সাময়িকী কবিতা

প্রণাম

ফারুক আফিনদী

ঘুরেফিরে সেই মৃত্যুর সাথেই কথা হয়, শলাপরামর্শ- খুনটা কোথায় করব; কোথায় কোথায় ছোপাব পৃথিবী এবং প্রেমিকার বাড়ি-; কোথায় মুলির বাঁশির সুর ভাবাচ্ছন্ন করে রাখবে [এইখানে বলে রাখি, এইখানে কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ-নাপচ্ছন্দ আছে। যেমন, চৈত্রমাস- সামনে বিল, এরপর কুয়ারপাড়, দূরতর জামগাছ {দোরাকাউয়ার ডাক-(শরীরের চারপাশ এক দমকা বাতাস ঘিরে ধরে, এর পর রৌদ্রের ভেতর পাক খায়) এর পর রৌদ্রের ভেতর মিশে যায়} আজও আমাকে ভাবায়, কেন কতেক কৃষক ও রাখাল গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিল এক কাক ও নিরাগ দুপুরের আখড়ায়, আমি কেন যাইনি আজও?] হ্যাঁ নিরাগ রৈদের সুর, তোমার নামের মতো; কোথাও বিয়েবাড়ি, সব আওয়াজ ছাপিয়ে সানাই- সাক্ষাৎ বিসমিল্লাহ খান। আর আমি যোগের সহরাগে- বিয়োগে বিয়োগে ধীরে আলগা... ও হাওয়া হয়ে যাব। [আমি] সেই... কালো শূন্য- যে আমারে টানছে ধরে অথবা আমি যাচ্ছি শূন্য ও উষ্ণস্থানের দিকে বাতাসের তোড়ের মতো। আর নিজেকে ঝুলিয়ে দেব বেণীতোলা পাটের দড়িতে, যে পাটের রঙ ঘিয়ের মতো, যে বেণীর রঙ সন্ধ্যার মতো।

অথচ! [আমি] ফিরে ফিরে এসে প্রেমিকারই সাথে কথা বলতে চাই। আর গানগুলো গাইতে চাই দূরে দূরে জামগাছের তলে। তা বলে মৃত্যুকে প্রেমিকা ভাবতে সম্মত নই- আমি- প্রেমিকা চাই প্রেমিকা চাই। এরকম স্বমেহন ভাবান্তরে স্বমৃত্যু চাই না কখনো।

তাই। এর পর। সব বস্তুকে ভালোবাসতে শুরু করেছি,

পাথর- মাটির ঢিবি- এক খালের কাদা

যোনীখাল- স্নান করব এখানে- সারাকাল-।

দুধপাহাড়! তোমার গম্ভীরতায় সম্মোহন কেন এত! জানি। জানি। আশ্চর্য রশি- মিহি মিহি, ওম ওম, সোনালি সোনালি আশে পাকানো।

প্রণাম তোমাকে, হে প্রবল পরাক্রান্ত, প্রণাম।

বয়স বাড়ছে

কুসুম তাহেরা

বয়স বাড়ছে ক্রমাগত...

ঘাসফুল ঝরে পড়ছে বিকেলেই!

উপেক্ষা সয়ে যাওয়া ক্লান্ত মুখ

বরফ হয়ে জমে রইল অভিমানবাক্সে।

রংহীন জীবন

জং ধরে যাওয়া মন

মেঘলা ঠোঁটের শোক

যেন ছাই হয়ে যাওয়া নাগাসাকি!

কোথাও শুনছিনা চেনা পায়ের শব্দ

চিরচেনা বাসস্টপ, গ্রোসারি শপ লন্ড্রোমেট

খাঁ খাঁ করছে

যাত্রা অনিশ্চিত বলে...

কারফিউ পড়েছে মনে

একটু শিথিলতায় ঝরে পড়বে

অনাদি অনন্তকাল ধরে জমে থাকা

ভোরের শিশির।

জীবন কেটে যায় মানিয়ে নিতে নিতে

জীবন শেষ হয় স্মৃতির জানালায়

সূর্যালোক দেখে দেখে

প্রয়োজন শেষ হলে মানুষ

ধীরে ধীরে যায় সরে।

তবুও বিচ্ছেদী শরৎ

আদ্যনাথ ঘোষ

এভাবে আর যে কতো প্রসবের সুখ ডেকে আনে বিষণœতা।

শুধু কচুরিপানার গান প্রকাশ্যে ধানের ক্ষেতে এসে

উঁকি দেয় হলুদ শেফালি হয়ে। আমি কি গোপন সন্ধি আঁটি

না কি নদীতটে ফেলে আসা সুখের পেয়ালা ফাঁদি! কিম্বা

অস্থির পোয়াতিমাখা সোনালি খোঁপার ধান হয়ে ডুবে থাকি

কৃষাণীর বুকে! যেখানে অবহেলায় বেড়ে ওঠে উচ্ছল বাতাস,

ঢেউখেলা দুপুর, জলের শব্দফুল ও মুখরিত পদাবলির সবুজ স্বপ্নকলি।

পুনর্বার যে প্রেমিক মালা গেঁথেছিল গোপনে নির্জনতায়,

যে প্রেমিক শরতের কাছে রেখে গিয়েছিল রোদ সামিয়ানা;

সেও আজ প্রতীক্ষার প্রহর নীরবে গুনতে গুনতে ফিরে আসে

ঊষর মৃত্তিকার বিরহ-বেদনার বাসি ফুল হয়ে। তবুও ¯িœগ্ধ

শরৎ ডুকরে কেঁদে ওঠে বারেবার তোমার বিচ্ছেদী মনস্তাপে।

সবুজের মৃত্যু

বিদ্যুৎ কুমার দাশ

ধনুর তীরে পা ঝুলে আছে হায়-

ঘেরাও হয়েছে জীবনের পথটায়।

অনেক রক্ত রক্ত হত্যার চোখ-

আলো আঁধারের শত্রু মেলায়।

মন ও শরীর অসুস্থ গ্রীবায়-

পালাবার সরু পথটাও নেই।

বাঁচা বা মরার টানে হেইয়া রে

হেইয়ারে সুর তোলার রব আসে- যায়।

অন্যায় যুদ্ধে ফুল ঝরে যায়-

সহজ সবুজ সমুদ্রে ভাসায়।

অপার্থিব নির্জনতা

সবিতা শর্মা

বন্ধ দরজা মাকড়সার জাল

আচ্ছন্ন আধখোলা জানালা

অন্তর্জ্বালার ধোঁয়ায় ভরাট মর্মতলা।

নিকানো ফুল-লতা-পাতা অপসৃয়মাণ

শত সুখ-দুঃখের আঁকিবুঁকিতে মুখর দেয়াল

টিনের চাল তেমনি অক্ষত,

সুনিবিড় মমতাঘেরা বাস্তু কালিক

নিশ্বাস বয়ে বেড়ায় অব্যক্ত ক্ষত।

প্রসাদের থালা হাতে প্রতি সকালে

স্বপ্ন-চোখে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন এঁকে

উঠানটুকু পেরুতেন...

ভালোবাসার ঘেরাটোপ; অজ্ঞাত অভিশাপ

হারিয়ে ফেলেন মা...

ভাপ-ওঠা সেদ্ধ ধানের স্তূপ

মাড়াইরত গরুর গায়ের গন্ধ

কলাই সর্ষে ফুল-ফসলে ভর-ভরন্ত

আকুলি-বিকুলি-অহংকারী উঠোন

নিঃসাড়ে বিছিয়ে রয়েছে একাকী...

গোবর ছরার পবিত্রতা-

শিউলি ছোপানো উচ্ছ্বাস-

কার্তিকের নগর কীর্তনের শিশির মাখা সুর-

পুবাকাশের আদুরে হিরণ¥য় ভোর-

লাল পেয়ারার ঝালরকাটা রোদ- অভিমানাহত,

দখলদারিত্বে- হাবিজাবি লতা-গুল্ম-তৃণ

উধাও শ্যামা পোকা শ্যামা ঘাস

রুনুঝুনু নূপুর বাজিয়ে আলতো ঘুম

ভাঙানিয়া দোয়েল-শালিক-চঁড়–ই নির্বাক

মাড়ায় না উঠোন আর- ধর্মঘট- তোলপাড়।

ধূসরিত স্মৃতির বাথান

অহর্নিশ সরব কর্কট অণুজীবের রাজপ্রাসাদ।

অনতিদূর- দূরে ফেলে আসা

পোড়া জন্মভিটে-মাটি-মা

বুকের গহীন কুঠুরি একটানা

সুর তুলে যায়- বেহালায়- বেহাগ রাগে।

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৪

সাময়িকী কবিতা

প্রণাম

ফারুক আফিনদী

ঘুরেফিরে সেই মৃত্যুর সাথেই কথা হয়, শলাপরামর্শ- খুনটা কোথায় করব; কোথায় কোথায় ছোপাব পৃথিবী এবং প্রেমিকার বাড়ি-; কোথায় মুলির বাঁশির সুর ভাবাচ্ছন্ন করে রাখবে [এইখানে বলে রাখি, এইখানে কিছু ব্যক্তিগত পছন্দ-নাপচ্ছন্দ আছে। যেমন, চৈত্রমাস- সামনে বিল, এরপর কুয়ারপাড়, দূরতর জামগাছ {দোরাকাউয়ার ডাক-(শরীরের চারপাশ এক দমকা বাতাস ঘিরে ধরে, এর পর রৌদ্রের ভেতর পাক খায়) এর পর রৌদ্রের ভেতর মিশে যায়} আজও আমাকে ভাবায়, কেন কতেক কৃষক ও রাখাল গলায় দড়ি দিতে গিয়েছিল এক কাক ও নিরাগ দুপুরের আখড়ায়, আমি কেন যাইনি আজও?] হ্যাঁ নিরাগ রৈদের সুর, তোমার নামের মতো; কোথাও বিয়েবাড়ি, সব আওয়াজ ছাপিয়ে সানাই- সাক্ষাৎ বিসমিল্লাহ খান। আর আমি যোগের সহরাগে- বিয়োগে বিয়োগে ধীরে আলগা... ও হাওয়া হয়ে যাব। [আমি] সেই... কালো শূন্য- যে আমারে টানছে ধরে অথবা আমি যাচ্ছি শূন্য ও উষ্ণস্থানের দিকে বাতাসের তোড়ের মতো। আর নিজেকে ঝুলিয়ে দেব বেণীতোলা পাটের দড়িতে, যে পাটের রঙ ঘিয়ের মতো, যে বেণীর রঙ সন্ধ্যার মতো।

অথচ! [আমি] ফিরে ফিরে এসে প্রেমিকারই সাথে কথা বলতে চাই। আর গানগুলো গাইতে চাই দূরে দূরে জামগাছের তলে। তা বলে মৃত্যুকে প্রেমিকা ভাবতে সম্মত নই- আমি- প্রেমিকা চাই প্রেমিকা চাই। এরকম স্বমেহন ভাবান্তরে স্বমৃত্যু চাই না কখনো।

তাই। এর পর। সব বস্তুকে ভালোবাসতে শুরু করেছি,

পাথর- মাটির ঢিবি- এক খালের কাদা

যোনীখাল- স্নান করব এখানে- সারাকাল-।

দুধপাহাড়! তোমার গম্ভীরতায় সম্মোহন কেন এত! জানি। জানি। আশ্চর্য রশি- মিহি মিহি, ওম ওম, সোনালি সোনালি আশে পাকানো।

প্রণাম তোমাকে, হে প্রবল পরাক্রান্ত, প্রণাম।

বয়স বাড়ছে

কুসুম তাহেরা

বয়স বাড়ছে ক্রমাগত...

ঘাসফুল ঝরে পড়ছে বিকেলেই!

উপেক্ষা সয়ে যাওয়া ক্লান্ত মুখ

বরফ হয়ে জমে রইল অভিমানবাক্সে।

রংহীন জীবন

জং ধরে যাওয়া মন

মেঘলা ঠোঁটের শোক

যেন ছাই হয়ে যাওয়া নাগাসাকি!

কোথাও শুনছিনা চেনা পায়ের শব্দ

চিরচেনা বাসস্টপ, গ্রোসারি শপ লন্ড্রোমেট

খাঁ খাঁ করছে

যাত্রা অনিশ্চিত বলে...

কারফিউ পড়েছে মনে

একটু শিথিলতায় ঝরে পড়বে

অনাদি অনন্তকাল ধরে জমে থাকা

ভোরের শিশির।

জীবন কেটে যায় মানিয়ে নিতে নিতে

জীবন শেষ হয় স্মৃতির জানালায়

সূর্যালোক দেখে দেখে

প্রয়োজন শেষ হলে মানুষ

ধীরে ধীরে যায় সরে।

তবুও বিচ্ছেদী শরৎ

আদ্যনাথ ঘোষ

এভাবে আর যে কতো প্রসবের সুখ ডেকে আনে বিষণœতা।

শুধু কচুরিপানার গান প্রকাশ্যে ধানের ক্ষেতে এসে

উঁকি দেয় হলুদ শেফালি হয়ে। আমি কি গোপন সন্ধি আঁটি

না কি নদীতটে ফেলে আসা সুখের পেয়ালা ফাঁদি! কিম্বা

অস্থির পোয়াতিমাখা সোনালি খোঁপার ধান হয়ে ডুবে থাকি

কৃষাণীর বুকে! যেখানে অবহেলায় বেড়ে ওঠে উচ্ছল বাতাস,

ঢেউখেলা দুপুর, জলের শব্দফুল ও মুখরিত পদাবলির সবুজ স্বপ্নকলি।

পুনর্বার যে প্রেমিক মালা গেঁথেছিল গোপনে নির্জনতায়,

যে প্রেমিক শরতের কাছে রেখে গিয়েছিল রোদ সামিয়ানা;

সেও আজ প্রতীক্ষার প্রহর নীরবে গুনতে গুনতে ফিরে আসে

ঊষর মৃত্তিকার বিরহ-বেদনার বাসি ফুল হয়ে। তবুও ¯িœগ্ধ

শরৎ ডুকরে কেঁদে ওঠে বারেবার তোমার বিচ্ছেদী মনস্তাপে।

সবুজের মৃত্যু

বিদ্যুৎ কুমার দাশ

ধনুর তীরে পা ঝুলে আছে হায়-

ঘেরাও হয়েছে জীবনের পথটায়।

অনেক রক্ত রক্ত হত্যার চোখ-

আলো আঁধারের শত্রু মেলায়।

মন ও শরীর অসুস্থ গ্রীবায়-

পালাবার সরু পথটাও নেই।

বাঁচা বা মরার টানে হেইয়া রে

হেইয়ারে সুর তোলার রব আসে- যায়।

অন্যায় যুদ্ধে ফুল ঝরে যায়-

সহজ সবুজ সমুদ্রে ভাসায়।

অপার্থিব নির্জনতা

সবিতা শর্মা

বন্ধ দরজা মাকড়সার জাল

আচ্ছন্ন আধখোলা জানালা

অন্তর্জ্বালার ধোঁয়ায় ভরাট মর্মতলা।

নিকানো ফুল-লতা-পাতা অপসৃয়মাণ

শত সুখ-দুঃখের আঁকিবুঁকিতে মুখর দেয়াল

টিনের চাল তেমনি অক্ষত,

সুনিবিড় মমতাঘেরা বাস্তু কালিক

নিশ্বাস বয়ে বেড়ায় অব্যক্ত ক্ষত।

প্রসাদের থালা হাতে প্রতি সকালে

স্বপ্ন-চোখে লক্ষ্মীর পদচিহ্ন এঁকে

উঠানটুকু পেরুতেন...

ভালোবাসার ঘেরাটোপ; অজ্ঞাত অভিশাপ

হারিয়ে ফেলেন মা...

ভাপ-ওঠা সেদ্ধ ধানের স্তূপ

মাড়াইরত গরুর গায়ের গন্ধ

কলাই সর্ষে ফুল-ফসলে ভর-ভরন্ত

আকুলি-বিকুলি-অহংকারী উঠোন

নিঃসাড়ে বিছিয়ে রয়েছে একাকী...

গোবর ছরার পবিত্রতা-

শিউলি ছোপানো উচ্ছ্বাস-

কার্তিকের নগর কীর্তনের শিশির মাখা সুর-

পুবাকাশের আদুরে হিরণ¥য় ভোর-

লাল পেয়ারার ঝালরকাটা রোদ- অভিমানাহত,

দখলদারিত্বে- হাবিজাবি লতা-গুল্ম-তৃণ

উধাও শ্যামা পোকা শ্যামা ঘাস

রুনুঝুনু নূপুর বাজিয়ে আলতো ঘুম

ভাঙানিয়া দোয়েল-শালিক-চঁড়–ই নির্বাক

মাড়ায় না উঠোন আর- ধর্মঘট- তোলপাড়।

ধূসরিত স্মৃতির বাথান

অহর্নিশ সরব কর্কট অণুজীবের রাজপ্রাসাদ।

অনতিদূর- দূরে ফেলে আসা

পোড়া জন্মভিটে-মাটি-মা

বুকের গহীন কুঠুরি একটানা

সুর তুলে যায়- বেহালায়- বেহাগ রাগে।