বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ জানালেন প্রতিমন্ত্রী

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের বড় একটি অংশে সাত ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে ‘স্বাভাবিক’ ‘কারিগরি ত্রুটি’ হিসেবেই দেখছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি জানিয়েছেন, এটা অস্বাভাবিক ঘটনা না, এ রকম ‘টেকনিক্যাল ফল্ট’ হতেই পারে। বিশেষ করে সাব-স্টেশনগুলো ক্ষেত্রে, যে সাব-স্টেশনগুলো বহু পুরোনো এবং সেগুলোর কার্যক্রম এখনও চলছে।

তবে, এর পেছনে অন্য কোন বিষয় রয়েছে কি না সেটা ‘তদন্ত’ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রাথমিক প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। আমরা জানি, এই সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের বিরাট অসুবিধা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি প্রতি মুহূর্তে জানান দেয়ার জন্য। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। কীভাবে আরও দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটার ব্যাপারেও পরিকল্পনা চলছে।’

যে দুটি তদন্ত কমিটি আপনারা গঠন করেছেন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কবে পাবেন, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রিপোর্টগুলো আসবে।’

এসব ঘটনা রোধ করার জন্য আপনারা কী করবেন, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে আমরা ঘণ্টাখানেক পর থেকে আস্তে আস্তে বিদ্যুৎ রিস্টোর করা শুরু করি। এটা ম্যানুয়ালি করা হয়েছে। বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের এখন অটোমেশনে যেতে হবে এবং আমরা কাজ শুরু করেছি। হয়তো আগেই করতে পারতাম কিন্তু কোভিডের কারণে দুটি বছর পিছিয়ে গেছি। মানে এটা শেষ হতে হয়তো আরও দুই বছর লাগবে। গ্রিডকে স্মার্ট গ্রিডে পরিণত করা, এটা একটা বড় কাজ এই মুহূর্তে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট চলে আসবে। আরও প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট আমাদের সোলার প্যানেল থেকে যোগ হবে। এ কারণে আমি মনে করি খুব দ্রুততার সঙ্গে অটোমেশনে গেলে পরে আরও স্থিতিশীল করতে পারবো আমরা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দলীয় নেতারা অনেক কথা বলছেন। দেখতে হবে তাদের সময় কী অবস্থা ছিল। উনাদের সময় প্রতিদিনই ১৬-১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। উনাদের মুখে এ ধরনের কথা মানায় না। সেই অবস্থায় উনারা যে পান্ডিত্য দেখাচ্ছেন, একবার তাদের নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখা উচিত।’

নসরুল হামিদ বলেন, টেকনিক্যাল ফল্ট থাকলে আমরা সমাধান করবো। ট্রান্সমিশন লাইনে আমরা পিছিয়ে আছি এখনও। কোভিডের কারণে স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এখনও কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা আশা করি এগুলো কেটে যাবে। আপনারা দেখেছেন, আমরা রিস্টোর করতে কত দ্রুত আনতে পারি। পৃথিবীর অন্য দেশে ৩-৪ দিন লেগে গেছে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। ১ ঘণ্টা পরেই রিস্টোর করা শুরু হয়ে গেছে। অবশ্যই টেকনিক্যাল ফল্ট আছে। পিন টু পিন ধরতে গেলে সময় লাগবে। এজন্য দুটি কমিটি করে দিয়েছি। একটি বিদ্যুৎ বিভাগের ভেতরের লোক, আরেকটি বাইরের লোক। ২০১৪ সালের চেয়ে অনেক অ্যাডভান্স হয়ে গেছে, এখন সেই পরিস্থিতি নেই আমাদের।

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ঘটনাটা ছিল একরকম। আর এই ঘটনাটা অন্যরকম। দুইটা দুই রকম ঘটনা। পিজিসিবি এখন অনেক অ্যাডভান্স লেভেলে চলে গেছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করার কারণে আমরা দ্রুততার সঙ্গে আনতে (রিস্টোর) পেরেছি। এক ঘণ্টা পর থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছিল রিস্টোর করা। এটা একটা বড় ব্যাপার। অবশ্যই টেকনিক্যাল ফল্ট এখানে আছে। একদম পিন টু পিন যদি আমরা ধরতে যাই, তাহলে একটু সময় লাগবে। এ কারণে আমি দুটি কমিটি করে দিয়েছি। একটি কমিটি হলো বিদ্যুৎ বিভাগের ভেতরের লোকদের নিয়ে, আরেকটি কমিটি হলো বিদ্যুৎ বিভাগের বাইরের লোকদের নিয়ে।

বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নাশকতা কি না, তা যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে দুটো জিনিস। একটা হলো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে যেটা শুনছি, এরকম ঘটনা আরও হবে। এটা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বললেন। আরও হবে মানে কিন্তু এখানে অন্যরকম ষড়যন্ত্রের কথা। উনি জানেন কীভাবে? যে ব্যক্তিটা তার নিজের আমলে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারেননি, ট্রান্সমিশনের লাইন তো বাদই দিলাম। একমাত্র খাম্বা ছাড়া কিছুই লাগাতে পারেননি। উনি কিন্তু পন্ডিতের মতো কথা বলে দিলেন, এরকম ঘটনা আরও হবে। এখানে কোন নাশকতা আছে কি না, সেটা যাচাই-বাছাই চলছে। এটা হচ্ছে একটা বিষয়। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে অবশ্যই টেকনিক্যাল সাইডটাও আমরা দেখছি।’

গত মঙ্গলবার গ্রিডে ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে রাজধানীসহ দেশের একটি বড় অংশ দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন ছিল। ওইদিন দুপুর ২টা ৪ মিনিটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়খালী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বেশকিছু জেলা একসঙ্গে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিক থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ আসতে শুরু করে।

শুক্রবার, ০৭ অক্টোবর ২০২২ , ২২ আশ্বিন ১৪২৯ ১০ সফর ১৪৪৪

বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ জানালেন প্রতিমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বিদ্যুতের জাতীয় গ্রিডের বড় একটি অংশে সাত ঘণ্টার বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে ‘স্বাভাবিক’ ‘কারিগরি ত্রুটি’ হিসেবেই দেখছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। তিনি জানিয়েছেন, এটা অস্বাভাবিক ঘটনা না, এ রকম ‘টেকনিক্যাল ফল্ট’ হতেই পারে। বিশেষ করে সাব-স্টেশনগুলো ক্ষেত্রে, যে সাব-স্টেশনগুলো বহু পুরোনো এবং সেগুলোর কার্যক্রম এখনও চলছে।

তবে, এর পেছনে অন্য কোন বিষয় রয়েছে কি না সেটা ‘তদন্ত’ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক সাংবাদিকের করা প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রাথমিক প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। আমরা জানি, এই সময়ের মধ্যে গ্রাহকদের বিরাট অসুবিধা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করেছি প্রতি মুহূর্তে জানান দেয়ার জন্য। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে এই অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এ ধরনের ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়। কীভাবে আরও দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নেয়া যায়, সেটার ব্যাপারেও পরিকল্পনা চলছে।’

যে দুটি তদন্ত কমিটি আপনারা গঠন করেছেন পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কবে পাবেন, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করছি, ‘আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রিপোর্টগুলো আসবে।’

এসব ঘটনা রোধ করার জন্য আপনারা কী করবেন, জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়ার ফলে আমরা ঘণ্টাখানেক পর থেকে আস্তে আস্তে বিদ্যুৎ রিস্টোর করা শুরু করি। এটা ম্যানুয়ালি করা হয়েছে। বড় বিষয় হচ্ছে আমাদের এখন অটোমেশনে যেতে হবে এবং আমরা কাজ শুরু করেছি। হয়তো আগেই করতে পারতাম কিন্তু কোভিডের কারণে দুটি বছর পিছিয়ে গেছি। মানে এটা শেষ হতে হয়তো আরও দুই বছর লাগবে। গ্রিডকে স্মার্ট গ্রিডে পরিণত করা, এটা একটা বড় কাজ এই মুহূর্তে। ২০২৪ সালের মধ্যে আমাদের নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট চলে আসবে। আরও প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট আমাদের সোলার প্যানেল থেকে যোগ হবে। এ কারণে আমি মনে করি খুব দ্রুততার সঙ্গে অটোমেশনে গেলে পরে আরও স্থিতিশীল করতে পারবো আমরা।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের বিরোধী দলীয় নেতারা অনেক কথা বলছেন। দেখতে হবে তাদের সময় কী অবস্থা ছিল। উনাদের সময় প্রতিদিনই ১৬-১৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। উনাদের মুখে এ ধরনের কথা মানায় না। সেই অবস্থায় উনারা যে পান্ডিত্য দেখাচ্ছেন, একবার তাদের নিজেদের চেহারা আয়নায় দেখা উচিত।’

নসরুল হামিদ বলেন, টেকনিক্যাল ফল্ট থাকলে আমরা সমাধান করবো। ট্রান্সমিশন লাইনে আমরা পিছিয়ে আছি এখনও। কোভিডের কারণে স্থবির হয়ে গিয়েছিল। এখনও কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা আশা করি এগুলো কেটে যাবে। আপনারা দেখেছেন, আমরা রিস্টোর করতে কত দ্রুত আনতে পারি। পৃথিবীর অন্য দেশে ৩-৪ দিন লেগে গেছে। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। ১ ঘণ্টা পরেই রিস্টোর করা শুরু হয়ে গেছে। অবশ্যই টেকনিক্যাল ফল্ট আছে। পিন টু পিন ধরতে গেলে সময় লাগবে। এজন্য দুটি কমিটি করে দিয়েছি। একটি বিদ্যুৎ বিভাগের ভেতরের লোক, আরেকটি বাইরের লোক। ২০১৪ সালের চেয়ে অনেক অ্যাডভান্স হয়ে গেছে, এখন সেই পরিস্থিতি নেই আমাদের।

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৪ সালের ঘটনাটা ছিল একরকম। আর এই ঘটনাটা অন্যরকম। দুইটা দুই রকম ঘটনা। পিজিসিবি এখন অনেক অ্যাডভান্স লেভেলে চলে গেছে।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করার কারণে আমরা দ্রুততার সঙ্গে আনতে (রিস্টোর) পেরেছি। এক ঘণ্টা পর থেকেই কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছিল রিস্টোর করা। এটা একটা বড় ব্যাপার। অবশ্যই টেকনিক্যাল ফল্ট এখানে আছে। একদম পিন টু পিন যদি আমরা ধরতে যাই, তাহলে একটু সময় লাগবে। এ কারণে আমি দুটি কমিটি করে দিয়েছি। একটি কমিটি হলো বিদ্যুৎ বিভাগের ভেতরের লোকদের নিয়ে, আরেকটি কমিটি হলো বিদ্যুৎ বিভাগের বাইরের লোকদের নিয়ে।

বিদ্যুৎ সরবরাহের জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ বিপর্যয় নাশকতা কি না, তা যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখানে দুটো জিনিস। একটা হলো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কাছে যেটা শুনছি, এরকম ঘটনা আরও হবে। এটা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বললেন। আরও হবে মানে কিন্তু এখানে অন্যরকম ষড়যন্ত্রের কথা। উনি জানেন কীভাবে? যে ব্যক্তিটা তার নিজের আমলে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দিতে পারেননি, ট্রান্সমিশনের লাইন তো বাদই দিলাম। একমাত্র খাম্বা ছাড়া কিছুই লাগাতে পারেননি। উনি কিন্তু পন্ডিতের মতো কথা বলে দিলেন, এরকম ঘটনা আরও হবে। এখানে কোন নাশকতা আছে কি না, সেটা যাচাই-বাছাই চলছে। এটা হচ্ছে একটা বিষয়। আর দ্বিতীয় বিষয় হচ্ছে অবশ্যই টেকনিক্যাল সাইডটাও আমরা দেখছি।’

গত মঙ্গলবার গ্রিডে ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে রাজধানীসহ দেশের একটি বড় অংশ দীর্ঘসময় বিদ্যুৎহীন ছিল। ওইদিন দুপুর ২টা ৪ মিনিটে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, নোয়খালী, চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বেশকিছু জেলা একসঙ্গে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়ে। সন্ধ্যার দিক থেকে ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুৎ আসতে শুরু করে।