সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখা সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের আজ ২য় মৃত্যুবার্ষিকী।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা খন্দকার মুনীরুজ্জামান ২০২০ সালের এই দিনে করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৯৬ সালের ১৪ মে সহকারী সম্পাদক হিসেবে সংবাদে যোগ দেন। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্বে ছিলেন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, আপসহীন, নীতিবান, আদর্শ সাংবাদিক; নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রতীক মুনীরুজ্জামান গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবসময় ছিলেন সোচ্চার। তার লেখনী ছিল ক্ষুরধার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল চিন্তা ও গণতন্ত্রের বিকাশে ছিলেন অবিচল।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া খন্দকার মুনীরুজ্জামান স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশ ও রক্ষায় এবং গণমাধ্যমকে গণমানুষের দর্পণে পরিণত করতে খন্দকার মুনীরুজ্জামানের অবদান অনস্বীকার্য।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ডন স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। সেখান থেকে মুসলিম বয়েজ স্কুলে পড়েছেন দুবছর। এরপর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমেডিয়েট, জগন্নাথ কলেজ থেকে সয়েল সায়েন্সে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে এম.এ. ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন শুরু করলেও নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া হয়নি।

মুনীরুজ্জামান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ’৬৫ সালে গোপন কর্মী হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ’৭০-এর দিকে শ্রমিক আন্দোলনে যোগদান করেন। একাত্তরে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির সম্মিলিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রথম ব্যাচে আসামের তেজপুরে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। তিনি আগরতলায় পার্টির একটি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের ‘ইনচার্জ’ ছিলেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান স্বাধীনতার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি ঢাকা মহানগর কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র সাপ্তাহিক একতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ’৯০-এর দশকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে যোগদান করেন। পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম লেখক হিসেবে তিনি পরিচিতি পান।

২০১৯ সালে মুনীরুজ্জামান প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। তিনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, চিত্র সমালোচনা এবং নিয়মিত কলাম লিখতেন।

আজ সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিকেলে তার বাসভবনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দোয়া মাহফিলে তার শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ী ও আত্মীয়স্বজনদের অংশ নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

image
আরও খবর
আমাদের ছেলেমেয়েরা একদিন বিশ^কাপ খেলবে, প্রধানমন্ত্রীর আশাবাদ
গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ
বাংলাদেশে অবস্থান জানান দিতে আদালতপাড়ায় জঙ্গিদের পরিকল্পিত হামলা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
সচিবের বিরুদ্ধে ছোট ভাইয়ের বাড়ি দখলের অভিযোগ
রংপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে নৌকার প্রার্থী ডালিয়া
রংপুরে সংঘর্ষে জেলা বিএনপির তিনশ’ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা
উপনির্বাচনে অনিয়ম গাইবান্ধায় নতুন করে ভোট হবে কি না, এখনই বলবেন না সিইসি
চকবাজারে মনসুর হত্যা নাতি ও নাতনির পরিকল্পনায়, গ্রেপ্তার ৫
আজ থেকে আগামী তিন দিন এয়ারপোর্ট রোড এড়িয়ে চলার নির্দেশনা
কুমিল্লায় বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে ফের আলোচনায় বহিষ্কৃত সাক্কু-নিজাম
ব্রহ্মণবাড়িয়ায় ব্রাজিল সমর্থক গোষ্ঠীর মোটরসাইকেল র‌্যালি

বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২ , ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৪

সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

দেশের প্রতিটি প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখা সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামানের আজ ২য় মৃত্যুবার্ষিকী।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা খন্দকার মুনীরুজ্জামান ২০২০ সালের এই দিনে করোনা পরবর্তী শারীরিক জটিলতায় রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৯৬ সালের ১৪ মে সহকারী সম্পাদক হিসেবে সংবাদে যোগ দেন। ২০১০ সালের ৪ জানুয়ারি সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এই দায়িত্বে ছিলেন।

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী, আপসহীন, নীতিবান, আদর্শ সাংবাদিক; নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার প্রতীক মুনীরুজ্জামান গণমানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবসময় ছিলেন সোচ্চার। তার লেখনী ছিল ক্ষুরধার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, প্রগতিশীল চিন্তা ও গণতন্ত্রের বিকাশে ছিলেন অবিচল।

স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া খন্দকার মুনীরুজ্জামান স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশ ও রক্ষায় এবং গণমাধ্যমকে গণমানুষের দর্পণে পরিণত করতে খন্দকার মুনীরুজ্জামানের অবদান অনস্বীকার্য।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ডন স্কুলে তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার হাতেখড়ি। সেখান থেকে মুসলিম বয়েজ স্কুলে পড়েছেন দুবছর। এরপর ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল থেকে ১৯৬৫ সালে ম্যাট্রিকুলেশন, ঢাকা কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমেডিয়েট, জগন্নাথ কলেজ থেকে সয়েল সায়েন্সে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগে এম.এ. ভর্তি হয়ে অধ্যয়ন শুরু করলেও নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়া হয়নি।

মুনীরুজ্জামান ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে পড়ার সময় ১৯৬৩ সালের নভেম্বর মাসে জগন্নাথ কলেজ ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেন। ’৬৫ সালে গোপন কর্মী হিসেবে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হন। ’৬৯-এর মহান গণঅভ্যুত্থানে সাহসী ভূমিকা পালন করেন। ’৭০-এর দিকে শ্রমিক আন্দোলনে যোগদান করেন। একাত্তরে ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়ন-কমিউনিস্ট পার্টির সম্মিলিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রথম ব্যাচে আসামের তেজপুরে সামরিক প্রশিক্ষণ নেন। তিনি আগরতলায় পার্টির একটি মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের ‘ইনচার্জ’ ছিলেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান স্বাধীনতার পর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি ঢাকা মহানগর কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি ওই দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র সাপ্তাহিক একতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে ’৯০-এর দশকে সাপ্তাহিক যায়যায়দিনে যোগদান করেন। পরে রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম লেখক হিসেবে তিনি পরিচিতি পান।

২০১৯ সালে মুনীরুজ্জামান প্রেস কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। তিনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক ছিলেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, চিত্র সমালোচনা এবং নিয়মিত কলাম লিখতেন।

আজ সকালে শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং বিকেলে তার বাসভবনে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দোয়া মাহফিলে তার শুভাকাক্সক্ষী, শুভানুধ্যায়ী ও আত্মীয়স্বজনদের অংশ নিতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।