অনুকূল হাওয়া ভালো দামে আগাম লবণ উৎপাদনে ঝুঁকছেন কৃষক

চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের তিন উপজেলায় আগাম লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম গত মৌসুমের তুলনায় বেশ ভালো থাকায় চলতি মাসের শুরুতেই আগাম লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। আর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন মৌসুমের লবণ। বাঁশখালীর উপকূলীয় বড়ঘোনা, গন্ডামারা, ছনুয়া, মিনজিরীতলা, পুঁইছড়ি, সরল, শেখেরখীল, পশ্চিম মনকিচর ও পশ্চিম চাম্বল ডেপুটিঘোনা এলাকার লবণ চাষিরা এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি লবণ মাঠ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিগত দিনে উপকূলের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকলেও বর্তমানে সেসব জমিতে লবণ চাষ করেছেন। দাম বেশি হওয়ায় লবণ চাষিরা বিগত দিনের তুলনায় এবার প্রচুর পরিমাণ লবণ মাঠ তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যে পলিথিন এর মাধ্যমে কিছু কিছু স্থানে লবণ উৎপাদন শুরুও হয়ে গেছে।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বাঁশখালীর প্রায় ২ হাজার একর জমিতে, কুতুবদিয়ার সাড়ে ৬ হাজার একর জমিতে, পেকুয়ার ২ হাজার একর জমিতে ও টেকনাফের দেড় হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাকি জমিতেও ধীরে ধীরে মাঠে নামছে চাষিরা। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের ৩ উপজেলায় প্রায় ৬৩ হাজার ৩শ’ একর জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, চলতি মাসের শুরুতেই সর্বপ্রথম মাঠে নামেন কুতুবদিয়ার লবণ চাষিরা। এরপর বাঁশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফের লবণ চাষিরা মাঠে নামেন। গত ৫-৬ নভেম্বর থেকে কুতুবদিয়ার এবং কয়েকদিন পর থেকেই পেকুয়ার লবণ বাজারে আসতে থাকে। গত রোববার (১৩ নভেম্বর) থেকে বাঁশখালীর পূর্ব ঘোনা এলাকার লবণ এবং গত শুক্রবার (১১ নভেম্বর) থেকে টেকনাফের লবণ বাজারে আসে। অথচ গত মৌসুমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৮ নভেম্বর থেকে। চলতি বছর এরই মধ্যে প্রায় ১২শ’ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে কক্সবাজার সদরের চৌফলদ-িতেও উৎপাদন শুরু হবে। তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে লবণের দামও বেশ ভালো রয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ ৫২০ টাকা থেকে ৫৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত সময়ে সমুদ্র উপকূলীয় জমিতে সামুদ্রিক লবণ পানি আটকে রেখে, তা রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় লবণ। গতবছর ৩৭ হাজার ২৩১ জন চাষি প্রায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ করেছেন। এর মধ্যে বাঁশখালীর ৮ হাজার ১৭৬ একর ছাড়া বাকি জমি কক্সবাজারের। তবে এবারের মৌসুমে আনোয়ারার বেশ কিছু জমিতেও লবণের চাষ হতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে কুতুবদিয়ার শতভাগ জমিতে লবণের চাষ শুরু হয়েছে। এছাড়া বাঁশখালীর প্রায় ২৫ ভাগ, টেকনাফের ৪০ ভাগ, পেকুয়ার ২০ ভাগ জমিতে এখন লবণের চাষ চলছে। বিসিক সূত্র মতে, গত বছর কক্সবাজারের ৭ উপজেলার ৫৫ হাজার ১১৪ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে কুতুবদিয়ার ৬ হাজার ৫৬৩ একর, পেকুয়ার ৯ হাজার ৮শ’ ৪৫ একর, টেকনাফের ৩ হাজার ৯শ’ ৪৫ একর, চকরিয়ার ১০ হাজার ৬শ’ ২০ একর, কক্সবাজার সদরের ৩ হাজার ৩শ’ ৩৮ একর, ঈদগাঁও’র ৪ হাজার ৬শ’ ৯১ একর এবং মহেশখালীর ১৬ হাজার ১৮ একর জমি রয়েছে। এবছরও এসব জমি ছাড়াও আরও নতুন জমিতে লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে বিসিক। তবে কক্সবাজারের ৯ উপজেলার মধ্যে রামু ও উখিয়াতে লবণ উৎপাদিত হয় না।

বিসিকের সূত্রমতে, গত বছর চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উৎপাদিত হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮শ’ ৬০ মে. টন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন, পেকুয়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ’ মে. টন, টেকনাফে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫শ’ মে. টন, ঈদগাঁওতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭শ’ মে. টন, সদরে ৮৩ হাজার ৬শ’ ৯০ মে. টন, চকরিয়ায় ২ লাখ ৫৮ হাজার ১শ’ মে. টন এবং মহেশখালীতে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭শ’ মে. টন লবণ উৎপাদিত হয়। আর চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

অনুকূল হাওয়া ভালো দামে আগাম লবণ উৎপাদনে ঝুঁকছেন কৃষক

সৈকত আচার্য্য, বাঁশখালী (চট্টগ্রাম)

image

চলতি মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের তিন উপজেলায় আগাম লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও মাঠ পর্যায়ে লবণের দাম গত মৌসুমের তুলনায় বেশ ভালো থাকায় চলতি মাসের শুরুতেই আগাম লবণ উৎপাদনে মাঠে নেমেছেন চাষিরা। আর চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই বাজারে আসতে শুরু করেছে নতুন মৌসুমের লবণ। বাঁশখালীর উপকূলীয় বড়ঘোনা, গন্ডামারা, ছনুয়া, মিনজিরীতলা, পুঁইছড়ি, সরল, শেখেরখীল, পশ্চিম মনকিচর ও পশ্চিম চাম্বল ডেপুটিঘোনা এলাকার লবণ চাষিরা এখন সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি লবণ মাঠ নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিগত দিনে উপকূলের অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকলেও বর্তমানে সেসব জমিতে লবণ চাষ করেছেন। দাম বেশি হওয়ায় লবণ চাষিরা বিগত দিনের তুলনায় এবার প্রচুর পরিমাণ লবণ মাঠ তৈরি করেছেন। ইতোমধ্যে পলিথিন এর মাধ্যমে কিছু কিছু স্থানে লবণ উৎপাদন শুরুও হয়ে গেছে।

বিসিক সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বাঁশখালীর প্রায় ২ হাজার একর জমিতে, কুতুবদিয়ার সাড়ে ৬ হাজার একর জমিতে, পেকুয়ার ২ হাজার একর জমিতে ও টেকনাফের দেড় হাজার একর জমিতে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছে। বাকি জমিতেও ধীরে ধীরে মাঠে নামছে চাষিরা। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও কক্সবাজারের ৩ উপজেলায় প্রায় ৬৩ হাজার ৩শ’ একর জমিতে লবণের চাষ হয়ে থাকে। কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের পরিদর্শক ইদ্রিস আলী জানান, চলতি মাসের শুরুতেই সর্বপ্রথম মাঠে নামেন কুতুবদিয়ার লবণ চাষিরা। এরপর বাঁশখালী, পেকুয়া ও টেকনাফের লবণ চাষিরা মাঠে নামেন। গত ৫-৬ নভেম্বর থেকে কুতুবদিয়ার এবং কয়েকদিন পর থেকেই পেকুয়ার লবণ বাজারে আসতে থাকে। গত রোববার (১৩ নভেম্বর) থেকে বাঁশখালীর পূর্ব ঘোনা এলাকার লবণ এবং গত শুক্রবার (১১ নভেম্বর) থেকে টেকনাফের লবণ বাজারে আসে। অথচ গত মৌসুমে লবণ উৎপাদন শুরু হয়েছিল ১৮ নভেম্বর থেকে। চলতি বছর এরই মধ্যে প্রায় ১২শ’ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যে কক্সবাজার সদরের চৌফলদ-িতেও উৎপাদন শুরু হবে। তিনি জানান, বর্তমানে বাজারে লবণের দামও বেশ ভালো রয়েছে। এখন মাঠ পর্যায়ে প্রতিমণ লবণ ৫২০ টাকা থেকে ৫৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

কক্সবাজারস্থ বিসিক লবণ কেন্দ্রের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাফর ইকবাল ভূঁইয়া জানান, প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে নভেম্বর থেকে এপ্রিল-মে পর্যন্ত সময়ে সমুদ্র উপকূলীয় জমিতে সামুদ্রিক লবণ পানি আটকে রেখে, তা রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হয় লবণ। গতবছর ৩৭ হাজার ২৩১ জন চাষি প্রায় ৬৩ হাজার ২৯১ একর জমিতে লবণের চাষ করেছেন। এর মধ্যে বাঁশখালীর ৮ হাজার ১৭৬ একর ছাড়া বাকি জমি কক্সবাজারের। তবে এবারের মৌসুমে আনোয়ারার বেশ কিছু জমিতেও লবণের চাষ হতে পারে বলে জানান তিনি। তিনি আরো জানান, ইতোমধ্যে কুতুবদিয়ার শতভাগ জমিতে লবণের চাষ শুরু হয়েছে। এছাড়া বাঁশখালীর প্রায় ২৫ ভাগ, টেকনাফের ৪০ ভাগ, পেকুয়ার ২০ ভাগ জমিতে এখন লবণের চাষ চলছে। বিসিক সূত্র মতে, গত বছর কক্সবাজারের ৭ উপজেলার ৫৫ হাজার ১১৪ একর জমিতে লবণের চাষ হয়েছে। এরমধ্যে কুতুবদিয়ার ৬ হাজার ৫৬৩ একর, পেকুয়ার ৯ হাজার ৮শ’ ৪৫ একর, টেকনাফের ৩ হাজার ৯শ’ ৪৫ একর, চকরিয়ার ১০ হাজার ৬শ’ ২০ একর, কক্সবাজার সদরের ৩ হাজার ৩শ’ ৩৮ একর, ঈদগাঁও’র ৪ হাজার ৬শ’ ৯১ একর এবং মহেশখালীর ১৬ হাজার ১৮ একর জমি রয়েছে। এবছরও এসব জমি ছাড়াও আরও নতুন জমিতে লবণ উৎপাদন হবে বলে আশা করছে বিসিক। তবে কক্সবাজারের ৯ উপজেলার মধ্যে রামু ও উখিয়াতে লবণ উৎপাদিত হয় না।

বিসিকের সূত্রমতে, গত বছর চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে উৎপাদিত হয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৮শ’ ৬০ মে. টন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায় ২ লাখ ৫৬ হাজার ৫শ’ মেট্রিক টন, পেকুয়ায় ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫শ’ মে. টন, টেকনাফে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৫শ’ মে. টন, ঈদগাঁওতে ১ লাখ ৪১ হাজার ৭শ’ মে. টন, সদরে ৮৩ হাজার ৬শ’ ৯০ মে. টন, চকরিয়ায় ২ লাখ ৫৮ হাজার ১শ’ মে. টন এবং মহেশখালীতে ৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭শ’ মে. টন লবণ উৎপাদিত হয়। আর চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে দেশে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ২৩ লাখ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন।