শীতকালে শিশুদের রোগ-বালাই

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব কম বেশি সবার ওপরেই পড়ে। ঋতু পরিবর্তনে বিভিন্ন অসুখের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে শীতকালে শিশুরা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর শীতে ছোট-বড় সবার শরীরের জন্যই প্রয়োজন হয় বাড়তি যতে্নর। কারণ এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের ভেতর-বাইরেও দেখা দেয়া নানা সমস্যা।

বিশেষ করে শিশুদের সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা, বাড়তি যতেœর। হয়তো এসব ব্যাপারে আত্মীয়-স্বজন বা বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে আমরা অনেক পরামর্শ পেয়ে থাকি। কিন্তু সবক্ষেত্রে সব পরামর্শ সঠিক নাও হতে পারে। আর এতেই দেখা দিতে পারে বিপত্তি। এ শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টা অভিভাবকদের কিছুটা সচেতন থাকতে হবে।

শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এ রোগগুলো সংক্রামিত হয় তাই যতটা সম্ভব শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় কম নেয়াই ভালো। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা হওয়া উচিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় শিশুদের দূরে রাখা উচিত। শিশুদের স্কুলে অথবা বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস করাতে হবে। শিশুর এ ধরনের সমস্যায় আদা লেবু চা, গরম পানিতে গড়গড়া, মধু, তুলসি পাতার রস প্রভৃতি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি পান ও ব্যবহার করানো উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত-মুখ ধোয়া, খাওয়াসহ শিশুদের নানা কাজে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে এ সময় শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে। শীতেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। তবে নবজাতক কিংবা ঠাণ্ডার সমস্যা আছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেয়া যেতে পারে। অনেকেই শিশুকে জবজবে করে সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করিয়ে থাকেন। এতে গোসল শেষেও শিশুর চুল ভেজা থাকে এবং ঠাণ্ডা লাগে।

শিশুদের অবশ্যই উলের পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত। তবে চিকিৎসকের মতে শিশুদের সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। এতে উলের ক্ষুদ্র লোমে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি কাপড় পরিয়ে তার উপর উলের পোশাক পরানো উচিত এবং পোশাকটি যেন নরম কাপড়ের হয়। কারণ খসখসে বা শক্ত কাপড়ে শিশুদের নরম ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে হালকা শীতে শিশুদের গরম পোশাকটি খুব বেশি গরম কাপড়ের হওয়া উচিত নয়। কারণ খুব বেশি গরম কাপড় পরালে গরমে ঘেমে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুদের রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ফুল হাতা গেঞ্জি পরিয়ে রাখুন এবং সকালে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও বিকেলের দিকটাতে হালকা শীতের পোশাক পরিয়ে রাখুন।

শীতের সময়টা শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে তাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাদের ঘনঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ এবং ফলের রস খাওয়ানো উচিত। বিশেষ করে গাজর, বিট, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। শিশুরা এ সময় যেন কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুদের ত্বক বড়দের চেয়ে অনেক বেশি সেনসেটিভ। তাই তাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শিশুর মুখে এবং সারাশরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা,

জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

আরও খবর

বুধবার, ২৩ নভেম্বর ২০২২ , ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৭ রবিউস সানি ১৪৪৪

শীতকালে শিশুদের রোগ-বালাই

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

সাধারণত ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব কম বেশি সবার ওপরেই পড়ে। ঋতু পরিবর্তনে বিভিন্ন অসুখের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে শীতকালে শিশুরা অল্পতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর শীতে ছোট-বড় সবার শরীরের জন্যই প্রয়োজন হয় বাড়তি যতে্নর। কারণ এ সময় আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দেয়। শরীরের ভেতর-বাইরেও দেখা দেয়া নানা সমস্যা।

বিশেষ করে শিশুদের সুস্থ রাখতে হলে প্রয়োজন বাড়তি সতর্কতা, বাড়তি যতেœর। হয়তো এসব ব্যাপারে আত্মীয়-স্বজন বা বয়োজ্যেষ্ঠদের কাছ থেকে আমরা অনেক পরামর্শ পেয়ে থাকি। কিন্তু সবক্ষেত্রে সব পরামর্শ সঠিক নাও হতে পারে। আর এতেই দেখা দিতে পারে বিপত্তি। এ শীতে শিশুরা সর্দি, কাশি, গলাব্যথা, জ্বর, নিউমোনিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়। শীতে আবহাওয়া শুষ্ক ও ধুলাবালি থাকার কারণেই মূলত শিশুরা এসব রোগে আক্রান্ত হয়। তাই এ সময়টা অভিভাবকদের কিছুটা সচেতন থাকতে হবে।

শিশুদের ঠাণ্ডা বাতাস এবং ধুলাবালি থেকে দূরে রাখতে হবে। যেহেতু শীতে এ রোগগুলো সংক্রামিত হয় তাই যতটা সম্ভব শিশুদের জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় কম নেয়াই ভালো। শিশুদের গামছা, রুমাল, তোয়ালে প্রভৃতি আলাদা হওয়া উচিত এবং আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশির সময় শিশুদের দূরে রাখা উচিত। শিশুদের স্কুলে অথবা বাইরে নিয়ে গেলে মুখে মাস্ক ব্যবহার করার অভ্যাস করাতে হবে। শিশুর এ ধরনের সমস্যায় আদা লেবু চা, গরম পানিতে গড়গড়া, মধু, তুলসি পাতার রস প্রভৃতি খাওয়ানো যেতে পারে। তবে সমস্যা বেশি হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

শিশুদের হালকা কুসুম গরম পানি পান ও ব্যবহার করানো উচিত। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর দাঁত ব্রাশ করা, হাত-মুখ ধোয়া, খাওয়াসহ শিশুদের নানা কাজে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করলে এ সময় শিশুরা ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত থাকবে। শীতেও শিশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। তবে গোসলের সময় শরীরের কাছাকাছি তাপমাত্রার হালকা গরম পানি ব্যবহার করা ভালো। তবে নবজাতক কিংবা ঠাণ্ডার সমস্যা আছে এমন শিশুর ক্ষেত্রে গরম পানিতে কাপড় ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দেয়া যেতে পারে। অনেকেই শিশুকে জবজবে করে সরিষার তেল মাখিয়ে গোসল করিয়ে থাকেন। এতে গোসল শেষেও শিশুর চুল ভেজা থাকে এবং ঠাণ্ডা লাগে।

শিশুদের অবশ্যই উলের পোশাক পরিয়ে রাখা উচিত। তবে চিকিৎসকের মতে শিশুদের সরাসরি উলের পোশাক পরানো ঠিক নয়। এতে উলের ক্ষুদ্র লোমে শিশুদের অ্যালার্জি হতে পারে। সুতি কাপড় পরিয়ে তার উপর উলের পোশাক পরানো উচিত এবং পোশাকটি যেন নরম কাপড়ের হয়। কারণ খসখসে বা শক্ত কাপড়ে শিশুদের নরম ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তবে হালকা শীতে শিশুদের গরম পোশাকটি খুব বেশি গরম কাপড়ের হওয়া উচিত নয়। কারণ খুব বেশি গরম কাপড় পরালে গরমে ঘেমে শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। শিশুদের রাতে ঘুমানোর আগে হালকা ফুল হাতা গেঞ্জি পরিয়ে রাখুন এবং সকালে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে ও বিকেলের দিকটাতে হালকা শীতের পোশাক পরিয়ে রাখুন।

শীতের সময়টা শিশুদের খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ফলে তাদের শরীর খারাপ হয়ে যায়। তাদের ঘনঘন পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। শিশুদের ত্বকের মসৃণতা ও উজ্জ্বলতা বাড়াতে ডিমের কুসুম, সবজির স্যুপ এবং ফলের রস খাওয়ানো উচিত। বিশেষ করে গাজর, বিট, টমেটো শিশুদের ত্বকের জন্য বেশ উপকারী। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের শীতের সবজি দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতে পারেন। শিশুরা এ সময় যেন কোনো ধরনের ঠাণ্ডা খাবার না খায় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে।

শিশুদের ত্বক বড়দের চেয়ে অনেক বেশি সেনসেটিভ। তাই তাদের ত্বক অনেক বেশি রুক্ষ হয়ে যায়। শিশুর মুখে এবং সারাশরীরে বেবি লোশন, বেবি অয়েল, গ্লিসারিন ইত্যাদি ব্যবহার করুন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা,

জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]