প্রকৌশলী-ঠিকাদারের দুর্নীতি, তিন সরকারি কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ সংকটে

পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ১২ বছরেও

রাজশাহী ও ভোলা সরকারি কলেজ এবং ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অবকাঠামো নির্মাণে সংকটে পড়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ তিন প্রতিষ্ঠানেই অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর বন্ধ রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে ‘সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের (৭০টি) উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় তিন কলেজে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তিনটি কলেজে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ১২ বছরেও শেষ হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দীক গতকাল চারটি প্রকল্পের অগ্রগতি ও নানা অনিয়ম নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি), মাউশি কর্মকর্তা ও ইইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

সভা শেষে একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ওই তিন কলেজে অবকাঠামো নির্মাণে প্রকৌশলীদের ‘দায়িত্বহীনতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা সচিব। তিনি সাতদিনের মধ্যে ভোলা সরকারি কলেজে দুর্নীতির প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ণ করতে প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৫ সালে ভোলা সরকারি কলেজের ভবনটির ৫ তলা ভিত্তিবিশিষ্ট প্রথম তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ভবনে নিম্নœমানের কাজে বড় ধরণের অনিয়ম শনাক্ত হলে কাজ বন্ধ রাখা হয়। নিম্নœমানের সিমেন্ট ও নির্ধারিত মাপের চেয়ে কম মাপের রড ব্যবহার করা হয়।

গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ইইডি কর্তৃপক্ষ উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। ওই সময় ভবনের ৪র্থ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়।

ইইডির পরিদর্শন ও তদন্ত কমিটি ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন জমা দেয়, যাতে নির্মাণ কাজে বড় ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত হয়। তদন্ত কমিটি মতো দিয়েছিল, ‘ভবনটি ৫ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ না করে ৪ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে কাজটি সমাপ্ত করা হয়।’

ওই কমিটি নিম্নœমানের অবকাঠামো নির্মাণের ঘটনায় ভোলা জোন অফিসের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মুজমদারকে দায়ী করেছিল। তবে চলতি বছর মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত (নিচের স্তরের) চার কর্মীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এই সুপারিশ বাস্তবায়নে বেকায়দায় পড়েছেন প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, কারণ তিনি ওই অনিয়মের সময় ভোলা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। যদিও তিনি গতকাল পর্যন্ত ভোলা কলেজের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাননি বলে সভায় শিক্ষা সচিবকে জানিয়েছেন।

তবে ইইডির দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে ভোলা কলেজের ভবনটির ছাদের একটি ফ্লোর ভাঙতে হবে, দেয়াল ভাঙতে হবে, পিলারগুলোও ভেঙে মেরামত করতে হবে। এ কারণে তিন থেকে চার কোটি টাকা প্রয়োজন। এই ব্যয় কে বহন করবে- এ বিষয়ে গত ১৫ দিন ধরেই ইইডিতে নিয়মিত সভা হচ্ছে।

২০১০ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয় ‘শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের (৭০টি) উন্নয়ন প্রকল্প’। ১২ বছরেরও বেশি সময়ে বাস্তবায়ন অগ্রগতি দাঁড়ালো ৯০ শতাংশে। ওই তিনটি কলেজে সংকট নিরসন হলে অগ্রগতি শতভাগ হবে।

প্রায় ১৭শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পে গত জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা। একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা।

মাউশি ও প্রকল্প অফিস থেকে জানা গেছে, একই প্রকল্পের আওতায় আনন্দমোহন কলেজ ও রাজশাহী সরকারি কলেজে দুটি ১০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ হবে। এ খাতে প্রতিটি ভবনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।

এই দুই বিভাগের দুটি কলেজে ভবন নির্মাণের কাজই দেয়া হয়েছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এরমধ্যে আনন্দমোহন কলেজে দু’তলা ছাদ হওয়ার পর কাজ বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী কলেজে একতলা ছাদ ঢালাইয়ের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি প্রকল্পের পিডি অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন গতকাল শিক্ষাসচিবকে অবহিত করেছেন।

জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘আমরা কোন জটিলতা চাই না। সমস্যার সমাধান চাই। শুনেছি, ২০১৪ সাল থেকে রাজশাহী কলেজে ৩/৪ বার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আনন্দমোহনেও ২/৩ বার টেন্ডার দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরও কাজ হবে না কেন?’

আনন্দমোহন ও রাজশাহী কলেজে ভবন নির্মাণ কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সাফট ট্রেডার্স’। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আহসানুজ্জামান হাসান সংবাদকে বলেন, ২০১৪ সালের ‘রেটে’ ২০১৯ সালে টেন্ডার দেয়া হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় করোনা মহামারী। সর্বশেষ শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে জিনিসপত্রের দাম ‘ডাবল’ হয়ে গেছে। ওই সময় প্রতি কেজি রডের দাম ছিল ৫০ টাকা, এখন তা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এ সংক্রান্ত সবকিছুর দামই এখন বেশি।

কার্যাদেশ দেয়ার আট মাস দেরিতে ‘ড্রয়িং ও ডিজাইন’ দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ইস্টিমেটেড ব্যয় ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; কিন্তু যে ডিজাইন করা হয়েছে তাতে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। এই অতিরিক্ত টাকা কে দেবে? এসব নানা কারণেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।’

সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যয় পূননির্ধারণ করতে শিক্ষা সচিবের কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন জানিয়ে আহসানুজ্জামান হাসান বলেন, ‘আমি চলতি মাসেই কাজ শুরু করতে চাই। কিন্তু বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম তাতে প্রতিটি কাজে আমার ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা লস হবে। আমার বাড়ি-গাড়ি সবকিছুই বিক্রি করেও তা করতে পারব না।’

মাউশি ও প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের অতিরিক্ত কোন বরাদ্দ নেই। ২০১৪ সালের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই ব্যয় ঠিক করা হয়েছিল। ইইডির গাফিলতির কারণে দেরি হয়েছে। এখন যদি ব্যয় বেড়ে যায়, তার দায়িত্ব ইইডিকেই নিতে হবে।

জানতে চাইলে ইইডির ময়মনসিংহ হোসেন নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী সংবাদকে বলেন, ‘আনন্দমোহনে দশ মাস ধরে কাজ বন্ধ। ঠিকাদার কাজ করছেন না। আমরা চিঠির পর চিঠি (তাগিদপত্র) দিচ্ছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সে বিল রিশিডিউল করতে চান। এখানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আমরা এখন পিপিআরের বিধান অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি দিয়েছি। এখন সে বলছে কাজ করতে চান।’

ওই ঠিকাদার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আতœীয় হওয়ায় তাকে খুব বেশি চাপ দেয়া যাচ্ছে না বলে ওই অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২ , ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৪

প্রকৌশলী-ঠিকাদারের দুর্নীতি, তিন সরকারি কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ সংকটে

পাঁচ বছরের প্রকল্প শেষ হয়নি ১২ বছরেও

রাকিব উদ্দিন

রাজশাহী ও ভোলা সরকারি কলেজ এবং ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের অবকাঠামো নির্মাণে সংকটে পড়েছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে এ তিন প্রতিষ্ঠানেই অ্যাকাডেমিক ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর বন্ধ রয়েছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) অধীনে ‘সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের (৭০টি) উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় তিন কলেজে অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে। তিনটি কলেজে প্রকৌশলী ও ঠিকাদারের দুর্নীতির কারণে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পটি ১২ বছরেও শেষ হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব আবু বকর সিদ্দীক গতকাল চারটি প্রকল্পের অগ্রগতি ও নানা অনিয়ম নিয়ে প্রকল্প পরিচালক (পিডি), মাউশি কর্মকর্তা ও ইইডির প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে বৈঠক করেন।

সভা শেষে একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানান, ওই তিন কলেজে অবকাঠামো নির্মাণে প্রকৌশলীদের ‘দায়িত্বহীনতায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা সচিব। তিনি সাতদিনের মধ্যে ভোলা সরকারি কলেজে দুর্নীতির প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ণ করতে প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদারকে নির্দেশ দিয়েছেন।

২০১৫ সালে ভোলা সরকারি কলেজের ভবনটির ৫ তলা ভিত্তিবিশিষ্ট প্রথম তিনতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজটি সম্পন্ন করে হস্তান্তর করা হয়। এরপর ভবনে নিম্নœমানের কাজে বড় ধরণের অনিয়ম শনাক্ত হলে কাজ বন্ধ রাখা হয়। নিম্নœমানের সিমেন্ট ও নির্ধারিত মাপের চেয়ে কম মাপের রড ব্যবহার করা হয়।

গুরুতর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে ইইডি কর্তৃপক্ষ উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করে। ওই সময় ভবনের ৪র্থ তলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হয়।

ইইডির পরিদর্শন ও তদন্ত কমিটি ২০১৮ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি প্রতিবেদন জমা দেয়, যাতে নির্মাণ কাজে বড় ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত হয়। তদন্ত কমিটি মতো দিয়েছিল, ‘ভবনটি ৫ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ না করে ৪ তলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করে কাজটি সমাপ্ত করা হয়।’

ওই কমিটি নিম্নœমানের অবকাঠামো নির্মাণের ঘটনায় ভোলা জোন অফিসের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মুজমদারকে দায়ী করেছিল। তবে চলতি বছর মন্ত্রণালয়ের এক তদন্তে তাকে অব্যাহতি দিয়ে অবসরপ্রাপ্ত ও মৃত (নিচের স্তরের) চার কর্মীকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

এই সুপারিশ বাস্তবায়নে বেকায়দায় পড়েছেন প্রধান প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন মজুমদার, কারণ তিনি ওই অনিয়মের সময় ভোলা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ছিলেন। যদিও তিনি গতকাল পর্যন্ত ভোলা কলেজের তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাননি বলে সভায় শিক্ষা সচিবকে জানিয়েছেন।

তবে ইইডির দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশের আলোকে ভোলা কলেজের ভবনটির ছাদের একটি ফ্লোর ভাঙতে হবে, দেয়াল ভাঙতে হবে, পিলারগুলোও ভেঙে মেরামত করতে হবে। এ কারণে তিন থেকে চার কোটি টাকা প্রয়োজন। এই ব্যয় কে বহন করবে- এ বিষয়ে গত ১৫ দিন ধরেই ইইডিতে নিয়মিত সভা হচ্ছে।

২০১০ সালে বাস্তবায়ন শুরু হয় ‘শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে জেলা সদরে অবস্থিত সরকারি পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজসমূহের (৭০টি) উন্নয়ন প্রকল্প’। ১২ বছরেরও বেশি সময়ে বাস্তবায়ন অগ্রগতি দাঁড়ালো ৯০ শতাংশে। ওই তিনটি কলেজে সংকট নিরসন হলে অগ্রগতি শতভাগ হবে।

প্রায় ১৭শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পে গত জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা। একাধিকবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ সংশোধন অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুনে বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা।

মাউশি ও প্রকল্প অফিস থেকে জানা গেছে, একই প্রকল্পের আওতায় আনন্দমোহন কলেজ ও রাজশাহী সরকারি কলেজে দুটি ১০ তলা অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণ হবে। এ খাতে প্রতিটি ভবনের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১২ কোটি টাকা।

এই দুই বিভাগের দুটি কলেজে ভবন নির্মাণের কাজই দেয়া হয়েছে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এরমধ্যে আনন্দমোহন কলেজে দু’তলা ছাদ হওয়ার পর কাজ বন্ধ রয়েছে। রাজশাহী কলেজে একতলা ছাদ ঢালাইয়ের পর কাজ বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়টি প্রকল্পের পিডি অধ্যাপক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন গতকাল শিক্ষাসচিবকে অবহিত করেছেন।

জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন সংবাদকে বলেন, ‘আমরা কোন জটিলতা চাই না। সমস্যার সমাধান চাই। শুনেছি, ২০১৪ সাল থেকে রাজশাহী কলেজে ৩/৪ বার টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। আনন্দমোহনেও ২/৩ বার টেন্ডার দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে ঠিকাদারকে সাইট বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপরও কাজ হবে না কেন?’

আনন্দমোহন ও রাজশাহী কলেজে ভবন নির্মাণ কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘সাফট ট্রেডার্স’। এই প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী আহসানুজ্জামান হাসান সংবাদকে বলেন, ২০১৪ সালের ‘রেটে’ ২০১৯ সালে টেন্ডার দেয়া হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কার্যাদেশ দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় করোনা মহামারী। সর্বশেষ শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এতে জিনিসপত্রের দাম ‘ডাবল’ হয়ে গেছে। ওই সময় প্রতি কেজি রডের দাম ছিল ৫০ টাকা, এখন তা ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। এ সংক্রান্ত সবকিছুর দামই এখন বেশি।

কার্যাদেশ দেয়ার আট মাস দেরিতে ‘ড্রয়িং ও ডিজাইন’ দেয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের ইস্টিমেটেড ব্যয় ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা; কিন্তু যে ডিজাইন করা হয়েছে তাতে আরও সাড়ে তিন কোটি টাকা বেশি খরচ হবে। এই অতিরিক্ত টাকা কে দেবে? এসব নানা কারণেই কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।’

সব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ব্যয় পূননির্ধারণ করতে শিক্ষা সচিবের কাছে ইতোমধ্যে আবেদন করেছেন জানিয়ে আহসানুজ্জামান হাসান বলেন, ‘আমি চলতি মাসেই কাজ শুরু করতে চাই। কিন্তু বর্তমানে জিনিসপত্রের দাম তাতে প্রতিটি কাজে আমার ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা লস হবে। আমার বাড়ি-গাড়ি সবকিছুই বিক্রি করেও তা করতে পারব না।’

মাউশি ও প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পের অতিরিক্ত কোন বরাদ্দ নেই। ২০১৪ সালের বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়েই ব্যয় ঠিক করা হয়েছিল। ইইডির গাফিলতির কারণে দেরি হয়েছে। এখন যদি ব্যয় বেড়ে যায়, তার দায়িত্ব ইইডিকেই নিতে হবে।

জানতে চাইলে ইইডির ময়মনসিংহ হোসেন নির্বাহী প্রকৌশলী ইউসুফ আলী সংবাদকে বলেন, ‘আনন্দমোহনে দশ মাস ধরে কাজ বন্ধ। ঠিকাদার কাজ করছেন না। আমরা চিঠির পর চিঠি (তাগিদপত্র) দিচ্ছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সে বিল রিশিডিউল করতে চান। এখানে আমাদের তেমন কিছু করার নেই। আমরা এখন পিপিআরের বিধান অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। সর্বশেষ এক সপ্তাহ আগে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ বাতিলের চিঠি দিয়েছি। এখন সে বলছে কাজ করতে চান।’

ওই ঠিকাদার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর আতœীয় হওয়ায় তাকে খুব বেশি চাপ দেয়া যাচ্ছে না বলে ওই অফিসের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।