প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অপরাধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অপরাধ। আমাদের আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ করতে পারি না। আইনটা এখন আরও মজবুত করার উদ্যোগ নিয়েছি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী ৭ দিনের বিশেষ করোনার টিকা ক্যাম্পেইন (বুস্টার ডোজ) অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল’ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রোগীদের উদ্দেশ্যে করে মন্ত্রী বলেন, যারা অ্যান্টিবায়োটিক খান, তারা অনেক সময় কোর্স পূরণ করেন না। এটাও ক্ষতিকর। আবার যেসব অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশের প্রয়োজন নেই। গ্রামাঞ্চলে এটা সবচেয়ে বেশি। সেখানে গ্রামীণ চিকিৎসক, যাদের স্বীকৃতি নেই তারা দিচ্ছেন। ঔষধ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। এটাতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ)। ঠিক মতো অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রেজিস্ট্যান্স হয় কীভাবে, জনগণকে তা জানাতে হবে। যারা এ সেবার সঙ্গে জড়িত, সাধারণ মানুষ, যারা আমাদের থেকে সেবা নিচ্ছেন, তাদের সবাইকে অ্যান্টিবায়োটিক বিষয়ে জানাতে হবে।

‘মানুষ এখন যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছে। আমাদের প্রেসক্রিপশন বেশি হয়। প্রেসক্রিপশনটা জুডিশিয়ালি করা উচিত। গ্রাম এলাকায় চিকিৎসক ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ছাড়া কেউই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারবে না।’

‘অ্যান্টিবায়োটিকের মারাত্মক ব্যবহার হচ্ছে ফার্মগুলোতে। গরু, মুরগি, মাছ ও মাংসে অ্যান্টিবায়োটিকে সয়লাব হয়ে গেছে। পোল্ট্রি খামারগুলোতে ব্যাপক আকারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী যতটুকু ব্যবহার করা উচিত, তার বাইরে যাতে না হয় সেটা দেখতে হবে। বর্জ্যরে কারণে মাছ ও মাংস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে জটিল ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না।

করোনার বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, সামনে বিজয় দিবস আসছে, এই উপলক্ষে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে, চলবে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত।

মন্ত্রী বলেন, বিশেষ এই টিকা ক্যাম্পেইনে ৯০ লাখ লোককে টিকা দেয়া হবে। আমরা এর আগে যতগুলো ক্যাম্পেইন করেছি, সবগুলোই সফল হয়েছে। আশা করি এটিও সফল হবে। এ পর্যন্ত ১৩ কোটি ৯ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা আমরা দিয়েছি, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ। এছাড়াও ১২ কোটি ৪২ লাখ ডোজ দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ। বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে ৫ কোটি ৮৬ লাখ, লক্ষ্যমাত্রার ৫২ শতাংশ।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়। আমাদের ১২ বছর ও বেশি বয়সী মোট জনসংখ্যা ১৩ কোটি ৩১ লাখ। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেলেও বুস্টার ডোজের জন্য অপেক্ষমান জনগোষ্ঠী এখনও ৪ কোটি ৫৮ লাখ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপত্র ও ফুল ডোজ ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। তবে, শুধু আইন করে এটা রোধ করা সম্ভব নয়। মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অপরাধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অপরাধ। আমাদের আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ করতে পারি না। আইনটা এখন আরও মজবুত করার উদ্যোগ নিয়েছি উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী ৭ দিনের বিশেষ করোনার টিকা ক্যাম্পেইন (বুস্টার ডোজ) অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেন।

গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘বিশ্ব অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল’ সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

রোগীদের উদ্দেশ্যে করে মন্ত্রী বলেন, যারা অ্যান্টিবায়োটিক খান, তারা অনেক সময় কোর্স পূরণ করেন না। এটাও ক্ষতিকর। আবার যেসব অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে তাদের অধিকাংশের প্রয়োজন নেই। গ্রামাঞ্চলে এটা সবচেয়ে বেশি। সেখানে গ্রামীণ চিকিৎসক, যাদের স্বীকৃতি নেই তারা দিচ্ছেন। ঔষধ প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু তাতেও হচ্ছে না। এটাতে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

মন্ত্রী বলেন, আমাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ)। ঠিক মতো অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রেজিস্ট্যান্স হয় কীভাবে, জনগণকে তা জানাতে হবে। যারা এ সেবার সঙ্গে জড়িত, সাধারণ মানুষ, যারা আমাদের থেকে সেবা নিচ্ছেন, তাদের সবাইকে অ্যান্টিবায়োটিক বিষয়ে জানাতে হবে।

‘মানুষ এখন যত্রতত্র অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছে। আমাদের প্রেসক্রিপশন বেশি হয়। প্রেসক্রিপশনটা জুডিশিয়ালি করা উচিত। গ্রাম এলাকায় চিকিৎসক ছাড়াও অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসক ছাড়া কেউই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে পারবে না।’

‘অ্যান্টিবায়োটিকের মারাত্মক ব্যবহার হচ্ছে ফার্মগুলোতে। গরু, মুরগি, মাছ ও মাংসে অ্যান্টিবায়োটিকে সয়লাব হয়ে গেছে। পোল্ট্রি খামারগুলোতে ব্যাপক আকারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী যতটুকু ব্যবহার করা উচিত, তার বাইরে যাতে না হয় সেটা দেখতে হবে। বর্জ্যরে কারণে মাছ ও মাংস খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীরে জটিল ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করছে। ফলে অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করছে না।

করোনার বিশেষ টিকা ক্যাম্পেইন বিষয়ে জাহিদ মালেক বলেন, সামনে বিজয় দিবস আসছে, এই উপলক্ষে করোনা টিকার বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নিয়েছি। এটি ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে, চলবে ডিসেম্বরের ৭ তারিখ পর্যন্ত।

মন্ত্রী বলেন, বিশেষ এই টিকা ক্যাম্পেইনে ৯০ লাখ লোককে টিকা দেয়া হবে। আমরা এর আগে যতগুলো ক্যাম্পেইন করেছি, সবগুলোই সফল হয়েছে। আশা করি এটিও সফল হবে। এ পর্যন্ত ১৩ কোটি ৯ লাখ মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা আমরা দিয়েছি, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৮ শতাংশ। এছাড়াও ১২ কোটি ৪২ লাখ ডোজ দেয়া হয়েছে দ্বিতীয় ডোজ, যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৫ শতাংশ। বুস্টার ডোজ দেয়া হয়েছে ৫ কোটি ৮৬ লাখ, লক্ষ্যমাত্রার ৫২ শতাংশ।

তিনি বলেন, গত বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম শুরু হয়। আমাদের ১২ বছর ও বেশি বয়সী মোট জনসংখ্যা ১৩ কোটি ৩১ লাখ। প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজে আমরা অনেকদূর এগিয়ে গেলেও বুস্টার ডোজের জন্য অপেক্ষমান জনগোষ্ঠী এখনও ৪ কোটি ৫৮ লাখ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাপত্র ও ফুল ডোজ ছাড়া ওষুধ বিক্রি বন্ধ নিশ্চিত করতে হবে। তবে, শুধু আইন করে এটা রোধ করা সম্ভব নয়। মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।