সিলেটে বিএনপির সমাবেশ আজ একদিন আগেই পরিবহন বন্ধ

আজ সিলেট বিএনপির গণসমাবেশের দিন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও একদিন আগেই দূরপাল্লার যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এতে পথে পথে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এমনকি বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন বেশিরভাগ পর্যটকও। যদিও এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগের অন্যান্য জেলার নেতাকর্মীরা দু’দিন আগ থেকেই নগরে অবস্থান নিয়েছেন। কয়েক হাজার কর্মী সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে রাত কাটাচ্ছেন। হোটেলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে নগরীর বেশিরভাগ কমিউনিটি সেন্টার এখন বিএনপি নেতাকর্মীর দখলে। সেখানেই তারা রাতযাপন থেকে শুরু করে রান্না করে খাচ্ছেন।

একদিন আগে ধর্মঘটের ব্যাপারে বাস মালিকরা বলছেন, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে গত শুক্রবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসগুলো সিলেট ছেড়ে যেতে পারছে না। দূরের বাস সিলেটে আসতেও পারছে না। তবে জেলার ভেতরে বাস চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সুনামগঞ্জের গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের তোয়াহিদ মিয়া জানান, সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে ভোরে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সঙ্গে দু’জন মধ্য বয়সী মহিলা। তিনটা গাড়ি বদল করে সকাল ১০টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে পৌঁছান। সিলেট থেকে লামাকাজি, তারপর জাউয়া বাজার, পরে পাগলা বাজার। যে গাড়িতে জাউয়া বাজার থেকে গেছেন সেটি আর সামনে যাবে না। তাই পাগলা বাজার থেকে ধরতে হবে নতুন গাড়ি।

এদিকে তিন দফা গাড়ি পরিবর্তন করে পাগলা পর্যন্ত পৌঁছতে তাকে গুনতে হয়েছে পাঁচ শতাধিক টাকা। অবরোধ না থাকলে যেখানে তার সর্বোচ্চ খরচ হতো দুই থেকে তিনশ’ টাকা। চোখেমুখে ক্লান্তি, বিরক্তি আর ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট। যেন কিছু বলতেও পারছেন না, সইতেও পারছেন না।

শুধু তোয়াহিদ মিয়াই নন, মালিকদের ডাকা আকস্মিক অযাচিত পরিবহন ধর্মঘটে এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে বের হওয়া সব যাত্রী। যাত্রীদের অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এমন কোন পরিস্থিতি এখন চলমান নেই যে অবরোধ ডাকতে হবে। তাছাড়া যেসব দাবিতে পরিবহন মালিকরা অবরোধ ডেকেছেন সেগুলো যৌক্তিক দাবি না। প্রকৃতপক্ষে তারা অন্য ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়ন করছেন। এগুলো কাম্য নয়।

গতকাল সকালে কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী শ্রমকি অশোক রঞ্জন দেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা। এজন্য সকালে বাস টার্মিনালে আসেন তিনি। বাসে করে ঢাকা গিয়ে সন্ধ্যায় উঠবেন বিমানে। তবে বাস টার্মিনালে এসে দেখেন ঢাকামুখী কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েন অশোক।

তিনি বলেন, ‘মালয়োশিয়া যাওয়ার জন্য আমি তিনদিন আগে বিমানের টিকেট কিনেছি। আজ পরিবহন ধর্মঘট থাকায় গতকালে বাসের টিকেট কিনেছি। এ কারণে আগের রাতেও ঢাকায় যাইনি। কিন্তু আজকে সকালে বাস টার্মিনালে এসে দেখি কোন বাস ছাড়ছে না।’

সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা বাস ছাড়া দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়ছে না। আন্তঃজেলা বাসও সংখ্যায় খুব কম। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোও বন্ধ।

এনা বাসের বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোমবারের আগে সিলেট থেকে আর বাস ছেড়ে যাবে না। হানিফ পরিবহনের বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী শরিফ হাসান বলেন, ‘আমি ঢাকায় চাকরি করি। শনিবার ধর্মঘট জানি তাই আজকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে কোন বাস পাচ্ছি না।’

শরিফ বলেন, কয়েকটি মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তবে তারা অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে।

ধর্মঘটের আগেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘট শনিবার। কিন্তু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে আজকে থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে হলে এই দুই জেলা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুই জায়গায়ই ধর্মঘট থাকায় দূরপাল্লার বাস আসা যাওয়া করতে পারছে না। তবু কিছু বাস চলছে।’

পাঁচদফা দাবিতে শনিবার সিলেটে ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি। ভিন্ন চারটি দাবিতে শনিবার অন্য পরিবহনগুলোরও ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করতেই সরকার কৌশলে পরিবহনে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। এদিকে বিএনপির সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এরইমধ্যে সিলেট পৌঁছেছেন। গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ছোট-বড় মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন। সমাবেশস্থল গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী প্যান্ডেলে অবস্থান করছেন। চলছে সেøাগান। বিভিন্ন ক্যাম্পে ও মাঠের ভেতর যেন উৎসবের আমেজ। সিলেটের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানাভিত্তিক বড় বড় ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেসব ক্যাম্পে এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি নেতা ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, নবীগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্যসহ মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার কমপক্ষে ২০টি ক্যাম্প রয়েছে। আগাম গণসমাবেশে আসা এসব কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ক্যাম্পে অবস্থান করেন। আর সেখানেই তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

গতকাল সকালে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশ আগামীকাল (আজ) শনিবার। তবে আগামীকাল নয়, আজ (শুক্রবার) রাতের মধ্যেই সিলেট নগরীর জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাধা-বিপত্তি মাথায় নিয়েই আমাদের সব কাজ গত ১৩ বছর ধরে করছি। আপনারা দেখেন, আগামীকাল (আজ) আমাদের সমাবেশ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকেই মানুষ চলে আসছেন। এটা জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

আরিফ আরও বলেন, ‘বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে জনতা আসছে। বাধা-বিপত্তি যে হচ্ছে না, সেটা কেউ বলতে পারবে না। প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা জায়গায় সুযোগ পেলেই চুলকানি দেয়া হচ্ছে। তবে একটা কথা বিশ্বাস আমার, সিলেটে একটা রাজনৈতিক সম্প্রীতি আছে। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়ার জন্য, এমন মানুষ সিলেটে আছে। কাজেই এখানে অতিউৎসাহী কোন কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিউৎসাহী দু-চারজন ছাড়া..... আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলেও বাইরের কিছু অতিউৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা দুই-চারটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে আমরা খবর পাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদকে বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে গণসমাবেশ করেছে দলটি।

পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সুনামগঞ্জবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এক ও অভিন্ন দাবিতে সিলেট বিভাগের তিন জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে গণপরিবহণ ধর্মঘট। শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা ১২ ঘণ্টা পরিবহণ ধর্মঘট পালিত হবে সিলেট বিভাগের চার জেলায়। । কিন্তু একদিন আগেই সিলেটের আন্তঃজেলা রুটগুলোতে বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। কোন রুটেই চলছে না দূরপাল্লার গণপরিবহণ। ব্যস্ত সড়ক-মহাসড়ক শুক্রবার সকাল থেকেই অনেকটা ফাঁকা।

দক্ষিণ সুরমার কদমতলীস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। একই অবস্থা কুমারগাঁওয়ের অপর বাস টার্মিনালের। এখান থেকেও সুনামগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোন যাত্রীবাহী বাস। সুনামগঞ্জ থেকেও কোন গাডি চলাচল করছে না।

এদিকে দূরপাল্লার কোন বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড ও সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কিছু যাত্রী গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট থেকে অনেক যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে।

আবদুল হক নামের এক যাত্রী চিকিৎসার জন্য সিলেটে এসেছিলেন দাবি করে জানান, কীভাবে এখন সুনামগঞ্জ পৌঁছবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন তিনি। বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাসের কাউন্টারও বন্ধ পাওয়া যায়। সিলেট বিভাগের যাত্রী ছাড়াও ঢাকাগামী যাত্রীরাও আটকা পড়েছেন। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের অবস্থাও একই। সুনাগঞ্জের উদ্দেশেও কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এমনকি সুনামগঞ্জ থেকেও বাস চলাচল বন্ধ আছে। মাঝে মধ্যে কিছু আন্তঃউপজেলা বাস ও লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী বহনের চেষ্টা করছে। সোলেমান নামে অপর যাত্রী জানান সুনামগঞ্জ যেতে পারছি না । আমার খুব জরুরি কাজ ছিল। স্বাধীন মিয়া জানান চিকিৎসার জন্য সিলেট যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যেতে পারছি না ।

সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট হওয়ায় সুনামগঞ্জ থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না। ফলে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

বিভেদ ভুলে সিলেট বিএনপি এখন ঐক্য

দীর্ঘদিন বিভক্ত থাকার পর সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট বিএনপিতে ঐক্য তৈরি হয়েছে। চার দলী জোট সরকার ক্ষমতার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম, সাইফুর রহমান ও সাবেক এমপি ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলী বলয়ে এ বিরােধ তৈরি হয়েছিল; যা তাদের অনুপস্থিতিতে এখনো বিরাজমান।

এখনো দলের নেতাকর্মীরা এই দুই ধারায় বিভক্ত। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নেতৃত্বে রয়েছে এই দুই বলয়ের। সাম্প্রতিক সময়ে সব দলীয় কর্মকা-ে এই দুই নেতা ও তাদের অনুসারীদের বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখা গেছে।

তবে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে দীর্ঘদিনের এই বিভেদ ভুলে সিলেট বিএনপিতে এখন ঐক্য দেখা দিয়েছে। দলের সব পর্যায়ের নেতারাই মাসখানেক ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশের প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচার কার্যক্রমের শুরু থেকেই সক্রিয় রয়েছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির আর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে চলতি সপ্তাহে সমাবেশের প্রচার কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছেন।

সমাবেশ সফলে গঠিত ছয়টি উপকমিটির মধ্যে দুটির আহ্বায়কেরও দায়িত্বে রয়েছেন এই দুই নেতা। পারস্পরিক বিরোধ থাকলেও তাদের দুজনকে একসঙ্গেও সমাবেশের প্রচার ও প্রস্তুতির কার্যক্রমেও দেখা গেছে।

সিলেটের বিএনপি নেতারা জানান, কেবল দুই নেতার মধ্যেই নয়, সিলেটে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আন্তঃকোন্দল রয়েছে। তবে এই সমাবেশের জন্য এসব বিভেদ ভুলে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। আন্তঃকোন্দল ভুলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে এক কাতারে মাঠে নেমেছেন তারা।

সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, বিএনপিতে কোন কোন্দল নেই। বড় দল হওয়ায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তিনি বলেন, ছোটখাটো কিছু বিভেদ থাকলেও দল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। এই সরকারের পতন দাবিতে কারো মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। ফলে এই আন্দোলনে সব নেতাই সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমানের প্রয়াণ ও এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সিলেটে বিএনপির একক নেতা হয়ে ওঠেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাকে আরও ক্ষমতাবান করে তোলে। এর ফলে বিএনপি ছাত্রদল, যুবদল থেকে শুরু করে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদেরই ছিল দাপট।

তবে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলের মধ্যে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে শুরু করেন আরিফ। এ থেকে মুক্তাদিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তার।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

সিলেটে বিএনপির সমাবেশ আজ একদিন আগেই পরিবহন বন্ধ

আকাশ চৌধুরী, সিলেট

image

সিলেটে গত দু’দিন ধরে সমাবেশস্থলে নেতাকর্মীদের অবস্থান -সংবাদ

আজ সিলেট বিএনপির গণসমাবেশের দিন ধর্মঘটের ডাক দেয়া হলেও একদিন আগেই দূরপাল্লার যানচলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিকরা। এতে পথে পথে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। এমনকি বেড়াতে এসে আটকা পড়েছেন বেশিরভাগ পর্যটকও। যদিও এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগের অন্যান্য জেলার নেতাকর্মীরা দু’দিন আগ থেকেই নগরে অবস্থান নিয়েছেন। কয়েক হাজার কর্মী সমাবেশস্থল আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে রাত কাটাচ্ছেন। হোটেলে গ্রেপ্তার আতঙ্কে নগরীর বেশিরভাগ কমিউনিটি সেন্টার এখন বিএনপি নেতাকর্মীর দখলে। সেখানেই তারা রাতযাপন থেকে শুরু করে রান্না করে খাচ্ছেন।

একদিন আগে ধর্মঘটের ব্যাপারে বাস মালিকরা বলছেন, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারে গত শুক্রবার থেকে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হওয়ায় ঢাকাসহ দূরপাল্লার বাসগুলো সিলেট ছেড়ে যেতে পারছে না। দূরের বাস সিলেটে আসতেও পারছে না। তবে জেলার ভেতরে বাস চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সুনামগঞ্জের গৌরারং ইউনিয়নের লালপুর গ্রামের তোয়াহিদ মিয়া জানান, সিলেটের কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড থেকে নিজ বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশে ভোরে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। সঙ্গে দু’জন মধ্য বয়সী মহিলা। তিনটা গাড়ি বদল করে সকাল ১০টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাগলা বাজারে পৌঁছান। সিলেট থেকে লামাকাজি, তারপর জাউয়া বাজার, পরে পাগলা বাজার। যে গাড়িতে জাউয়া বাজার থেকে গেছেন সেটি আর সামনে যাবে না। তাই পাগলা বাজার থেকে ধরতে হবে নতুন গাড়ি।

এদিকে তিন দফা গাড়ি পরিবর্তন করে পাগলা পর্যন্ত পৌঁছতে তাকে গুনতে হয়েছে পাঁচ শতাধিক টাকা। অবরোধ না থাকলে যেখানে তার সর্বোচ্চ খরচ হতো দুই থেকে তিনশ’ টাকা। চোখেমুখে ক্লান্তি, বিরক্তি আর ক্ষোভের ছাপ স্পষ্ট। যেন কিছু বলতেও পারছেন না, সইতেও পারছেন না।

শুধু তোয়াহিদ মিয়াই নন, মালিকদের ডাকা আকস্মিক অযাচিত পরিবহন ধর্মঘটে এমন ভোগান্তিতে পড়েছেন সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে বের হওয়া সব যাত্রী। যাত্রীদের অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশে এমন কোন পরিস্থিতি এখন চলমান নেই যে অবরোধ ডাকতে হবে। তাছাড়া যেসব দাবিতে পরিবহন মালিকরা অবরোধ ডেকেছেন সেগুলো যৌক্তিক দাবি না। প্রকৃতপক্ষে তারা অন্য ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়ন করছেন। এগুলো কাম্য নয়।

গতকাল সকালে কদমতলী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে কথা হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী শ্রমকি অশোক রঞ্জন দেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, সন্ধ্যায় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা। এজন্য সকালে বাস টার্মিনালে আসেন তিনি। বাসে করে ঢাকা গিয়ে সন্ধ্যায় উঠবেন বিমানে। তবে বাস টার্মিনালে এসে দেখেন ঢাকামুখী কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এতে বিপাকে পড়েন অশোক।

তিনি বলেন, ‘মালয়োশিয়া যাওয়ার জন্য আমি তিনদিন আগে বিমানের টিকেট কিনেছি। আজ পরিবহন ধর্মঘট থাকায় গতকালে বাসের টিকেট কিনেছি। এ কারণে আগের রাতেও ঢাকায় যাইনি। কিন্তু আজকে সকালে বাস টার্মিনালে এসে দেখি কোন বাস ছাড়ছে না।’

সকালে সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায় টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা বাস ছাড়া দূরপাল্লার কোন বাস ছাড়ছে না। আন্তঃজেলা বাসও সংখ্যায় খুব কম। দূরপাল্লার বাসের কাউন্টারগুলোও বন্ধ।

এনা বাসের বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সোমবারের আগে সিলেট থেকে আর বাস ছেড়ে যাবে না। হানিফ পরিবহনের বন্ধ কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী শরিফ হাসান বলেন, ‘আমি ঢাকায় চাকরি করি। শনিবার ধর্মঘট জানি তাই আজকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে কোন বাস পাচ্ছি না।’

শরিফ বলেন, কয়েকটি মাইক্রোবাস যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে। তবে তারা অনেক বেশি ভাড়া চাচ্ছে।

ধর্মঘটের আগেই বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়া সম্পর্কে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবির পলাশ বলেন, ‘আমাদের ধর্মঘট শনিবার। কিন্তু মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে আজকে থেকে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় যেতে হলে এই দুই জেলা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দুই জায়গায়ই ধর্মঘট থাকায় দূরপাল্লার বাস আসা যাওয়া করতে পারছে না। তবু কিছু বাস চলছে।’

পাঁচদফা দাবিতে শনিবার সিলেটে ভোর ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট ডাকে বাস মালিক সমিতি। ভিন্ন চারটি দাবিতে শনিবার অন্য পরিবহনগুলোরও ধর্মঘট ডেকেছে সিলেট বিভাগীয় শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে গণসমাবেশ আয়োজনে বাধাবিপত্তি সৃষ্টি করতেই সরকার কৌশলে পরিবহনে ধর্মঘট ডাকিয়েছে। এদিকে বিএনপির সমাবেশের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা এরইমধ্যে সিলেট পৌঁছেছেন। গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ছোট-বড় মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন। সমাবেশস্থল গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থল সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী প্যান্ডেলে অবস্থান করছেন। চলছে সেøাগান। বিভিন্ন ক্যাম্পে ও মাঠের ভেতর যেন উৎসবের আমেজ। সিলেটের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও থানাভিত্তিক বড় বড় ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। সেসব ক্যাম্পে এলাকার বিএনপির নেতাকর্মীরা আগে থেকেই অবস্থান নিয়েছেন। বিএনপি নেতা ও হবিগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জি কে গউছ, নবীগঞ্জের সাবেক সংসদ সদস্যসহ মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বিভিন্ন উপজেলার কমপক্ষে ২০টি ক্যাম্প রয়েছে। আগাম গণসমাবেশে আসা এসব কর্মীরা বৃহস্পতিবার রাত থেকেই ক্যাম্পে অবস্থান করেন। আর সেখানেই তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

গতকাল সকালে সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। পরিদর্শনে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির গণসমাবেশ আগামীকাল (আজ) শনিবার। তবে আগামীকাল নয়, আজ (শুক্রবার) রাতের মধ্যেই সিলেট নগরীর জনসমুদ্রে পরিণত হয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বাধা-বিপত্তি মাথায় নিয়েই আমাদের সব কাজ গত ১৩ বছর ধরে করছি। আপনারা দেখেন, আগামীকাল (আজ) আমাদের সমাবেশ। গতকাল (বৃহস্পতিবার) থেকেই মানুষ চলে আসছেন। এটা জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’

আরিফ আরও বলেন, ‘বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে জনতা আসছে। বাধা-বিপত্তি যে হচ্ছে না, সেটা কেউ বলতে পারবে না। প্রতিটা মুহূর্তে, প্রতিটা জায়গায় সুযোগ পেলেই চুলকানি দেয়া হচ্ছে। তবে একটা কথা বিশ্বাস আমার, সিলেটে একটা রাজনৈতিক সম্প্রীতি আছে। আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার দেয়ার জন্য, এমন মানুষ সিলেটে আছে। কাজেই এখানে অতিউৎসাহী কোন কর্মকর্তা বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিউৎসাহী দু-চারজন ছাড়া..... আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা পেলেও বাইরের কিছু অতিউৎসাহী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা দুই-চারটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে আমরা খবর পাচ্ছি।’

প্রসঙ্গত, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদকে বিলুপ্ত, সরকারের পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুরে গণসমাবেশ করেছে দলটি।

পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সুনামগঞ্জবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, এক ও অভিন্ন দাবিতে সিলেট বিভাগের তিন জেলা সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে শুক্রবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে গণপরিবহণ ধর্মঘট। শনিবার (১৯ নভেম্বর) সকাল-সন্ধ্যা ১২ ঘণ্টা পরিবহণ ধর্মঘট পালিত হবে সিলেট বিভাগের চার জেলায়। । কিন্তু একদিন আগেই সিলেটের আন্তঃজেলা রুটগুলোতে বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। কোন রুটেই চলছে না দূরপাল্লার গণপরিবহণ। ব্যস্ত সড়ক-মহাসড়ক শুক্রবার সকাল থেকেই অনেকটা ফাঁকা।

দক্ষিণ সুরমার কদমতলীস্থ সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোন বাস। একই অবস্থা কুমারগাঁওয়ের অপর বাস টার্মিনালের। এখান থেকেও সুনামগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়নি কোন যাত্রীবাহী বাস। সুনামগঞ্জ থেকেও কোন গাডি চলাচল করছে না।

এদিকে দূরপাল্লার কোন বাস চলাচল না করায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। শুক্রবার দুপুরে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ড ও সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, কিছু যাত্রী গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সিলেট থেকে অনেক যাত্রী প্রতিদিন যাতায়াত করেন বিভাগের হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে।

আবদুল হক নামের এক যাত্রী চিকিৎসার জন্য সিলেটে এসেছিলেন দাবি করে জানান, কীভাবে এখন সুনামগঞ্জ পৌঁছবেন সেই চিন্তায় রয়েছেন তিনি। বাস টার্মিনালের বিভিন্ন বাসের কাউন্টারও বন্ধ পাওয়া যায়। সিলেট বিভাগের যাত্রী ছাড়াও ঢাকাগামী যাত্রীরাও আটকা পড়েছেন। কুমারগাঁও বাসস্ট্যান্ডের অবস্থাও একই। সুনাগঞ্জের উদ্দেশেও কোন বাস ছেড়ে যাচ্ছে না। এমনকি সুনামগঞ্জ থেকেও বাস চলাচল বন্ধ আছে। মাঝে মধ্যে কিছু আন্তঃউপজেলা বাস ও লেগুনা, সিএনজি অটোরিকশা যাত্রী বহনের চেষ্টা করছে। সোলেমান নামে অপর যাত্রী জানান সুনামগঞ্জ যেতে পারছি না । আমার খুব জরুরি কাজ ছিল। স্বাধীন মিয়া জানান চিকিৎসার জন্য সিলেট যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু যেতে পারছি না ।

সুনামগঞ্জ জেলা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ মোজাম্মেল হক জানিয়েছেন, বিভিন্ন জেলায় ধর্মঘট হওয়ায় সুনামগঞ্জ থেকে আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল করছে না। ফলে মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

বিভেদ ভুলে সিলেট বিএনপি এখন ঐক্য

দীর্ঘদিন বিভক্ত থাকার পর সমাবেশকে সামনে রেখে সিলেট বিএনপিতে ঐক্য তৈরি হয়েছে। চার দলী জোট সরকার ক্ষমতার সময় সাবেক অর্থমন্ত্রী এম, সাইফুর রহমান ও সাবেক এমপি ‘নিখোঁজ’ এম ইলিয়াস আলী বলয়ে এ বিরােধ তৈরি হয়েছিল; যা তাদের অনুপস্থিতিতে এখনো বিরাজমান।

এখনো দলের নেতাকর্মীরা এই দুই ধারায় বিভক্ত। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির এবং দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সিলেট সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নেতৃত্বে রয়েছে এই দুই বলয়ের। সাম্প্রতিক সময়ে সব দলীয় কর্মকা-ে এই দুই নেতা ও তাদের অনুসারীদের বিপরীতমুখী অবস্থানে দেখা গেছে।

তবে সিলেট বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে দীর্ঘদিনের এই বিভেদ ভুলে সিলেট বিএনপিতে এখন ঐক্য দেখা দিয়েছে। দলের সব পর্যায়ের নেতারাই মাসখানেক ধরে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাবেশের প্রচার চালাচ্ছেন। প্রচার কার্যক্রমের শুরু থেকেই সক্রিয় রয়েছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির আর মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে চলতি সপ্তাহে সমাবেশের প্রচার কার্যক্রমে সক্রিয় হয়েছেন।

সমাবেশ সফলে গঠিত ছয়টি উপকমিটির মধ্যে দুটির আহ্বায়কেরও দায়িত্বে রয়েছেন এই দুই নেতা। পারস্পরিক বিরোধ থাকলেও তাদের দুজনকে একসঙ্গেও সমাবেশের প্রচার ও প্রস্তুতির কার্যক্রমেও দেখা গেছে।

সিলেটের বিএনপি নেতারা জানান, কেবল দুই নেতার মধ্যেই নয়, সিলেটে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে আন্তঃকোন্দল রয়েছে। তবে এই সমাবেশের জন্য এসব বিভেদ ভুলে তারা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন। আন্তঃকোন্দল ভুলে সরকার বিরোধী আন্দোলনে এক কাতারে মাঠে নেমেছেন তারা।

সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, বিএনপিতে কোন কোন্দল নেই। বড় দল হওয়ায় নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে। তিনি বলেন, ছোটখাটো কিছু বিভেদ থাকলেও দল ও দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। এই সরকারের পতন দাবিতে কারো মধ্যে কোন দ্বিমত নেই। ফলে এই আন্দোলনে সব নেতাই সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছেন।

বিএনপি দলীয় সূত্রে জানা যায়, সাইফুর রহমানের প্রয়াণ ও এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর সিলেটে বিএনপির একক নেতা হয়ে ওঠেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। যুক্তরাজ্যে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তাকে আরও ক্ষমতাবান করে তোলে। এর ফলে বিএনপি ছাত্রদল, যুবদল থেকে শুরু করে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে তার অনুসারী নেতাদেরই ছিল দাপট।

তবে দ্বিতীয় মেয়াদে মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর দলের মধ্যে নিজেকে শক্তিশালী করে তুলতে শুরু করেন আরিফ। এ থেকে মুক্তাদিরের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ে তার।