ভোজ্যতেলের পথ খুঁজছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা

এক সময় দেশের শতভাগ মানুষ সরিষার তেল দিয়েই বিভিন্ন খাবার রান্না করে খেত। কালের বিবর্তনে গত কয়েক বছর ধরে কৃষক পর্যায়ে সরিষার আবাদ হ্রাস পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের তেল বিদেশ থেকে আমদানি করছে। দেশের কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ হারায়। দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্য ও সব কৃষকের লাভজনক কৃষি উৎপাদনের বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন লাভজনক সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি দপ্তর। গত বছরের তুলনায় এবার আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রাও কম ধরা হয়েছে। আলু চাষের বড় প্রজেক্টগুলোতেও প্রণোদনার মাধ্যমে সরিষা চাষে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তবে আবাদ যাই হোক জমি প্রস্তুতে বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আর আলুর বদলে অনেকেই সরিষার আবাদ করছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর বলছে, আমাদের দেশে উৎপাদিত আলু রপ্তানিযোগ্য না। অথচ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়। এতে উদ্বৃত্ত আলু থাকার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হয়, তেমনি কৃষকরাও ন্যায্য দাম পান না। অথচ একই সময়ে একই জমিতে সরিষা রোপণ করা যায়। সরিষা চাষে শ্রম ও উৎপাদন খরচ কম। দামও বেশি। আর সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকারের ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এতে গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হবে। এরই মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা লাগানো হয়েছে।

দপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৩৮ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে। ফলে গত বছরের কুলনায় এবার ১ হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষ কমছে। আর এর পুরোটাই সরিষা চাষের আওতায় আনতে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে চলছে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচি।

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়ে থাকে তানোর উপজেলায়। সেখানকার অনেক চাষিই আলুর ন্যায্য দাম না পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলার তিন্নি এলাকার কৃষক মাজহারুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান ১২ বিঘা করে জমি, আনারুল হক ৬ বিঘা এবং জাকারিয়া ৩ বিঘা জমিতে বিগত কয়েক বছর ধরে আলু চাষ করে আসছেন। কিন্তু এবার আলু চাষ করে তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি। এ কারণে আলুর জমিতে সরিষা রোপণ করেছেন। একই চিত্র অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়।

এদিকে, আলু ও সরিষা লাগানোর শুরুতেই সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।

তারা বলছেন, সারের সরকার-নির্ধারিত মূল্যতালিকা আছে। গ্রাহক পর্যায়ে দোকানগুলোতে সারের সেই তালিকা টাঙানো হচ্ছে না। আবার টাঙানো থাকলেও বিভিন্ন খোড়া অজুহাতে সারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।

তানোরের আমশো গ্রামের কৃষক তুষার আহমেদ জানান, আলু চাষে পটাশ বেশি লাগে। কৃষি অফিস থেকে চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ৫ বস্তা সার বাইরে থেকে ১২০০ টাকা দরে কিনেছেন। একই অভিযোগ, মুন্ডমালা গ্রামের আসাদুজ্জামানের। তিনি জানান, বাইরে থেকে এক বস্তায় ৫০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে সার কিনেছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, একখন্ড জমিও থাকবে না পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত জমি খুঁজে সেগুলোকে আবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিত্যক্ত এসব জমি খুঁজে তা প্রণোদনার মাধ্যমে হলেও চাষাবাদের মধ্যে আনা হচ্ছে। আর এ বছর আলু চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ আলু চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হচ্ছে। তবে আলু চাষ যে খুব বেশি কমছে এমনটাও না। আর আলুর চেয়ে সরিষা চাষ লাভজনক। এছাড়া সরিষার চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের একটি বিশেষ পরিকল্পনাও তারা বাস্তবায়ন করছেন।

তিনি আরও জানান, সারের সংকটের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এটা সঠিক না বরং জেলায় মাসিক বরাদ্দের চেয়ে সার বেশি রয়েছে। তবে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

ভোজ্যতেলের পথ খুঁজছেন বরেন্দ্র অঞ্চলের চাষিরা

জেলা বার্তা পরিবেশ, রাজশাহী

image

এক সময় দেশের শতভাগ মানুষ সরিষার তেল দিয়েই বিভিন্ন খাবার রান্না করে খেত। কালের বিবর্তনে গত কয়েক বছর ধরে কৃষক পর্যায়ে সরিষার আবাদ হ্রাস পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের তেল বিদেশ থেকে আমদানি করছে। দেশের কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহ হারায়। দেশের সব মানুষের স্বাস্থ্য ও সব কৃষকের লাভজনক কৃষি উৎপাদনের বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে। এখন লাভজনক সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছে কৃষি দপ্তর। গত বছরের তুলনায় এবার আলুর আবাদ লক্ষ্যমাত্রাও কম ধরা হয়েছে। আলু চাষের বড় প্রজেক্টগুলোতেও প্রণোদনার মাধ্যমে সরিষা চাষে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। তবে আবাদ যাই হোক জমি প্রস্তুতে বরেন্দ্র অঞ্চলজুড়ে চলছে জোর প্রস্তুতি। ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। আর আলুর বদলে অনেকেই সরিষার আবাদ করছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ দপ্তর বলছে, আমাদের দেশে উৎপাদিত আলু রপ্তানিযোগ্য না। অথচ চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি হয়। এতে উদ্বৃত্ত আলু থাকার কারণে একদিকে যেমন নষ্ট হয়, তেমনি কৃষকরাও ন্যায্য দাম পান না। অথচ একই সময়ে একই জমিতে সরিষা রোপণ করা যায়। সরিষা চাষে শ্রম ও উৎপাদন খরচ কম। দামও বেশি। আর সরিষার আবাদ বৃদ্ধিতে সরকারের ত্রি-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। এতে গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেশি জমিতে সরিষার আবাদ হবে। এরই মধ্যে ২০ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা লাগানো হয়েছে।

দপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর রাজশাহীতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছর ছিল ৩৮ হাজার ৫৪৩ হেক্টর জমিতে। ফলে গত বছরের কুলনায় এবার ১ হাজার ৩৬৩ হেক্টর জমিতে আলু চাষ কমছে। আর এর পুরোটাই সরিষা চাষের আওতায় আনতে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। উপজেলাগুলোতে চলছে বিনামূল্যে সরিষার বীজ ও সার বিতরণ কর্মসূচি।

রাজশাহী জেলার সবচেয়ে বেশি আলু চাষ হয়ে থাকে তানোর উপজেলায়। সেখানকার অনেক চাষিই আলুর ন্যায্য দাম না পেয়ে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

উপজেলার তিন্নি এলাকার কৃষক মাজহারুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান ১২ বিঘা করে জমি, আনারুল হক ৬ বিঘা এবং জাকারিয়া ৩ বিঘা জমিতে বিগত কয়েক বছর ধরে আলু চাষ করে আসছেন। কিন্তু এবার আলু চাষ করে তারা উৎপাদন খরচও তুলতে পারেননি। এ কারণে আলুর জমিতে সরিষা রোপণ করেছেন। একই চিত্র অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়।

এদিকে, আলু ও সরিষা লাগানোর শুরুতেই সারের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই।

তারা বলছেন, সারের সরকার-নির্ধারিত মূল্যতালিকা আছে। গ্রাহক পর্যায়ে দোকানগুলোতে সারের সেই তালিকা টাঙানো হচ্ছে না। আবার টাঙানো থাকলেও বিভিন্ন খোড়া অজুহাতে সারের দাম বেশি নেয়া হচ্ছে।

তানোরের আমশো গ্রামের কৃষক তুষার আহমেদ জানান, আলু চাষে পটাশ বেশি লাগে। কৃষি অফিস থেকে চাহিদা অনুযায়ী সার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি ৫ বস্তা সার বাইরে থেকে ১২০০ টাকা দরে কিনেছেন। একই অভিযোগ, মুন্ডমালা গ্রামের আসাদুজ্জামানের। তিনি জানান, বাইরে থেকে এক বস্তায় ৫০০ টাকা বেশি দাম দিয়ে সার কিনেছেন।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোজদার হোসেন জানান, একখন্ড জমিও থাকবে না পরিত্যক্ত। পরিত্যক্ত জমি খুঁজে সেগুলোকে আবাদের আওতায় আনার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিত্যক্ত এসব জমি খুঁজে তা প্রণোদনার মাধ্যমে হলেও চাষাবাদের মধ্যে আনা হচ্ছে। আর এ বছর আলু চাষে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ আলু চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হচ্ছে। তবে আলু চাষ যে খুব বেশি কমছে এমনটাও না। আর আলুর চেয়ে সরিষা চাষ লাভজনক। এছাড়া সরিষার চাষ বৃদ্ধিতে সরকারের একটি বিশেষ পরিকল্পনাও তারা বাস্তবায়ন করছেন।

তিনি আরও জানান, সারের সংকটের যে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে এটা সঠিক না বরং জেলায় মাসিক বরাদ্দের চেয়ে সার বেশি রয়েছে। তবে কেউ কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে সুবিধা নিতে চাইলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।