ভাড়া বাড়িতেই চলছে অধিকাংশ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক স্বল্পতা, ন্যূনতম অবকাঠামোতে শিক্ষার্থী ভর্তি

শুধু প্রাইভেট নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন অনুমোদিত অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাঁগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানও ঠিক রাখা যাচ্ছে না বলে ইউজিসি জানিয়েছে।

এছাড়াও নতুন স্থাপিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘জ্যেষ্ঠ’ শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে জানিয়ে ইউজিসি বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জুনিয়র’ শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ছাড়া বেশিরভাগ নতুন বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা একেবারেই সীমিত।

সবমিলিয়ে অন্তত ১৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ভাড়া বাড়ি, শিক্ষক স্বল্পতা ও ন্যূনতম অবকাঠামোতে বছরের পর বছর শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে দেশে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষে গঠিত ইউজিসির একটি কমিটি গতকাল প্রথম ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে সভা করেছে। ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদ্যস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর সঞ্জয় কুমার অধিকারী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপ-উপাচার্য প্রফেসর মাহবুবা নাসরীন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুলের ডিন প্রফেসর আফরোজা পারভীন এবং ইউজিসি’র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ। কমিটিকে শীঘ্রই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি বিষয়ে ইউজিসি বলেছে, ‘সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

এছাড়া ভাড়া করা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে উল্লেখ করে ইউজিসি জানিয়েছে, ‘এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এজন্য নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।’

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সভায় ইউজিসি সদস্য ড. আলমগীর বলেন, ‘অবকাঠামো ও কারিকুলাম চূড়ান্ত না করে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য নীতিমালা করা অত্যন্ত জরুরি।’

শিক্ষার্থীদের ‘বৈশ্বিক বাজার উপযোগী’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে ইউজিসি সদস্য বলেন, ‘নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে শুরু করবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হলে দেশে গুণগত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত হবে এবং মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি হবে।’

নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সংকট রয়েছে উল্লেখ করে ইউজিসি সভায় বলা হয়, ‘জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্লান তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’

নীতিমালার খসড়া তৈরি হওয়ার পর কমিটি অংশীজনদের নিয়ে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সভা ও সেমিনারের আয়োজন করবে।

ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ের নতুন স্থাপিত প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের স্বল্পতা রয়েছে। ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় এগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

শুধুমাত্র ক্যাম্পাস নয়, অনেক স্থানে খ-কালীন শিক্ষক দিয়েও ক্লাস নেয়া হচ্ছে। নেই গবেষণার সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ। শিক্ষার্থী ভর্তির পর ভবন ভাড়া, ডেকোরেশন, শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে।

সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ভাড়া বাড়িতে চলছে। এই বিশ^বিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সম্প্রতি দেশব্যাপী আলোচনায় আসে।

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের আদলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রমও রাজধানীর একটি ভাড়া বাড়িতে চলছে। নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় নয় বছরেও নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা হয়নি।

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় আইন ২০০১ সালে অনুমোদন হলেও ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এই বিশ^বিদ্যালয়ের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। তবে নিজস্ব ভূমিতে টিনশেড গড় এবং কিছুটা ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বিশ^বিদ্যালয়টি।

জানা গেছে, পাহাড়ী এলাকায় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের। এজন্য নেপাল ও ভুটান বা এই জাতীয় কয়েকটি দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে অভিজ্ঞতার আলোকে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার কথা।

কিন্তু রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থায়নে এই ধরনের একাধিক দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন হলেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) সংশ্লিষ্ট ‘ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনার’দের সেই সুযোগ মেলেনি। এ কারণে ইইডির ‘ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনার’রা এই বিশ^বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে হিমশিম খাচ্ছেন।

এছাড়াও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগাং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে।

এগুলোর কোনটি ভাড়া বাড়িতে, কোনটিতে ন্যূনতম শিক্ষক না থাকা, কোনটিতে নামমাত্র অবকাঠামো থাকলেও শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ নেই বলে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১১ আশ্বিন ১৪২৯ ২৯ সফর ১৪৪৪

ভাড়া বাড়িতেই চলছে অধিকাংশ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষক স্বল্পতা, ন্যূনতম অবকাঠামোতে শিক্ষার্থী ভর্তি

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শুধু প্রাইভেট নয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ও ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন অনুমোদিত অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভাড়া করা বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাঁগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার মানও ঠিক রাখা যাচ্ছে না বলে ইউজিসি জানিয়েছে।

এছাড়াও নতুন স্থাপিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ‘জ্যেষ্ঠ’ শিক্ষকের স্বল্পতা রয়েছে জানিয়ে ইউজিসি বলছে, প্রতিষ্ঠানগুলো ‘জুনিয়র’ শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য ছাড়া বেশিরভাগ নতুন বিশ^বিদ্যালয়ে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা একেবারেই সীমিত।

সবমিলিয়ে অন্তত ১৫টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। ভাড়া বাড়ি, শিক্ষক স্বল্পতা ও ন্যূনতম অবকাঠামোতে বছরের পর বছর শিক্ষার্থী ভর্তি নেয়া হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে দেশে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষে গঠিত ইউজিসির একটি কমিটি গতকাল প্রথম ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে সভা করেছে। ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগের পরিচালক ড. শামসুল আরেফিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল এ তথ্য জানানো হয়।

এতে উল্লেখ করা হয়, সম্প্রতি ইউজিসি সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীরকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদ্যস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সদস্য প্রফেসর সঞ্জয় কুমার অধিকারী, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) উপ-উপাচার্য প্রফেসর মাহবুবা নাসরীন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি স্কুলের ডিন প্রফেসর আফরোজা পারভীন এবং ইউজিসি’র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উপ-পরিচালক মৌলি আজাদ। কমিটিকে শীঘ্রই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি বিষয়ে ইউজিসি বলেছে, ‘সাম্প্রতিককালে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, অধিকাংশ নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর কোন ধরনের প্রস্তুতি ছাড়াই শিক্ষা কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করছে।

এছাড়া ভাড়া করা ভবনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে উল্লেখ করে ইউজিসি জানিয়েছে, ‘এতে শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি শিক্ষা কার্যক্রমেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষার মান ঠিক রাখা যাচ্ছে না। এজন্য নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হওয়ার পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।’

নীতিমালা প্রণয়ন কমিটির সভায় ইউজিসি সদস্য ড. আলমগীর বলেন, ‘অবকাঠামো ও কারিকুলাম চূড়ান্ত না করে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। শিক্ষার্থীরাও উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এ বিষয়টি সমাধানের জন্য নীতিমালা করা অত্যন্ত জরুরি।’

শিক্ষার্থীদের ‘বৈশ্বিক বাজার উপযোগী’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে জানিয়ে ইউজিসি সদস্য বলেন, ‘নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম কীভাবে শুরু করবে সে বিষয়ে একটি নীতিমালা করা হলে দেশে গুণগত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত হবে এবং মানসম্পন্ন গ্রাজুয়েট তৈরি হবে।’

নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সংকট রয়েছে উল্লেখ করে ইউজিসি সভায় বলা হয়, ‘জুনিয়র শিক্ষকদের দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক মাস্টারপ্লান তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।’

নীতিমালার খসড়া তৈরি হওয়ার পর কমিটি অংশীজনদের নিয়ে নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে সভা ও সেমিনারের আয়োজন করবে।

ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকার বাইরে জেলা পর্যায়ের নতুন স্থাপিত প্রায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের স্বল্পতা রয়েছে। ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হওয়ায় এগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে।

শুধুমাত্র ক্যাম্পাস নয়, অনেক স্থানে খ-কালীন শিক্ষক দিয়েও ক্লাস নেয়া হচ্ছে। নেই গবেষণার সুযোগ-সুবিধা ও পরিবেশ। শিক্ষার্থী ভর্তির পর ভবন ভাড়া, ডেকোরেশন, শিক্ষা উপকরণ ক্রয়, জমি ক্রয়, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজে অর্থ ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠছে।

সম্প্রতি চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ভাড়া বাড়িতে চলছে। এই বিশ^বিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ সম্প্রতি দেশব্যাপী আলোচনায় আসে।

জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের আদলে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত ইসলামী আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের কার্যক্রমও রাজধানীর একটি ভাড়া বাড়িতে চলছে। নানা রকম অনিয়মের অভিযোগ থাকা এই প্রতিষ্ঠানটির প্রায় নয় বছরেও নিজস্ব ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা হয়নি।

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয় আইন ২০০১ সালে অনুমোদন হলেও ২০১৫ সালে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এই বিশ^বিদ্যালয়ের স্থায়ী অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। তবে নিজস্ব ভূমিতে টিনশেড গড় এবং কিছুটা ভাড়া বাড়িতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে বিশ^বিদ্যালয়টি।

জানা গেছে, পাহাড়ী এলাকায় ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা হওয়ার কথা রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের। এজন্য নেপাল ও ভুটান বা এই জাতীয় কয়েকটি দেশের বিশ^বিদ্যালয়ের অবকাঠামো পরিদর্শন শেষে অভিজ্ঞতার আলোকে অবকাঠামো নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার কথা।

কিন্তু রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের অর্থায়নে এই ধরনের একাধিক দেশ ভ্রমণ সম্পন্ন হলেও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের (ইইডি) সংশ্লিষ্ট ‘ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনার’দের সেই সুযোগ মেলেনি। এ কারণে ইইডির ‘ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনার’রা এই বিশ^বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণে হিমশিম খাচ্ছেন।

এছাড়াও খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চিটাগাং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহী মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটি, কিশোরগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনায় শেখ হাসিনা মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে।

এগুলোর কোনটি ভাড়া বাড়িতে, কোনটিতে ন্যূনতম শিক্ষক না থাকা, কোনটিতে নামমাত্র অবকাঠামো থাকলেও শিক্ষার ন্যূনতম পরিবেশ নেই বলে ইউজিসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।