তিন দিনের ফুডপ্রো এক্সপো শুরু, বিদেশি বাজার ধরার তাগিদ পরিকল্পনামন্ত্রীর

করোনা সংকট কাটিয়ে অষ্টমবারের মতো শুরু হলো তিন দিনের বাপা ফুডপ্রো এক্সপো। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল এ এক্সপোর উদ্বোধন করেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া এ এক্সপো চলবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য এ এক্সপো উন্মুক্ত থাকবে।

প্রদর্শনী ছাড়াও এতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে একটি কারিগরি সেশন হয়। এ খাতে যুক্ত দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রকমারি খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করে। এছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন ও জাপানসহ নানান দেশের নামিদামি কোম্পানি তাদের ফুড প্রসেসিং মেশিন প্রদর্শন করছেন।

উদ্বোধনের পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর সভাপতি এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আগের জামানায় সবাই দেশ দখল করতো। ব্রিটিশ-জার্মানি-মোগলেরা আক্রমণ করে দেশ দখল করতো। এখন দেশ দখল করা লাগে না, বাজার দখল করতে হয়। আমাদেরও বাজার দখল করতে হবে। আমাদের ঘরের কাছে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিম বাংলা যেখানে আমাদের প্রভাব আছে ছাঁয়া আছে সেখানের বাজার দখল করতে হবে। এটা অন্যায় কিছু নয়। বাজার দখল করলেই কেল্লাফতে।

খাদ্যের আবশ্যকীয়তা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘খাবার দিয়ে জীবন শুরু আবার খাবার দিয়েই শেষ। জীবনের প্রথম লগ্নের মায়ের দুধ ও অথবা একটু পানি দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তখন সেই খাবারকে ত্যাগ করেই চলে যায়। খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় এটা নিয়ে কারোর মধ্যে মতভেদ নেই। যতই কবিরা বলুন না কেন আমরা সবুজ সুফলা, শষ্য শ্যামলা। তবে ইতিহাসের লোকেরা বলেন আমরা মোটামোটি অভাবের মধ্যেই বড় হয়েছি।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘খাবার আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চালের দাম যদি বাড়ে আমাদের হাত পা কাঁপে, চালের দাম কমলে আমরা স্বস্তি পাই। এক সময় খাদ্য নিয়েই সরকারের আসা যাওয়া বা উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে খাবারের অভাব নেই। জনসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু খাবারের কোন সমস্যা নেই। কোন ম্যাজিক নয়, মানুষজনের পরিশ্রম, উদ্ভাবনী শক্তির কারণেই খাবারের উৎপাদন বেড়েছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আমরা বছরে ৪ কোটি টন খাদ্য উৎপাদন করি। এ প্রথমবারের মতো আমরা বলতে পারি কোন মানুষ না খেয়ে থাকে না। আমাদের বাংলায় কোন মানুষ না খেয়ে নেই।’

গবেষণায় নজর দেয়ার পাশাপাশি দেশীয় পণ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড এ মেলার আয়োজন করছে। মেলায় ১৭টি দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ২০০ স্টলের মধ্যে বিদেশি অংশগ্রহণকারী স্টল প্রায় ৯০ শতাংশ।

এ আয়োজন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প আরও গতিশীল হবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের প্রান্তিক কৃষির উপকার হবে, উপকৃত হবেন কৃষকরাও। বাড়বে রপ্তানি। একইসঙ্গে ভোক্তারা সাশ্রয়মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন।

মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি, যারা সরাসরি ফুড প্রসেসিং সেক্টরে যুক্ত তারা অংশ নিয়েছেন। এর আগে সাতবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মেলার সাফল্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও দর্শনার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় এবারের মেলার সাফল্য নিয়ে আশাবাদী আয়োজকরা। যদিও মাঝে করোনার কারণে কয়েক বছর মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

১৩ সদস্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে বাপা। বর্তমানে বাপার সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। তারা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিশ্বের ১৪৪ দেশে রপ্তানি করছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এসএম জাহাঙ্গীর হোসাইন, বাপার সাবেক সভাপতি এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, এবারের আয়োজক কমিটির সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

তিন দিনের ফুডপ্রো এক্সপো শুরু, বিদেশি বাজার ধরার তাগিদ পরিকল্পনামন্ত্রীর

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

image

করোনা সংকট কাটিয়ে অষ্টমবারের মতো শুরু হলো তিন দিনের বাপা ফুডপ্রো এক্সপো। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান গতকাল এ এক্সপোর উদ্বোধন করেন। রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি) শুরু হওয়া এ এক্সপো চলবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য এ এক্সপো উন্মুক্ত থাকবে।

প্রদর্শনী ছাড়াও এতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ নিয়ে একটি কারিগরি সেশন হয়। এ খাতে যুক্ত দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞরা অংশ নেন। অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দেশীয় প্রতিষ্ঠানের বিজনেস ম্যাচিং সেশনের ব্যবস্থা রয়েছে। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রকমারি খাদ্যপণ্য প্রদর্শন করে। এছাড়া ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, চীন ও জাপানসহ নানান দেশের নামিদামি কোম্পানি তাদের ফুড প্রসেসিং মেশিন প্রদর্শন করছেন।

উদ্বোধনের পর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, বাপা ফুডপ্রো ইন্টারন্যাশনাল এক্সপোর সভাপতি এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্টরা স্টলগুলো ঘুরে দেখেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আগের জামানায় সবাই দেশ দখল করতো। ব্রিটিশ-জার্মানি-মোগলেরা আক্রমণ করে দেশ দখল করতো। এখন দেশ দখল করা লাগে না, বাজার দখল করতে হয়। আমাদেরও বাজার দখল করতে হবে। আমাদের ঘরের কাছে ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, পশ্চিম বাংলা যেখানে আমাদের প্রভাব আছে ছাঁয়া আছে সেখানের বাজার দখল করতে হবে। এটা অন্যায় কিছু নয়। বাজার দখল করলেই কেল্লাফতে।

খাদ্যের আবশ্যকীয়তা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘খাবার দিয়ে জীবন শুরু আবার খাবার দিয়েই শেষ। জীবনের প্রথম লগ্নের মায়ের দুধ ও অথবা একটু পানি দিয়ে শুরু হয়। কিন্তু যখন পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তখন সেই খাবারকে ত্যাগ করেই চলে যায়। খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বিষয় এটা নিয়ে কারোর মধ্যে মতভেদ নেই। যতই কবিরা বলুন না কেন আমরা সবুজ সুফলা, শষ্য শ্যামলা। তবে ইতিহাসের লোকেরা বলেন আমরা মোটামোটি অভাবের মধ্যেই বড় হয়েছি।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘খাবার আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চালের দাম যদি বাড়ে আমাদের হাত পা কাঁপে, চালের দাম কমলে আমরা স্বস্তি পাই। এক সময় খাদ্য নিয়েই সরকারের আসা যাওয়া বা উত্থান-পতন ছিল। কিন্তু বর্তমান সরকারের আমলে খাবারের অভাব নেই। জনসংখ্যা বেড়েছে কিন্তু খাবারের কোন সমস্যা নেই। কোন ম্যাজিক নয়, মানুষজনের পরিশ্রম, উদ্ভাবনী শক্তির কারণেই খাবারের উৎপাদন বেড়েছে। প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে আমরা বছরে ৪ কোটি টন খাদ্য উৎপাদন করি। এ প্রথমবারের মতো আমরা বলতে পারি কোন মানুষ না খেয়ে থাকে না। আমাদের বাংলায় কোন মানুষ না খেয়ে নেই।’

গবেষণায় নজর দেয়ার পাশাপাশি দেশীয় পণ্যকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার জন্য নানা ধরনের পরামর্শ দেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) এবং রেইনবো এক্সিবিশন অ্যান্ড ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেড এ মেলার আয়োজন করছে। মেলায় ১৭টি দেশের প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। ২০০ স্টলের মধ্যে বিদেশি অংশগ্রহণকারী স্টল প্রায় ৯০ শতাংশ।

এ আয়োজন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে। এতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প আরও গতিশীল হবে। কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের প্রান্তিক কৃষির উপকার হবে, উপকৃত হবেন কৃষকরাও। বাড়বে রপ্তানি। একইসঙ্গে ভোক্তারা সাশ্রয়মূল্যে পণ্য কিনতে পারবেন।

মেলায় দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানি, যারা সরাসরি ফুড প্রসেসিং সেক্টরে যুক্ত তারা অংশ নিয়েছেন। এর আগে সাতবার এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব মেলার সাফল্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক এবং দেশি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণ ও দর্শনার্থীদের অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়ায় এবারের মেলার সাফল্য নিয়ে আশাবাদী আয়োজকরা। যদিও মাঝে করোনার কারণে কয়েক বছর মেলা আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।

১৩ সদস্য নিয়ে ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে বাপা। বর্তমানে বাপার সদস্য সংখ্যা তিন শতাধিক। তারা প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিশ্বের ১৪৪ দেশে রপ্তানি করছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাপার সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক এসএম জাহাঙ্গীর হোসাইন, বাপার সাবেক সভাপতি এএফএম ফখরুল ইসলাম মুন্সী, এবারের আয়োজক কমিটির সদস্য মো. শহীদুল ইসলাম।