ফারইস্টে লুটপাটকারীরা কেউ ছাড় পাবে না : পরিচালনা পর্ষদ

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অর্থ লুটপাট করা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ। নতুন পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে লুটপাট চালানো মূল দুই হোতা এরই মধ্যে কারাগারে রয়েছে। বাকিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তারা ফারইস্ট লাইফ থেকে যে পরিমাণ অর্থ লুটপাট করেছে, তার সমপরিমাণ অর্থ কোম্পানিতে ফিরিয়ে আনা হবে। গতকাল পল্টনে অবস্থিত ফারইস্ট লাইফ টাওয়ারে আয়োজিত ‘ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলন-২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান এবং পরিচালকরা।

এক সময় ভালো ব্যবসা করা ফারইস্ট লাইফের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে এলে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হয়। বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়ার ১৫ দিনের মাথায় কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ থেকে হেমায়েত উল্লাহকে বহিষ্কার করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

আইডিআরএ’র এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে হেমায়েত উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বীমা পলিসি গ্রাহক ও বীমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং নিয়ম পরিপন্থী কার্মকা-ের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে আইডিআরএ’র নজরে এসেছে। বীমা গ্রাহকদের অভিযোগসহ অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

এছাড়া হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখে এবং মিথ্যা তথ্য সম্বলিত সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হেমায়েত উল্লাহকে কোন বীমা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না দিতে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। সব বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও বরাবর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়। ‘হেমায়েত উল্লাহ ২০১১ থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ওই বীমা কোম্পানিতে (ফারইস্ট ইসলামী লাইফ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।’

‘তিনি বীমা আইন-২০১০ ও বীমা আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন মর্মে তার নিয়োগপত্রে সুস্পষ্টভাবে শর্তারোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বকালে কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এ জন্য তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।’

ফারইস্ট লাইফে লুটপাট চালিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং সাবেক পরিচালক এমএ খালেক। এছাড়া আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

ফারইস্ট লাইফের ‘ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলন-২০২২’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যারা ফারইস্ট লাইফের অর্থ লুটপাট করেছে তাদের তা ফেরত দিতেই হবে। যে সব রাঘব-বোয়ালরা টাকা লুট করেছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সবার দাবি পরিশোধ করা হবে। অন্যায়কারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। লুটপাটকারীদের কারণে যারা মাঠে কাজ করেন তাদের অনেক কিছু ফেস করতে হয়। তারা মানুষকে কনভেন্স করে টাকা আনেন। কিন্তু যখন পলিসির টাকা দিতে না পারেন তখন তাদের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। যাইহোক, মাঠে যারা কাজ করেন তারা হচ্ছেন ইন্স্যুরেন্সের প্রাণ। তাই কোন পলিসি করতে হলে অবশ্যই মাঠ পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে করা উচিত।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ড. মো. ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, ফারইস্ট লাইফের লুটেরা এখন কারাগারে। যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই তাদের লুটের তথ্য পাচ্ছি। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লুট করেছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি তাদের কোথায় কী আছে। তারা আমাদের যে পরিমাণ অর্থ লুট করেছে, তাদের কাছ থেকে সেই পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘এ লুট শুধু খালেক এবং নজরুল করেননি। কোম্পানির ব্যবস্থাপনার অনেকে এ লুটের সঙ্গে জড়িত। আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। লুটের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

ফারইস্ট লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিচালক জহুরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামিরা ইউনুস। এছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যলয়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

ফারইস্টে লুটপাটকারীরা কেউ ছাড় পাবে না : পরিচালনা পর্ষদ

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বিমা কোম্পানি ফারইস্ট ইসলামী লাইফের অর্থ লুটপাট করা কাউকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির নতুন পরিচালনা পর্ষদ। নতুন পর্ষদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফারইস্ট ইসলামী লাইফে লুটপাট চালানো মূল দুই হোতা এরই মধ্যে কারাগারে রয়েছে। বাকিদের চিহ্নিত করা হয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। তারা ফারইস্ট লাইফ থেকে যে পরিমাণ অর্থ লুটপাট করেছে, তার সমপরিমাণ অর্থ কোম্পানিতে ফিরিয়ে আনা হবে। গতকাল পল্টনে অবস্থিত ফারইস্ট লাইফ টাওয়ারে আয়োজিত ‘ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলন-২০২২’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান চেয়ারম্যান, ভাইস-চেয়ারম্যান এবং পরিচালকরা।

এক সময় ভালো ব্যবসা করা ফারইস্ট লাইফের বিরুদ্ধে নজিরবিহীন লুটপাটের তথ্য বেরিয়ে এলে গত বছরের ১ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। পর্ষদ ভেঙে দেয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিতে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালকও নিয়োগ দেয়া হয়। বিএসইসি থেকে এমন পদক্ষেপ নেয়ার ১৫ দিনের মাথায় কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) পদ থেকে হেমায়েত উল্লাহকে বহিষ্কার করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।

আইডিআরএ’র এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে হেমায়েত উল্লাহর বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বীমা পলিসি গ্রাহক ও বীমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর এবং নিয়ম পরিপন্থী কার্মকা-ের তথ্য বিভিন্ন মাধ্যমে আইডিআরএ’র নজরে এসেছে। বীমা গ্রাহকদের অভিযোগসহ অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ রয়েছে।

এছাড়া হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে নিজ ভোগদখলে রেখে এবং মিথ্যা তথ্য সম্বলিত সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং তার বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত তথ্য কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে রয়েছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এরপর গত বছরের ২১ ডিসেম্বর হেমায়েত উল্লাহকে কোন বীমা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ না দিতে নির্দেশ দেয় আইডিআরএ। সব বীমা কোম্পানির চেয়ারম্যান ও সিইও বরাবর পাঠানো এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়। ‘হেমায়েত উল্লাহ ২০১১ থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ওই বীমা কোম্পানিতে (ফারইস্ট ইসলামী লাইফ) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।’

‘তিনি বীমা আইন-২০১০ ও বীমা আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন মর্মে তার নিয়োগপত্রে সুস্পষ্টভাবে শর্তারোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বকালে কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এ জন্য তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।’

ফারইস্ট লাইফে লুটপাট চালিয়ে গ্রাহকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম এবং সাবেক পরিচালক এমএ খালেক। এছাড়া আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বর্তমানে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

ফারইস্ট লাইফের ‘ব্যবসা উন্নয়ন সম্মেলন-২০২২’-এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘যারা ফারইস্ট লাইফের অর্থ লুটপাট করেছে তাদের তা ফেরত দিতেই হবে। যে সব রাঘব-বোয়ালরা টাকা লুট করেছে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে সবার দাবি পরিশোধ করা হবে। অন্যায়কারীদের কোন ছাড় দেয়া হবে না। লুটপাটকারীদের কারণে যারা মাঠে কাজ করেন তাদের অনেক কিছু ফেস করতে হয়। তারা মানুষকে কনভেন্স করে টাকা আনেন। কিন্তু যখন পলিসির টাকা দিতে না পারেন তখন তাদের ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয়। যাইহোক, মাঠে যারা কাজ করেন তারা হচ্ছেন ইন্স্যুরেন্সের প্রাণ। তাই কোন পলিসি করতে হলে অবশ্যই মাঠ পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে করা উচিত।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ড. মো. ইব্রাহিম হোসেন খান বলেন, ফারইস্ট লাইফের লুটেরা এখন কারাগারে। যেখানে হাত দিচ্ছি সেখানেই তাদের লুটের তথ্য পাচ্ছি। হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লুট করেছে। আমরা খোঁজ নিচ্ছি তাদের কোথায় কী আছে। তারা আমাদের যে পরিমাণ অর্থ লুট করেছে, তাদের কাছ থেকে সেই পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, ‘এ লুট শুধু খালেক এবং নজরুল করেননি। কোম্পানির ব্যবস্থাপনার অনেকে এ লুটের সঙ্গে জড়িত। আমরা তাদের চিহ্নিত করেছি। লুটের সঙ্গে জড়িত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

ফারইস্ট লাইফের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা ড. চৌধুরী মোহাম্মদ ওয়াসিউদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন পরিচালক জহুরুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সামিরা ইউনুস। এছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক কার্যলয়ের কর্মকর্তারা বক্তব্য দেন।