উচ্চ শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আসবাব শিল্প

দেশের আসবাব শিল্পের রপ্তানি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে বিডা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঁচামালের উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে দেশের আসবাব শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উচ্চ শুল্কের কারণে রপ্তানিবাজারের প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে যাচ্ছে আসবাব শিল্প খাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডার প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের পর দেশে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান হয়েছে আসবাব শিল্প খাতে। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ২৫ লাখ লোক কাজ করছেন। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কসহ বেশ কিছু কারণে অন্যতম বৃহৎ এ শিল্প খাতের সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আমরা রপ্তানি বাড়াতে চাই। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে এখন যে পরিমাণ শুল্ক ধরা হয়, তাতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। আসবাব শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারাও বলছেন, ‘উচ্চ শুল্ক ও অন্যান্য সুযোগের অভাবে আসবাব রপ্তানি বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’

সম্প্রতি বিডার কৌশলগত বিনিয়োগ উইংয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ আসবাব রপ্তানিকারক সমিতির সমন্বয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি এ প্রতিবেদন তৈরির কাজ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি আসবাব শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যান্ডধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। বাকিগুলো নন-ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে দেশের আসবাব শিল্পের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। যার প্রায় ৬৫ শতাংশ নন-ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের দখলে। বাসাবাড়ি, দপ্তর, হাসপাতাল, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাহাজ, উড়োজাহাজসহ প্রায় সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই আসবাবের প্রয়োজন হয়। সাধারণত কাঠ, বোর্ড, ধাতু, প্লাস্টিক, বাঁশ, বেত ইত্যাদি দিয়ে আসবাবের কাঠামো তৈরি হয়। এর সঙ্গে ফোম, চামড়া, রেক্সিন, কাচ, কাপড় ইত্যাদি সহায়ক উপকরণও ব্যবহৃত হয়।

বিডা বলছে, দেশের স্থানীয় বাজার চাহিদার পাশাপাশি আসবাবের বিপুল রপ্তানি সম্ভাবনাও রয়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আসবাব শিল্প খাতের রপ্তানি আয় ছিল ৫ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩ লাখ ডলারে। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত অর্থবছরে ৬১টি দেশে আবসাবসামগ্রী রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩৮টি বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পান রপ্তানিকারকরা। আসবাব রপ্তানির আয়ের অর্ধেকই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এছাড়া জাপান, ফ্রান্স, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, সৌদি আরব ও স্পেনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আসবাবসামগ্রী রপ্তানি হয়েছে। তবে বিশ্বের মোট আসবাব রপ্তানির তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি খুবই কম।

বিশ্ববাণিজ্য পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ট্রেডম্যাপের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে সারা বিশ্বে ৩২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আসবাব রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চীন ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বা ৪২ শতাংশ আসবাব রপ্তানি করে।

তবে রপ্তানির এ তালিকায় বাংলাদেশের অবদান মাত্র দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ আসবাব আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র গত বছর প্রায় ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের আসবাব আমদানি করে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র দুই কোটি মার্কিন ডলার।

প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আসবাব শিল্প খাতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বিডার প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, আসবাব খাত একটি শ্রমঘন শিল্প। দেশে শ্রমিক মজুরি কম। এছাড়া রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। এসব সত্ত্বেও কাঁচামালের উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে আসবাবশিল্প বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাচ্ছে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আংশিক রপ্তানিমুখী দেশীয় আসবাব শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। এসব কাঁচামাল আনতে ১০ থেকে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দিতে হয়। অথচ প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে কাঁচামাল আমদানির শুল্ক সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।

রবিবার, ২০ নভেম্বর ২০২২ , ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৪ রবিউস সানি ১৪৪৪

বিডার প্রতিবেদন

উচ্চ শুল্কে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আসবাব শিল্প

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

দেশের আসবাব শিল্পের রপ্তানি ও বিনিয়োগ সম্ভাবনা পর্যালোচনার উদ্দেশ্যে সম্প্রতি একটি গবেষণা করে বিডা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাঁচামালের উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে দেশের আসবাব শিল্পের সম্ভাবনা কাজে লাগানো যাচ্ছে না। উচ্চ শুল্কের কারণে রপ্তানিবাজারের প্রতিযোগিতায়ও পিছিয়ে যাচ্ছে আসবাব শিল্প খাত। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বা বিডার প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

পোশাক ও বস্ত্র খাতের পর দেশে সর্বোচ্চ কর্মসংস্থান হয়েছে আসবাব শিল্প খাতে। বর্তমানে এ খাতে প্রায় ২৫ লাখ লোক কাজ করছেন। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে উচ্চ শুল্কসহ বেশ কিছু কারণে অন্যতম বৃহৎ এ শিল্প খাতের সম্ভাবনাকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। আমরা রপ্তানি বাড়াতে চাই। কিন্তু কাঁচামাল আমদানিতে এখন যে পরিমাণ শুল্ক ধরা হয়, তাতে উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যায়। আসবাব শিল্পের সঙ্গে জড়িত উদ্যোক্তারাও বলছেন, ‘উচ্চ শুল্ক ও অন্যান্য সুযোগের অভাবে আসবাব রপ্তানি বিপুল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।’

সম্প্রতি বিডার কৌশলগত বিনিয়োগ উইংয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাংলাদেশ আসবাব রপ্তানিকারক সমিতির সমন্বয়ে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি এ প্রতিবেদন তৈরির কাজ করে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দেশে বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি আসবাব শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ব্র্যান্ডধারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা শতাধিক। বাকিগুলো নন-ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে দেশের আসবাব শিল্পের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার। যার প্রায় ৬৫ শতাংশ নন-ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠানের দখলে। বাসাবাড়ি, দপ্তর, হাসপাতাল, দোকানপাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, জাহাজ, উড়োজাহাজসহ প্রায় সব ধরনের কর্মক্ষেত্রেই আসবাবের প্রয়োজন হয়। সাধারণত কাঠ, বোর্ড, ধাতু, প্লাস্টিক, বাঁশ, বেত ইত্যাদি দিয়ে আসবাবের কাঠামো তৈরি হয়। এর সঙ্গে ফোম, চামড়া, রেক্সিন, কাচ, কাপড় ইত্যাদি সহায়ক উপকরণও ব্যবহৃত হয়।

বিডা বলছে, দেশের স্থানীয় বাজার চাহিদার পাশাপাশি আসবাবের বিপুল রপ্তানি সম্ভাবনাও রয়েছে। গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আসবাব শিল্প খাতের রপ্তানি আয় ছিল ৫ কোটি ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে রপ্তানি বেড়ে দাঁড়ায় ১১ কোটি ৩ লাখ ডলারে। অর্থাৎ ছয় বছরের ব্যবধানে এ খাতে রপ্তানি আয় বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। গত অর্থবছরে ৬১টি দেশে আবসাবসামগ্রী রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ৩৮টি বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পান রপ্তানিকারকরা। আসবাব রপ্তানির আয়ের অর্ধেকই আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এছাড়া জাপান, ফ্রান্স, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, সৌদি আরব ও স্পেনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আসবাবসামগ্রী রপ্তানি হয়েছে। তবে বিশ্বের মোট আসবাব রপ্তানির তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানি খুবই কম।

বিশ্ববাণিজ্য পর্যবেক্ষণকারী ওয়েবসাইট ট্রেডম্যাপের তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে সারা বিশ্বে ৩২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বেশি আসবাব রপ্তানি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চীন ১৪ হাজার কোটি মার্কিন ডলার বা ৪২ শতাংশ আসবাব রপ্তানি করে।

তবে রপ্তানির এ তালিকায় বাংলাদেশের অবদান মাত্র দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিশ্বের শীর্ষ আসবাব আমদানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র গত বছর প্রায় ৮ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের আসবাব আমদানি করে। সেখানে বাংলাদেশ থেকে আমদানির পরিমাণ ছিল মাত্র দুই কোটি মার্কিন ডলার।

প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আসবাব শিল্প খাতে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে বিডার প্রতিবেদনে। বলা হয়েছে, আসবাব খাত একটি শ্রমঘন শিল্প। দেশে শ্রমিক মজুরি কম। এছাড়া রপ্তানিতে ১৫ শতাংশ হারে প্রণোদনা দেয় সরকার। এসব সত্ত্বেও কাঁচামালের উচ্চ আমদানি শুল্কের কারণে আসবাবশিল্প বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা হারাচ্ছে। এ খাতের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আংশিক রপ্তানিমুখী দেশীয় আসবাব শিল্পের অধিকাংশ কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। এসব কাঁচামাল আনতে ১০ থেকে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত আমদানি শুল্ক দিতে হয়। অথচ প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনামে কাঁচামাল আমদানির শুল্ক সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ পর্যন্ত।