নিত্যপণ্যের দাম আর কত বাড়বে?

এ বি সিদ্দিক

গত ১৮ অক্টোবর দৈনিক সংবাদসহ সবগুলো জাতীয় দৈনিকের অন্যতম খবর ছিল ‘তেল-চিনির দাম ফের বাড়লো’। সেই সাথে ওএমএসেরও বাড়ছে আটার দাম। সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেজিতে চিনির দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৭ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা ও চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়েছে। এর আগে দাম কমার মাত্র এক মাসের মাথায় বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

দিন যত যাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের দাম তত বাড়ছে। ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমন কোন পণ্য নেই, যে পণ্যের দাম বাড়েনি। সপ্তাহ ভেদে আরও এক দফা বাড়লো চিনির দাম। চাল, তেল, চিনিসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। তবে সবজির দাম না কমলেও গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। এছাড়া বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী, সাবান, ডিটারজেন্টসহ টয়লেট্রিজের প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বাড়তে থাকায় চাপাকান্না বিরাজ করছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহেও বিক্রি করা হয় ৯৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৬ অক্টোবর কেজিতে দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দেয়। তবে বাজারে এই দরে চিনি মিলছে না। খোলা চিনিই বিক্রি করা হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজারে এই চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চালের বাজারে সিদ্ধ ও আতপ চালে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বাড়লো দাম; যা বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। বাজারে খুচরা পর্যায়ে পারি সিদ্ধ চাল কেজি ৫৬ টাকা, জিরাশাইল চাল দুই গ্রেডের ৬৮ ও ৭০ টাকা কেজি, তিন গ্রেডের নাজিরশাইল চাল যথাক্রমে ৭২, ৭৬ ও ৮০ টাকায়, পাইজাম আতপ তিন গ্রেডের যথাক্রমে ৬৫, ৬৮ ও ৭০ টাকা কেজি এবং কাটারি ভোগ ৮০ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব চাল গত সপ্তাহে ২ থেকে ৪ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। শুধু চাল নয়, বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৮৫০ থেকে ৮৭০ টাকা এবং এক লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে সাবান, শ্যাম্পু, হ্যান্ডওয়াশ, টুথপেস্টসহ সব পণ্য কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। অনেকদিন ধরেই এসব পণ্যের বাজার দখল করে আছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। তবে ইদানীং তাদের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে বিদেশি এ প্রতিষ্ঠানটি। মূল্য সমন্বয় করতে ইউনিলিভারের দেখাদেখি অন্য কোম্পানিগুলোও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক মাস আগেও ইউনিলিভারের পণ্য লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশের দাম ছিল ৬০ টাকা। তা এখন ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫ টাকা। ১ কেজি ওজনের কাপড় কাঁচা হুইল গুঁড়ো সাবানের দাম ছিল ৯০ টাকা, এখন সেটি ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ১০০ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা মূল্যের রিন গুঁড়ো সাবানের মূল্য ১৩৫ টাকা ধরেছে ইউনিলিভার। কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি করেছে সার্ফ এক্সেলের দামও। এখন এক কেজি ওজনের সার্ফ এক্সেল বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।

এছাড়াও ইউনিলিভারের সব ধরনের সাবানে প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মাসখানেক আগেও যে সাবানটির মূল্য লেখা ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা, এখন সেটি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কোম্পানিটির মাঝারি সাইজের লাক্স সাবানের মূল্য ছিল ৩২ টাকা, এখন সেই সাবান বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা। আর বড় সাইজের লাক্স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ টাকা। লাইফবয় সাবান যেটার মূল্য ছিল ৩২ টাকা, এখন সেটি ৩৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। আর বড় সাইজের লাইফবয় এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৪২ টাকা। স্যান্ডেলিনা সাবানেও ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। থালাবাসন পরিষ্কারে ব্যবহৃত ভিম সাবানের দাম বাড়ানো না হলেও ওজনে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে ৩২ টাকা দামের ভিম যেখানে ৩৩০ গ্রাম ওজনের ছিল, সেটি এখন কমিয়ে ৩০০ গ্রাম করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিলিভারের পন্ডস ফেসওয়াশ ও ত্বকে মাখানো ক্রিমেও ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানিটির ৩৫০ গ্রাম ওজনের সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা। এক মাসেই ১৮০ মিলি ওজনের সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১৫ টাকা, এখন যা বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। কোম্পানিটির ২০০ গ্রাম ওজনের ক্লোজআপ টুথপেস্টের দাম ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ধরা হয়েছে ১২০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১১০ টাকা। পেপসোডেন্ট টুথপেস্ট আগে যেটার দাম ছিল ১২০ টাকা, এখন তা ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা। এছাড়াও মুখের ক্রিম ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর দামও বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

এভাবে প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোনো পণ্যের দাম না বাড়লেও ওজনে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের পথ ধরেই প্রায় সব কোম্পানিই এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে। মোমিন রোডের হক স্টোরের কুতুব উদ্দিন বলেন, গত এক বছর ধরেই ইউনিলিভারের সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাদের দেখাদেখি অন্য কোম্পানিও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এক মাসের মধ্যেই সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্টের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। পণ্যের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। কিছু পণ্যের দাম একলাফে অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে ক্রেতারা যেমন সমস্যায় পড়েছে, তেমনি আমরাও বিপদে আছি। কোম্পানি দাম বাড়ালেও কাস্টমারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় আমাদের। আর আমরাও তো সাধারণ ভোক্তা। আমাদেরও তো বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। এই দুই শ্রেণীর মানুষ আয়ের সঙ্গে পরিবারের ব্যয় সামলাতে পারছেন না। অনেকেই ব্যয় সামলাতে খাবার কেনার বাজেট কাটছাঁট করছেন।

জ্বালানি তেলের দামের কারণে সব কিছুর দামই বাড়ছে। কিন্তু যতটা বাড়ার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে। সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই সুযোগ নিচ্ছে, সবজি দোকানদার থেকে শুরু করে সবাই। চাল আমদানির সুযোগ দেয়ার পরও চালের বাজারে সংকট তৈরি করা হয়েছে চাল মজুদ করে। ভোজ্যতেলেও তাই করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কথা মতো সরকার দাম বাড়াচ্ছেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত।

গত অক্টোবর মাসের চিত্রটা ছিল এমন যে, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলে মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ৩২ শতাংশ, ভারতে ১৬ শতাংশ। চিনি বাংলাদেশে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। গম বাংলাদেশে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারতে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। গণপরিবহন ভাড়া বাংলাদেশে ২২ শতাংশ, ভারতে ৯ শতাংশ। সয়াবিন তেল বাংলাদেশে ২২ শতাংশ, ভারতে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ সব পণ্যের দাম বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে কম। আসলে বাংলাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। বরং সরকারই দাম বাড়ানোর কাজে সহায়তা করে বলে জনগণ মনে করেন।

বর্তমান অবস্থায় ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটা সরকারের বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। দেশের সিংহভাগ নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ এখন দিশেহারা। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমতাবস্থায় সরকার কি করবেন সেই ভাবনা সরকারেরই।

[লেখক : সাংবাদিক]

সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২ , ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৪

নিত্যপণ্যের দাম আর কত বাড়বে?

এ বি সিদ্দিক

গত ১৮ অক্টোবর দৈনিক সংবাদসহ সবগুলো জাতীয় দৈনিকের অন্যতম খবর ছিল ‘তেল-চিনির দাম ফের বাড়লো’। সেই সাথে ওএমএসেরও বাড়ছে আটার দাম। সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১২ টাকা বাড়িয়ে ১৯০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে কেজিতে চিনির দাম ১২ টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে ১০৭ টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তেলের দাম লিটারে ১২ টাকা ও চিনির দাম কেজিতে ১২ টাকা বাড়িয়েছে। এর আগে দাম কমার মাত্র এক মাসের মাথায় বোতলজাত ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১৫ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

দিন যত যাচ্ছে ভোগ্যপণ্যের দাম তত বাড়ছে। ভোগ্যপণ্যের বাজারে দাম কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমন কোন পণ্য নেই, যে পণ্যের দাম বাড়েনি। সপ্তাহ ভেদে আরও এক দফা বাড়লো চিনির দাম। চাল, তেল, চিনিসহ প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়তি। তবে সবজির দাম না কমলেও গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। এছাড়া বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রসাধনী, সাবান, ডিটারজেন্টসহ টয়লেট্রিজের প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এ অবস্থায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ক্রেতারা। সাধারণ মানুষের আয় না বাড়লেও ব্যয় বাড়তে থাকায় চাপাকান্না বিরাজ করছে। বাজারে এখন খোলা চিনি ১১০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে; যা গত সপ্তাহেও বিক্রি করা হয় ৯৫ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর আগে কখনো চিনির দাম ১০০ টাকার বেশি ওঠেনি। এদিকে সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে পাঁচ টাকা করে বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় পরিশোধনকারী মিলগুলোর উৎপাদন খরচ বিবেচনায় নিয়ে সরকার গত ৬ অক্টোবর কেজিতে দাম ছয় টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনি ৯০ টাকা বেঁধে দেয়। তবে বাজারে এই দরে চিনি মিলছে না। খোলা চিনিই বিক্রি করা হচ্ছে ১১০ টাকা কেজি দরে। আর প্যাকেট চিনি প্রতি কেজি ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর বাজারে এই চিনি সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চালের বাজারে সিদ্ধ ও আতপ চালে কেজিপ্রতি ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বাড়লো দাম; যা বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে। বাজারে খুচরা পর্যায়ে পারি সিদ্ধ চাল কেজি ৫৬ টাকা, জিরাশাইল চাল দুই গ্রেডের ৬৮ ও ৭০ টাকা কেজি, তিন গ্রেডের নাজিরশাইল চাল যথাক্রমে ৭২, ৭৬ ও ৮০ টাকায়, পাইজাম আতপ তিন গ্রেডের যথাক্রমে ৬৫, ৬৮ ও ৭০ টাকা কেজি এবং কাটারি ভোগ ৮০ থেকে ৮৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব চাল গত সপ্তাহে ২ থেকে ৪ টাকা কমে বিক্রি হয়েছিল। শুধু চাল নয়, বাজারে মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা দরে। সয়াবিন তেল ৫ লিটার ৮৫০ থেকে ৮৭০ টাকা এবং এক লিটার ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে সাবান, শ্যাম্পু, হ্যান্ডওয়াশ, টুথপেস্টসহ সব পণ্য কিনতে হচ্ছে বাড়তি দামে। অনেকদিন ধরেই এসব পণ্যের বাজার দখল করে আছে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড। তবে ইদানীং তাদের পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে বিদেশি এ প্রতিষ্ঠানটি। মূল্য সমন্বয় করতে ইউনিলিভারের দেখাদেখি অন্য কোম্পানিগুলোও দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। এক মাস আগেও ইউনিলিভারের পণ্য লাইফবয় হ্যান্ডওয়াশের দাম ছিল ৬০ টাকা। তা এখন ৫ টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬৫ টাকা। ১ কেজি ওজনের কাপড় কাঁচা হুইল গুঁড়ো সাবানের দাম ছিল ৯০ টাকা, এখন সেটি ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ১০০ টাকা করা হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ টাকা বাড়িয়ে ১২০ টাকা মূল্যের রিন গুঁড়ো সাবানের মূল্য ১৩৫ টাকা ধরেছে ইউনিলিভার। কেজিতে ১০ টাকা বৃদ্ধি করেছে সার্ফ এক্সেলের দামও। এখন এক কেজি ওজনের সার্ফ এক্সেল বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়।

এছাড়াও ইউনিলিভারের সব ধরনের সাবানে প্রকারভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মাসখানেক আগেও যে সাবানটির মূল্য লেখা ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা, এখন সেটি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। কোম্পানিটির মাঝারি সাইজের লাক্স সাবানের মূল্য ছিল ৩২ টাকা, এখন সেই সাবান বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা। আর বড় সাইজের লাক্স বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৪৫ টাকা। লাইফবয় সাবান যেটার মূল্য ছিল ৩২ টাকা, এখন সেটি ৩৮ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বিক্রেতাদের। আর বড় সাইজের লাইফবয় এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৪২ টাকা। স্যান্ডেলিনা সাবানেও ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। থালাবাসন পরিষ্কারে ব্যবহৃত ভিম সাবানের দাম বাড়ানো না হলেও ওজনে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে ৩২ টাকা দামের ভিম যেখানে ৩৩০ গ্রাম ওজনের ছিল, সেটি এখন কমিয়ে ৩০০ গ্রাম করা হয়েছে। এছাড়া ইউনিলিভারের পন্ডস ফেসওয়াশ ও ত্বকে মাখানো ক্রিমেও ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। কোম্পানিটির ৩৫০ গ্রাম ওজনের সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১০ টাকা, এখন বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা। এক মাসেই ১৮০ মিলি ওজনের সানসিল্ক শ্যাম্পুর দাম বেড়েছে ১৫ টাকা, এখন যা বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা। কোম্পানিটির ২০০ গ্রাম ওজনের ক্লোজআপ টুথপেস্টের দাম ১০ টাকা বৃদ্ধি করে ধরা হয়েছে ১২০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ১১০ টাকা। পেপসোডেন্ট টুথপেস্ট আগে যেটার দাম ছিল ১২০ টাকা, এখন তা ধরা হয়েছে ১৩০ টাকা। এছাড়াও মুখের ক্রিম ফেয়ার অ্যান্ড লাভলীর দামও বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

এভাবে প্রায় অধিকাংশ পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। কোনো পণ্যের দাম না বাড়লেও ওজনে কমিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের পথ ধরেই প্রায় সব কোম্পানিই এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি করেছে। মোমিন রোডের হক স্টোরের কুতুব উদ্দিন বলেন, গত এক বছর ধরেই ইউনিলিভারের সব পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। তাদের দেখাদেখি অন্য কোম্পানিও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এক মাসের মধ্যেই সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্টের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। পণ্যের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। কিছু পণ্যের দাম একলাফে অস্বাভাবিক বেড়েছে। এতে ক্রেতারা যেমন সমস্যায় পড়েছে, তেমনি আমরাও বিপদে আছি। কোম্পানি দাম বাড়ালেও কাস্টমারদের কাছে জবাবদিহি করতে হয় আমাদের। আর আমরাও তো সাধারণ ভোক্তা। আমাদেরও তো বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষজন অসহায় হয়ে পড়েছেন। এই দুই শ্রেণীর মানুষ আয়ের সঙ্গে পরিবারের ব্যয় সামলাতে পারছেন না। অনেকেই ব্যয় সামলাতে খাবার কেনার বাজেট কাটছাঁট করছেন।

জ্বালানি তেলের দামের কারণে সব কিছুর দামই বাড়ছে। কিন্তু যতটা বাড়ার কথা তার চেয়ে অনেক বেশি বাড়ছে। সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীরাই সুযোগ নিচ্ছে, সবজি দোকানদার থেকে শুরু করে সবাই। চাল আমদানির সুযোগ দেয়ার পরও চালের বাজারে সংকট তৈরি করা হয়েছে চাল মজুদ করে। ভোজ্যতেলেও তাই করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের কথা মতো সরকার দাম বাড়াচ্ছেন। আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের চেয়ে অনেক বেশি মজবুত।

গত অক্টোবর মাসের চিত্রটা ছিল এমন যে, বাংলাদেশে ভোজ্যতেলে মূল্য বৃদ্ধির হার ছিল ৩২ শতাংশ, ভারতে ১৬ শতাংশ। চিনি বাংলাদেশে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, ভারতে ১০ দশমিক ২ শতাংশ। গম বাংলাদেশে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারতে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। গণপরিবহন ভাড়া বাংলাদেশে ২২ শতাংশ, ভারতে ৯ শতাংশ। সয়াবিন তেল বাংলাদেশে ২২ শতাংশ, ভারতে ১২ শতাংশ। অর্থাৎ সব পণ্যের দাম বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে কম। আসলে বাংলাদেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয় না। বরং সরকারই দাম বাড়ানোর কাজে সহায়তা করে বলে জনগণ মনে করেন।

বর্তমান অবস্থায় ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কতটুকু আছে, সেটা সরকারের বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। দেশের সিংহভাগ নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ এখন দিশেহারা। তাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। এমতাবস্থায় সরকার কি করবেন সেই ভাবনা সরকারেরই।

[লেখক : সাংবাদিক]