কক্সবাজারে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করছে অর্ধ-শতাধিক ইটভাটা!

মাঠ পর্যায়ে নেই পরিবেশ ও বন বিভাগ : অদৃশ্য কারণে নীরব প্রশাসন

কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অর্ধ-শতাধিক ইটের ভাটায় কয়লার পরিবর্তে বন এলাকা থেকে নিধনকৃত কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করছে ইট। ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করে এলাকার লোকজন বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার ফলজ, বনজ, ঔষধি, বৃক্ষ, ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও ও পেকুয়া উপজেলায় ইটভাটা আছে ১০৯টি। এর মধ্যে পাঁচটির উৎপাদন বন্ধ আছে। অবশিষ্ট ১০৪টি ভাটার মধ্যে ৫৪টির বৈধ কাগজপত্র নেই। এই ৫৪টির মধ্যে ৩১টি ভাটা তৈরি হয়েছে সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের জায়গায়। ৬ থেকে ১৫ বছর ধরে এসব ভাটায় ইটের উৎপাদন চলছে।

তথ্যমতে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু টেকনাফের হোয়াইক্যং, ঈদগাঁও, রামুর কাওয়ারখোপ ও খুনিয়াপালং এলাকায় বনাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য ভাটা স্থাপিত হয়েছে। অধিকাংশ ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

এসব ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে বনভূমির পরিমাণ। আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে পাহাড়ি বনজ সম্পদ উজাড় করে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ। উক্ত ইটভাটাগুলো স্থাপনে বিধি না মানা, ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া, ব্রয়লারের চিমনির পরিবর্তে পরিবেশ দূষণকারী টায়ার পোড়ানোসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে।

পাহাড়ি এলাকার বন ও সংরক্ষিত বন এলাকার বৃক্ষনিধন করে প্রতিদিন ট্রাক ও জিপযোগে নিধনকৃত কাঠ ও মাটি ইটের ভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে একাধিক প্রভাবশালী চক্র।

কক্সবাজার শহর থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী বাজার। এখান থেকে পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার গেলে গাবতলী বাজার, এরপর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উচিতারবিল এলাকা। এলাকাটি হাতির অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্যের উঁচু একটি পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি হয়েছে ইটভাটা। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও কক্সবাজারে ঘটেছে ঠিক উল্টো। এদিকে, শনিবার রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের রামু ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা পরিচালনা করার জন্য যা কাগজপত্র দরকার তা তাদের কাছে নেই। শুধু তাই নয়; নিয়মিত বনের গাছ কেটে পুড়িয়ে ইটভাটা পরিচালিত করা হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা মোতাবেক কোন জিগজাগ ইটভাটা নয়। এলাকাটি লবণাক্ত মাটিতে এবং পাশে প্রাইমারি স্কুলও রয়েছে। ওই ফিল্ডে গিয়ে আরও দেখা গেছে, পুরোদমে ইটের উৎপাদন চলছে। ভাটার তিন পাশেই পাহাড়। কয়েকজন শ্রমিক বলেন, দিনের বেলায় এই ভাটায় কয়লা ব্যবহার করা হলেও রাতে ইট উৎপাদন চলে বনের কাঠ পুড়িয়ে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এই ইটভাটায় দিনের বেলায়ও কেউ পা ফেলার সাহস দেখান না। ইটভাটাটি দেখভাল করছেন রামু উপজেলার বাসিন্দা আলী হোসাইন ও গিয়াস উদ্দিন কোম্পানি।

পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই এ ভাটায় ইট উৎপাদন চলছে বছর ধরে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বনের ভেতরে বলে ছাড়পত্র দিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের (আলী হোসাইনের) যোগাযোগ রয়েছে! পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদে অভিযান চলছে। চলতি বছর এ বিষয়ে মামলা হয়েছে ৩৫টি। গত বছর মামলা হয়েছিল ৫৫টি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে দুর্গম এলাকার ভাটাগুলো নিয়মিত তদারক করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কাজের জন্য এখানে জনবল মাত্র ছয়জন। উপজেলা কিংবা মাঠ পর্যায়ে কেউ নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জিগজাগ চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০১ সালে। অথচ এখানে বেশিরভাগই এমন ইটভাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ইটভাটার অধিকাংশের মালিকানা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-সমর্থকদের। তা ছাড়া বিরোধী দলীয়দের মালিকানাধীনগুলোও চলছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে। পরিবেশ ধ্বংস করে ইটভাটাগুলোতে কাঠ পুড়ানো আর বন উজাড় অব্যাহত থাকলেও অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপের ভয়ে প্রশাসন নীরব রয়েছে। বন উজাড় করে গাছ কেটে ইট ভাটাতে পোড়ানো, পরিবেশ বিপর্যয়সহ সব কিছু তাদের নজরে থাকলেও তারা চোখ বুঝে মাসোহারা নিয়েই দায়িত্ব সারছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, ইট ভাটাগুলোর অনেকটির আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। নেই জেলা প্রশাসন কর্তৃক নবায়ন করারও কোন কাগজপত্র। পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এসব ইটভাটায় একযোগে চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। গুঞ্জন রয়েছে ক্ষমতাসীনদের যোগসাজশে প্রশাসন আর বন বিভাগের সঙ্গে আঁতাত করে ইটভাটার মালিকরা স্থানীয় পাহাড় উজাড় করে জ্বালানির জন্য কাঠ পোড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার ইটভাটা মালিক সমিতির সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটা সমিতির এক নেতা জানান, কিছু কিছু ইটের ভাটায় ছাড়পত্র নেই। কাঠ পুড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোর কথা তিনি স্বীকার করেন।

কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার গণমাধ্যমকে জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড়ের কাছে স্থাপিত ৩১টি ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে চিঠি লেখা হয়েছে, কিন্তু উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে বনাঞ্চল উজাড়, হাতি চলাচলের করিডোর বিলুপ্ত ও প্রাকৃতিক জলাশয় ধ্বংস হচ্ছে।

image
আরও খবর
প্রকৃতির ক্ষতি করে এমন প্রকল্প গ্রহণ না করার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর  
সবাইকে নদী রক্ষার আহ্বান নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীর
জঙ্গিদের বিশ্বস্ত ঠিকানা বিএনপি : কাদের
বাংলাদেশ গভীর সংকটে : ফখরুল
বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাদিম মোস্তফা গ্রেপ্তার
শিল্প খাতে আরও ৫ শতাংশ গ্যাসের জোগান বৃদ্ধির আহ্বান ব্যবসায়ীদের
প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি অপরাধ স্বাস্থ্যমন্ত্রী
এমএফএসে মাসে ২শ’ থেকে ৩শ’কোটি টাকার হুন্ডি : সিআইডি
বন্দরগুলো থেকে আরও দূরে সরে গেছে সাগরের নিম্নচাপ
রংপুরে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ২০
পল্লবীতে কিশোর গ্যাং লিডার বাংলা অনিকসহ গ্রেপ্তার ৫

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

কক্সবাজারে সংরক্ষিত বন ধ্বংস করছে অর্ধ-শতাধিক ইটভাটা!

মাঠ পর্যায়ে নেই পরিবেশ ও বন বিভাগ : অদৃশ্য কারণে নীরব প্রশাসন

জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার

image

কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় অর্ধ-শতাধিক ইটের ভাটায় কয়লার পরিবর্তে বন এলাকা থেকে নিধনকৃত কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করছে ইট। ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে প্রবেশ করে এলাকার লোকজন বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার ফলজ, বনজ, ঔষধি, বৃক্ষ, ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের টেকনাফ, রামু, চকরিয়া, কক্সবাজার সদর, ঈদগাঁও ও পেকুয়া উপজেলায় ইটভাটা আছে ১০৯টি। এর মধ্যে পাঁচটির উৎপাদন বন্ধ আছে। অবশিষ্ট ১০৪টি ভাটার মধ্যে ৫৪টির বৈধ কাগজপত্র নেই। এই ৫৪টির মধ্যে ৩১টি ভাটা তৈরি হয়েছে সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের জায়গায়। ৬ থেকে ১৫ বছর ধরে এসব ভাটায় ইটের উৎপাদন চলছে।

তথ্যমতে আরও জানা গেছে, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু টেকনাফের হোয়াইক্যং, ঈদগাঁও, রামুর কাওয়ারখোপ ও খুনিয়াপালং এলাকায় বনাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে অসংখ্য ভাটা স্থাপিত হয়েছে। অধিকাংশ ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।

এসব ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে কয়লা পোড়ানোর নিয়ম থাকলেও কয়লার পরিবর্তে কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরি করা হচ্ছে। এতে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে বনভূমির পরিমাণ। আইনের তোয়াক্কা না করে অবাধে পাহাড়ি বনজ সম্পদ উজাড় করে ইট ভাটায় কাঠ পোড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় জনসাধারণ। উক্ত ইটভাটাগুলো স্থাপনে বিধি না মানা, ট্রেড লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র না নিয়ে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়া, ব্রয়লারের চিমনির পরিবর্তে পরিবেশ দূষণকারী টায়ার পোড়ানোসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে।

পাহাড়ি এলাকার বন ও সংরক্ষিত বন এলাকার বৃক্ষনিধন করে প্রতিদিন ট্রাক ও জিপযোগে নিধনকৃত কাঠ ও মাটি ইটের ভাটায় পৌঁছে দিচ্ছে একাধিক প্রভাবশালী চক্র।

কক্সবাজার শহর থেকে ৫৯ কিলোমিটার দূরে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী বাজার। এখান থেকে পূর্ব দিকে ৩ কিলোমিটার গেলে গাবতলী বাজার, এরপর সংরক্ষিত বনাঞ্চলের উচিতারবিল এলাকা। এলাকাটি হাতির অভয়ারণ্য। এই অভয়ারণ্যের উঁচু একটি পাহাড়ের পাদদেশে তৈরি হয়েছে ইটভাটা। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা বা ইসিএ এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও কক্সবাজারে ঘটেছে ঠিক উল্টো। এদিকে, শনিবার রামু উপজেলার রশিদ নগর ইউনিয়নের রামু ব্রিকস নামে একটি ইটভাটা গিয়ে দেখা যায়, ইটভাটা পরিচালনা করার জন্য যা কাগজপত্র দরকার তা তাদের কাছে নেই। শুধু তাই নয়; নিয়মিত বনের গাছ কেটে পুড়িয়ে ইটভাটা পরিচালিত করা হচ্ছে। সরকারি নীতিমালা মোতাবেক কোন জিগজাগ ইটভাটা নয়। এলাকাটি লবণাক্ত মাটিতে এবং পাশে প্রাইমারি স্কুলও রয়েছে। ওই ফিল্ডে গিয়ে আরও দেখা গেছে, পুরোদমে ইটের উৎপাদন চলছে। ভাটার তিন পাশেই পাহাড়। কয়েকজন শ্রমিক বলেন, দিনের বেলায় এই ভাটায় কয়লা ব্যবহার করা হলেও রাতে ইট উৎপাদন চলে বনের কাঠ পুড়িয়ে। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এই ইটভাটায় দিনের বেলায়ও কেউ পা ফেলার সাহস দেখান না। ইটভাটাটি দেখভাল করছেন রামু উপজেলার বাসিন্দা আলী হোসাইন ও গিয়াস উদ্দিন কোম্পানি।

পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই এ ভাটায় ইট উৎপাদন চলছে বছর ধরে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বনের ভেতরে বলে ছাড়পত্র দিচ্ছে না পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে তাদের সঙ্গে আমাদের (আলী হোসাইনের) যোগাযোগ রয়েছে! পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদে অভিযান চলছে। চলতি বছর এ বিষয়ে মামলা হয়েছে ৩৫টি। গত বছর মামলা হয়েছিল ৫৫টি। কিন্তু লোকবল সংকটের কারণে দুর্গম এলাকার ভাটাগুলো নিয়মিত তদারক করা সম্ভব হচ্ছে না। এসব কাজের জন্য এখানে জনবল মাত্র ছয়জন। উপজেলা কিংবা মাঠ পর্যায়ে কেউ নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জিগজাগ চিমনিবিশিষ্ট ইটভাটা স্থাপন সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ২০০১ সালে। অথচ এখানে বেশিরভাগই এমন ইটভাটা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব ইটভাটার অধিকাংশের মালিকানা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-সমর্থকদের। তা ছাড়া বিরোধী দলীয়দের মালিকানাধীনগুলোও চলছে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সখ্যের সুবাদে। পরিবেশ ধ্বংস করে ইটভাটাগুলোতে কাঠ পুড়ানো আর বন উজাড় অব্যাহত থাকলেও অদৃশ্য রাজনৈতিক চাপের ভয়ে প্রশাসন নীরব রয়েছে। বন উজাড় করে গাছ কেটে ইট ভাটাতে পোড়ানো, পরিবেশ বিপর্যয়সহ সব কিছু তাদের নজরে থাকলেও তারা চোখ বুঝে মাসোহারা নিয়েই দায়িত্ব সারছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

অভিযোগ রয়েছে, ইট ভাটাগুলোর অনেকটির আবার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। নেই জেলা প্রশাসন কর্তৃক নবায়ন করারও কোন কাগজপত্র। পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে এসব ইটভাটায় একযোগে চলছে কাঠ পোড়ানোর মহোৎসব। গুঞ্জন রয়েছে ক্ষমতাসীনদের যোগসাজশে প্রশাসন আর বন বিভাগের সঙ্গে আঁতাত করে ইটভাটার মালিকরা স্থানীয় পাহাড় উজাড় করে জ্বালানির জন্য কাঠ পোড়াচ্ছেন। এ বিষয়ে জানতে কক্সবাজার ইটভাটা মালিক সমিতির সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইটভাটা সমিতির এক নেতা জানান, কিছু কিছু ইটের ভাটায় ছাড়পত্র নেই। কাঠ পুড়ানো নিষিদ্ধ থাকলেও ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে অবৈধভাবে কাঠ পোড়ানোর কথা তিনি স্বীকার করেন।

কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার গণমাধ্যমকে জানান, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড়ের কাছে স্থাপিত ৩১টি ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে চিঠি লেখা হয়েছে, কিন্তু উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে বনাঞ্চল উজাড়, হাতি চলাচলের করিডোর বিলুপ্ত ও প্রাকৃতিক জলাশয় ধ্বংস হচ্ছে।