শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার বেড়েছে ৮ গুণ, ৭৭ শতাংশই অপ্রয়োজনীয়

দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম (সিজারিয়ান বা সি-সেকশন) ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে গত এক দশকে। এই সি-সেকশনের ৬০ শতাংশই অপ্রয়োজনীয়, কিন্তু তারপরও এই প্রবণতা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে। ২০০৪ সালে দেশে সিজারিয়ান সেকশনের হার ছিল প্রায় চার শতাংশ যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশে।

গ্রামের তুলনায় শহরে কিংবা সরকারির চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যে বেশি সিজার হয়, তা নতুন নয়। তবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তাৎপর্যপূর্ণ একটি পরিবর্তন দেখা গেছে তা হলো গ্রামে বসবাসকারী নারীদের সি-সেকশনের হার বেশি বাড়ছে।

এসব পরিবর্তন ধরা পড়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সমীক্ষা বা গবেষণায়। সি-সেকশনের উচ্চ হার কমিয়ে আনতে জাতীয় পর্যায়ে যথাযথ পর্যবেক্ষণ, ব্যবস্থা ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

গতকাল বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে ‘ম্যাসিভ বুম অব সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ : এ হাউজহোল্ড লেভেল এনালাইসিস ২০০৪-২০১৮ (বাংলাদেশে শিশুর জন্মে বিশাল উল্লম্ফন : পরিবারভিত্তিক বিশ্লেষণ)’ শীর্ষক সমীক্ষার ফল তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের গবেষক ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশে মোট শিশু জন্মের ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সেটি ৩৩ শতাংশ। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবসেবা নেয়ার হার ৫০ শতাংশ।

বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয় শহরাঞ্চলে ২০০৪ সালে ১২ শতাংশ নারী সিজার বা সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করত, ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। পক্ষান্তরে গ্রামাঞ্চলে ২০০৪ সালে সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করত ২ শতাংশ নারী আর তা ২০১৭-১৮ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ২৯ শতাংশে। এবং এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করেন গবেষক আবদুর রাজ্জাক।

ড. রাজ্জাক বলেন, দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম। ১৪ বছরে সিজার বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম বেড়েছে ৮ গুণের বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগ সি-সেকশন হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়। হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে চার গুণ বেশি খরচ হচ্ছে সি-সেকশনে। তিনি বলেন, ‘এই জরিপ করতে গিয়ে দেখা যায় অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত নারীদের চেয়ে শিক্ষিত, চাকরিজীবী নারীরা সিজারের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। সিজার বা অস্ত্রোপাচার করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এমন মায়েদের প্রায় ৬০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশি পড়াশোনা জানা।’

ড. রাজ্জাক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৫২ শতাংশ এবং সরকারি হাসপাতালে ১১ শতাংশ সি-সেকশন বা সিজার হচ্ছে। ২০ বছরের নিচের বয়সী থেকে ৪৯ বছর বয়সী পর্যন্ত নারীদের মধ্যে সি-সেকশনের হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে। ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৮৫ শতাংশ মা প্রথম সন্তান জন্ম দিয়েছেন সি- সেকশনের মাধ্যমে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের মায়েদের প্রায় ৫৯ শতাংশ সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।

গ্রামের নারীরা সি-সেকশনের দিকে কেন ঝুঁকছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকের দালাল। এই দালালরা গর্ভবতী নারী ও তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে সিজার করতে উদ্বুদ্ধ করে।

ডা. রাজ্জাক মনে করেন, ‘অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক প্রসূতিকে সেবা দিতে যেন মরিয়া চিকিৎসকদের একাংশ, তেমনই এই পরিসংখ্যানের নেপথ্যে রয়েছে গ্রামীণ প্রসূতিদের মধ্যে শহুরে মহিলাদের অনুসরণ করার প্রবণতাও।’

বছরভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৩-০৪ সালে ৫৪১৩ জনের মধ্যে ২১৬ জন অর্থাৎ ৩.৯৯ শতাংশ; ২০০৭ সালে ৪৯০৩ জনের মধ্যে ৪২২ জন অর্থাৎ ৮.৬১ শতাংশ। ২০১১ সালে ৭৩৪১ জনের মধ্যে ১১০৮ জন অর্থাৎ ১৫.০৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে ৪৬২৬ জনের মধ্যে ১১২২ জন অর্থাৎ ২৪.২৫। ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৪৫ জনের মধ্যে ১৬৭৬ জনের মধ্যে অর্থাৎ ৩৩.২২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই তথ্যানুযায়ী ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অন্তত আট লাখ ৬০ হাজার সি-সেকশন হয়েছিল, এর ৭৭ শতাংশই ছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’।

সি-সেকশন বাড়ার ফলে অনেক পরিবারকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবে এক হাজার ৩০০ টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাভাবিক প্রসবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বেশি এবং সি-সেকশনে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।

এরকম অপ্রয়োজনীয় সিজার বা প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার রোধে ২০১৯ সালে হাইকোর্ট এক আদেশে সরকারকে ছয় মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছিল। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজ থমকে আছে।

বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব কতটা স্বাস্থ্যহানির কারণ এ বিষয়ে আরও বড় পরিসরে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য শুধু নয়, নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়ে আলাদাভাবে বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন। একটা শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা দরকার। কারণ স্বাভাবিক প্রসব ও সি-সেকশনের পর মা ও শিশু কেমন থাকে এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ফলোআপ করে মানুষকে জানাতে হবে।’

দেশের সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে বেসরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় সিলেটে ও সবচেয়ে কম বরিশালে। সিলেটে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৫৫৭ টাকা ও রাজশাহীতে ব্যয় হয় ১৫ হাজার ৭০৫ টাকা। আবার সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা। আর সববেচে কম হয় রংপুরে ৭ হাজার ৩১ টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গড়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় ২১ হাজার ৪৭৬ টাকা সিলেটে ও সবচেয়ে কম হয় রংপুরে ১২ হাজার ৮১ টাকা।

‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস)’ ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সি-সেকশন করা ২৭ হাজার ৩২৮ হাজার নারীর মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। যাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে।

বৃহস্পতিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ১৩ আশ্বিন ১৪২৯ ০১ সফর ১৪৪৪

শিশু জন্মে অস্ত্রোপচার বেড়েছে ৮ গুণ, ৭৭ শতাংশই অপ্রয়োজনীয়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

দেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম (সিজারিয়ান বা সি-সেকশন) ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে গত এক দশকে। এই সি-সেকশনের ৬০ শতাংশই অপ্রয়োজনীয়, কিন্তু তারপরও এই প্রবণতা সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে। ২০০৪ সালে দেশে সিজারিয়ান সেকশনের হার ছিল প্রায় চার শতাংশ যা ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ২২ শতাংশে।

গ্রামের তুলনায় শহরে কিংবা সরকারির চেয়ে বেসরকারি হাসপাতালে যে বেশি সিজার হয়, তা নতুন নয়। তবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় তাৎপর্যপূর্ণ একটি পরিবর্তন দেখা গেছে তা হলো গ্রামে বসবাসকারী নারীদের সি-সেকশনের হার বেশি বাড়ছে।

এসব পরিবর্তন ধরা পড়েছে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক সমীক্ষা বা গবেষণায়। সি-সেকশনের উচ্চ হার কমিয়ে আনতে জাতীয় পর্যায়ে যথাযথ পর্যবেক্ষণ, ব্যবস্থা ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

গতকাল বিআইডিএসের মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে ‘ম্যাসিভ বুম অব সি-সেকশন ডেলিভারি ইন বাংলাদেশ : এ হাউজহোল্ড লেভেল এনালাইসিস ২০০৪-২০১৮ (বাংলাদেশে শিশুর জন্মে বিশাল উল্লম্ফন : পরিবারভিত্তিক বিশ্লেষণ)’ শীর্ষক সমীক্ষার ফল তুলে ধরে প্রতিষ্ঠানটির পপুলেশন স্টাডিজ ডিভিশনের গবেষক ড. আবদুর রাজ্জাক সরকার।

অনুষ্ঠানে বলা হয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নির্দেশনা অনুযায়ী, একটি দেশে মোট শিশু জন্মের ১৫ শতাংশের বেশি সি-সেকশন হওয়া উচিত নয়। কিন্তু ২০১৭-১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে সেটি ৩৩ শতাংশ। দেশে প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবসেবা নেয়ার হার ৫০ শতাংশ।

বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয় শহরাঞ্চলে ২০০৪ সালে ১২ শতাংশ নারী সিজার বা সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করত, ২০১৭-১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ শতাংশে। পক্ষান্তরে গ্রামাঞ্চলে ২০০৪ সালে সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করত ২ শতাংশ নারী আর তা ২০১৭-১৮ সালে গিয়ে দাঁড়ায় ২৯ শতাংশে। এবং এই সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করেন গবেষক আবদুর রাজ্জাক।

ড. রাজ্জাক বলেন, দেশে দ্রুত হারে বাড়ছে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম। ১৪ বছরে সিজার বা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশুর জন্ম বেড়েছে ৮ গুণের বেশি। এর মধ্যে বেশিরভাগ সি-সেকশন হচ্ছে অপ্রয়োজনীয়। হাসপাতালে স্বাভাবিক প্রসবে যা খরচ হচ্ছে, তার চেয়ে চার গুণ বেশি খরচ হচ্ছে সি-সেকশনে। তিনি বলেন, ‘এই জরিপ করতে গিয়ে দেখা যায় অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত নারীদের চেয়ে শিক্ষিত, চাকরিজীবী নারীরা সিজারের প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। সিজার বা অস্ত্রোপাচার করে সন্তান জন্ম দিয়েছেন এমন মায়েদের প্রায় ৬০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের বেশি পড়াশোনা জানা।’

ড. রাজ্জাক বলেন, বেসরকারি হাসপাতালে প্রসবের ৫২ শতাংশ এবং সরকারি হাসপাতালে ১১ শতাংশ সি-সেকশন বা সিজার হচ্ছে। ২০ বছরের নিচের বয়সী থেকে ৪৯ বছর বয়সী পর্যন্ত নারীদের মধ্যে সি-সেকশনের হার ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশের মধ্যে। ৩০ থেকে ৩৯ বছর বয়সী ৮৫ শতাংশ মা প্রথম সন্তান জন্ম দিয়েছেন সি- সেকশনের মাধ্যমে। এছাড়া অতিরিক্ত ওজনের মায়েদের প্রায় ৫৯ শতাংশ সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিচ্ছেন।

গ্রামের নারীরা সি-সেকশনের দিকে কেন ঝুঁকছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এর প্রধান কারণ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিকের দালাল। এই দালালরা গর্ভবতী নারী ও তাদের স্বজনদের বুঝিয়ে সিজার করতে উদ্বুদ্ধ করে।

ডা. রাজ্জাক মনে করেন, ‘অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক প্রসূতিকে সেবা দিতে যেন মরিয়া চিকিৎসকদের একাংশ, তেমনই এই পরিসংখ্যানের নেপথ্যে রয়েছে গ্রামীণ প্রসূতিদের মধ্যে শহুরে মহিলাদের অনুসরণ করার প্রবণতাও।’

বছরভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, ২০০৩-০৪ সালে ৫৪১৩ জনের মধ্যে ২১৬ জন অর্থাৎ ৩.৯৯ শতাংশ; ২০০৭ সালে ৪৯০৩ জনের মধ্যে ৪২২ জন অর্থাৎ ৮.৬১ শতাংশ। ২০১১ সালে ৭৩৪১ জনের মধ্যে ১১০৮ জন অর্থাৎ ১৫.০৯ শতাংশ। ২০১৪ সালে ৪৬২৬ জনের মধ্যে ১১২২ জন অর্থাৎ ২৪.২৫। ২০১৭-১৮ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০৪৫ জনের মধ্যে ১৬৭৬ জনের মধ্যে অর্থাৎ ৩৩.২২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেনের এক জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই তথ্যানুযায়ী ২০১৮ সালে বাংলাদেশে অন্তত আট লাখ ৬০ হাজার সি-সেকশন হয়েছিল, এর ৭৭ শতাংশই ছিল ‘অপ্রয়োজনীয়’।

সি-সেকশন বাড়ার ফলে অনেক পরিবারকে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। বাড়িতে স্বাভাবিক প্রসবে এক হাজার ৩০০ টাকা, প্রাতিষ্ঠানিক স্বাভাবিক প্রসবে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার বেশি এবং সি-সেকশনে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।

এরকম অপ্রয়োজনীয় সিজার বা প্রসবকালীন অস্ত্রোপচার রোধে ২০১৯ সালে হাইকোর্ট এক আদেশে সরকারকে ছয় মাসের মধ্যে একটি নীতিমালা করার নির্দেশ দিয়েছিল। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সরকারের তরফ থেকে বিষয়টি চূড়ান্ত করার কাজ থমকে আছে।

বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান প্রসব কতটা স্বাস্থ্যহানির কারণ এ বিষয়ে আরও বড় পরিসরে গবেষণা করার প্রয়োজন আছে। এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার জন্য শুধু নয়, নারীর স্বাস্থ্য রক্ষায় এ বিষয়ে আলাদাভাবে বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন। একটা শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা দরকার। কারণ স্বাভাবিক প্রসব ও সি-সেকশনের পর মা ও শিশু কেমন থাকে এ বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ফলোআপ করে মানুষকে জানাতে হবে।’

দেশের সি-সেকশনের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে বেসরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় সিলেটে ও সবচেয়ে কম বরিশালে। সিলেটে ব্যয় হয় ৩ হাজার ৫৫৭ টাকা ও রাজশাহীতে ব্যয় হয় ১৫ হাজার ৭০৫ টাকা। আবার সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বেশি ব্যয় হয় সিলেটে ১৭ হাজার ৮৩৭ টাকা। আর সববেচে কম হয় রংপুরে ৭ হাজার ৩১ টাকা। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে গড়ে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হয় ২১ হাজার ৪৭৬ টাকা সিলেটে ও সবচেয়ে কম হয় রংপুরে ১২ হাজার ৮১ টাকা।

‘বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে (বিডিএইচএস)’ ২০০৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সি-সেকশন করা ২৭ হাজার ৩২৮ হাজার নারীর মধ্যে এ জরিপ চালানো হয়। যাদের বয়স ছিল ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে।