স্থানীয় নৌকার মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মহালয়া উপলক্ষে মানুষের চাপ বেশি ছিল। প্রায় সব নৌকা বেশি করে যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল ৩৫ থেকে ৪০ জন। সেখানে ৮০ জনের বেশি যাত্রী নেয়া হয়েছিল। অতিরিক্ত যাত্রী তোলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।’

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নজরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম ও ধনেশ চন্দ্র জানান, সকাল থেকে ঘাটে মানুষের ভিড় ছিল। ছোট ছোট নৌকাগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করছিল। দুর্ঘটনাকবলিত নৌকায় ৮০ জনের বেশি যাত্রী ছিল। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে মাঝ নদীতে নৌকাটি উল্টে যায়। এ সময় সাঁতার জানা যাত্রীরা তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ নারী-শিশু পানিতে ডুবে যান। তাদের চিৎকারে এলাকার লোকজন ছুটে এসে অনেককে উদ্ধার করেন। পরে জেলা, উপজেলা, পুলিশ প্রশাসন ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে সবাই এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেন।

বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এএসএম রাজিউল করিম রাজু বলেন, ‘এখানে ১০ জনকে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে নারী ও শিশুসহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি তিনজনের চিকিৎসা চলছে।’

উদ্ধার হওয়া যাত্রীদের পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বোদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।