হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু

পাল্টে যাবে দুই জেলার যোগাযোগ-অর্থনৈতিক চিত্র

এক সেতুতেই ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে উত্তরের অবহেলিত ও দারিদ্র্যপীড়িত গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষজনের। তিস্তা নদী দ্বারা বিভক্ত এই দুই জেলাবাসীর দীর্ঘদিনে প্রত্যাশার তিস্তা সেতু নির্মিত হলে শুধু যোগাযোগ সংযোগেই নয়, খুলে যাবে কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার দ্বার। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেতুটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না স্ট্রেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড এবং এটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আরেফিন খান জানান, সেতুতে পাইল বসানো হয়েছে ২৯০টির মধ্যে ১৭৫টি। পিলার ৩০টির মধ্যে ১০টি, গার্ডার ১৫৫টির মধ্যে স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে ৫০টি। সেতুর নির্মাণের কাজ প্রায় ৪৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর-সুন্দরগঞ্জ, চিলমারী পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেতুর কাজ শেষ হলে এটি গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার মানুষের যোগাযোগের পথ সুগম করবে।

গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তিস্তা সেতু নির্মিত হলে রংপুর অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার দারিদ্র্য পীড়িত মানুষ খুঁজে পাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশা- এই তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার যোগাযোগ উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য আসবে। কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের ঢাকায় যাতায়াতে অনেক পথ কমে আসবে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে ১০০ কিলোমিটার।

কাশেম বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ৩ কিলোমিটার নদী শাসন করায় এই এলাকার পতিত জমিগুলো কৃষিকাজে ব্যবহার হবে। এতে দরিদ্র কৃষকরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। উজান বেচাগাড়ীর সোহেল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে একজন অসুস্থ রোগীকে জরুরীভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি না।

কাঁধে করে বাড়ি থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত আনতে হয়। অনেক সময় নৌকা পেতে দেরি হয়। নৌকায় করে ওপারে পৌঁছার আগেই রোগী মারা যায় এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, তিস্তা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ এলাকা থেকে সরাসরি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমাদের উৎপাদিত ফসল পাঠানো সহজ হবে।

ইতোমধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুর দু’পাশে অসংখ্য দোকানপাট, খাবার হোটেল ও রেস্টুরেস্ট গড়ে উঠেছে। দাম বেড়েছে জমির। দৃশ্যমান এ তিস্তা সেতু দেখতে প্রতিদিন নদীর দু’পাড়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতু

পাল্টে যাবে দুই জেলার যোগাযোগ-অর্থনৈতিক চিত্র

প্রতিনিধি, গাইবান্ধা

image

গাইবান্ধা : তিস্তা নদীর উপর দৃশ্যমান সেতু -সংবাদ

এক সেতুতেই ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে উত্তরের অবহেলিত ও দারিদ্র্যপীড়িত গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার মানুষজনের। তিস্তা নদী দ্বারা বিভক্ত এই দুই জেলাবাসীর দীর্ঘদিনে প্রত্যাশার তিস্তা সেতু নির্মিত হলে শুধু যোগাযোগ সংযোগেই নয়, খুলে যাবে কৃষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের অপার সম্ভাবনার দ্বার। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর ঘাট থেকে তিস্তা নদীর ওপর দিয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটি নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। সেতুটি নির্মাণ করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না স্ট্রেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন লিমিটেড এবং এটি বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আরেফিন খান জানান, সেতুতে পাইল বসানো হয়েছে ২৯০টির মধ্যে ১৭৫টি। পিলার ৩০টির মধ্যে ১০টি, গার্ডার ১৫৫টির মধ্যে স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে ৫০টি। সেতুর নির্মাণের কাজ প্রায় ৪৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর-সুন্দরগঞ্জ, চিলমারী পর্যন্ত ৮৬ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২০২৩ সালের জুন মাস নাগাদ সেতুর কাজ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেতুর কাজ শেষ হলে এটি গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও রংপুর জেলার মানুষের যোগাযোগের পথ সুগম করবে।

গাইবান্ধা-১ সুন্দরগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, তিস্তা সেতু নির্মিত হলে রংপুর অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার দারিদ্র্য পীড়িত মানুষ খুঁজে পাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম সরকার লেবু বলেন, উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ও প্রত্যাশা- এই তিস্তা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার যোগাযোগ উন্নয়নে ব্যাপক সাফল্য আসবে। কুড়িগ্রাম জেলার মানুষের ঢাকায় যাতায়াতে অনেক পথ কমে আসবে। কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকার দূরত্ব কমে আসবে ১০০ কিলোমিটার।

কাশেম বাজার এলাকার ব্যবসায়ী আজিজুল হক বলেন, ৩ কিলোমিটার নদী শাসন করায় এই এলাকার পতিত জমিগুলো কৃষিকাজে ব্যবহার হবে। এতে দরিদ্র কৃষকরা কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। উজান বেচাগাড়ীর সোহেল মিয়া বলেন, হঠাৎ করে একজন অসুস্থ রোগীকে জরুরীভাবে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারি না।

কাঁধে করে বাড়ি থেকে নদীর ঘাট পর্যন্ত আনতে হয়। অনেক সময় নৌকা পেতে দেরি হয়। নৌকায় করে ওপারে পৌঁছার আগেই রোগী মারা যায় এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে। এলাকার লোকজনের সাথে কথা হলে তারা বলেন, তিস্তা সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হলে এ এলাকা থেকে সরাসরি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় আমাদের উৎপাদিত ফসল পাঠানো সহজ হবে।

ইতোমধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার আগেই সেতুর দু’পাশে অসংখ্য দোকানপাট, খাবার হোটেল ও রেস্টুরেস্ট গড়ে উঠেছে। দাম বেড়েছে জমির। দৃশ্যমান এ তিস্তা সেতু দেখতে প্রতিদিন নদীর দু’পাড়ে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন।