জমে উঠেছে এসএমই মেলা, তৃতীয় দিনে বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়

তৃতীয় দিনে জমে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে এসএমই মেলা। ক্রেতা-বিক্রেতা আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সব ধরনের স্টলে ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। অনেকে মেলা পরিদর্শন করতে এসেছেন, আবার অনেকে এসেছেন কেনাকাটা করতে।

গত বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা শুরু হয়েছে। ১০ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ৩২৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের ৩৫০টি স্টলের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, খাবারের স্টলগুলোতে মানুষের ভিড় বেশি। এছাড়া পোশাক স্টলগুলোতে মোটামুটি ভালোই ভিড় দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল নারীর প্লাস্টিক, হস্ত ও কারুশিল্পের স্টলগুলোতে।

এ বিষয়ে মতি এন্ড সন্সের উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার মধু ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমার এখানে বিভিন্ন ফুলের মধু রয়েছে। সরিষা সর্বনিন্ম ৫০০ টাকা। এছাড়া অন্য ফুলের মধু ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। দেশব্যাপী আমার মধুর সুনাম রয়েছে। পরিচিতির কারণে আমার মধু বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এর আগেও আমি অনেক মেলায় অংশগ্রহণ করেছি।’

মিরপুর থেকে জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি এসেছেন কেনাকাটা করতে। তিনি জানান, মেলায় এসে অনেক সুন্দর সুন্দর পণ্য দেখলাম। দামও খুব বেশি না। তাই মাঝে মাঝে এভাবে মেলা হওয়া দরকার। তাহলে আমরা কমদামে ভালো কিছু পণ্য কিনতে পারবো।’

মেলায় আহমেদ ফুড প্রডাক্ট লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যে। আহমেদ ফুড প্রডাক্ট লি. ম্যানেজার ইমরান বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠান কোম্পানি, তাই আমাদের বিক্রি উদ্দেশ্য তেমন না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো মেলায় পরিচিত হওয়ার জন্য আসা।’

মেলায় ঘুরতে আসা খায়রুল জানান, আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু হস্ত ও কারুকাজের জিনিস কিনেছি। ছেলেমেয়েরা এগুলো দেখলে খুশি হবে। কারণ সেগুলো কিনছি সাধারণত এগুলো বাজারে পাওয়া যায় না।

মেলায় ঘুরতে আসা রাফি উদ্দিন জানান, আমি কিছু সৌখিন পণ্য কিনেছি। আমার স্ত্রীর চুড়ি পছন্দ। তাই এখন থেকে নতুন কিছু চুড়ি কিনেছি। দাম খুব একটা বেশি না।’

সেইফ ট্রেডিং করপোরেশনে স্টলে সামনে দাঁড়াতে দেখা গেলে অনেক ভিড়। বিক্রিয়কর্মী আরিফ বলেন, ‘মোটামুটি ভালোই বিক্রি হচ্ছে আমাদের পণ্য। আমাদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, চানাচুর, আচার। আমরা এই প্রথম মেলায় অংশগ্রহণ করেছি।’

মেলায় খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ৪৫টি, হস্ত ও কারুশিল্পের ৩৮, চামড়াজাত পণ্য খাতের ৩৬, পাটজাত পণ্যের ৩৫, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা খাতের ৮, হালকা শিল্প পণ্য খাতের ৬, প্লাস্টিক পণ্যের ৫ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এছাড়া মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের একটি সেক্রেটারিয়েট, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, যেমন, বিটাক, বিএসটিআই, বিসিআইসি, বিসিক, বিএসইসি, জেডিপিসি, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্লাটিনাম স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংক, গোল্ডেন স্পন্সর ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও লংকা বাংলা, সিলভার স্পন্সর, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং জেনারেল স্পন্সর কৃষি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্টল রয়েছে।

এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গত ৯টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা প্রায় ৩২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় এবং প্রায় ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার অর্ডার গ্রহণ করে।

রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২ , ১২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ৩১ রবিউস সানি ১৪৪৪

জমে উঠেছে এসএমই মেলা, তৃতীয় দিনে বেড়েছে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ভিড়

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

তৃতীয় দিনে জমে উঠেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে এসএমই মেলা। ক্রেতা-বিক্রেতা আর দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, সব ধরনের স্টলে ভালোই বেচাকেনা হচ্ছে। অনেকে মেলা পরিদর্শন করতে এসেছেন, আবার অনেকে এসেছেন কেনাকাটা করতে।

গত বৃহস্পতিবার দশম জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা শুরু হয়েছে। ১০ দিনব্যাপী এই মেলা চলবে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে ৩২৫টি ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী উদ্যোক্তা। ৩২৫টি প্রতিষ্ঠানের ৩৫০টি স্টলের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এ মেলা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে।

মেলায় ঘুরে দেখা যায়, খাবারের স্টলগুলোতে মানুষের ভিড় বেশি। এছাড়া পোশাক স্টলগুলোতে মোটামুটি ভালোই ভিড় দেখা যায়। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় ছিল নারীর প্লাস্টিক, হস্ত ও কারুশিল্পের স্টলগুলোতে।

এ বিষয়ে মতি এন্ড সন্সের উদ্যোক্তা বেলাল হোসেন বলেন, ‘আমার মধু ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমার এখানে বিভিন্ন ফুলের মধু রয়েছে। সরিষা সর্বনিন্ম ৫০০ টাকা। এছাড়া অন্য ফুলের মধু ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। দেশব্যাপী আমার মধুর সুনাম রয়েছে। পরিচিতির কারণে আমার মধু বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। এর আগেও আমি অনেক মেলায় অংশগ্রহণ করেছি।’

মিরপুর থেকে জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি এসেছেন কেনাকাটা করতে। তিনি জানান, মেলায় এসে অনেক সুন্দর সুন্দর পণ্য দেখলাম। দামও খুব বেশি না। তাই মাঝে মাঝে এভাবে মেলা হওয়া দরকার। তাহলে আমরা কমদামে ভালো কিছু পণ্য কিনতে পারবো।’

মেলায় আহমেদ ফুড প্রডাক্ট লি. নামে একটি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করেছেন। তাদের রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যে। আহমেদ ফুড প্রডাক্ট লি. ম্যানেজার ইমরান বলেন, ‘আমরা প্রতিষ্ঠান কোম্পানি, তাই আমাদের বিক্রি উদ্দেশ্য তেমন না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো মেলায় পরিচিত হওয়ার জন্য আসা।’

মেলায় ঘুরতে আসা খায়রুল জানান, আমার ছেলে-মেয়েদের জন্য কিছু হস্ত ও কারুকাজের জিনিস কিনেছি। ছেলেমেয়েরা এগুলো দেখলে খুশি হবে। কারণ সেগুলো কিনছি সাধারণত এগুলো বাজারে পাওয়া যায় না।

মেলায় ঘুরতে আসা রাফি উদ্দিন জানান, আমি কিছু সৌখিন পণ্য কিনেছি। আমার স্ত্রীর চুড়ি পছন্দ। তাই এখন থেকে নতুন কিছু চুড়ি কিনেছি। দাম খুব একটা বেশি না।’

সেইফ ট্রেডিং করপোরেশনে স্টলে সামনে দাঁড়াতে দেখা গেলে অনেক ভিড়। বিক্রিয়কর্মী আরিফ বলেন, ‘মোটামুটি ভালোই বিক্রি হচ্ছে আমাদের পণ্য। আমাদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের বিস্কুট, চানাচুর, আচার। আমরা এই প্রথম মেলায় অংশগ্রহণ করেছি।’

মেলায় খাদ্য ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ পণ্যের ৪৫টি, হস্ত ও কারুশিল্পের ৩৮, চামড়াজাত পণ্য খাতের ৩৬, পাটজাত পণ্যের ৩৫, তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবা খাতের ৮, হালকা শিল্প পণ্য খাতের ৬, প্লাস্টিক পণ্যের ৫ ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস খাতের ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

এছাড়া মেলায় আগত দর্শনার্থীদের মাঝে এসএমই ফাউন্ডেশনের পরিচিতি ও কর্মসূচি তুলে ধরার জন্য এসএমই ফাউন্ডেশনের একটি সেক্রেটারিয়েট, মিডিয়া সেন্টার, রক্তদান কেন্দ্র, ক্রেতা-বিক্রেতা মিটিং বুথ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত প্রতিষ্ঠান, যেমন, বিটাক, বিএসটিআই, বিসিআইসি, বিসিক, বিএসইসি, জেডিপিসি, বিসিএসআইআর, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্লাটিনাম স্পন্সর ব্র্যাক ব্যাংক, গোল্ডেন স্পন্সর ব্যাংক এশিয়া, ইস্টার্ন ব্যাংক, আইপিডিসি ফাইন্যান্স ও লংকা বাংলা, সিলভার স্পন্সর, আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক এবং জেনারেল স্পন্সর কৃষি ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের স্টল রয়েছে।

এসএমই উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রচার ও প্রসারে ২০১২ সাল থেকে জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা আয়োজন করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত গত ৯টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলায় প্রায় দুই হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা প্রায় ৩২ কোটি ৮৮ লাখ টাকার পণ্য বিক্রয় এবং প্রায় ৫৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার অর্ডার গ্রহণ করে।