শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম আর নেই

শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম আর নেই। গতকাল বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার ছেলে তানভীর ইমাম।

মৃদু স্ট্রোক, শরীরের নানা জটিলতা ও শ্বাসযন্ত্রে সমস্যার সঙ্গে নিউমোনিয়া এবং নিম্নœ-রক্তচাপে ভুগছিলেন তিনি। ১০ দিন আগে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম।

আলী ইমামের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তানভীর জানান, তার বাবার মরদেহ গতকাল হাসপাতালের হিমঘরে রেখে আজ বাদ জোহর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আলী ইমাম ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সপরিবার তিনি থাকতেন ঢাকার ঠাটারীবাজারে। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার ওয়ারী, লিঙ্কন রোড, নয়াবাজার, নওয়াবপুর, কাপ্তানবাজার, ফুলবাড়িয়া এলাকায়। লেখালেখি ছাড়াও অডিও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থাপক হিসেবেও তিনি কাজ করতেন। আলী ইমাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান। তিনি ২০০১ সালে বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১২ সালে তিনি শিশু অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।

১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর তিনি ইউনিসেফের ‘মা ও শিশুর উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্প’ পরিচালক ছিলেন। ওই দায়িত্ব পালনকালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, জার্মানির মিউনিখ, ব্রাজিলের রিওতে অনুষ্ঠিত ‘চিলড্রেন মিডিয়া সামিটে’ যোগ দেন। মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘প্রি জুঁনেসি চিলড্রেনস টিভি প্রোডাকশন প্রতিযোগিতা’র (২০০০) জুরির দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ছিলেন ‘সার্ক অডিও ভিজুয়াল বিনিময় অনুষ্ঠানে’র প্রধান সমন্বয়কারী (২০০০-২০০১)। টেলিভিশন ও বেতারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের নির্মাতা ও উপস্থাপক হিসেবে তিনি প্রশংসা অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শেষপ্রান্তে একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের আগে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন (২০০৪-২০০৬) ও অধুনালুপ্ত চ্যানেল ওয়ান (২০০৭-২০০৮)-এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন।

তিনি ছয়শোরও বেশি বইয়ের লেখক। শিশুসাহিত্য ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ফিচার, ভ্রমণকাহিনি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সোনালী তোরণ (১৯৮৬), আলোয় ভুবন ভরা (১৯৮৭), দুঃসাহসী অভিযাত্রী (১৯৮৮), সেসুলয়েডের পাঁচালী (১৯৯০), রক্ত দিয়ে কেনা (গল্প ১৯৯১)। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ধলপহর (১৯৭৯), হিজল কাঠের নাও (১৯৮৬), তোমাদের জন্যে (১৯৯৪)। শিশুসাহিত্য রয়েছে দ্বীপের নাম মধুবুনিয়া (গল্প, ১৯৭৫), অপারেশন কাঁকনপুর (উপন্যাস, ১৯৭৮), তিরিমুখীর চৈতা (রহস্য উপন্যাস, ১৯৭৯), রুপোলী ফিতে (গল্প, ১৯৭৯), শাদা পরী (গল্প, ১৯৭৯)। কিশোর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে রক্তপিশাচ তিতিরোয়া (১৯৮৬), ভয়াল ভয়ঙ্কর (১৯৮৭), নীল শয়তান (১৯৮৭), ভয়ঙ্করের হাতছানি (১৯৯০), রক্তপিশাচ (১৯৯০), ইয়েতির চিৎকার (১৯৯০), নীল চোখের ছেলে (১৯৯২)।

আরও খবর
আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান কখনো ভুলবে না : প্রধানমন্ত্রী
‘বিদেশি কূটনীতিকদের মনে রাখা উচিত, আমরা পরাধীন দেশ নই’
বাংলাদেশ সেভেন সিস্টার্সে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহী : বাণিজ্যমন্ত্রী
জঙ্গিদের প্রধান আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা বিএনপি : তথ্যমন্ত্রী
এবার বাধ্যতামূলক অবসরে এসপি ব্যারিস্টার জিল্লুর
পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার ক্ষমতা নেই দুদকের : চেয়ারম্যান
ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ছাত্রীকে ধর্ষণ, কারাগারে শিক্ষক
রাজধানীর ফুটপাত বিক্রি-লিজে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ হাইকোর্টের
দেবর-ভাবির বিরোধ মিটে যাবার আশাবাদ
রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নানা মেরুকরণ

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২ , ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৪

শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম আর নেই

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম আর নেই। গতকাল বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বেসরকারি হাসপাতালে তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন তার ছেলে তানভীর ইমাম।

মৃদু স্ট্রোক, শরীরের নানা জটিলতা ও শ্বাসযন্ত্রে সমস্যার সঙ্গে নিউমোনিয়া এবং নিম্নœ-রক্তচাপে ভুগছিলেন তিনি। ১০ দিন আগে তাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিশু সাহিত্যিক আলী ইমাম।

আলী ইমামের বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। তানভীর জানান, তার বাবার মরদেহ গতকাল হাসপাতালের হিমঘরে রেখে আজ বাদ জোহর চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে।

আলী ইমাম ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। সপরিবার তিনি থাকতেন ঢাকার ঠাটারীবাজারে। তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে পুরান ঢাকার ওয়ারী, লিঙ্কন রোড, নয়াবাজার, নওয়াবপুর, কাপ্তানবাজার, ফুলবাড়িয়া এলাকায়। লেখালেখি ছাড়াও অডিও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থাপক হিসেবেও তিনি কাজ করতেন। আলী ইমাম বাংলাদেশ টেলিভিশনের মহাব্যবস্থাপক হিসেবে ২০০৬ সালে অবসরে যান। তিনি ২০০১ সালে বাংলা অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০১২ সালে তিনি শিশু অ্যাকাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান।

১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সাত বছর তিনি ইউনিসেফের ‘মা ও শিশুর উন্নয়নে যোগাযোগ কার্যক্রম প্রকল্প’ পরিচালক ছিলেন। ওই দায়িত্ব পালনকালে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন, জার্মানির মিউনিখ, ব্রাজিলের রিওতে অনুষ্ঠিত ‘চিলড্রেন মিডিয়া সামিটে’ যোগ দেন। মিউনিখে অনুষ্ঠিত ‘প্রি জুঁনেসি চিলড্রেনস টিভি প্রোডাকশন প্রতিযোগিতা’র (২০০০) জুরির দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি ছিলেন ‘সার্ক অডিও ভিজুয়াল বিনিময় অনুষ্ঠানে’র প্রধান সমন্বয়কারী (২০০০-২০০১)। টেলিভিশন ও বেতারে শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের নির্মাতা ও উপস্থাপক হিসেবে তিনি প্রশংসা অর্জন করেন।

কর্মজীবনের শেষপ্রান্তে একাধিক স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালনের আগে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন (২০০৪-২০০৬) ও অধুনালুপ্ত চ্যানেল ওয়ান (২০০৭-২০০৮)-এর মহাব্যবস্থাপক ছিলেন।

তিনি ছয়শোরও বেশি বইয়ের লেখক। শিশুসাহিত্য ছাড়াও তিনি গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ফিচার, ভ্রমণকাহিনি, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লিখেছেন। তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধ ও গবেষণা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে সোনালী তোরণ (১৯৮৬), আলোয় ভুবন ভরা (১৯৮৭), দুঃসাহসী অভিযাত্রী (১৯৮৮), সেসুলয়েডের পাঁচালী (১৯৯০), রক্ত দিয়ে কেনা (গল্প ১৯৯১)। তার কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ধলপহর (১৯৭৯), হিজল কাঠের নাও (১৯৮৬), তোমাদের জন্যে (১৯৯৪)। শিশুসাহিত্য রয়েছে দ্বীপের নাম মধুবুনিয়া (গল্প, ১৯৭৫), অপারেশন কাঁকনপুর (উপন্যাস, ১৯৭৮), তিরিমুখীর চৈতা (রহস্য উপন্যাস, ১৯৭৯), রুপোলী ফিতে (গল্প, ১৯৭৯), শাদা পরী (গল্প, ১৯৭৯)। কিশোর উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে রক্তপিশাচ তিতিরোয়া (১৯৮৬), ভয়াল ভয়ঙ্কর (১৯৮৭), নীল শয়তান (১৯৮৭), ভয়ঙ্করের হাতছানি (১৯৯০), রক্তপিশাচ (১৯৯০), ইয়েতির চিৎকার (১৯৯০), নীল চোখের ছেলে (১৯৯২)।