চনপাড়া : অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য

অঘোষিত ডন বজলুর রহমান গ্রেপ্তার

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে ‘মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রক’ বলে পরিচিত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল বিকেলে চনপাড়ার পার্শ্ববর্তী পূর্বগ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিকেল সাড়ে চারটায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাল আল মোমেন।

গ্রেপ্তার বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এবং উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান।

গত সেপ্টেম্বরে চনপাড়ায় এক মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় করা একটি মামলার প্রধাম আসামি ছিলেন বজলুর রহমান। ওই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানান আবদুল্লাহ আল মোমেন।

এ মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা রয়েছে বলেও জানান, র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

রাজধানীর লাগোয়া জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া গ্রাম)। তিনদিকে নদী এবং একদিকে খালবেষ্টিত প্রায় দ্বীপের মতো এই গ্রাম স্থানীয়ভাবে এটি ‘চনপাড়া বস্তি’ বলে অধিক পরিচিত। মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের অন্যতম স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত এই চনপাড়া।

সম্প্রতি সারাদেশে চনপাড়া আলোচনা এসেছে বুয়েট ছাত্র ফারদিন নুর পরশ হত্যার ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে। পুলিশের তদন্ত বলছে, ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সর্বশেষ চনপাড়া এলাকায় সক্রিয় পাওয়া গেছে। এখানেই ফারদিনের হত্যাকা- হয়েছে ধারণা করেই তদন্ত চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল।

রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অংশ চনপাড়া। এই গ্রামে বসবাসরত মানুষজন ও অপরাধীচক্রের সঙ্গে জড়িত কেউই এখানের স্থানীয় বাসিন্দা নন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় এসে এই গ্রামে আশ্রয় নিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াসার ১২৬ একর জমির উপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙনে বাড়িঘর হারানো আশ্রয়হীন ও ভবঘুরে মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এর নাম দেয়া হয় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। শুরুতে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারের পুনর্বাসন করা হলেও বর্তমানে চনপাড়ার মোট বাসিন্দার সংখ্যা লক্ষাধিক। ভোটারই রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার। তবে ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন না চনপাড়ার বাসিন্দারা। সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন তারা। এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হন তারা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির ভাষ্যমতে, চনপাড়ার ভাসমান লোকজন শুরুতে দিনমজুরের কাজ করতেন। তবে আশির দশকের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে মাদক কেনাবেচা শুরু হয়। এই এলাকায় একাধিক বাহিনী মাদক বেচাকেনাসহ চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, খড় পার্টিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত। গত কয়েকবছরে মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে চনপাড়া।

সরেজমিনে চনপাড়া

রাজধানী লাগোয়া চনপাড়া গ্রামে স্থলপথে ঢোকার একমাত্র পথ ডেমরা থেকে বালু সেতু। বালু সেতু পার হলেই চনপাড়া মোড়। চনপাড়াকে নয়টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের অসংখ্য অলিগলি। বাড়িঘর একটার সঙ্গে অন্যটা লাগোয়া। চনপাড়ার দুইদিকে শীতলক্ষ্যা নদী এবং একদিকে বালু নদ। পার্শ্ববর্তী ডেমরা, নোয়াপাড়া ও মুড়াপাড়া থেকে নদীপথে চনপাড়ায় ঢোকা যায়। চনপাড়ায় প্রবেশের জন্য তিনটি খেয়াঘাট রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ভাষ্য, বেশিরভাগ মাদকের চালান চনপাড়ায় নদীপথে ঢোকে। স্থলপথেও অভিনব কায়দায় মাদকের ছোট-বড় চালান আনা হয়। অস্ত্রের কেনাবেচাও চলে এখানে। চনপাড়ার ভেতরে অর্ধশতাধিক চিহ্নিত মাদেকর স্পট রয়েছে। মাদকের এইসব স্পট নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে রয়েছেন রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন, জয়নাল আবেদীন, রাজু আহম্মেদ ওরফে রাজা, শাহাবউদ্দিন, শমসের, রোকসানা, মোস্তফা, রায়হান, ফালান, শাওন, আনোয়ার, স্বপন, ফালান, আসাদুল, শাহ্ আলম, তার বোন শাহিদা, বিল্লাল, রওশানা, রহিমন, নাসির, শাহীন। একসময় চনপাড়ায় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার ওরফে কুট্টির নিয়ন্ত্রণ ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিউটির স্বামী এমএ হাসান ওরফে হাসান মুহুরি খুন হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৯ সালের জুনে খুন হন বিউটিও। বিউটি ও বিউটির স্বামী হত্যা মামলার আসামি জয়নাল, শাহীন, রাজা, আনোয়ারকে আসামি করা হয়। বিউটি মারা যাওয়ার পর চনপাড়া মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও মাদক ব্যবসা ও অপরাধীদের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করে আসছেন বজলুর।

চনপাড়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকের সঙ্গে। চনপাড়ায় শুরু থেকে আছেন এমন একাধিক ব্যক্তি নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, সত্তরের দশকের শেষের দিকে দুটি স্পটে গাঁজা বিক্রি ও সেবন হতো। শুক্কুর ও আলী নামে দুই ব্যক্তি এই স্পট দুটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। আশির দশকের শুরুর দিকে মাদকের বিস্তৃতি বাড়তে থাকে। তবে ২০১১ সালের পর থেকে মাদক পুরো চনপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ সবধরনের মাদক এখানে বিক্রি হয়। এক পাঁচ বছরে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ রূপ নিয়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে যেকোন প্রকার মাদক। শুধু মাদকই নয় অপরাধীরা আশ্রয়স্থল হিসেবেও বেছে নেয় চনপাড়াকে। গত দুই দশকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে চনপাড়ায় খুন হয়েছেন পুলিশের এক সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন। এই সময়ে থানায় কেবল চনপাড়ার মাদক ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় দুই হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই-তিনটা মামলা হয় বলেও জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান। যদিও অভিযোগ রয়েছে চনপাড়ার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা পায় পুলিশও।

স্থানীয় বাসিন্দা সভাপতি হারুন মিয়াজি সংবাদকে বলেন, ‘গত দশ বছরে ভয়ানকভাবে চনপাড়ায় মাদকের বিস্তার বেড়েছে। প্রতিটি অলি-গলিতে মাদকের কেনাবেচা চলে। কয়েকজন ব্যক্তিই এইসবের নিয়ন্ত্রক। তাদের শেল্টার দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এলাকার শিক্ষিত ছেলেমেয়ে এই কারণে মাদকসেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। উপাসনালয়ের সামনেও মাদক বিক্রি চলে। এসব নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা নিত্যদিনের।’

প্রশাসনিকভাবে কড়াকড়ি থাকলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব অভিমত তার। তিনি বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে রূপ নিয়ে চনপাড়া। এই গ্রামের পুরোনো বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে গ্রামের বাইরে রাখেন। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমানও চনপাড়ায় মাদকের বিস্তৃতির কথা স্বীকার করেন। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তিনি। সংবাদকে বজলুর বলেন, ‘সিটি শাহীন, জয়নাল, শাহাবুদ্দিন, শমসেরসহ ছোট-বড় অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী আছে চনপাড়ায়। কয়েকবছর যাবত মাদকের বিস্তৃতি এই এলাকায় বাড়ছে এইটা সত্য; কিন্তু আশির দশকের শুরু থেকেই মাদক বেচাকেনা ছিল। এইসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করি আমি। অথচ আমাকেই প্রতিবার মাদক ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।’

সরেজমিন ঘুরে চনপাড়ায় রাস্তার পাশে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো দেখা যায়। তবে সেসব ক্যামেরা সবগুলোই প্রতিষ্ঠানের দিকে ঘোরানো। রাস্তার দিকে না দিয়ে দোকানের দিকে ঘুরিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে মো. রহিম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলে পুলিশ এলাকায় আইসা ক্যামেরা চেক করে। এই কারণে ক্যামেরা রাস্তার দিকে না রাইখা দোকানের দিকে ঘুরিয়ে রাখতে বলছে।’

কারা এমন নির্দেশ দিয়েছে প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে ওই দোকানি বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার পর থেকেই ক্যামেরা ঘুরাইয়া দিছে তারা। কে দিছে এইটা বলতে পারবো না।’

তবে চনপাড়ার মাদক বিক্রি কিংবা অপরাধ কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যে মুখে খোলেন না। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, চনপাড়ায় কোন ঘটনা ঘটলে তার জন্য সংবাদ সংগ্রহে গেলেও মাদক ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়তে হয়।

চনপাড়ায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য এমন যে, অভিযান চালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও একাধিকবার হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোন শীর্ষ সন্ত্রাসী বা অপরাধী লুকিয়ে থাকার জন্যও এই বস্তিকে বেছে নেন। এমনকি এই বস্তির অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে এমনই এক ঘটনা ঘটে চনপাড়ায়। ওই রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায় চনপাড়ায়। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সূত্রমতে, ওইদিন শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় র‌্যাব। শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তার সহযোগী অন্য মাদক ব্যবসায়ী রাজু আহম্মেদ ওরফে রাজা। ওই অভিযানের পর ‘অভিযানে বাধা দিয়ে হামলার’ অভিযোগে র‌্যাব রূপগঞ্জ থানা পৃথক তিনটি মামলাও করে। একটি মামলায় ইউপি সদস্য বজলুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হলেও রহস্যজনকভাবে তিন মামলার কোনটাতেই শাহীনের নাম ছিল না। গত ৯ নভেম্বর দুপুরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। যদিও পরবর্তীতে মামলায় র‌্যাব উল্লেখ করেছে, ‘র‌্যাবের নয় মাদক ব্যবসায়ীদেরই কারও গুলিতে শাহীন মারা গেছে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শতাধিক ব্যক্তি চনপাড়ায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অপরাধীদের আশ্রয়স্থল এই চনপাড়া। প্রতিমাসেই মাদক সংশ্লিষ্ট দুই-তিনটা মামলা হয়, কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক এতটাই বিস্তৃত যে কাউকে ধরতে যাওয়ার আগেই তারা খবর পেয়ে যায়। আবার ভৌগলিক কারণে চনপাড়ায় ‘ব্লকরেইড’ দিয়ে অভিযান চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। বস্তির তিনদিকেই পানি।’

চনপাড়ার মাদকের বিস্তৃতি রোধ করতে জেলা পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে গেলে প্রায় সময় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় বলে জানালেন জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তাও।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘মূলত চনপাড়া একটি বস্তি এলাকা। ভেতরে অলিগলি ও বাড়িঘরগুলো খুবই ঘিঞ্জি। প্রায় সময় অভিযান চালানোর খবর টের পেয়ে কোন না কোন ঘরে পালিয়ে থাকে কিংবা কোন গলি দিয়ে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। এমনও হয় বস্তির লোকজন এসে পুলিশকে ঘেরাও করে রাখে আসামিকে নিতে দেয় না। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাই। আসামি গ্রেপ্তার হয়, জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদক ব্যবসা চালায়।’

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

চনপাড়া : অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য

অঘোষিত ডন বজলুর রহমান গ্রেপ্তার

সৌরভ হোসেন সিয়াম, নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে ‘মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রক’ বলে পরিচিত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা বজলুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গতকাল বিকেলে চনপাড়ার পার্শ্ববর্তী পূর্বগ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

বিকেল সাড়ে চারটায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাল আল মোমেন।

গ্রেপ্তার বজলুর রহমান রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সদস্য এবং উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান।

গত সেপ্টেম্বরে চনপাড়ায় এক মাদকবিরোধী অভিযানে র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় করা একটি মামলার প্রধাম আসামি ছিলেন বজলুর রহমান। ওই মামলাতেই তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানান আবদুল্লাহ আল মোমেন।

এ মামলা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও মাদক সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মামলা রয়েছে বলেও জানান, র‌্যাবের এই কর্মকর্তা।

রাজধানীর লাগোয়া জেলা নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র (চনপাড়া গ্রাম)। তিনদিকে নদী এবং একদিকে খালবেষ্টিত প্রায় দ্বীপের মতো এই গ্রাম স্থানীয়ভাবে এটি ‘চনপাড়া বস্তি’ বলে অধিক পরিচিত। মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের অন্যতম স্বর্গরাজ্য বলে পরিচিত এই চনপাড়া।

সম্প্রতি সারাদেশে চনপাড়া আলোচনা এসেছে বুয়েট ছাত্র ফারদিন নুর পরশ হত্যার ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে। পুলিশের তদন্ত বলছে, ফারদিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি সর্বশেষ চনপাড়া এলাকায় সক্রিয় পাওয়া গেছে। এখানেই ফারদিনের হত্যাকা- হয়েছে ধারণা করেই তদন্ত চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক দল।

রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের একটি অংশ চনপাড়া। এই গ্রামে বসবাসরত মানুষজন ও অপরাধীচক্রের সঙ্গে জড়িত কেউই এখানের স্থানীয় বাসিন্দা নন। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভাসমান অবস্থায় এসে এই গ্রামে আশ্রয় নিয়ে স্থায়ী বাসিন্দা হয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৭৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ওয়াসার ১২৬ একর জমির উপর দেশের বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙনে বাড়িঘর হারানো আশ্রয়হীন ও ভবঘুরে মানুষদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। এর নাম দেয়া হয় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্র। শুরুতে সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবারের পুনর্বাসন করা হলেও বর্তমানে চনপাড়ার মোট বাসিন্দার সংখ্যা লক্ষাধিক। ভোটারই রয়েছেন প্রায় ১৭ হাজার। তবে ২০১১ সালের আগ পর্যন্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন না চনপাড়ার বাসিন্দারা। সংসদ সদস্য ও উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে পারতেন তারা। এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালতের রায়ে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটাধিকারপ্রাপ্ত হন তারা।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির ভাষ্যমতে, চনপাড়ার ভাসমান লোকজন শুরুতে দিনমজুরের কাজ করতেন। তবে আশির দশকের শুরুর দিকে এই অঞ্চলে মাদক কেনাবেচা শুরু হয়। এই এলাকায় একাধিক বাহিনী মাদক বেচাকেনাসহ চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, খড় পার্টিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে জড়িত। গত কয়েকবছরে মাদক ব্যবসায়ী ও অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে চনপাড়া।

সরেজমিনে চনপাড়া

রাজধানী লাগোয়া চনপাড়া গ্রামে স্থলপথে ঢোকার একমাত্র পথ ডেমরা থেকে বালু সেতু। বালু সেতু পার হলেই চনপাড়া মোড়। চনপাড়াকে নয়টি ওয়ার্ডে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের অসংখ্য অলিগলি। বাড়িঘর একটার সঙ্গে অন্যটা লাগোয়া। চনপাড়ার দুইদিকে শীতলক্ষ্যা নদী এবং একদিকে বালু নদ। পার্শ্ববর্তী ডেমরা, নোয়াপাড়া ও মুড়াপাড়া থেকে নদীপথে চনপাড়ায় ঢোকা যায়। চনপাড়ায় প্রবেশের জন্য তিনটি খেয়াঘাট রয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের ভাষ্য, বেশিরভাগ মাদকের চালান চনপাড়ায় নদীপথে ঢোকে। স্থলপথেও অভিনব কায়দায় মাদকের ছোট-বড় চালান আনা হয়। অস্ত্রের কেনাবেচাও চলে এখানে। চনপাড়ার ভেতরে অর্ধশতাধিক চিহ্নিত মাদেকর স্পট রয়েছে। মাদকের এইসব স্পট নিয়ন্ত্রণকারীদের মধ্যে রয়েছেন রাশেদুল ইসলাম শাহীন ওরফে সিটি শাহীন, জয়নাল আবেদীন, রাজু আহম্মেদ ওরফে রাজা, শাহাবউদ্দিন, শমসের, রোকসানা, মোস্তফা, রায়হান, ফালান, শাওন, আনোয়ার, স্বপন, ফালান, আসাদুল, শাহ্ আলম, তার বোন শাহিদা, বিল্লাল, রওশানা, রহিমন, নাসির, শাহীন। একসময় চনপাড়ায় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য বিউটি আক্তার ওরফে কুট্টির নিয়ন্ত্রণ ছিল। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২০১৭ সালের নভেম্বরে বিউটির স্বামী এমএ হাসান ওরফে হাসান মুহুরি খুন হন। দুই বছরের মাথায় ২০১৯ সালের জুনে খুন হন বিউটিও। বিউটি ও বিউটির স্বামী হত্যা মামলার আসামি জয়নাল, শাহীন, রাজা, আনোয়ারকে আসামি করা হয়। বিউটি মারা যাওয়ার পর চনপাড়া মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে নেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান বজলুর রহমান। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। যদিও মাদক ব্যবসা ও অপরাধীদের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ সবসময়ই অস্বীকার করে আসছেন বজলুর।

চনপাড়ার সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয় পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ও সাংবাদিকের সঙ্গে। চনপাড়ায় শুরু থেকে আছেন এমন একাধিক ব্যক্তি নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, সত্তরের দশকের শেষের দিকে দুটি স্পটে গাঁজা বিক্রি ও সেবন হতো। শুক্কুর ও আলী নামে দুই ব্যক্তি এই স্পট দুটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। আশির দশকের শুরুর দিকে মাদকের বিস্তৃতি বাড়তে থাকে। তবে ২০১১ সালের পর থেকে মাদক পুরো চনপাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজাসহ সবধরনের মাদক এখানে বিক্রি হয়। এক পাঁচ বছরে পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ রূপ নিয়েছে। হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে যেকোন প্রকার মাদক। শুধু মাদকই নয় অপরাধীরা আশ্রয়স্থল হিসেবেও বেছে নেয় চনপাড়াকে। গত দুই দশকে মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে চনপাড়ায় খুন হয়েছেন পুলিশের এক সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন। এই সময়ে থানায় কেবল চনপাড়ার মাদক ও মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মারামারির ঘটনায় দুই হাজারের বেশি মামলা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দুই-তিনটা মামলা হয় বলেও জেলা পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান। যদিও অভিযোগ রয়েছে চনপাড়ার মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা পায় পুলিশও।

স্থানীয় বাসিন্দা সভাপতি হারুন মিয়াজি সংবাদকে বলেন, ‘গত দশ বছরে ভয়ানকভাবে চনপাড়ায় মাদকের বিস্তার বেড়েছে। প্রতিটি অলি-গলিতে মাদকের কেনাবেচা চলে। কয়েকজন ব্যক্তিই এইসবের নিয়ন্ত্রক। তাদের শেল্টার দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এলাকার শিক্ষিত ছেলেমেয়ে এই কারণে মাদকসেবন ও বিক্রির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। উপাসনালয়ের সামনেও মাদক বিক্রি চলে। এসব নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে মারামারির ঘটনা নিত্যদিনের।’

প্রশাসনিকভাবে কড়াকড়ি থাকলে মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব অভিমত তার। তিনি বলেন, ‘মাদক ও সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হিসেবে রূপ নিয়ে চনপাড়া। এই গ্রামের পুরোনো বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের ছেলেমেয়েকে গ্রামের বাইরে রাখেন। গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে।’

স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমানও চনপাড়ায় মাদকের বিস্তৃতির কথা স্বীকার করেন। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করেন তিনি। সংবাদকে বজলুর বলেন, ‘সিটি শাহীন, জয়নাল, শাহাবুদ্দিন, শমসেরসহ ছোট-বড় অর্ধশত মাদক ব্যবসায়ী আছে চনপাড়ায়। কয়েকবছর যাবত মাদকের বিস্তৃতি এই এলাকায় বাড়ছে এইটা সত্য; কিন্তু আশির দশকের শুরু থেকেই মাদক বেচাকেনা ছিল। এইসব নিয়ন্ত্রণে কাজ করি আমি। অথচ আমাকেই প্রতিবার মাদক ব্যবসায়ীদের নেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়।’

সরেজমিন ঘুরে চনপাড়ায় রাস্তার পাশে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো দেখা যায়। তবে সেসব ক্যামেরা সবগুলোই প্রতিষ্ঠানের দিকে ঘোরানো। রাস্তার দিকে না দিয়ে দোকানের দিকে ঘুরিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে মো. রহিম নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘এলাকায় কোন ঘটনা ঘটলে পুলিশ এলাকায় আইসা ক্যামেরা চেক করে। এই কারণে ক্যামেরা রাস্তার দিকে না রাইখা দোকানের দিকে ঘুরিয়ে রাখতে বলছে।’

কারা এমন নির্দেশ দিয়েছে প্রশ্ন করলে উত্তর না দিয়ে ওই দোকানি বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার পর থেকেই ক্যামেরা ঘুরাইয়া দিছে তারা। কে দিছে এইটা বলতে পারবো না।’

তবে চনপাড়ার মাদক বিক্রি কিংবা অপরাধ কার্যক্রম নিয়ে সাধারণ কোন ব্যক্তি প্রকাশ্যে মুখে খোলেন না। স্থানীয় সাংবাদিকরা বলছেন, চনপাড়ায় কোন ঘটনা ঘটলে তার জন্য সংবাদ সংগ্রহে গেলেও মাদক ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়তে হয়।

চনপাড়ায় অপরাধীদের দৌরাত্ম্য এমন যে, অভিযান চালাতে গিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও একাধিকবার হামলার সম্মুখীন হতে হয়েছে। কোন শীর্ষ সন্ত্রাসী বা অপরাধী লুকিয়ে থাকার জন্যও এই বস্তিকে বেছে নেন। এমনকি এই বস্তির অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হিমশিম খেতে হয়। গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে এমনই এক ঘটনা ঘটে চনপাড়ায়। ওই রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায় চনপাড়ায়। স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সূত্রমতে, ওইদিন শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালায় র‌্যাব। শাহীনকে গ্রেপ্তার করতে না পারলেও তার সহযোগী অন্য মাদক ব্যবসায়ী রাজু আহম্মেদ ওরফে রাজা। ওই অভিযানের পর ‘অভিযানে বাধা দিয়ে হামলার’ অভিযোগে র‌্যাব রূপগঞ্জ থানা পৃথক তিনটি মামলাও করে। একটি মামলায় ইউপি সদস্য বজলুর রহমানকে প্রধান আসামি করা হলেও রহস্যজনকভাবে তিন মামলার কোনটাতেই শাহীনের নাম ছিল না। গত ৯ নভেম্বর দুপুরে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহীন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। যদিও পরবর্তীতে মামলায় র‌্যাব উল্লেখ করেছে, ‘র‌্যাবের নয় মাদক ব্যবসায়ীদেরই কারও গুলিতে শাহীন মারা গেছে।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শতাধিক ব্যক্তি চনপাড়ায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন অপরাধীদের আশ্রয়স্থল এই চনপাড়া। প্রতিমাসেই মাদক সংশ্লিষ্ট দুই-তিনটা মামলা হয়, কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু মাদক ব্যবসায়ীদের নেটওয়ার্ক এতটাই বিস্তৃত যে কাউকে ধরতে যাওয়ার আগেই তারা খবর পেয়ে যায়। আবার ভৌগলিক কারণে চনপাড়ায় ‘ব্লকরেইড’ দিয়ে অভিযান চালানো সম্ভব হয়ে ওঠে না। বস্তির তিনদিকেই পানি।’

চনপাড়ার মাদকের বিস্তৃতি রোধ করতে জেলা পুলিশ প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছে বলে জানান জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল। তবে মাদক ব্যবসায়ীদের ধরতে গেলে প্রায় সময় প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় বলে জানালেন জেলা পুলিশের শীর্ষ এই কর্মকর্তাও।

তিনি সংবাদকে বলেন, ‘মূলত চনপাড়া একটি বস্তি এলাকা। ভেতরে অলিগলি ও বাড়িঘরগুলো খুবই ঘিঞ্জি। প্রায় সময় অভিযান চালানোর খবর টের পেয়ে কোন না কোন ঘরে পালিয়ে থাকে কিংবা কোন গলি দিয়ে বেরিয়ে পালিয়ে যায়। এমনও হয় বস্তির লোকজন এসে পুলিশকে ঘেরাও করে রাখে আসামিকে নিতে দেয় না। প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান চালাই। আসামি গ্রেপ্তার হয়, জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও মাদক ব্যবসা চালায়।’