রংপুর জেলা আ’লীগে চরম অস্থিরতা, দেড় বছর পর হাইকমান্ডের নির্দেশে তলবি সভা

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেড় বছর ধরে কার্যকরী কমিটির সভাসহ সাধারণ সভা না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে প্রকাশ্যই স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোসহ বিভিন্ন কারণে দলের কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে।

এ অবস্থায় দুই দফা জেলা আওয়ামী লীগের ৫৩ জন নেতা লিখিতভাবে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সভা আহ্বান করার পর অবশেষে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আজ শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। নগরীর বেতপট্টি দলীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে দলের একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের প্রধান শেখ হাসিনা বার বার দলের কর্মকাণ্ড গতিশীল করা নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা করা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করা উপজেলা পর্যায়ে দলের কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কোন নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বরং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য হওয়ার কারণে স্পষ্টতই নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সভাপতির পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ এবং সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে অন্য একটি অংশ প্রকাশ্যই একে অন্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মওলা জানান, বার বার বলার পরেও জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা আহ্বান করছেন না। বিষয়টি সাধারণ সম্পাদকের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগেড়র নেতারা লিখিত ও মৌখিকভাবে সভা আহ্বান করার জন্য অনুরোধ করলেও গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধান অনুযায়ী সভাপতির অনুমতি ছাড়া সভা করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি দল এক ধরনের নির্দেশনা দেয় সেটা পালন না করে উল্টোটা করা হচ্ছে। বিশেষ করে হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচন, ইউপি নির্বাচন অতি সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রধান শেখ হাসিনা যাদের দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাদের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ না দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের মদ্যে সৃষ্টি হওয়া গ্রুপিং লবিং বন্ধ করে দলের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি ও সাধারণ সভা আহ্বান করার অনুরোধ জানানোর পরেও সভা আহ্বান করছেন না সভাপতি। অবশেষে বাধ্য হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির ৫৩ জন নেতা লিখিতভাবে সভা আহ্বান করার জন্য জেলা আওয়ামী রীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুর কাছে আবেদন করা হয়।

একই কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ আহাম্মেদ। তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ সভা আহ্বান করছেন না। দলের কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে সভা আহ্বান জানিয়েছেন। দুই দফা লিখিতভাবে আবেদনও করা হয়েছে। শুধু তাই নয় বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের ৩ জন নেতা জানিয়েছেন, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ঢাকায় গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে দেখা করে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ার বিষয়টি ও সভা আহ্বান না করার ব্যাপারে অবহিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অবশেষে দলের হাইকমান্ড থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভা আহ্বান করার সবুজ সংকেত পাওয়ার পর আজ সভা আহ্বান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু সভা আহ্বান করার কথা স্বীকার করলেও আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন জানান, শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ ঢাকায় গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে সেখান থেকে রংপুরে ফিরেছেন। জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজু তাকে ফোন করে সভা আহ্বানের বিষয়টি অবহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি দলকে ভালোবাসি দলের মঙ্গল চাই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হোক তা চাই না।

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

রংপুর জেলা আ’লীগে চরম অস্থিরতা, দেড় বছর পর হাইকমান্ডের নির্দেশে তলবি সভা

লিয়াকত আলী বাদল, রংপুর

রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেড় বছর ধরে কার্যকরী কমিটির সভাসহ সাধারণ সভা না হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ পৌরসভা ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ না করে প্রকাশ্যই স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালানোসহ বিভিন্ন কারণে দলের কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা নেমে এসেছে।

এ অবস্থায় দুই দফা জেলা আওয়ামী লীগের ৫৩ জন নেতা লিখিতভাবে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সভা আহ্বান করার পর অবশেষে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে আজ শনিবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছে। নগরীর বেতপট্টি দলীয় কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে দলের একাধিক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। সভায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।

জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের প্রধান শেখ হাসিনা বার বার দলের কর্মকাণ্ড গতিশীল করা নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঙ্গা করা, সাধারণ মানুষের সঙ্গে দলের নেতাকর্মীদের যোগাযোগ আরও বৃদ্ধি করা উপজেলা পর্যায়ে দলের কর্মকাণ্ডে আরও গতিশীলতা ফিরিয়ে আনার কোন নির্দেশনা বাস্তবায়িত হচ্ছে না বরং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মনোমালিন্য হওয়ার কারণে স্পষ্টতই নেতাকর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। সভাপতির পক্ষে জেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ এবং সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে অন্য একটি অংশ প্রকাশ্যই একে অন্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মওলা জানান, বার বার বলার পরেও জেলা সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা আহ্বান করছেন না। বিষয়টি সাধারণ সম্পাদকের কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলা আওয়ামী লীগেড়র নেতারা লিখিত ও মৌখিকভাবে সভা আহ্বান করার জন্য অনুরোধ করলেও গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধান অনুযায়ী সভাপতির অনুমতি ছাড়া সভা করা যাচ্ছে না। তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি দল এক ধরনের নির্দেশনা দেয় সেটা পালন না করে উল্টোটা করা হচ্ছে। বিশেষ করে হারাগাছ পৌরসভা নির্বাচন, ইউপি নির্বাচন অতি সম্প্রতি জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের প্রধান শেখ হাসিনা যাদের দলীয়ভাবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন তাদের পক্ষে নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ না দিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে কাজ করছেন জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় জেলা আওয়ামী লীগের মদ্যে সৃষ্টি হওয়া গ্রুপিং লবিং বন্ধ করে দলের কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করার জন্য বেশ কিছুদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটি ও সাধারণ সভা আহ্বান করার অনুরোধ জানানোর পরেও সভা আহ্বান করছেন না সভাপতি। অবশেষে বাধ্য হয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির ৫৩ জন নেতা লিখিতভাবে সভা আহ্বান করার জন্য জেলা আওয়ামী রীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজুর কাছে আবেদন করা হয়।

একই কথা বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ আহাম্মেদ। তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহাম্মেদ সভা আহ্বান করছেন না। দলের কর্মকাণ্ডে চরম স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। তিনি নিজেও এ ব্যাপারে সভা আহ্বান জানিয়েছেন। দুই দফা লিখিতভাবে আবেদনও করা হয়েছে। শুধু তাই নয় বিষয়টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকেও জানানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের ৩ জন নেতা জানিয়েছেন, সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা ঢাকায় গিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ও দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে দেখা করে রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড স্থবির হওয়ার বিষয়টি ও সভা আহ্বান না করার ব্যাপারে অবহিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অবশেষে দলের হাইকমান্ড থেকে জেলা আওয়ামী লীগের সভা আহ্বান করার সবুজ সংকেত পাওয়ার পর আজ সভা আহ্বান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাজু সভা আহ্বান করার কথা স্বীকার করলেও আর কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন জানান, শারীরিকভাবে তিনি অসুস্থ ঢাকায় গিয়েছিলেন ডাক্তার দেখাতে সেখান থেকে রংপুরে ফিরেছেন। জেলা সাধারণ সম্পাদক রাজু তাকে ফোন করে সভা আহ্বানের বিষয়টি অবহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমি দলকে ভালোবাসি দলের মঙ্গল চাই কোন অপ্রীতিকর ঘটনা হোক তা চাই না।