ডিজিটাল শিল্পযুগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মোস্তাফা জব্বার

আট ॥

জাপান ফেডারেশন অব বিজনেসের রূপরেখা অনুসারে সোসাইটি ৫.০ এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, অর্থনীতি থেকে শুরু করে জাপান সমাজের সব স্তরকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে সমাজকে রূপান্তর করা। আমরা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভাবি তবে আমাদের লক্ষ্যও এর চাইতে অনেক বেশি সম্প্রসারিত বলে মনে হতে পারে। কাকতালীয়ভাবে আমরা এ ঘোষণাটি এক দশক আগে দিয়েছি। তবে আমাদের সাথে তাদের ভাবনার কিছু পার্থক্য তো আছেই। আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ বইটি পাঠ করলে পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।

বেশিরভাগ দেশের জন্য বৃদ্ধ বয়সি জনসংখ্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জাপানের জন্য। জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু এর নাগরিকদের গড় বয়স বাড়ছে। কম জন্মহার এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির ফলে এটি তরুণ, কর্মক্ষম ব্যক্তি এবং যাদের যতেœর প্রয়োজন তাদের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। সোসাইটী ৫.০ এর প্রবক্তারা মনে করেন যে, প্রযুক্তির সক্ষমতা প্রকাশ করে স্মার্ট কর্মপন্থার ফলে কিছু সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব। স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ে (জাপান বিজনেস ফেডারেশন) প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, জাপানের জনসংখ্যার ২৬.৩ ভাগের বয়স ৬৫ বছরের উপরে এবং ২০৫০ সালে বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ মানুষের বয়স ৬০ এর উপরে থাকবে। মূলত এর অর্থ জাপানের আজকের এই আশ্চর্যজনক সংখ্যা ছাড়াও জাপান যা করছে এবং কিভাবে সোসাইটি ৫.০ বাস্তবে কাজ করে তা সব দেশকে ভেবে দেখতে হবে। অবশ্য জাপান কেবল বয়স্ক জনগোষ্ঠীকেই সোসাইটি ৫.০ এর প্রতিপাদ্য বিষয় মনে করছেনা।

জাপান মনে করে, স্বাস্থসেবা ব্যতীত অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে, অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় এবং দূষণের সাথে লড়াই করতে হয়। সেজন্য সোসাইটি ৫.০ বা সুপার স্মার্ট সোসাইটিতে বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জাপান বিজনেস ফেডারেশন সোসাইটি (কেইদারেন) ৫.০ বিষয়ে একটি রূপরেখা প্রকাশ করেছে; যাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তার জন্য ৫টি দেয়াল ভাঙ্গার প্রয়োজন হবে। প্রকৃতপক্ষে তারা মনে করে দেয়াল ভাঙার পরে সৃষ্ট সমাজই সোসাইটি ৫.০ বা সুপার স্মার্ট সোসাইটি।

দেখা যাক সমাজ ৫.০ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী? শুরুতেই বলা হচ্ছেÑ সমাজ ৫.০ এর জন্য পাঁচটি দেয়াল ভাঙতে হবে। ১) প্রথমেই তারা মনে করে যে প্রশাসন, মন্ত্রণালয় ও সরকারি অফিস সংস্থা জনগণের সাথে যে দেয়াল তুলে রেখেছে সেটি ভাঙতে হবে। আমি খুব সহজেই এটি অনুভব করি যে একটি ডিজিটাল সরকার বিষয়ে আমাদের যে ভাবনা এই দেয়াল ভাঙাটা তার চাইতে বড় কিছু নয়। বরং আমরা এই চ্যালেঞ্জটা আরও দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করছি। ২) জাপানের পঞ্চম সমাজের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটা হলো আইনের দেয়াল ভাঙ্গা। এর মানে বিদ্যমান প্রাচীন যুগের আইনগুলোকে সমাজ ৫.০ এর উপযোগী করা। ৩) সমাজ ৫.০ এর তৃতীয় দেয়ালটা হলো প্রযুক্তির দেয়াল। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও সমাজের বিবর্তনে একে কাজে লাগানো হচ্ছে এ দেয়ালটা ভাঙ্গা। ৪) মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক দেয়ালটা চতুর্থ দেয়াল। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় থেকেই এ দেয়াল ভাঙার কাজ করছি। ৫) পঞ্চম দেয়ালটি হচ্ছে পঞ্চম সমাজকে সমাজের সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা।

জাপান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশ নিতে শুরু করায় তার সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি দেশটির রূপান্তরে একটি নতুন ভূমিকা পালন করছে এবং শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে। জাপানে শিল্পে রোবটিক্সের ব্যবহার ইতোমধ্যে ২য় স্থানে রয়েছে। প্রতি দশ হাজার কর্মীর অনুপাতে ২১১টি রোবট দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে জাপানে। রোবট ব্যবহারে শীর্ষ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। জার্মানি ৩য় স্থানে। জাপানের অফিস কর্মীরা গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সময় ডেটা এন্ট্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেটা বদলাতে জাপান এআই ওয়ার্কস নামের একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। এ ধরনের বিশাল সামাজিক পরিবর্তন কাজ করবে কিনা এবং সামাজিক স্বীকৃতির দেয়াল ভেঙে ফেলা হবে কিনাÑ এ প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে।

সোসাইটি ৫.০ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ : বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। আমরা বিশ্বজুড়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা শুনছি। অনেকেই আলাদাভাবে সোসাইটি ৫.০, আইআর ৪.০ ইত্যাদি বলছে। কেউ কেউ বলছে স্মার্ট নেশন। আমাদের কর্মসূচি তো ডিজিটাল বাংলাদেশ আছেই। জাপানের সোসাইটী ৫.০ এবং অন্যান্য বিষয়াদির সাথে আসুন ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করি।

সোসাইটি ৫.০ কেমন করে : জাপানিরা ভাবছে যে, তারা বস্তুত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সোসাইটি ৫.০ গড়ে তুলবে। ফলে যদিও তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে পাশ কাটিয়ে তাদের গন্তব্য স্থির করেছে বলে মনে করা হচ্ছে; তথাপি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল ভিত্তি ডিজিটাল প্রযুক্তিকেই তারা বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে। তবে জাপানিদের চিন্তায় তাদের মুখ্য সমস্যা-সংকট বা চ্যালেঞ্জগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। তাদের ভাবনার দ্ইু-চারটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে।

ক) বিগ ডাটার ব্যবহার বিষয়ে তাদের ভাবনা : Big Data collected by IoT will be converted into a new type of intelligence by AI and will reach every corner of society. As we move into Society 5.0 all people’s lives will be more comfortable and sustainable as people are provided with only the products and services in the amounts and at the time needed.স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, জাপান মনে করে যে, বিগ ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তাদের সোসাইটি ৫.০-এ পৌঁছে যাবার পথটাকে সুগম করবে। বিগ ডাটার প্রয়োগ বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাসহ ডিজিটাল রূপান্তরে ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে পারে।

খ) উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা : অন্যদিকে জাপান মনে করে তার বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে বিকাশমান প্রযুক্তিকে সমন্বিত করে তারা সোসাইটি ৫.০-এ পৌঁছে যেতে পারে। বিশেষ করে বিগ ডাটা এবং কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এই বিষয়ে ব্যাপক সহায়তা করতে পারে। Japan’s advanced technology cultivated from æmonozukuri” (Japan’s excellence in the manufacturing of things) and years of basic research, will work as advantages toward creating products using information technologies like Big Data and AI, which can then be released into our society. বাংলাদেশের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে জাপানের প্রাক-ডিজিটাল যুগে পৌঁছানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যদি জাপানের ধারণাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারি তবে তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করার যে সংকট আমাদের রয়েছে সেটি আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জাপানের মতো উৎপাদন ব্যবস্থার অধিকারী হতে পারি।

গ) বয়স্ক জনগোষ্ঠী : একটি বড় প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, কেমন করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যেতে পারে। জাপানিরা এ সমস্যাটির সমাধান এভাবে করবে বলে মনে করে। Connect and share information between medical data users including medical checkup records, as well as treatment and nursing care records. Put remote medical care services into practice. Use AI and robots at nursing-care facilities to support people’s independence. বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সমস্যাটি জাপানের মতো তীব্র বাংলাদেশে না থাকলেও গড় আয়ু বেড়ে যাাবার ফলে আমাদেরও একটি বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠীর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের সহায়তার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি অবশ্যই সহায়ক হতে পারে।

ঘ) চলাচল ও প্রযুক্তি : মানুষের জন্য চলাচল বা পরিবহন ব্যবস্থা খুবই জরুরি। সেই বিষয়টি সম্পর্কে তারা মনে করে যে, প্রযুক্তি এখানে বড় সহায়তা করবে। People in underpopulated areas find it difficult to shop and visit hospitals because of a lack of public transportation. However, autonomous vehicles will enable them to travel more easily while delivery drones will make it possible to receive whatever someone needs. A shortage of distribution labor will not be a worry.পরিবহনের বিষয়টি আমাদের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের ভাবনা এমন হতে পারে যে, চালকবিহীন যানবাহন প্রচলিত হলে আমাদের বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ক্ষুণœ হতে পারে। অন্যদিকে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের দ্বীপ, চর, হাওর বা অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন করতে পারে। এটি একই সাথে স্বাস্থ্যসেবাতেও ব্যাপক সহায়ক হতে পারে।

ঙ) জীবনধারার সাথে প্রযুক্তির প্রয়োগ হতে পারে এভাবে : By employing new technologies including Information and Communication Technology (ICT), robots, sensors for inspection and maintenance systems that require specialized skills, detection of places that need repair can be made at an early stage. By doing so, unexpected accidents will be minimized and the time spent in construction work will be reduced, while at the same time safety and productivity will increase. চ) অর্থ ব্যবস্থা : সোসাইটি ৫.০-এ আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে সেটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে- Use blockchain technology for money transfer Introduce open application programming interfaces (API) to Fintech firms and banks. Promote cashless payment.[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক, ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট ও কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী]

মঙ্গলবার, ২২ নভেম্বর ২০২২ , ০৭ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৬ রবিউস সানি ১৪৪৪

ডিজিটাল শিল্পযুগ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ

মোস্তাফা জব্বার

আট ॥

জাপান ফেডারেশন অব বিজনেসের রূপরেখা অনুসারে সোসাইটি ৫.০ এর মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑ বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে, অর্থনীতি থেকে শুরু করে জাপান সমাজের সব স্তরকে ডিজিটাল করার মাধ্যমে সমাজকে রূপান্তর করা। আমরা যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা ভাবি তবে আমাদের লক্ষ্যও এর চাইতে অনেক বেশি সম্প্রসারিত বলে মনে হতে পারে। কাকতালীয়ভাবে আমরা এ ঘোষণাটি এক দশক আগে দিয়েছি। তবে আমাদের সাথে তাদের ভাবনার কিছু পার্থক্য তো আছেই। আমার ডিজিটাল বাংলাদেশ বইটি পাঠ করলে পুরো চিত্রটা পাওয়া যাবে।

বেশিরভাগ দেশের জন্য বৃদ্ধ বয়সি জনসংখ্যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে জাপানের জন্য। জাপানের জনসংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, কিন্তু এর নাগরিকদের গড় বয়স বাড়ছে। কম জন্মহার এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিণতির ফলে এটি তরুণ, কর্মক্ষম ব্যক্তি এবং যাদের যতেœর প্রয়োজন তাদের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হচ্ছে। সোসাইটী ৫.০ এর প্রবক্তারা মনে করেন যে, প্রযুক্তির সক্ষমতা প্রকাশ করে স্মার্ট কর্মপন্থার ফলে কিছু সমস্যা হ্রাস করা সম্ভব। স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত ডিজিটাল রূপান্তর বিষয়ে (জাপান বিজনেস ফেডারেশন) প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয় যে, জাপানের জনসংখ্যার ২৬.৩ ভাগের বয়স ৬৫ বছরের উপরে এবং ২০৫০ সালে বিশ্বের শতকরা ২০ ভাগ মানুষের বয়স ৬০ এর উপরে থাকবে। মূলত এর অর্থ জাপানের আজকের এই আশ্চর্যজনক সংখ্যা ছাড়াও জাপান যা করছে এবং কিভাবে সোসাইটি ৫.০ বাস্তবে কাজ করে তা সব দেশকে ভেবে দেখতে হবে। অবশ্য জাপান কেবল বয়স্ক জনগোষ্ঠীকেই সোসাইটি ৫.০ এর প্রতিপাদ্য বিষয় মনে করছেনা।

জাপান মনে করে, স্বাস্থসেবা ব্যতীত অন্যান্য চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে, অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করতে হয় এবং দূষণের সাথে লড়াই করতে হয়। সেজন্য সোসাইটি ৫.০ বা সুপার স্মার্ট সোসাইটিতে বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। জাপান বিজনেস ফেডারেশন সোসাইটি (কেইদারেন) ৫.০ বিষয়ে একটি রূপরেখা প্রকাশ করেছে; যাতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আমরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছি তার জন্য ৫টি দেয়াল ভাঙ্গার প্রয়োজন হবে। প্রকৃতপক্ষে তারা মনে করে দেয়াল ভাঙার পরে সৃষ্ট সমাজই সোসাইটি ৫.০ বা সুপার স্মার্ট সোসাইটি।

দেখা যাক সমাজ ৫.০ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী? শুরুতেই বলা হচ্ছেÑ সমাজ ৫.০ এর জন্য পাঁচটি দেয়াল ভাঙতে হবে। ১) প্রথমেই তারা মনে করে যে প্রশাসন, মন্ত্রণালয় ও সরকারি অফিস সংস্থা জনগণের সাথে যে দেয়াল তুলে রেখেছে সেটি ভাঙতে হবে। আমি খুব সহজেই এটি অনুভব করি যে একটি ডিজিটাল সরকার বিষয়ে আমাদের যে ভাবনা এই দেয়াল ভাঙাটা তার চাইতে বড় কিছু নয়। বরং আমরা এই চ্যালেঞ্জটা আরও দৃঢ়ভাবে মোকাবেলা করছি। ২) জাপানের পঞ্চম সমাজের দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জটা হলো আইনের দেয়াল ভাঙ্গা। এর মানে বিদ্যমান প্রাচীন যুগের আইনগুলোকে সমাজ ৫.০ এর উপযোগী করা। ৩) সমাজ ৫.০ এর তৃতীয় দেয়ালটা হলো প্রযুক্তির দেয়াল। নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে জনগণকে সম্পৃক্ত করা ও সমাজের বিবর্তনে একে কাজে লাগানো হচ্ছে এ দেয়ালটা ভাঙ্গা। ৪) মানব সম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক দেয়ালটা চতুর্থ দেয়াল। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণার সময় থেকেই এ দেয়াল ভাঙার কাজ করছি। ৫) পঞ্চম দেয়ালটি হচ্ছে পঞ্চম সমাজকে সমাজের সব মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করা।

জাপান চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে অংশ নিতে শুরু করায় তার সমাজ ও উৎপাদন ব্যবস্থায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, আইওটি, বিগ ডাটা ইত্যাদি প্রযুক্তি দেশটির রূপান্তরে একটি নতুন ভূমিকা পালন করছে এবং শিল্প উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনছে। জাপানে শিল্পে রোবটিক্সের ব্যবহার ইতোমধ্যে ২য় স্থানে রয়েছে। প্রতি দশ হাজার কর্মীর অনুপাতে ২১১টি রোবট দিয়ে কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে জাপানে। রোবট ব্যবহারে শীর্ষ স্থানে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। জার্মানি ৩য় স্থানে। জাপানের অফিস কর্মীরা গড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ সময় ডেটা এন্ট্রি নিয়ে ব্যস্ত থাকে, সেটা বদলাতে জাপান এআই ওয়ার্কস নামের একটি অ্যাপ তৈরি করেছে। এ ধরনের বিশাল সামাজিক পরিবর্তন কাজ করবে কিনা এবং সামাজিক স্বীকৃতির দেয়াল ভেঙে ফেলা হবে কিনাÑ এ প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে।

সোসাইটি ৫.০ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ : বিশ্বজুড়ে ডিজিটাল রূপান্তরের প্রক্রিয়াটি নানা দেশে নানা নামে পরিচিত। আমরা বিশ্বজুড়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা শুনছি। অনেকেই আলাদাভাবে সোসাইটি ৫.০, আইআর ৪.০ ইত্যাদি বলছে। কেউ কেউ বলছে স্মার্ট নেশন। আমাদের কর্মসূচি তো ডিজিটাল বাংলাদেশ আছেই। জাপানের সোসাইটী ৫.০ এবং অন্যান্য বিষয়াদির সাথে আসুন ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে আলোচনা করি।

সোসাইটি ৫.০ কেমন করে : জাপানিরা ভাবছে যে, তারা বস্তুত ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সোসাইটি ৫.০ গড়ে তুলবে। ফলে যদিও তারা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে পাশ কাটিয়ে তাদের গন্তব্য স্থির করেছে বলে মনে করা হচ্ছে; তথাপি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মূল ভিত্তি ডিজিটাল প্রযুক্তিকেই তারা বাহন হিসেবে গ্রহণ করেছে। তবে জাপানিদের চিন্তায় তাদের মুখ্য সমস্যা-সংকট বা চ্যালেঞ্জগুলো প্রাধান্য পেয়েছে। তাদের ভাবনার দ্ইু-চারটি বিষয় উল্লেখ করা যেতে পারে।

ক) বিগ ডাটার ব্যবহার বিষয়ে তাদের ভাবনা : Big Data collected by IoT will be converted into a new type of intelligence by AI and will reach every corner of society. As we move into Society 5.0 all people’s lives will be more comfortable and sustainable as people are provided with only the products and services in the amounts and at the time needed.স্পষ্টতই বোঝা যায় যে, জাপান মনে করে যে, বিগ ডাটা বিশ্লেষণ করতে পারার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তাদের সোসাইটি ৫.০-এ পৌঁছে যাবার পথটাকে সুগম করবে। বিগ ডাটার প্রয়োগ বাংলাদেশের সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থাসহ ডিজিটাল রূপান্তরে ব্যাপকভাবে সহায়তা করতে পারে।

খ) উন্নত উৎপাদন ব্যবস্থা : অন্যদিকে জাপান মনে করে তার বিদ্যমান উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে বিকাশমান প্রযুক্তিকে সমন্বিত করে তারা সোসাইটি ৫.০-এ পৌঁছে যেতে পারে। বিশেষ করে বিগ ডাটা এবং কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা এই বিষয়ে ব্যাপক সহায়তা করতে পারে। Japan’s advanced technology cultivated from æmonozukuri” (Japan’s excellence in the manufacturing of things) and years of basic research, will work as advantages toward creating products using information technologies like Big Data and AI, which can then be released into our society. বাংলাদেশের জন্য উৎপাদন ব্যবস্থাকে জাপানের প্রাক-ডিজিটাল যুগে পৌঁছানোটাই বড় চ্যালেঞ্জ। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা যদি জাপানের ধারণাকে বাস্তবে রূপায়িত করতে পারি তবে তিনটি শিল্প বিপ্লব মিস করার যে সংকট আমাদের রয়েছে সেটি আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে জাপানের মতো উৎপাদন ব্যবস্থার অধিকারী হতে পারি।

গ) বয়স্ক জনগোষ্ঠী : একটি বড় প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে, কেমন করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া যেতে পারে। জাপানিরা এ সমস্যাটির সমাধান এভাবে করবে বলে মনে করে। Connect and share information between medical data users including medical checkup records, as well as treatment and nursing care records. Put remote medical care services into practice. Use AI and robots at nursing-care facilities to support people’s independence. বয়স্ক জনগোষ্ঠীর সমস্যাটি জাপানের মতো তীব্র বাংলাদেশে না থাকলেও গড় আয়ু বেড়ে যাাবার ফলে আমাদেরও একটি বিশাল বয়স্ক জনগোষ্ঠীর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। তাদের সহায়তার জন্য ডিজিটাল প্রযুক্তি অবশ্যই সহায়ক হতে পারে।

ঘ) চলাচল ও প্রযুক্তি : মানুষের জন্য চলাচল বা পরিবহন ব্যবস্থা খুবই জরুরি। সেই বিষয়টি সম্পর্কে তারা মনে করে যে, প্রযুক্তি এখানে বড় সহায়তা করবে। People in underpopulated areas find it difficult to shop and visit hospitals because of a lack of public transportation. However, autonomous vehicles will enable them to travel more easily while delivery drones will make it possible to receive whatever someone needs. A shortage of distribution labor will not be a worry.পরিবহনের বিষয়টি আমাদের জন্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। আমাদের ভাবনা এমন হতে পারে যে, চালকবিহীন যানবাহন প্রচলিত হলে আমাদের বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ক্ষুণœ হতে পারে। অন্যদিকে ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার আমাদের দ্বীপ, চর, হাওর বা অন্যান্য প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধন করতে পারে। এটি একই সাথে স্বাস্থ্যসেবাতেও ব্যাপক সহায়ক হতে পারে।

ঙ) জীবনধারার সাথে প্রযুক্তির প্রয়োগ হতে পারে এভাবে : By employing new technologies including Information and Communication Technology (ICT), robots, sensors for inspection and maintenance systems that require specialized skills, detection of places that need repair can be made at an early stage. By doing so, unexpected accidents will be minimized and the time spent in construction work will be reduced, while at the same time safety and productivity will increase. চ) অর্থ ব্যবস্থা : সোসাইটি ৫.০-এ আর্থিক ব্যবস্থাপনা কেমন হতে পারে সেটিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে- Use blockchain technology for money transfer Introduce open application programming interfaces (API) to Fintech firms and banks. Promote cashless payment.[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান; সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং বিজয় ডিজিটাল শিক্ষা সফটওয়্যারের উদ্ভাবক, ডিজিটাল প্রযুক্তির অনেক ট্রেডমার্ক, প্যাটেন্ট ও কপিরাইটের স্বত্বাধিকারী]