জিয়ার নির্দেশেই পুলিশের ওপর জঙ্গিদের হামলা : পুলিশ

আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। সে অনুযায়ী দুটি মোটরসাইকেলে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন সদস্য অবস্থান নেয়। এছাড়া আরও ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করে। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে আসামিদের একজন লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে একজন কনস্টেবলের মুখে আঘাত করে।

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ গত রোববার রাতে বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় বলা হয়, পলাতক জিয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালিয়েছিল জঙ্গিরা। এদিন মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ১২ জঙ্গির আদালতে হাজিরার দিন ধার্য ছিল, যা জেনে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল বাইরে থাকা তাদের সহযোগীরা।

মামলায় বলা হয়, আয়মানের নেতৃত্বে আদালত এলাকায় সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামসেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬), ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দুটি মোটরসাইকেলযোগে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জন আনসার ইসলামের সদস্য এবং আদালতের আশেপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা ১০-১২জন সিএমএম আদালতের সামনে অবস্থান করে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ভিডিওতে পেছনের মোটরসাইকেলে (তিন জন বসা) জঙ্গিরা পালাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেল ফেলে যায় বলেও মামলায় বলাা হয়েছে।

এদিকে আদালত পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জঙ্গিরা পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন-অর-রশিদ। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এ দাবি করে বলেন, যেকোন মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ঢাকা মহানগর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মলনে হারুন বলেন, ঘটনার থেকে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তির নাম আমরা জেনেছি। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সহযোগী বেশ কয়েকজনকেও শনাক্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে তাও আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আপাতত তদন্তের স্বার্থে আমরা তাদের নাম প্রকাশ করছি না। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

তাদের আরও বড় কোন পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা বলা সম্ভব তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে। তবে মনে হচ্ছে বড় পরিকল্পনা ছিল। তারা চার জনকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুজনকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। যেসব আসামিকে আদালতে হাজিরার জন্য আনা হয়েছিল তারা সবাই আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখা অর্থাৎ আস্কারি বিভাগের সদস্য ছিল। তাদের সবাইকে সিটিটিসি ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অনেকগুলো ঘটনা ও হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছিল।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা প্রত্যেকটি পয়েন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি। জঙ্গিরা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে, তারা যাতে কোনভাবে বের হতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা যাতে কোনভাবে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক গলে বের হয়ে যেতে না পারে। পুলিশ প্রধান একটি ঘোষণা দিয়েছেন ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। মেজর জিয়া নেতৃত্ব দেননি, তিনি মাস্টারমাইন্ড। তবে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। নামটা আপাতত বলতে চাচ্ছি না।

গত রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।

শামীম ও সিদ্দিক দুই জনই প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদ-প্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকার পুলিশ কমিশনার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’।

দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলাও করেছে পুলিশ। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ওই মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, সব কিছু মিলিয়ে তদন্ত চলছে, আমরা মনে করি আসামিরা আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

এদিকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ ধরে হারুন বলেন, আসামিদের আনা নেয়ার ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। তবে যে কারণেই হোক একটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদালতের পাশাপাশি ‘সর্বত্রই’ বিশেষ টহল ও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের আনা নেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, পাশাপাশি আদালত পাড়ায় বাড়তি পুলিশের ব্যবস্থা পুলিশ কমিশনার করেছেন।

মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দীন জানান, সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আবদুস সাত্তার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে জানান, আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদ-ের আসামি দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ‘কোথাও গাফিলতি রয়েছে’। তিনি বলেন, পরিকল্পনা করে, রেকি করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করা হবে। পুলিশ পাহারার মধ্য থেকে এভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাটি উদ্বেগজনক বলছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক মনে করছেন, এ ঘটনায় পুলিশের ‘অবহেলা ও অপেশাদারিত্ব’ ছিল।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্তটা করতেছি, দেখি কার দোষ আছে। নিশ্চয় ল্যাপস আছে, নিশ্চয় কোন ঘটনা ঘটেছে। আমারতো মনে হয়, এটা প্ল্যান করে করেছে, অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে পরিকল্পনা করছে, ট্রায়াল দিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই জনকে ধরতে কোন অগ্রগতি হলো কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উচু দরের জঙ্গি এরা আমরা ফলো করতেছি। ছোট ছোট ধরেই আগাতে হয়, মানে এরা অনেক উঁচু দরের জঙ্গি, অনেক চেষ্টা করে ধরা হয়। এদিকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ‘হোতা’ হিসেবে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের কথা বলছে পুলিশ। পুরস্কার ঘোষণা করেও তাকে ধরতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের মোটরসাইকেলটি পুরান ঢাকার হাসান আল মামুনের

জঙ্গি আসামিদের ছিনিয়ে নিতে দুটি মোটরসাইকেলে এসেছিল সহযোগীরা। তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলেই চলে যায় জঙ্গিরা। বর্তমানে সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালী থানায় রয়েছে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন হাসান আল মামুন নামে এক যুবকের নামে। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা।

বিআরটিএ সূত্র আরও জানায়, মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর কে সি৩৯ইএ০০০এবং চেসিস নম্বর পিএসওকেসি ৩৯৯০কেসি। রেজিস্ট্রেশন আইডি ৬২-৩৮৪৪৫৯১। এটির প্রথম মালিক তিনি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত মোটরসাইকেলের মালিক হাসান আল মামুনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও জঙ্গিদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা, কেন তার মোটরসাইকেলকেই ছিনতাই অপারেশনের জন্য বেছে নেয়া হলো, এসব বিষয়েও তথ্য নেই কারো কাছে। পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলটি মালিক সরাসরি সরবরাহ করেছেন কি না, নাকি চুরি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোটরসাইকেল চুরি হলে তো দলিল থাকার কথা। সার্বিক বিষয়গুলো তদন্ত করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, যারা পালিয়েছেন এবং যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তারা সবাই নজরদারিতে রয়েছেন। যেকোন সময় তাদের গ্রেপ্তারে আমরা সক্ষম হবো। তারা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে পুলিশ প্রধান সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রোববার রাতেই কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এই ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি, তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, কারা কীভাবে নিয়ে গেল, এগুলো দেখছি। তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় সর্বশেষ গতকাল সন্ধা পর্যন্ত দুই জঙ্গির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এবার পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্ত কমিটি গঠন

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় এবার পুলিশ সদরদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একজন ডিআইজিকে প্রধান করে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অডিট) মো. আমিনুল ইসলামকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম মেট্রো) মো. হাসানুজ্জামানকে। কমিটির সদস্যরা হলেন- সিটিটিসির ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মেট্রো সাউথ) মো. আনিচুর রহমান।

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২ , ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৪

জিয়ার নির্দেশেই পুলিশের ওপর জঙ্গিদের হামলা : পুলিশ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

আদালতপাড়া থেকে জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর সারাদেশে কড়াকড়ি তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গতকাল রাজধানীর সড়কের চিত্র -সংবাদ

আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশে জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামিদের ছিনিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ। সে অনুযায়ী দুটি মোটরসাইকেলে অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জন সদস্য অবস্থান নেয়। এছাড়া আরও ১০/১২ জন আনসার আল ইসলামের সদস্য আদালতের মূল ফটকের সামনে অবস্থান করে। এরপর তারা পুলিশের কাছ থেকে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে আসামিদের একজন লোহা কাটার যন্ত্র দিয়ে একজন কনস্টেবলের মুখে আঘাত করে।

আদালত প্রাঙ্গণ থেকে দুই আসামিকে ছিনিয়ে নেয়ার পর ঢাকা মহানগর পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের পরিদর্শক জুলহাস উদ্দিন আকন্দ গত রোববার রাতে বাদী হয়ে কোতয়ালী থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় বলা হয়, পলাতক জিয়ার পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় আয়মান ওরফে মশিউর রহমানের নেতৃত্বে এই অভিযান চালিয়েছিল জঙ্গিরা। এদিন মোহাম্মদপুর থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় ১২ জঙ্গির আদালতে হাজিরার দিন ধার্য ছিল, যা জেনে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছিল বাইরে থাকা তাদের সহযোগীরা।

মামলায় বলা হয়, আয়মানের নেতৃত্বে আদালত এলাকায় সাব্বিরুল হক চৌধুরী ওরফে আকাশ ওরফে কনিক (২৪), তানভীর ওরফে সামসেদ মিয়া ওরফে সাইফুল ওরফে তুষার বিশ্বাস (২৬), রিয়াজুল ইসলাম ওরফে রিয়াজ ওরফে সুমন (২৬), ওমর ফারুক ওরফে নোমান ওরফে আলী ওরফে সাদ (২৮) পুলিশের ওপর আক্রমণ করে আসামিদের ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দুটি মোটরসাইকেলযোগে অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জন আনসার ইসলামের সদস্য এবং আদালতের আশেপাশে অবস্থান করা অজ্ঞাতনামা ১০-১২জন সিএমএম আদালতের সামনে অবস্থান করে আসামি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একটি সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া ভিডিওতে পেছনের মোটরসাইকেলে (তিন জন বসা) জঙ্গিরা পালাচ্ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ধাওয়ার মুখে হামলাকারীরা একটি মোটরসাইকেল ফেলে যায় বলেও মামলায় বলাা হয়েছে।

এদিকে আদালত পাড়া থেকে পালিয়ে যাওয়া মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জঙ্গিরা পুলিশের নজরদারির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন-অর-রশিদ। গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মলনে তিনি এ দাবি করে বলেন, যেকোন মুহূর্তে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে। ঢাকা মহানগর মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মলনে হারুন বলেন, ঘটনার থেকে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। আমরা সব জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সব প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

গতকাল ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, আদালত চত্বর থেকে দুই জঙ্গি সদস্যকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় নেতৃত্ব দেয়া ব্যক্তির নাম আমরা জেনেছি। তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার সহযোগী বেশ কয়েকজনকেও শনাক্ত করা হয়েছে। পরিকল্পনা কীভাবে হয়েছে তাও আমরা গোয়েন্দা কার্যক্রমের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। আপাতত তদন্তের স্বার্থে আমরা তাদের নাম প্রকাশ করছি না। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।

তাদের আরও বড় কোন পরিকল্পনা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তা বলা সম্ভব তাদের গ্রেপ্তার করা গেলে। তবে মনে হচ্ছে বড় পরিকল্পনা ছিল। তারা চার জনকে ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু দুজনকে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। যেসব আসামিকে আদালতে হাজিরার জন্য আনা হয়েছিল তারা সবাই আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখা অর্থাৎ আস্কারি বিভাগের সদস্য ছিল। তাদের সবাইকে সিটিটিসি ২০১৬ সালে গ্রেপ্তার করেছিল। তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে অনেকগুলো ঘটনা ও হত্যার রহস্য উদঘাটিত হয়েছিল।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, আমরা প্রত্যেকটি পয়েন্টকে সতর্ক করে দিয়েছি। জঙ্গিরা যাতে সীমান্ত পাড়ি দিতে না পারে, তারা যাতে কোনভাবে বের হতে না পারে সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারা যাতে কোনভাবে আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ফাঁক গলে বের হয়ে যেতে না পারে। পুলিশ প্রধান একটি ঘোষণা দিয়েছেন ছিনতাই হওয়া দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিতে পারলে ১০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। মেজর জিয়া নেতৃত্ব দেননি, তিনি মাস্টারমাইন্ড। তবে যিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন তাকে আমরা শনাক্ত করেছি। নামটা আপাতত বলতে চাচ্ছি না।

গত রোববার দুপুরে পুরান ঢাকার আদালত থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) নেতা মইনুল হাসান শামীম ওরফে সামির ওরফে ইমরান এবং আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাবকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তাদের সহযোগীরা। প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীর ভাষ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল শুনানি শেষে হাজতখানায় নেয়ার সময় পুলিশের দিকে ‘স্প্রে মেরে’ তাদেরকে ছিনিয়ে নেয়া হয়।

শামীম ও সিদ্দিক দুই জনই প্রকাশনীর প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যা মামলায় মৃতুদ-প্রাপ্ত আসামি। লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলাতেও আবু সিদ্দিক সোহেলের ফাঁসির রায় হয়েছে। এ ঘটনায় ঢাকার পুলিশ কমিশনার পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। পলাতক দুই জঙ্গিকে ধরিয়ে দিলে ১০ লাখ করে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে পুলিশ। সারাদেশে জারি করা হয়েছে ‘রেড অ্যালার্ট’।

দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলাও করেছে পুলিশ। ওই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ জনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। ওই মামলার পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে জানিয়ে হারুন অর রশিদ বলেন, সব কিছু মিলিয়ে তদন্ত চলছে, আমরা মনে করি আসামিরা আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

এদিকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেই প্রসঙ্গ ধরে হারুন বলেন, আসামিদের আনা নেয়ার ব্যাপারে আমাদের নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকে। তবে যে কারণেই হোক একটি ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে, এজন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আদালতের পাশাপাশি ‘সর্বত্রই’ বিশেষ টহল ও বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আসামিদের আনা নেয়ার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক থাকার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, পাশাপাশি আদালত পাড়ায় বাড়তি পুলিশের ব্যবস্থা পুলিশ কমিশনার করেছেন।

মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপ-কমিশনার জসীম উদ্দীন জানান, সাময়িক বরখাস্তরা হলেন- সিএমএম আদালতের হাজতখানার কোর্ট ইন্সপেক্টর মতিউর রহমান, হাজতখানার ইনচার্জ এসআই নাহিদুর রহমান, আসামিদের আদালতে নেয়ার দায়িত্বে থাকা পুলিশের এটিএসআই মহিউদ্দিন, কনস্টেবল শরিফুল হাসান ও কনস্টেবল আবদুস সাত্তার।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এক অনুষ্ঠানে জানান, আদালত চত্বর থেকে মৃত্যুদ-ের আসামি দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় ‘কোথাও গাফিলতি রয়েছে’। তিনি বলেন, পরিকল্পনা করে, রেকি করে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। কারা এর সঙ্গে জড়িত, তদন্তের মাধ্যমে তাদের খুঁজে বের করা হবে। পুলিশ পাহারার মধ্য থেকে এভাবে জঙ্গিদের ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাটি উদ্বেগজনক বলছেন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা। সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক মনে করছেন, এ ঘটনায় পুলিশের ‘অবহেলা ও অপেশাদারিত্ব’ ছিল।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্তটা করতেছি, দেখি কার দোষ আছে। নিশ্চয় ল্যাপস আছে, নিশ্চয় কোন ঘটনা ঘটেছে। আমারতো মনে হয়, এটা প্ল্যান করে করেছে, অন্তত ১০ থেকে ১৫ দিন ধরে পরিকল্পনা করছে, ট্রায়াল দিয়েছে। পালিয়ে যাওয়া দুই জনকে ধরতে কোন অগ্রগতি হলো কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উচু দরের জঙ্গি এরা আমরা ফলো করতেছি। ছোট ছোট ধরেই আগাতে হয়, মানে এরা অনেক উঁচু দরের জঙ্গি, অনেক চেষ্টা করে ধরা হয়। এদিকে দুই জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেয়ার ‘হোতা’ হিসেবে আনসার আল ইসলামের শীর্ষ নেতা সেনাবাহিনীর বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের কথা বলছে পুলিশ। পুরস্কার ঘোষণা করেও তাকে ধরতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

জঙ্গি ছিনতাইয়ের মোটরসাইকেলটি পুরান ঢাকার হাসান আল মামুনের

জঙ্গি আসামিদের ছিনিয়ে নিতে দুটি মোটরসাইকেলে এসেছিল সহযোগীরা। তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় একটি মোটরসাইকেল ফেলেই চলে যায় জঙ্গিরা। বর্তমানে সেই মোটরসাইকেলটি কোতোয়ালী থানায় রয়েছে। বিআরটিএ সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেট্রো-ল-৩১-৫৭১০ নম্বরের ওই মোটরসাইকেলটি ১৬০ সিসির হোন্ডা ব্র্যান্ডের হরনেট মডেলের। মোটরসাইকেলটির নিবন্ধন হাসান আল মামুন নামে এক যুবকের নামে। তিনি পুরান ঢাকার বাসিন্দা।

বিআরটিএ সূত্র আরও জানায়, মোটরসাইকেলটির রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি। গাড়িটির ইঞ্জিন নম্বর কে সি৩৯ইএ০০০এবং চেসিস নম্বর পিএসওকেসি ৩৯৯০কেসি। রেজিস্ট্রেশন আইডি ৬২-৩৮৪৪৫৯১। এটির প্রথম মালিক তিনি। গতকাল বিকেল পর্যন্ত মোটরসাইকেলের মালিক হাসান আল মামুনকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়াও জঙ্গিদের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা, কেন তার মোটরসাইকেলকেই ছিনতাই অপারেশনের জন্য বেছে নেয়া হলো, এসব বিষয়েও তথ্য নেই কারো কাছে। পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলটি মালিক সরাসরি সরবরাহ করেছেন কি না, নাকি চুরি হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মোটরসাইকেল চুরি হলে তো দলিল থাকার কথা। সার্বিক বিষয়গুলো তদন্ত করছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর-রশিদ বলেন, যারা পালিয়েছেন এবং যারা সহযোগিতা করেছেন সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তারা সবাই নজরদারিতে রয়েছেন। যেকোন সময় তাদের গ্রেপ্তারে আমরা সক্ষম হবো। তারা যাতে পালাতে না পারে সেজন্য ইতোমধ্যে পুলিশ প্রধান সারাদেশে রেড অ্যালার্ট জারি করেছেন। জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় রোববার রাতেই কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এই ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঘটনার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সিটিটিসি অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা আশা করছি, তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। কীভাবে জঙ্গিরা পালিয়ে গেল, কারা কীভাবে নিয়ে গেল, এগুলো দেখছি। তাদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় সর্বশেষ গতকাল সন্ধা পর্যন্ত দুই জঙ্গির কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এবার পুলিশ সদরদপ্তরের তদন্ত কমিটি গঠন

নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় এবার পুলিশ সদরদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একজন ডিআইজিকে প্রধান করে চার সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মূল ফটক থেকে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত দুই জঙ্গি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় পুলিশ সদরদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটিকে তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান করা হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (অডিট) মো. আমিনুল ইসলামকে। সদস্য সচিব করা হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি (ক্রাইম মেট্রো) মো. হাসানুজ্জামানকে। কমিটির সদস্যরা হলেন- সিটিটিসির ড. এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মেট্রো সাউথ) মো. আনিচুর রহমান।