কাঞ্চনজঙ্ঘা : প্রকৃতির অপরূপ নির্দশন

রহিম আব্দুর রহিম

দেশের উত্তরাঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। যা দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যার সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে ওঠে। তুষারের পাঁচটি ঐশ্বর্যময় কাঞ্চনজঙ্ঘা। মাউন্ট এভারেস্টের পরে যা হিমালয়ের দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ।

বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা হিমালয় পর্বতমালার কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ আপনাকে মোহিত করতে বাধ্য। এর রূপ দিনের একেক সময় একেক রকম ধারণ করে। যা স্থানভেদেও পরিবর্তিত রূপের ঝলক নিয়ে উঁকি দেয়। ভারতের দার্জিলিং, গ্যাংটক, সিকিমের আশপাশের অঞ্চলের পাহাড় থেকে এর সৌন্দর্য এক রূপ, আবার বাংলাদেশের সমতল ভূমি থেকে ফসলের মাঠজোড়া, নদী-নালা, গ্রামীণ লীলাভূমির মানব জীবনযাত্রার নৈস্বর্গীয় সৌন্দর্যের অনুভূতি। যা স্বাভাবিক জীবনের ওপারে রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।

উত্তরের জেলাগুলোর বিভিন্ন জায়গা থেকে এর রূপ ভিন্ন হয়। তেঁতুলিয়া থেকে এর রূপ এক রকম আবার বাংলাবান্ধায় গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর দেখাই যায় না, কারণ সামনের পাহাড় দিয়ে ঢেকে যায়; ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখলে মনে হবে যে এর সামনে কোনো পাহাড় পর্বত নাই। আবার যতই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দিকে যাবেন ততই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পস্ট হতে থাকবে এবং সামনের পাহাড় দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেকাংশে ঢাকাও পড়বে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা মাউন্টেন রেঞ্জ দেখতে অনেকটা গৌতম বুদ্ধ শুয়ে থাকার আকৃতির মতো দেখায় বলে একে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’ বলা হয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার উত্তরদিকের যে কোনো সীমান্ত এলাকা থেকে দিনের মাঝামাঝি সময়ে দেখলে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’ খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। তাছাড়া স্থানভেদে ল্যান্ডস্কেপভেদে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপের পরিবর্তন হয়।

সাধারণত বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেখা যায়। কারণ এ সময়ে আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে এবং সূর্য দক্ষিণ দিকে হেলে পড়ে। দক্ষিণ দিক থেকে সূর্যের আলো উত্তরের হিমালয়ের গায়ে প্রতিফলিত হলে আমাদের উত্তরাঞ্চল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যায়। তবে গত বছর ২০২০ সালে আকাশ তুলনামূলক অনেক বেশি পরিষ্কার থাকার কারণে আমরা মাসব্যাপী কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি।

আশা করা যাচ্ছে এবছরও গত বছরের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে। এই চার জেলার বিভিন্ন স্থানের নদী, ফসলের মাঠ, চা বাগান, খোলা মাঠ, গ্রাম্য জীবনযাত্রার সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য দেখার অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কিছু কিছু অনুভূতি থাকে বুক চিন চিনে; নিজ মাতৃভূমি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার যে অনুভূতি তা আমার কাছে বুক চিন চিন অনুভূতির মতো।

এই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে বাংলাদেশের চার জেলার মধ্যে পঞ্চগড় অন্যতম পর্যটন এলাকা হতে পারে ।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]

সোমবার, ২১ নভেম্বর ২০২২ , ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৫ রবিউস সানি ১৪৪৪

কাঞ্চনজঙ্ঘা : প্রকৃতির অপরূপ নির্দশন

রহিম আব্দুর রহিম

দেশের উত্তরাঞ্চলের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হিমালয়ের পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। যা দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতি বছর অক্টোবর-নভেম্বর মাসে যার সৌন্দর্য উপভোগ্য হয়ে ওঠে। তুষারের পাঁচটি ঐশ্বর্যময় কাঞ্চনজঙ্ঘা। মাউন্ট এভারেস্টের পরে যা হিমালয়ের দ্বিতীয় এবং পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ।

বাংলাদেশের সর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া থেকে মাত্র ১৩৫ কিলোমিটার দূরত্বে থাকা হিমালয় পর্বতমালার কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় রূপ আপনাকে মোহিত করতে বাধ্য। এর রূপ দিনের একেক সময় একেক রকম ধারণ করে। যা স্থানভেদেও পরিবর্তিত রূপের ঝলক নিয়ে উঁকি দেয়। ভারতের দার্জিলিং, গ্যাংটক, সিকিমের আশপাশের অঞ্চলের পাহাড় থেকে এর সৌন্দর্য এক রূপ, আবার বাংলাদেশের সমতল ভূমি থেকে ফসলের মাঠজোড়া, নদী-নালা, গ্রামীণ লীলাভূমির মানব জীবনযাত্রার নৈস্বর্গীয় সৌন্দর্যের অনুভূতি। যা স্বাভাবিক জীবনের ওপারে রূপকথার গল্পকেও হার মানায়।

উত্তরের জেলাগুলোর বিভিন্ন জায়গা থেকে এর রূপ ভিন্ন হয়। তেঁতুলিয়া থেকে এর রূপ এক রকম আবার বাংলাবান্ধায় গেলে কাঞ্চনজঙ্ঘা আর দেখাই যায় না, কারণ সামনের পাহাড় দিয়ে ঢেকে যায়; ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখলে মনে হবে যে এর সামনে কোনো পাহাড় পর্বত নাই। আবার যতই পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার দিকে যাবেন ততই কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পস্ট হতে থাকবে এবং সামনের পাহাড় দিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা অনেকাংশে ঢাকাও পড়বে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা মাউন্টেন রেঞ্জ দেখতে অনেকটা গৌতম বুদ্ধ শুয়ে থাকার আকৃতির মতো দেখায় বলে একে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’ বলা হয়। আমার মনে হয় বাংলাদেশে ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার উত্তরদিকের যে কোনো সীমান্ত এলাকা থেকে দিনের মাঝামাঝি সময়ে দেখলে ‘ঘুমন্ত বুদ্ধ’ খুব ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়। তাছাড়া স্থানভেদে ল্যান্ডস্কেপভেদে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপের পরিবর্তন হয়।

সাধারণত বাংলাদেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত দেখা যায়। কারণ এ সময়ে আকাশ একদম পরিষ্কার থাকে এবং সূর্য দক্ষিণ দিকে হেলে পড়ে। দক্ষিণ দিক থেকে সূর্যের আলো উত্তরের হিমালয়ের গায়ে প্রতিফলিত হলে আমাদের উত্তরাঞ্চল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্পষ্ট দেখা যায়। তবে গত বছর ২০২০ সালে আকাশ তুলনামূলক অনেক বেশি পরিষ্কার থাকার কারণে আমরা মাসব্যাপী কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখেছি।

আশা করা যাচ্ছে এবছরও গত বছরের মতো কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাবে। এই চার জেলার বিভিন্ন স্থানের নদী, ফসলের মাঠ, চা বাগান, খোলা মাঠ, গ্রাম্য জীবনযাত্রার সঙ্গে কাঞ্চনজঙ্ঘার মোহনীয় দৃশ্য দেখার অনুভূতির কথা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। কিছু কিছু অনুভূতি থাকে বুক চিন চিনে; নিজ মাতৃভূমি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার যে অনুভূতি তা আমার কাছে বুক চিন চিন অনুভূতির মতো।

এই কাঞ্চনজঙ্ঘাকে ঘিরে বাংলাদেশের চার জেলার মধ্যে পঞ্চগড় অন্যতম পর্যটন এলাকা হতে পারে ।

[লেখক: প্রাবন্ধিক]