চার মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে ভাটার টান লেগেছে। সময় যতই যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থার জন্য করোনা মহামারী পরবর্তী চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল থাকলে রাজস্ব আদায়েও গতি বেশি হয়। তাছাড়া নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও এনবিআরের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ সন্তোষজনক।

চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) মাথায় তা সাড়ে ৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। পিছিয়ে আছে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায়ও। তিন মাস শেষে আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৫.৬৫ শতাংশ হলেও অক্টোবর পর্যন্ত তা কমে ১৪.১৭ শতাংশ হয়েছে। এনবিআর থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে পাওয়া সাময়িক হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪.১৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭৯ হাজার ৬২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর শুধুমাত্র অক্টোবর মাস হিসাবে রাজস্ব এসেছে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১০.০৯ শতাংশ হলেও পিছিয়ে আছে ২ হাজার ৩৪৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এনবিআর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে ১৬.২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আদায় ৩৪ হাজার ১৮৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ঘাটতি ৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এরপরই আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে সাময়িক হিসাবে শুল্ক-কর আদায় হয়। এই খাতে আদায় ২৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৩.৬০ শতাংশ। ঘাটতি ৪ হাজার ৮০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

অন্যদিকে অক্টোবর পর্যন্ত আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১২.১৭ শতাংশ হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে এক হাজার ৫৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।এর আগে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে চার হাজার ৭৪ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সেক্টরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬৭ হাজার ১০৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা। বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ১৭৮ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪.১৭ শতাংশ।

এর আগে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে শুল্ক-কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে সাত দফা পরিকল্পনা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে রাজস্ব আদায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বড় ধরনের পরিবর্তন ইতিবাচক প্রভাব এখনও দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৬.০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও বছর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

চার মাসে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আদায়ে ভাটার টান লেগেছে। সময় যতই যাচ্ছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এ অবস্থার জন্য করোনা মহামারী পরবর্তী চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটকে দায়ী করছেন এনবিআর কর্মকর্তারা। তাদের দাবি, বৈশ্বিক অর্থনীতির নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও পড়েছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য গতিশীল থাকলে রাজস্ব আদায়েও গতি বেশি হয়। তাছাড়া নানা সংকট থাকা সত্ত্বেও এনবিআরের রাজস্ব আহরণের পরিমাণ সন্তোষজনক।

চলতি ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্ব আহরণে ঘাটতি ৪ হাজার কোটি টাকা থেকে চার মাসের (জুলাই-অক্টোবর) মাথায় তা সাড়ে ৬ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। পিছিয়ে আছে প্রবৃদ্ধির বিবেচনায়ও। তিন মাস শেষে আদায়ের প্রবৃদ্ধি ১৫.৬৫ শতাংশ হলেও অক্টোবর পর্যন্ত তা কমে ১৪.১৭ শতাংশ হয়েছে। এনবিআর থেকে পাওয়া সাময়িক হিসাব সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে পাওয়া সাময়িক হিসাব বলছে, চলতি অর্থবছরের চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪.১৭ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে একই সময়ে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৭৯ হাজার ৬২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর শুধুমাত্র অক্টোবর মাস হিসাবে রাজস্ব এসেছে ২৩ হাজার ৭৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১০.০৯ শতাংশ হলেও পিছিয়ে আছে ২ হাজার ৩৪৯ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

এনবিআর সূত্রে পাওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট সবচেয়ে বেশি আদায় হয়েছে। এ খাতে ১৬.২৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে আদায় ৩৪ হাজার ১৮৪ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। ঘাটতি ৪০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এই খাতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। এরপরই আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে সাময়িক হিসাবে শুল্ক-কর আদায় হয়। এই খাতে আদায় ২৯ হাজার ৯৩৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১৩.৬০ শতাংশ। ঘাটতি ৪ হাজার ৮০২ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ হাজার ৭৩৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

অন্যদিকে অক্টোবর পর্যন্ত আয়কর খাতে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ১২.১৭ শতাংশ হলেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পিছিয়ে আছে এক হাজার ৫৬১ কোটি ৪১ লাখ টাকা।এর আগে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব আদায়ে চার হাজার ৭৪ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা পিছিয়ে ছিল এনবিআর। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আয়কর, ভ্যাট ও শুল্ক সেক্টরে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৬৭ হাজার ১০৪ দশমিক ৪৫ কোটি টাকা। বিপরীতে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭১ হাজার ১৭৮ দশমিক ৮৪ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরের চার মাস (জুলাই-অক্টোবর) শেষে রাজস্ব আদায় করতে সক্ষম হয়েছে ৯০ হাজার ৯০১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯৭ হাজার ৩০৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি ৬ হাজার ৪০৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ১৪.১৭ শতাংশ।

এর আগে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে শুল্ক-কর আদায়ের পরিমাণ বাড়াতে সাত দফা পরিকল্পনা নেয় প্রতিষ্ঠানটি। তবে রাজস্ব আদায়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বড় ধরনের পরিবর্তন ইতিবাচক প্রভাব এখনও দেখা যায়নি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৬.০৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও বছর শেষে ঘাটতি দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরে (জুলাই-জুন) এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ ১১ হাজার কোটি, মূসক আদায়ে এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা এবং আয়কর খাতে এক লাখ ২২ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়।