অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জনের দিকে নজর দিন

এস এম জাহাঙ্গীর আলম

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সঞ্চয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সম্পদ আহরণ, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য জরুরি কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্যই বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হয়। স্বাধীনতা লাভ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ যে পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান লাভ করেছে তার বেশির ভাগ অমূলধনী খাতে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত করার জন্য ভবিষ্যতে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ওপর সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এবার আসা যাক বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের কথায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ কমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। গত কয়েক মাসে ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

বাজেটের ঘাটতি পূরণে বরাবরই বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় বাংলাদেশকে। তুলনামূলক রাজস্ব আয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জন কম হওয়ায় এবং দেশের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্যই মূলত বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। একইভাবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন বেশকিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার।

বিগত দিনের তুলনায় এই বৈদেশিক ঋণ নেয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের স্থিতি। ফলে দিন যত যাচ্ছে, ততই বিদেশি ঋণের বোঝা যেন আরও ভারি হচ্ছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে বিগত ৩৯ বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেয়া হয়েছে, গত ১০ বছরেই তা বেড়ে আড়াই গুণে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ঋণের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে ভাবিষ্যতে ঋণের বোঝা আরও বড় হওয়ার আশঙ্কা করা অমূলক নয়। বিদেশি ঋণের ওপর এতটা নির্ভরশীলতা উচিত নয় জানিয়ে তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এই ঋণ দেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২’ শীর্ষক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এরপর ২০১৬ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, একইভাবে বেড়ে ২০১৭ সালে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ৪০ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২০ সাল শেষে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নতুন ঋণের সঙ্গে আগের ঋণের সুদমুক্ত হওয়ায় বছর বছর স্থিতি বেড়েই চলছে। ওদিকে, শুধু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসেই বিদেশি ঋণ সহায়তা নেয়া হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। গত এক দশকে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ বেড়েছে ছয় গুণেরও বেশি। আর এক বছরেই বেড়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকারও বেশি। গত বছর মাথাপিছু ঋণ ছিল ১৭ হাজার ১৩৬ টাকা।

বিদেশি ঋণের ওপর এতটা নির্ভরশীলতা, ঋণের স্থিতি এত বেশি হওয়া উচিত বৈদেশিক ঋণ এত বৃদ্ধি হওয়া উচিত নয়। কারণ এই ঋণের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বর্তায়। যতটুকু সম্ভব এটা সীমিত করে রাখা দরকার। বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি যে, তারা বলছে যে, আমরা বাজেটের বেশির ভাগ নিজেরাই পূরণ করি, আমরা ঋণ আনি না।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেটা হচ্ছে, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রচুর লোন নিয়ে আসা হচ্ছে। আর সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে মেগা প্রকল্পগুলোর জন্যও লোন আসছে। এই ঋণের বোঝাটা বাড়তে থাকবে। এটা ডিপেন্ড করে সুদের হার কেমন, এর গ্রেস পিরিয়ড কেমন তার ওপর। মাল্টিন্যাশনাল, এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ এগুলোর গ্রেস পিরিয়ড ১.৫ শতাংশের বেশি থাকে না। কিন্তু অন্যগুলোতে থাকে ৫-৬ শতাংশ। অতএব, সেটার বোঝাটা একটু বেশি।

ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বড় একটা কন্ডিশন হলোÑ ঋণের টাকাটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। সময়মতো কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমাদের একটা প্রজেক্ট ২ বছরের জায়গায় ৫ বছর চলে যাচ্ছে। এক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৫ হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অর্থাৎ এই ঋণ অনেকটা অপচয়। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে সেটাও ভালো না। আবার বিদেশ থেকে আনছে এটাও যে খুব ভালো তা নয়। এবং এটার যে কার্যকারিতা সেটাও অনেকটা ব্যাহত হয়েছে।

তাই ঋণ নেয়ার চেয়ে দেশীয় সম্পদ অর্জনের দিকে নজর দেয়ার দরকার ছিল বা আছে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের দুর্বলতার আছে। দেশীয় সম্পদ বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। মূলত প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ ভ্যাটের ওপর বেশি নির্ভরশীল, ইনকাম ট্যাক্সে নয়। অথচ পৃথিবীর সব দেশেই প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল।

[লেখক: সাবেক কর কমিশনার]

শনিবার, ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৩ রবিউস সানি ১৪৪৪

অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জনের দিকে নজর দিন

এস এম জাহাঙ্গীর আলম

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য সঞ্চয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, সম্পদ আহরণ, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ ও অন্যান্য জরুরি কাজ সুষ্ঠুভাবে করার জন্যই বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হয়। স্বাধীনতা লাভ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ যে পরিমাণ বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান লাভ করেছে তার বেশির ভাগ অমূলধনী খাতে ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক বুনিয়াদ শক্ত করার জন্য ভবিষ্যতে বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহারের ওপর সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত। এবার আসা যাক বৈদেশিক মুদ্রার রির্জাভের কথায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, রিজার্ভ কমেছে। এর আগে ধারাবাহিকভাবে যা বাড়ছিল। ১০ বছর আগে ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। পাঁচ বছর আগে ছিল ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার। সেখান থেকে বেড়ে গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার হয়। গত কয়েক মাসে ধরে রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এরপর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়। যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।

বাজেটের ঘাটতি পূরণে বরাবরই বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হতে হয় বাংলাদেশকে। তুলনামূলক রাজস্ব আয় ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ অর্জন কম হওয়ায় এবং দেশের বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকা-ের জন্যই মূলত বিদেশি উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। একইভাবে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন বেশকিছু বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে দফায় দফায় বড় অঙ্কের ঋণ নিয়েছে সরকার।

বিগত দিনের তুলনায় এই বৈদেশিক ঋণ নেয়ার প্রবণতা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। প্রতি বছরই বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের স্থিতি। ফলে দিন যত যাচ্ছে, ততই বিদেশি ঋণের বোঝা যেন আরও ভারি হচ্ছে। বিশ্লেষণে দেখা যায়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারের ঋণ বৃদ্ধির হার তুলনামূলক অনেক বেশি। বাংলাদেশের সূচনালগ্ন থেকে বিগত ৩৯ বছরে যে পরিমাণ বৈদেশিক ঋণ নেয়া হয়েছে, গত ১০ বছরেই তা বেড়ে আড়াই গুণে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে ঋণের হার যেভাবে বাড়ছে তাতে ভাবিষ্যতে ঋণের বোঝা আরও বড় হওয়ার আশঙ্কা করা অমূলক নয়। বিদেশি ঋণের ওপর এতটা নির্ভরশীলতা উচিত নয় জানিয়ে তারা বলছেন, ভবিষ্যতে এই ঋণ দেশের জন্য বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

বিশ্বব্যাংকের ‘ইন্টারন্যাশনাল ডেট স্ট্যাটিসটিক্স-২০২২’ শীর্ষক এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২ হাজার ৬৫৭ কোটি ২০ লাখ ডলার। এরপর ২০১৬ সাল শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার, একইভাবে বেড়ে ২০১৭ সালে ঋণের স্থিতি দাঁড়ায় ৪ হাজার ৬৮১ কোটি ৯০ লাখে। ২০১৮ সালে ৫ হাজার ২১৩ কোটি ৮০ লাখ, ২০১৯ সালে ৫ হাজার ৭০৯ কোটি ৪০ লাখ এবং সর্বশেষ ২০২০ সাল শেষে দাঁড়ায় ৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার। নতুন ঋণের সঙ্গে আগের ঋণের সুদমুক্ত হওয়ায় বছর বছর স্থিতি বেড়েই চলছে। ওদিকে, শুধু চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের পাঁচ মাসেই বিদেশি ঋণ সহায়তা নেয়া হয়েছে ৩০৮ কোটি ৯৪ লাখ ডলার।

সর্বশেষ গত সেপ্টেম্বরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছিলেন, বর্তমানে দেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার। গত এক দশকে মাথাপিছু বিদেশি ঋণ বেড়েছে ছয় গুণেরও বেশি। আর এক বছরেই বেড়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকারও বেশি। গত বছর মাথাপিছু ঋণ ছিল ১৭ হাজার ১৩৬ টাকা।

বিদেশি ঋণের ওপর এতটা নির্ভরশীলতা, ঋণের স্থিতি এত বেশি হওয়া উচিত বৈদেশিক ঋণ এত বৃদ্ধি হওয়া উচিত নয়। কারণ এই ঋণের বোঝা সাধারণ মানুষের ওপর পড়ে। আর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর বর্তায়। যতটুকু সম্ভব এটা সীমিত করে রাখা দরকার। বেশ কয়েক বছর ধরে আমরা দেখছি যে, তারা বলছে যে, আমরা বাজেটের বেশির ভাগ নিজেরাই পূরণ করি, আমরা ঋণ আনি না।

কিন্তু প্রকৃতপক্ষে যেটা হচ্ছে, উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য প্রচুর লোন নিয়ে আসা হচ্ছে। আর সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে মেগা প্রকল্পগুলোর জন্যও লোন আসছে। এই ঋণের বোঝাটা বাড়তে থাকবে। এটা ডিপেন্ড করে সুদের হার কেমন, এর গ্রেস পিরিয়ড কেমন তার ওপর। মাল্টিন্যাশনাল, এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ এগুলোর গ্রেস পিরিয়ড ১.৫ শতাংশের বেশি থাকে না। কিন্তু অন্যগুলোতে থাকে ৫-৬ শতাংশ। অতএব, সেটার বোঝাটা একটু বেশি।

ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে বড় একটা কন্ডিশন হলোÑ ঋণের টাকাটা যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। সময়মতো কাজে লাগাতে হবে। কিন্তু আমাদের একটা প্রজেক্ট ২ বছরের জায়গায় ৫ বছর চলে যাচ্ছে। এক হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট ৫ হাজার কোটি টাকা হয়ে যায়। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। অর্থাৎ এই ঋণ অনেকটা অপচয়। বাজেটের ঘাটতি পূরণে ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে সেটাও ভালো না। আবার বিদেশ থেকে আনছে এটাও যে খুব ভালো তা নয়। এবং এটার যে কার্যকারিতা সেটাও অনেকটা ব্যাহত হয়েছে।

তাই ঋণ নেয়ার চেয়ে দেশীয় সম্পদ অর্জনের দিকে নজর দেয়ার দরকার ছিল বা আছে। বিশেষ করে রাজস্ব আদায়ে এনবিআরের দুর্বলতার আছে। দেশীয় সম্পদ বাড়াতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। মূলত প্রত্যক্ষ করের ওপর জোর দিতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ ভ্যাটের ওপর বেশি নির্ভরশীল, ইনকাম ট্যাক্সে নয়। অথচ পৃথিবীর সব দেশেই প্রত্যক্ষ করের ওপর নির্ভরশীল।

[লেখক: সাবেক কর কমিশনার]