অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট-স্থাপনা-পুকুর খননে জলাবদ্ধ ৪ হাজার একর ফসলি জমি

সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৭৩১ একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই ৬-৭ মাস পানির নিচে থাকে। ফলে বছরের দুটি আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। কোন কোন জমিতে সারাবছরই জলাবদ্ধ থাকায় কোন আবাদই হয় না বলে জানা গেছে। এতে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জানা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র পুকুর খনন, খাল, নদী ও ক্যানেল বন্ধ করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, সেতু-কালভাটের মুখ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। জানা গেছে জেলায় প্রায় পৌনে চার হাজার একর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে । তবে বাস্তবে এর পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি বলে স্থানীয় সূত্র জানা গেছে । বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার ৯ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩১ একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় অবাধে পুকুর খনন, খাল-ক্যানেল বন্ধ করে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, সান্তান, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া ও শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, হাটিকুমরুল, সংলপ, বাঙ্গালা ও উল্লাপাড়া সদরে জলাবদ্ধা রয়েছে। এসব এলাকায় বর্ষা পেরিয়ে শীত এলেও অনেক জমিতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে।

তাড়াশ সদর ইউনিয়নের এসএমই (ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা) কৃষক মনসুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও ভুইয়াগাঁতী থেকে সলঙ্গার আমসাড়া, ঝুরঝুরিয়া, মাধবপুর, আগরপুর হয়ে মহিষলুটি পর্যন্ত একটি ছোট নদী ছিল। বর্ষা মৌসুমে ওই নদীতে নৌকা নিয়ে নওগাঁ ও অনুখাঁর হাটে যাওয়া যেত। কিন্তু যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে নদীটির বিভিন্ন স্থান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নৌ চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে ।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফন্নাহার লুনা বলেন, এখানে বেশ কয়েকবছর ধরেই প্রায় ৫শ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ ছিল। চলতি বছরও প্রায় সাড়ে ২শ ১৫ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে। পুকুর খননের কারণে আশপাশের জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়। সেই জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না, ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই পুকুর খননের দিকে ঝুঁকছেন। উল্লাপাড়া কৃষি কর্মকর্তা সুবর্না ইয়াসমিন সুমি বলেন, উল্লাপাড়াতে ৩৬ হেক্টর আংশিক এবং ১৪ দশমিক ৭৬ হেক্টর পুরো জমি জলাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কোন প্রকল্প না থাকায় আমরা নিজেরা জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারিনা। তবে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা জমির জলাবদ্ধতা দূর করে আবাদের ব্যবস্থা করে থাকি। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কনা মন্ডল বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় জাইকার তিনটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাছুদ আলম বলেন, সিরাজগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে দেওয়া আবেদনগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অস্থায়ী জলাবদ্ধ জমিগুলোতে একটি বা দুটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় তাছাড়া উল্লাপাড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে পাইপ দিয়ে পানি বের করে জমিতে ফসল উৎপাদন করা হয়। জমির স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে।

শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২ , ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৪

অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট-স্থাপনা-পুকুর খননে জলাবদ্ধ ৪ হাজার একর ফসলি জমি

জেলা বার্তা পরিবেশক, সিরাজগঞ্জ

image

সিরাজগঞ্জ : জলাবদ্ধতায় ব্যহত কৃষি উৎপাদন -সংবাদ

সিরাজগঞ্জে ৩ হাজার ৭৩১ একর জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এসব জমির অধিকাংশই ৬-৭ মাস পানির নিচে থাকে। ফলে বছরের দুটি আবাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। কোন কোন জমিতে সারাবছরই জলাবদ্ধ থাকায় কোন আবাদই হয় না বলে জানা গেছে। এতে বিভিন্ন ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। জানা যায়, জেলার বিভিন্ন এলাকায় যত্রতত্র পুকুর খনন, খাল, নদী ও ক্যানেল বন্ধ করে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণ, সেতু-কালভাটের মুখ বন্ধ করে স্থাপনা নির্মাণের ফলে জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়ে পড়ছে। জানা গেছে জেলায় প্রায় পৌনে চার হাজার একর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে । তবে বাস্তবে এর পরিমাণ ৫ হাজার একরের বেশি বলে স্থানীয় সূত্র জানা গেছে । বিভিন্ন উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে জেলার ৯ উপজেলায় ৩ হাজার ৭৩১ একর জমি জলাবদ্ধ হয়ে আছে। বিশেষ করে চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় অবাধে পুকুর খনন, খাল-ক্যানেল বন্ধ করে রাস্তা ও স্থাপনা নির্মাণের ফলে প্রতিবছরই জলাবদ্ধতা বাড়ছে। তাড়াশ উপজেলার সদর ইউনিয়নের মাধবপুর, সান্তান, মথুরাপুর, বিদি মাগুড়া ও শ্রীকৃষ্ণপুর এলাকায় প্রায় এক হাজার বিঘা জমি পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া উল্লাপাড়া উপজেলার রামকৃষ্ণপুর, হাটিকুমরুল, সংলপ, বাঙ্গালা ও উল্লাপাড়া সদরে জলাবদ্ধা রয়েছে। এসব এলাকায় বর্ষা পেরিয়ে শীত এলেও অনেক জমিতে এখনো হাঁটু পানি রয়েছে।

তাড়াশ সদর ইউনিয়নের এসএমই (ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তা) কৃষক মনসুর রহমান বলেন, কয়েক বছর আগেও ভুইয়াগাঁতী থেকে সলঙ্গার আমসাড়া, ঝুরঝুরিয়া, মাধবপুর, আগরপুর হয়ে মহিষলুটি পর্যন্ত একটি ছোট নদী ছিল। বর্ষা মৌসুমে ওই নদীতে নৌকা নিয়ে নওগাঁ ও অনুখাঁর হাটে যাওয়া যেত। কিন্তু যত্রতত্র পুকুর খননের ফলে নদীটির বিভিন্ন স্থান বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে নৌ চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে ।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার লুৎফন্নাহার লুনা বলেন, এখানে বেশ কয়েকবছর ধরেই প্রায় ৫শ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ ছিল। চলতি বছরও প্রায় সাড়ে ২শ ১৫ হেক্টর জমি জলাবদ্ধ রয়েছে। পুকুর খননের কারণে আশপাশের জমিগুলো জলাবদ্ধ হয়। সেই জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না, ফলে কৃষকরা বাধ্য হয়েই পুকুর খননের দিকে ঝুঁকছেন। উল্লাপাড়া কৃষি কর্মকর্তা সুবর্না ইয়াসমিন সুমি বলেন, উল্লাপাড়াতে ৩৬ হেক্টর আংশিক এবং ১৪ দশমিক ৭৬ হেক্টর পুরো জমি জলাবদ্ধতা রয়েছে। আমাদের কৃষি বিভাগে জলাবদ্ধতা নিরসনের কোন প্রকল্প না থাকায় আমরা নিজেরা জলাবদ্ধতা নিরসনের উদ্যোগ নিতে পারিনা। তবে প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা জমির জলাবদ্ধতা দূর করে আবাদের ব্যবস্থা করে থাকি। রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার তৃপ্তি কনা মন্ডল বলেন, আমরা জলাবদ্ধতা নিয়ে কাজ করছি। ইতোমধ্যে এ উপজেলায় জাইকার তিনটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। তিনটি প্রকল্পের কাজ শীঘ্রই শুরু হবে। বিএডিসির (ক্ষুদ্র সেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাছুদ আলম বলেন, সিরাজগঞ্জের জলাবদ্ধতা নিরসনে দেওয়া আবেদনগুলোর মধ্যে কিছু বাস্তবায়ন হয়েছে। কিছু বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে। সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, অস্থায়ী জলাবদ্ধ জমিগুলোতে একটি বা দুটি ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় তাছাড়া উল্লাপাড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে পাইপ দিয়ে পানি বের করে জমিতে ফসল উৎপাদন করা হয়। জমির স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনের বিষয়টি জেলা সমন্বয় সভায় উত্থাপন করা হবে।