সিলেটে বিএনপির সমাবেশ, ধর্মঘটে দুর্ভোগ পোহাবে সাধারণ মানুষ

বিএনপির আগামীকালের গণসমাবেশের দিন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। প্রথম দিকে শুধু সিলেটে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও তা এখন বিভাগজুড়ে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমাবেশে উপস্থিতিতে বাধার সৃষ্টি করতেই এ ধর্মঘট।

যদিও সিলেট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন বলেছে, এই সমাবেশের সঙ্গে ধর্মঘটের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে ধর্মঘটের আশঙ্কা থাকায় আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা শহর থেকে বিএপির নেতাকর্মীরা এসে সিলেট নগরে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির বহু কাক্সিক্ষত এই সমাবেশ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে বিভাগজুড়ে চলছে প্রচার কার্যক্রম। চলছে প্রস্তুতির কাজ। ইতোমধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে মঞ্চ নির্মাণ কাজ। মাঠের পূর্ব পাশে মাদ্রাসার ঠিক লাগোয়া অংশে গণসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

নেতাদের দাবি এই গণসমাবেশে সিলেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হবে।

চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সব বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সিলেটে সমাবেশ করবে দলটি।

সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সমাবেশস্থলে পুরোদমে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মাঠের পূর্ব দিকে এই মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে লম্বা করে এই মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রঙিন পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন স্থান ও সমাবেশস্থলের চারপাশ। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের তদারকিতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে মঞ্চ নির্মাণ ও মাঠ সাজানোর কাজ।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে গণসমাবেশের জন্য ৭০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। জোরেশোরেই চলছে মঞ্চ নির্মাণকাজ।’

১৯ নভেম্বর পুরো সিলেট নগর জনসমুদ্রে পরিণত হবে আশা প্রকাশ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মাঠের প্রস্তুতিসহ অন্য প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এখন বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীর লক্ষ্য হচ্ছে ১৯ নভেম্বরের বিভাগীয় জনসমাবেশ সফল করা। কোন বাধাবিপত্তিতে জনজোয়ার ঠেকানো যাবে না। আমারা আশা করি এই সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ’

এদিকে প্রথম দিকে শুধু সিলেটে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও পরে বিভাগের চারটি জেলায় ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এতে করে সিলেটের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। রাতুল চৌধুরী নামের মদিনা মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল আগামীকাল। আগামী রোববার কোন এক অফিসে তার দরকার। কিন্তু এই বাস ধর্মঘটের কারণে তিনি ভ্রমণের তারিখ পিছিয়েছেন। আবুল কালাম নামের সিলেটের জকিগঞ্জ এর সবজি ব্যবসায়ী বলেন, শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। ধর্মঘটে কীভাবে আসবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা বলেন, পরিবহন মালিক বা শ্রমিক ইউনিয়ন যাত্রীদের কথা বিবেচনা না করে এভাবে ধর্মঘট দিয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সিএনজি অটোরিকশার নতুন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ, সিএনজি অটোরিকশার সামনের গ্লাসে গ্রিল লাগানো বন্ধ, ব্যাটারিচালিত অবৈধ টমটম চলাচল বন্ধ, ট্রাক, ট্যাংকলরি, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানে চাঁদাবাজি, পুলিশি হয়রানি বন্ধ এবং মৌলভীবাজারে একটি স্থায়ী ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের দাবিতে আগামী ১৮ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার সব রুটে বাস-মিনিবাস ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লামাকাজী এলাকার এমএ খান সেতুর টোল আদায় বন্ধ, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও পরীক্ষামূলক সিএনজি চালিত অটোরিকশা বন্ধ, সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দাবিতে আগে থেকেই আন্দোলন চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুদিন বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে বাস ধর্মঘটের কোনও সম্পর্ক নেই।

হবিগঞ্জ জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় সালামতপুরে নির্মিত সরকারি বাস টার্মিনালে বাসগুলো যেতে দিচ্ছে না। উপজেলা শহরে যানজটের অজুহাতে তারা টার্মিনালে বাস যেতে দেয় না। গত বুধবার হঠাৎ গাড়িগুলো আটকে দিয়ে জরিমানা করেছে। অথচ অবৈধ নসিমন, করিমন, ইজিবাইক শহরে যানজট সৃষ্টি করলেও সেগুলো বন্ধ করা হচ্ছে না। তাই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।

শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর ২০২২ , ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৪

সিলেটে বিএনপির সমাবেশ, ধর্মঘটে দুর্ভোগ পোহাবে সাধারণ মানুষ

প্রতিনিধি, সিলেট

বিএনপির আগামীকালের গণসমাবেশের দিন ধর্মঘটে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। প্রথম দিকে শুধু সিলেটে বাস ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও তা এখন বিভাগজুড়ে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সমাবেশে উপস্থিতিতে বাধার সৃষ্টি করতেই এ ধর্মঘট।

যদিও সিলেট সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন বলেছে, এই সমাবেশের সঙ্গে ধর্মঘটের কোন সম্পর্ক নেই। তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। তবে ধর্মঘটের আশঙ্কা থাকায় আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা শহর থেকে বিএপির নেতাকর্মীরা এসে সিলেট নগরে অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপির বহু কাক্সিক্ষত এই সমাবেশ আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফলে বিভাগজুড়ে চলছে প্রচার কার্যক্রম। চলছে প্রস্তুতির কাজ। ইতোমধ্যে প্রায় শেষ হয়েছে মঞ্চ নির্মাণ কাজ। মাঠের পূর্ব পাশে মাদ্রাসার ঠিক লাগোয়া অংশে গণসমাবেশের মঞ্চ নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।

নেতাদের দাবি এই গণসমাবেশে সিলেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি লোকসমাগম হবে।

চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে এবং বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে দেশের সব বিভাগীয় শহরগুলোতে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সিলেটে সমাবেশ করবে দলটি।

সিলেটের আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সমাবেশস্থলে পুরোদমে মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়। মাঠের পূর্ব দিকে এই মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে লম্বা করে এই মঞ্চ তৈরি হচ্ছে। এছাড়া রঙিন পোস্টার, ডিজিটাল ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহরের বিভিন্ন স্থান ও সমাবেশস্থলের চারপাশ। বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের তদারকিতে দ্রুত এগিয়ে চলেছে মঞ্চ নির্মাণ ও মাঠ সাজানোর কাজ।

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে গণসমাবেশের জন্য ৭০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট প্রশস্ত মঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। জোরেশোরেই চলছে মঞ্চ নির্মাণকাজ।’

১৯ নভেম্বর পুরো সিলেট নগর জনসমুদ্রে পরিণত হবে আশা প্রকাশ করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘মাঠের প্রস্তুতিসহ অন্য প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এখন বিএনপির প্রত্যেক নেতাকর্মীর লক্ষ্য হচ্ছে ১৯ নভেম্বরের বিভাগীয় জনসমাবেশ সফল করা। কোন বাধাবিপত্তিতে জনজোয়ার ঠেকানো যাবে না। আমারা আশা করি এই সমাবেশে মানুষের উপস্থিতি রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। ’

এদিকে প্রথম দিকে শুধু সিলেটে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও পরে বিভাগের চারটি জেলায় ধর্মঘট আহ্বান করা হয়। এতে করে সিলেটের সঙ্গে দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। রাতুল চৌধুরী নামের মদিনা মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল আগামীকাল। আগামী রোববার কোন এক অফিসে তার দরকার। কিন্তু এই বাস ধর্মঘটের কারণে তিনি ভ্রমণের তারিখ পিছিয়েছেন। আবুল কালাম নামের সিলেটের জকিগঞ্জ এর সবজি ব্যবসায়ী বলেন, শনিবার বিকেলে সিলেট নগরের এক আত্মীয়ের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। ধর্মঘটে কীভাবে আসবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছেন। তারা বলেন, পরিবহন মালিক বা শ্রমিক ইউনিয়ন যাত্রীদের কথা বিবেচনা না করে এভাবে ধর্মঘট দিয়ে সাধারণ মানুষকে দুর্ভোগের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মৌলভীবাজার জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, সিএনজি অটোরিকশার নতুন রেজিস্ট্রেশন বন্ধ, সিএনজি অটোরিকশার সামনের গ্লাসে গ্রিল লাগানো বন্ধ, ব্যাটারিচালিত অবৈধ টমটম চলাচল বন্ধ, ট্রাক, ট্যাংকলরি, পিকআপ, কাভার্ডভ্যানে চাঁদাবাজি, পুলিশি হয়রানি বন্ধ এবং মৌলভীবাজারে একটি স্থায়ী ট্রাকস্ট্যান্ড নির্মাণের দাবিতে আগামী ১৮ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ১৯ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মৌলভীবাজার জেলার সব রুটে বাস-মিনিবাস ও পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।

সুনামগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের লামাকাজী এলাকার এমএ খান সেতুর টোল আদায় বন্ধ, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও পরীক্ষামূলক সিএনজি চালিত অটোরিকশা বন্ধ, সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল সংস্কার ও আধুনিকায়নের দাবিতে আগে থেকেই আন্দোলন চলছে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল সকাল ৬টা থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুদিন বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বিএনপির সমাবেশের সঙ্গে বাস ধর্মঘটের কোনও সম্পর্ক নেই।

হবিগঞ্জ জেলা মোটর মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. ফজলুর রহমান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে জেলার নবীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন স্থানীয় সালামতপুরে নির্মিত সরকারি বাস টার্মিনালে বাসগুলো যেতে দিচ্ছে না। উপজেলা শহরে যানজটের অজুহাতে তারা টার্মিনালে বাস যেতে দেয় না। গত বুধবার হঠাৎ গাড়িগুলো আটকে দিয়ে জরিমানা করেছে। অথচ অবৈধ নসিমন, করিমন, ইজিবাইক শহরে যানজট সৃষ্টি করলেও সেগুলো বন্ধ করা হচ্ছে না। তাই অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে।