গ্যাস সংকটে দেশের শিল্পোৎপাদন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে শিল্প খাতে আরও পাঁচ শতাংশ গ্যাসের জোগান দিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৮-১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। চলতি বছর ২০-৩০ শতাংশ অর্ডার কম আসবে। আর শিল্পে গ্যাসের জোগান কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘আমাদের যে টোট্যাল গ্যাস আছে তার ৪২ শতাংশ যাচ্ছে পাওয়ার প্ল্যান্টে। এছাড়া মেশিনারিজে ১৮ শতাংশ, ক্যাপ্টিভ জেনারেশনে ১৭ শতাংশ, গৃহস্থালির রান্নায় ১৩ শতাংশ আর সিএনজিতে ব্যবহার হচ্ছে ৪ শতাংশ গ্যাস। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি, যদি আরও ৫ শতাংশ গ্যাস শিল্প খাতে বাড়ানো হয় তাহলে লোডশেডিং থেকে আমরা বেঁচে যেতে পারি।’
গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য গ্যাস কোন রেভিনিউ ও ইমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয়ভাবে এখানে কোন অবদান নেই। যাদের আজ রপ্তানি ট্রফি পাচ্ছেন তারা কর্মসংস্থান ও রেভিনিউতে অবদান রাখছেন। আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিতে ফরেন কারেন্সি আনতে কাজ করবো। সেজন্য আরও পাঁচ শতাংশ গ্যাস প্রয়োজন, সেটা গৃহস্থালি থেকে এনে দেয়া যেতে পারে। ফরেন কারেন্সি যদি ধরে রাখতে হয়, কাস্টমারদের যদি ধরে রাখতে হয় তাহলে এ ৫ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমদানি এখন যে সীমিত আছে এ সুযোগে আমাদের দেশীয় শিল্প দাঁড়িয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে যদি কোন মূল্য এডজাস্টমেন্ট করতে হয় আমরা সেটা করতে রাজি আছি। জ্বালানির ওপর প্রায় ৪৭ শতাংশ কর আছে। আমরা বলছি, ব্যবসায়ীরাও কিছু বাড়িয়ে দিতে চায়, সরকারকেও কিছু ছাড় দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের সংকট আরও প্রকট হতে পারে। ইউরোপ, আমেরিকায় বাংলাদেশের চাহিদা কমছে। এর মধ্যে ক্রেতারা যদি মনে করে বাংলাদেশে অর্ডার দিলে তারা প্রোডাক্ট পাবে না তখন আরও বড় সমস্যা হবে। আমাদের জ্বালানি দরকার। আমরা কমিটমেন্ট করতে পারি, আমাদের ৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস দিলে আমরা ১৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাড়িয়ে দেবো।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শীঘ্রই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা বসবো। কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ রাখতে প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। শীঘ্রই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে সংকট সমাধানে বৈঠক করা হবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে একটা ড্রাফট করে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো।’
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২০৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড। সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রিফাত গার্মেন্টস অর্জন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯টি খাতের ৭১টি প্রতিষ্ঠান অর্জন করে রপ্তানি ট্রফি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টি প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ, ২৪টি প্রতিষ্ঠান রৌপ্য এবং ১৮টি প্রতিষ্ঠান ব্রোঞ্জ পদক পায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সর্বাধিক ছয়টি প্রতিষ্ঠান ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে।
বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪
অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক
গ্যাস সংকটে দেশের শিল্পোৎপাদন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে শিল্প খাতে আরও পাঁচ শতাংশ গ্যাসের জোগান দিতে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির কাছে আহ্বান জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। গতকাল বিকেলে রাজধানীর পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৮-১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান তারা।
ব্যবসায়ীরা জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপের ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। চলতি বছর ২০-৩০ শতাংশ অর্ডার কম আসবে। আর শিল্পে গ্যাসের জোগান কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ বলেন, ‘আমাদের যে টোট্যাল গ্যাস আছে তার ৪২ শতাংশ যাচ্ছে পাওয়ার প্ল্যান্টে। এছাড়া মেশিনারিজে ১৮ শতাংশ, ক্যাপ্টিভ জেনারেশনে ১৭ শতাংশ, গৃহস্থালির রান্নায় ১৩ শতাংশ আর সিএনজিতে ব্যবহার হচ্ছে ৪ শতাংশ গ্যাস। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আমরা আলাপ করেছি, যদি আরও ৫ শতাংশ গ্যাস শিল্প খাতে বাড়ানো হয় তাহলে লোডশেডিং থেকে আমরা বেঁচে যেতে পারি।’
গৃহস্থালিতে ব্যবহার্য গ্যাস কোন রেভিনিউ ও ইমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন করছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয়ভাবে এখানে কোন অবদান নেই। যাদের আজ রপ্তানি ট্রফি পাচ্ছেন তারা কর্মসংস্থান ও রেভিনিউতে অবদান রাখছেন। আগামীতে দেশকে এগিয়ে নিতে ফরেন কারেন্সি আনতে কাজ করবো। সেজন্য আরও পাঁচ শতাংশ গ্যাস প্রয়োজন, সেটা গৃহস্থালি থেকে এনে দেয়া যেতে পারে। ফরেন কারেন্সি যদি ধরে রাখতে হয়, কাস্টমারদের যদি ধরে রাখতে হয় তাহলে এ ৫ শতাংশ গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই।’
এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘আমদানি এখন যে সীমিত আছে এ সুযোগে আমাদের দেশীয় শিল্প দাঁড়িয়ে যেতে পারে। প্রয়োজনে যদি কোন মূল্য এডজাস্টমেন্ট করতে হয় আমরা সেটা করতে রাজি আছি। জ্বালানির ওপর প্রায় ৪৭ শতাংশ কর আছে। আমরা বলছি, ব্যবসায়ীরাও কিছু বাড়িয়ে দিতে চায়, সরকারকেও কিছু ছাড় দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ডলারের সংকট আরও প্রকট হতে পারে। ইউরোপ, আমেরিকায় বাংলাদেশের চাহিদা কমছে। এর মধ্যে ক্রেতারা যদি মনে করে বাংলাদেশে অর্ডার দিলে তারা প্রোডাক্ট পাবে না তখন আরও বড় সমস্যা হবে। আমাদের জ্বালানি দরকার। আমরা কমিটমেন্ট করতে পারি, আমাদের ৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস দিলে আমরা ১৫ বিলিয়ন ডলারের রপ্তানি বাড়িয়ে দেবো।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খুব শীঘ্রই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমরা বসবো। কারখানাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ রাখতে প্রতিনিয়তই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। শীঘ্রই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ব্যবসায়ী এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নিয়ে সংকট সমাধানে বৈঠক করা হবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করে একটা ড্রাফট করে ব্যবসায়িক নেতাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো।’
জাতীয় রপ্তানি ট্রফি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২০৫ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড। সর্বোচ্চ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হওয়ায় রিফাত গার্মেন্টস অর্জন করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রপ্তানি ট্রফি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৯টি খাতের ৭১টি প্রতিষ্ঠান অর্জন করে রপ্তানি ট্রফি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৯টি প্রতিষ্ঠান স্বর্ণ, ২৪টি প্রতিষ্ঠান রৌপ্য এবং ১৮টি প্রতিষ্ঠান ব্রোঞ্জ পদক পায়। দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের সর্বাধিক ছয়টি প্রতিষ্ঠান ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেয়েছে।