উত্তরবঙ্গের ১১৭ খেয়াঘাট নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি গ্রামের রহিমা বেগম। অসুস্থ শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য জেলা শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য খেঁয়া নৌকা ব্যবহার করতে হয় তাকে। কিন্তু নৌকায় অধিক যাত্রী থাকায় হাটু পানি ঠেলে নৌকায় উঠতে হয়। একদিকে অসুস্থ শাশুড়িকে কোলে নিয়ে নৌকায় ওঠা অন্যদিকে ওঠার জন্য নেই কোন সিঁড়ি।

এমন অবস্থাপনায় নারী হিসেবে তাকে নৌকাতে উঠতে হয়। এমন ঘটনা নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত বিষয় হলেও সমাধানে কারও সুদৃষ্টি ও পদক্ষেপ নেই। উল্লেখ্য, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদী দিয়ে ২ হাজার ১০০ নৌকার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ২ লক্ষাধিক মানুষ নৌ পথে চলাচল করে। সরকার ১১৭টি ঘাটের মাধ্যমে রাজস্ব আয় করলেও যাত্রী সেবার বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ফুলছড়ি উপজেলার সাবেক ইউপ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, এভাবেই চরাঞ্চলের নারী ও প্রতিবন্ধীরা চলাচল করছে। অধিক লোকের মধ্যে পুরুষেরা নৌকায় উঠতে পারলেও পানি ঠেলে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার নৌকায় উঠতে নারীদের সমস্যা হয়, তবে কি আর করার আছে। এ প্রসংগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী নৌকা যাত্রী জানান, নৌকা উঠতে সমস্যা হয়। পুরুষেরা নিজেদের মতো করে উঠতে পারে কিন্তু নারীদের তো লজ্জা শরম আছে-একারণে সহজেই উঠতে পারে না। সাঘাটার কালুরপাড়া চরের কলেজ ছাত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, নৌকায় উঠতে পানিতে ভিজে উঠতে হয়। আর এই ভেঁজা জামা নিয়ে বিরম্বনার সাথে ক্লাশ করতে হয়। তিনি বলেন, নৌকায় উঠতে যদি মই বা সিঁড়ি ব্যবহার করা হতো তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভাল হতো। এছাড়াও নারী পুরুষ গাদাগাদি করে বসতে হয় যা অনেকটাই বিব্রুতকর। এছাড়াও নৌকা রোদ ও বৃষ্টির জন্য কোন নিরাপত্তা নেই বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার মোল্লারচর গ্রামের সাবেক সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য হামিদা বেগম জানান, নারীরা সব ক্ষেত্রেই অবহেলারপাত্র। নারীদের নিয়ে কে ভাববে। নৌকায় উঠতে যে সমস্যা হয় সেটি তো আছেই এছাড়াও নেই নৌকায় ও ঘাটে নৌকায় ওয়াশ সুবিধা। তিনি আক্ষেপ এর সাথে বলেন যত কষ্ট ও দুর্ভোগ নারীদের।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে চরাঞ্চলে নৌপথে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা বছরের পর বছর চললেও সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। তিনি জানান, নৌকায় ভাড়া দিয়ে যাত্রী চলাচল করে কিন্তু যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয় না।

জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার আতা বলেন, নৌঘাটগুলো ইজারা দেয়ার সময় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার অ্িঙ্গকার থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো মানা হয় না। তিনি জানান এসব বিষয়ে সেভাবে দাবী উঠে না আসায় এভাবেই চলছে নৌপথের যাত্রীরা।

শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২ , ২২ আশ্বিন ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

উত্তরবঙ্গের ১১৭ খেয়াঘাট নারী ও প্রতিবন্ধীবান্ধব নয়

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

image

গাইবান্ধা : পানি ঠেলে অসুস্থ শাশুড়িকে নৌকায় তুলছেন এক গৃহবধূ -সংবাদ

গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার টেংরাকান্দি গ্রামের রহিমা বেগম। অসুস্থ শাশুড়িকে চিকিৎসার জন্য জেলা শহরের একটি হাসপাতালে নেওয়ার জন্য খেঁয়া নৌকা ব্যবহার করতে হয় তাকে। কিন্তু নৌকায় অধিক যাত্রী থাকায় হাটু পানি ঠেলে নৌকায় উঠতে হয়। একদিকে অসুস্থ শাশুড়িকে কোলে নিয়ে নৌকায় ওঠা অন্যদিকে ওঠার জন্য নেই কোন সিঁড়ি।

এমন অবস্থাপনায় নারী হিসেবে তাকে নৌকাতে উঠতে হয়। এমন ঘটনা নারী ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য নিয়মিত বিষয় হলেও সমাধানে কারও সুদৃষ্টি ও পদক্ষেপ নেই। উল্লেখ্য, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদী দিয়ে ২ হাজার ১০০ নৌকার মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ২ লক্ষাধিক মানুষ নৌ পথে চলাচল করে। সরকার ১১৭টি ঘাটের মাধ্যমে রাজস্ব আয় করলেও যাত্রী সেবার বিষয়টি নিয়ে কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে না বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

ফুলছড়ি উপজেলার সাবেক ইউপ চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, এভাবেই চরাঞ্চলের নারী ও প্রতিবন্ধীরা চলাচল করছে। অধিক লোকের মধ্যে পুরুষেরা নৌকায় উঠতে পারলেও পানি ঠেলে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতার নৌকায় উঠতে নারীদের সমস্যা হয়, তবে কি আর করার আছে। এ প্রসংগে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারী নৌকা যাত্রী জানান, নৌকা উঠতে সমস্যা হয়। পুরুষেরা নিজেদের মতো করে উঠতে পারে কিন্তু নারীদের তো লজ্জা শরম আছে-একারণে সহজেই উঠতে পারে না। সাঘাটার কালুরপাড়া চরের কলেজ ছাত্রী জাকিয়া আক্তার বলেন, নৌকায় উঠতে পানিতে ভিজে উঠতে হয়। আর এই ভেঁজা জামা নিয়ে বিরম্বনার সাথে ক্লাশ করতে হয়। তিনি বলেন, নৌকায় উঠতে যদি মই বা সিঁড়ি ব্যবহার করা হতো তাহলে আমাদের জন্য অনেক ভাল হতো। এছাড়াও নারী পুরুষ গাদাগাদি করে বসতে হয় যা অনেকটাই বিব্রুতকর। এছাড়াও নৌকা রোদ ও বৃষ্টির জন্য কোন নিরাপত্তা নেই বলে তিনি জানান।

সদর উপজেলার মোল্লারচর গ্রামের সাবেক সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য হামিদা বেগম জানান, নারীরা সব ক্ষেত্রেই অবহেলারপাত্র। নারীদের নিয়ে কে ভাববে। নৌকায় উঠতে যে সমস্যা হয় সেটি তো আছেই এছাড়াও নেই নৌকায় ও ঘাটে নৌকায় ওয়াশ সুবিধা। তিনি আক্ষেপ এর সাথে বলেন যত কষ্ট ও দুর্ভোগ নারীদের।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্্ সালাম জানান, সকল ক্ষেত্রে বিশেষ করে চরাঞ্চলে নৌপথে নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করতে হবে। নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা বছরের পর বছর চললেও সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসনকে। তিনি জানান, নৌকায় ভাড়া দিয়ে যাত্রী চলাচল করে কিন্তু যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে সরকার বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে মনিটরিং করা হয় না।

জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতাউর রহমান সরকার আতা বলেন, নৌঘাটগুলো ইজারা দেয়ার সময় নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার অ্িঙ্গকার থাকলে অনেক ক্ষেত্রে সেগুলো মানা হয় না। তিনি জানান এসব বিষয়ে সেভাবে দাবী উঠে না আসায় এভাবেই চলছে নৌপথের যাত্রীরা।