কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাস্তবমুখী হওয়া প্রয়োজন

গাজী আরিফ মান্নান

মাধ্যমিক পর্যায়ে কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সফলতা আসছে না, তার একমাত্র কারণ কৃষি এবং কম্পিউটার শিক্ষাকে বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে কৃষি ও কম্পিউটার বিষয়কে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহারিক অংশকে ব্যবহারিক খাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

কোন ধরনের হাতে-কলমে কাজ বা ব্যবহারিক কাজ শিখা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন পড়ে পাস করে পরবর্তী শ্রেণীতে গমন করে, এভাবে মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয়। বর্তমান জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে শিক্ষার্থীদের কৃষি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। যে দেশ কৃষি ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে সেই দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত।

৬ষ্ঠ-দশম শ্রেণী পর্যন্ত কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই, তারপরও শিক্ষার্থীরা কৃষি ও কম্পিউটারে পরিপূর্ণ দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জন করতে পারছেনা। শিক্ষার্থীদের সবার আগে কম্পিউটার বিষয় রিলেটেড প্রোগ্রামসমূহের ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা দরকার এবং সে সঙ্গে কৃষি বিষয়ের বাস্তবজ্ঞান অর্জন করার জন্য জমিতে কৃষি ফলফলাদি চাষবাস সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করা দরকার।

এই জ্ঞান অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ল্যাব ও কৃষি দক্ষতা অর্জন করতে নিয়মিত কৃষি জমি বা মাঠে কাজ করা দরকার। শুধু বইয়ের পড়া পড়ে বাস্তবজ্ঞান যেমন অর্জন করা যায় না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে একদিকে যেমন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বা শিক্ষার্থী সৃষ্টি করা সম্ভব হবে অন্যদিকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। একদিকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কৃষি পণ্যসমূহ বাজারজাতকরণের নতুন নতুন ধারণা অর্জন করতে পারবে, অন্যদিকে কৃষি পণ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের শ্রেণী অনুযায়ী বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ যেমন- ডিজাইন, ই-মেইল, লেখা কম্পোজ, ফটো এডিট করা, ছবি বা লেখা প্রিন্ট করা বা হিসাব-নিকাশ কীভাবে করা হয়, তা প্রশিক্ষণ দিয়ে। প্রত্যেক দলে একজনকে দলনেতা তৈরি করে তার তত্ত্বাবধানে একজন আরেকজনকে শিখানোর চেষ্টা করতে পারে এবং এতে অন্যরাও সহজে শিখাতে পারে বা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে। এ ছাড়া কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সমূহকে খন্ড খন্ড অংশে বিভক্ত করে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে করালে তারা সহজে বিষয়টা শিখতে পারবে। কম্পিউটারের অফিস প্রোগ্রামের কাজ সমূহ করতে করতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা যেমন আনন্দিত হবে তেমনি সহজেই কাজ আয়ত্তে আনতে পারবে। এতে সহজে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে নিজের কাজ বা তথ্য-উপাত্ত বা ধারণা বা সৃজনশীলতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবে।

এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং কম্পিউটার শিখানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক শ্রেণী ওয়ারি যদি কম্পিউটার শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করা যায়, তাহলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ দিতে হবে, তাহলে এগিয়ে যাবে তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন প্রযুক্তির শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন শিক্ষার্থী সহজেই নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষায় সর্বোত্তম সহযোগিতা বা কম্পিউটার ল্যাব এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

কম্পিউটার শিক্ষাকে যদি হাতে-কলমে ও কৃষি শিক্ষাকে যদি বাস্তব ভিত্তিক করার জন্য মাঠে-ময়দানে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করানো যায়, তাহলে এগিয়ে যাবে কৃষি ও প্রযুক্তি। আবার এই কৃষিকে প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে যেমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাবেচা করা হয়। এই প্রযুক্তি একদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য যেমনি সুবিধা দিয়েছে তেমনি আবার সহজ করে দিয়েছে জীবনধারা।

[লেখক : শিক্ষক, ফুলগাজী, ফেনী]

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১০ আশ্বিন ১৪২৯ ২৮ সফর ১৪৪৪

কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাস্তবমুখী হওয়া প্রয়োজন

গাজী আরিফ মান্নান

মাধ্যমিক পর্যায়ে কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়ার পরও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আশাব্যঞ্জক সফলতা আসছে না, তার একমাত্র কারণ কৃষি এবং কম্পিউটার শিক্ষাকে বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে। আমাদের দেশে কৃষি ও কম্পিউটার বিষয়কে সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যবহারিক অংশকে ব্যবহারিক খাতার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।

কোন ধরনের হাতে-কলমে কাজ বা ব্যবহারিক কাজ শিখা ছাড়া একজন শিক্ষার্থী শুধু পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্ন পড়ে পাস করে পরবর্তী শ্রেণীতে গমন করে, এভাবে মাধ্যমিকের গন্ডি পার হয়। বর্তমান জ্ঞান বিজ্ঞানের যুগে শিক্ষার্থীদের কৃষি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় দক্ষ ও অভিজ্ঞ করে তুলতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। যে দেশ কৃষি ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে সেই দেশের অর্থনীতি ও জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত।

৬ষ্ঠ-দশম শ্রেণী পর্যন্ত কৃষি ও কম্পিউটার শিক্ষা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে অনেক আগে থেকেই, তারপরও শিক্ষার্থীরা কৃষি ও কম্পিউটারে পরিপূর্ণ দক্ষতা বা জ্ঞান অর্জন করতে পারছেনা। শিক্ষার্থীদের সবার আগে কম্পিউটার বিষয় রিলেটেড প্রোগ্রামসমূহের ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জন করা দরকার এবং সে সঙ্গে কৃষি বিষয়ের বাস্তবজ্ঞান অর্জন করার জন্য জমিতে কৃষি ফলফলাদি চাষবাস সম্পর্কে প্রকৃত জ্ঞান আহরণ করা দরকার।

এই জ্ঞান অর্জন করতে শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার ল্যাব ও কৃষি দক্ষতা অর্জন করতে নিয়মিত কৃষি জমি বা মাঠে কাজ করা দরকার। শুধু বইয়ের পড়া পড়ে বাস্তবজ্ঞান যেমন অর্জন করা যায় না। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত করতে পারলে একদিকে যেমন দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কর্মী বা শিক্ষার্থী সৃষ্টি করা সম্ভব হবে অন্যদিকে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশের কৃষিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। একদিকে প্রযুক্তি শিক্ষায় শিক্ষিত হলে কৃষি পণ্যসমূহ বাজারজাতকরণের নতুন নতুন ধারণা অর্জন করতে পারবে, অন্যদিকে কৃষি পণ্য সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

শিক্ষার্থীদের শ্রেণী অনুযায়ী বিভিন্ন দলে বিভক্ত করে কম্পিউটারের বিভিন্ন কাজ যেমন- ডিজাইন, ই-মেইল, লেখা কম্পোজ, ফটো এডিট করা, ছবি বা লেখা প্রিন্ট করা বা হিসাব-নিকাশ কীভাবে করা হয়, তা প্রশিক্ষণ দিয়ে। প্রত্যেক দলে একজনকে দলনেতা তৈরি করে তার তত্ত্বাবধানে একজন আরেকজনকে শিখানোর চেষ্টা করতে পারে এবং এতে অন্যরাও সহজে শিখাতে পারে বা একে অপরকে সহযোগিতা করতে পারে। এ ছাড়া কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় সমূহকে খন্ড খন্ড অংশে বিভক্ত করে শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে করালে তারা সহজে বিষয়টা শিখতে পারবে। কম্পিউটারের অফিস প্রোগ্রামের কাজ সমূহ করতে করতে শিক্ষার্থীরা নিজেরা যেমন আনন্দিত হবে তেমনি সহজেই কাজ আয়ত্তে আনতে পারবে। এতে সহজে প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে খুব অল্প সময়ে নিজের কাজ বা তথ্য-উপাত্ত বা ধারণা বা সৃজনশীলতা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারবে।

এ জন্য সবার আগে প্রয়োজন প্রত্যেক বিদ্যালয়ে আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন এবং কম্পিউটার শিখানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রত্যেক শ্রেণী ওয়ারি যদি কম্পিউটার শিক্ষাকে বাস্তবমুখী করা যায়, তাহলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের হাতে-কলমে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ দিতে হবে, তাহলে এগিয়ে যাবে তাদের ভবিষ্যৎ ভাবনা। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে সবার আগে প্রয়োজন প্রযুক্তির শিক্ষা। শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হলে বাস্তবভিত্তিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দিতে হবে। প্রযুক্তির শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন শিক্ষার্থী সহজেই নিজেকে এবং দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে। সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার শিক্ষায় সর্বোত্তম সহযোগিতা বা কম্পিউটার ল্যাব এ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবেন।

কম্পিউটার শিক্ষাকে যদি হাতে-কলমে ও কৃষি শিক্ষাকে যদি বাস্তব ভিত্তিক করার জন্য মাঠে-ময়দানে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করানো যায়, তাহলে এগিয়ে যাবে কৃষি ও প্রযুক্তি। আবার এই কৃষিকে প্রযুক্তির সাহায্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। বর্তমানে যেমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের পণ্য কেনাবেচা করা হয়। এই প্রযুক্তি একদিকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জন্য যেমনি সুবিধা দিয়েছে তেমনি আবার সহজ করে দিয়েছে জীবনধারা।

[লেখক : শিক্ষক, ফুলগাজী, ফেনী]