মুজিবনগরের আম বাগান রক্ষায় ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ

অবশেষে মুজিবনগর আম বাগানের গাছ সংরক্ষণ ও পরিচর্যার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। হাতে নেয়া হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬শ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প। সম্প্রতি পরিচর্যা কাজের উদ্বোধন করে গেছেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রকল্পে সেচ সংযোজন, আগাছা পরিষ্কার, নতুন গাছের চারা রোপন, কম্বিনেশন ফার্টিলাইজার ও কিটনাশক প্রয়োগসহ বেশ কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায় অবিভক্ত বাংলার জমিদার কেদারনাথ রায় তার স্ত্রীর আঁচারের বাগান হিসেবে এ আম বাগানটি তৈরি করেন। বাগানটিতে ১২ জাতের ১২০০টি আম গাছ ছিল। বাগানটিতে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই লম্বাসারি দেখতে পাওয়া যায়। কোন দিকে এলোমেলো নেই। আমগাছের বেশিরভাগ আম টক। কেদারনাথ রায়ের এই আম বাগান দেশ বিভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে চলে যায়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই বাগানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামান শপথ গ্রহণ করেছিলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে অযন্ত আর অবহেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছিল বাগানটি। ইতিমধ্যে শতাধিক আম গাছ মারা গিয়েছে। মারা যাওয়ার পথে আরও শতাধিক। বাগানের মধ্যে এখনও অনেক গাছের ডালপালা শুকিয়ে আছে। তাছাড়া অনেক গাছেই পরগাছা জন্মে মূল গাছের ক্ষতি করছে। এতোকিছুর পরেও কারও কোন নজর ছিল না বাগানটিতে।

পরে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের উদ্যোগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মুতি কমপ্লেক্সের আ¤্রকাননের আম গাছের পরিযর্চার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কৃষি মন্ত্রনালয়কে পত্র দেয়া হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সহযোগীতায় প্রায় ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেই কৃষি মন্ত্রাণালয়। গত ১৬ নভেম্বর মুজিবনগরে পরিদর্শনে এসে বাগান পরিচর্যা কাজের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

মুজিবনগরের আম বাগান সংরক্ষণ ও পরিচর্যার এই উদ্যোগ সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয়রা। সেই সাথে বাগানের প্রতিটি আমের জাত সংরক্ষণ করে রাখারও দাবি জানান অনেকেই।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো মারা যাচ্ছিল। মুজিবনগরের এই আম বাগান মেহেরপুরের সম্পদ। একদিকে যেমন এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়, অন্যদিকে ঐতিহাসিক স্মৃতিও বহন করে। বাগান পরিচর্যার জন্য আমাদের আলাদা কোন বরাদ্দ ছিল না। কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করছি গাছগুলোকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা যাবে।

সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২ , ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৪

মুজিবনগরের আম বাগান রক্ষায় ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ

প্রতিনিধি, মেহেরপুর

image

অবশেষে মুজিবনগর আম বাগানের গাছ সংরক্ষণ ও পরিচর্যার উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান সরকার। হাতে নেয়া হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৮৪ হাজার ৬শ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প। সম্প্রতি পরিচর্যা কাজের উদ্বোধন করে গেছেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। প্রকল্পে সেচ সংযোজন, আগাছা পরিষ্কার, নতুন গাছের চারা রোপন, কম্বিনেশন ফার্টিলাইজার ও কিটনাশক প্রয়োগসহ বেশ কিছু কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

ইতিহাস থেকে জানা যায় অবিভক্ত বাংলার জমিদার কেদারনাথ রায় তার স্ত্রীর আঁচারের বাগান হিসেবে এ আম বাগানটি তৈরি করেন। বাগানটিতে ১২ জাতের ১২০০টি আম গাছ ছিল। বাগানটিতে যেদিকে তাকানো যায় সেদিকেই লম্বাসারি দেখতে পাওয়া যায়। কোন দিকে এলোমেলো নেই। আমগাছের বেশিরভাগ আম টক। কেদারনাথ রায়ের এই আম বাগান দেশ বিভাগের পরে পূর্ব পাকিস্তান সরকার এবং একাত্তরের পর থেকে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে চলে যায়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল এই বাগানের মধ্যে বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহম্মেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এএইচএম কামরুজ্জামান শপথ গ্রহণ করেছিলেন।

স্বাধীনতার পর থেকে অযন্ত আর অবহেলায় ঐতিহ্য হারাচ্ছিল বাগানটি। ইতিমধ্যে শতাধিক আম গাছ মারা গিয়েছে। মারা যাওয়ার পথে আরও শতাধিক। বাগানের মধ্যে এখনও অনেক গাছের ডালপালা শুকিয়ে আছে। তাছাড়া অনেক গাছেই পরগাছা জন্মে মূল গাছের ক্ষতি করছে। এতোকিছুর পরেও কারও কোন নজর ছিল না বাগানটিতে।

পরে মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের উদ্যোগে ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্মুতি কমপ্লেক্সের আ¤্রকাননের আম গাছের পরিযর্চার জন্য অর্থ বরাদ্দ চেয়ে কৃষি মন্ত্রনালয়কে পত্র দেয়া হয়। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সহযোগীতায় প্রায় ৮৭ লাখ টাকা বরাদ্দ দেই কৃষি মন্ত্রাণালয়। গত ১৬ নভেম্বর মুজিবনগরে পরিদর্শনে এসে বাগান পরিচর্যা কাজের উদ্বোধন করেন কৃষি মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

মুজিবনগরের আম বাগান সংরক্ষণ ও পরিচর্যার এই উদ্যোগ সাধুবাদ জানিয়েছে স্থানীয়রা। সেই সাথে বাগানের প্রতিটি আমের জাত সংরক্ষণ করে রাখারও দাবি জানান অনেকেই।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, পরিচর্যার অভাবে গাছগুলো মারা যাচ্ছিল। মুজিবনগরের এই আম বাগান মেহেরপুরের সম্পদ। একদিকে যেমন এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়, অন্যদিকে ঐতিহাসিক স্মৃতিও বহন করে। বাগান পরিচর্যার জন্য আমাদের আলাদা কোন বরাদ্দ ছিল না। কৃষি মন্ত্রণালয় আমাদের বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করছি গাছগুলোকে সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে টিকিয়ে রাখা যাবে।