‘যায় রস আহরণে দাঁড়াবার সময় যে নাই’

গ্রাম বাংলার ঋতু পরিক্রমায় কার্তিক পেরিয়ে অগ্রহায়ন এখন। গ্রামীণ জনপদে গাছিদের ব্যস্ততাই যেন জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে দোরগোড়ায়।

মীরসরাইয়ে সর্ব দক্ষিণ জনপদ সাহেরখালী ও তৎ নিকটবর্তী বালিয়াদি-বগাচতর এলাকায় প্রতিবছর সারি সারি খেজুর গাছ এখনো গ্রামীণ ঐতিহ্যকে রক্ষা করছে যেন। শীতের এই মৌসুম এলেই ধানচালসহ অন্যান্য কাজ আগেভাগে সেরে বা কাজের রুটিন ভাগ করে প্রতিবছর ওরা অনেকে খেজুর গাছ থেকেই আয় করে বাড়তি কিছু উপার্জন ।

বগাচতর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলী আজম (৪২) ও তার বড় ভাই মাহবুব আলম (৫২) কাকা আমজাদ হোসেন (৪৫) তিন জনে মিলে ওরা প্রায় ১১০টি খেজুর গাছে হাঁড়ি বসায় প্রতি বছর। বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে তাদের দেখা মিলল বেড়িবাঁধের উপরেই কোমরে ঝুড়ি বাঁধা, হাতে বাটাল আর রশি । আলী আজম বলল শীত পড়া শুরু হবে শীঘ্রই তাই খেজুরগাছগুলো তৈরি করে নিচ্ছি। মাথা পরিস্কার করে রসের থালি রেডি করে রাখলে শীত শুরু হলেই কাঠি বসিয়ে হাঁড়ি লাগাতে সুবিধা হবে। আর কদিন পরে রস পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি হিসেব করে বললেন অগ্রহায়ণ মাস আসতে আর ছয় দিন। সপ্তাহখানেক পরই হাঁড়ি বসানো যাবে। প্রথম কদিন রস ভাল না ও হতে পারে। পনেরদিন পর খাঁটি রসই পাওয়া যাবে আশা করছি।

মঘাদয়িা উপকূলের আরেক গাছী রুস্তম আলী ( ৫২) বলেন আমি ৫০ টি গাছে প্রতিদিন গড়ে ২শত লিটার রস ও পাই। প্রতি লিটার রস ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে প্রতিদিন হাজার তিনেক লাভ থাকে প্রায়। এতে প্রতি মৌসুমে লক্ষ টাকা করে বাড়তি আয় হয় আমার। বছরের অন্যান্য সময় কি কাজ করেন জানতে চাইলে অপর গাছী মাহবুব আলম ( ৫২) বলেন আমরা সাধারনত প্রান্তিক কৃষক। নিজের জমি আর বর্গা জমি চাষ করে থাকি। পাশাপাশি মৌসুমি সবজি, ধান, ইত্যাদি চাষাবাদ করি। খেজুর গাছে আমাদের বছরের মৌসুমী বাড়তি রোজগার। তবে আশংকার কথা হলো এই কৃষকদের সুদিন আবার দুর্দিনে রুপ নেয় কিনা। এই বেড়িবাঁধ যদি কখনো সরকার মেরিন ড্রাইভ সড়ক করা শুরু করলে হারিয়ে যাবে এই রসের হাঁড়ির উৎস।

রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২ , ১২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ৩১ রবিউস সানি ১৪৪৪

‘যায় রস আহরণে দাঁড়াবার সময় যে নাই’

প্রতিনিধি, মীরসরাই (চট্টগ্রাম)

image

গ্রাম বাংলার ঋতু পরিক্রমায় কার্তিক পেরিয়ে অগ্রহায়ন এখন। গ্রামীণ জনপদে গাছিদের ব্যস্ততাই যেন জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে দোরগোড়ায়।

মীরসরাইয়ে সর্ব দক্ষিণ জনপদ সাহেরখালী ও তৎ নিকটবর্তী বালিয়াদি-বগাচতর এলাকায় প্রতিবছর সারি সারি খেজুর গাছ এখনো গ্রামীণ ঐতিহ্যকে রক্ষা করছে যেন। শীতের এই মৌসুম এলেই ধানচালসহ অন্যান্য কাজ আগেভাগে সেরে বা কাজের রুটিন ভাগ করে প্রতিবছর ওরা অনেকে খেজুর গাছ থেকেই আয় করে বাড়তি কিছু উপার্জন ।

বগাচতর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আলী আজম (৪২) ও তার বড় ভাই মাহবুব আলম (৫২) কাকা আমজাদ হোসেন (৪৫) তিন জনে মিলে ওরা প্রায় ১১০টি খেজুর গাছে হাঁড়ি বসায় প্রতি বছর। বৃহস্পতিবার শেষ বিকেলে তাদের দেখা মিলল বেড়িবাঁধের উপরেই কোমরে ঝুড়ি বাঁধা, হাতে বাটাল আর রশি । আলী আজম বলল শীত পড়া শুরু হবে শীঘ্রই তাই খেজুরগাছগুলো তৈরি করে নিচ্ছি। মাথা পরিস্কার করে রসের থালি রেডি করে রাখলে শীত শুরু হলেই কাঠি বসিয়ে হাঁড়ি লাগাতে সুবিধা হবে। আর কদিন পরে রস পাওয়া যাবে জানতে চাইলে তিনি হিসেব করে বললেন অগ্রহায়ণ মাস আসতে আর ছয় দিন। সপ্তাহখানেক পরই হাঁড়ি বসানো যাবে। প্রথম কদিন রস ভাল না ও হতে পারে। পনেরদিন পর খাঁটি রসই পাওয়া যাবে আশা করছি।

মঘাদয়িা উপকূলের আরেক গাছী রুস্তম আলী ( ৫২) বলেন আমি ৫০ টি গাছে প্রতিদিন গড়ে ২শত লিটার রস ও পাই। প্রতি লিটার রস ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে প্রতিদিন হাজার তিনেক লাভ থাকে প্রায়। এতে প্রতি মৌসুমে লক্ষ টাকা করে বাড়তি আয় হয় আমার। বছরের অন্যান্য সময় কি কাজ করেন জানতে চাইলে অপর গাছী মাহবুব আলম ( ৫২) বলেন আমরা সাধারনত প্রান্তিক কৃষক। নিজের জমি আর বর্গা জমি চাষ করে থাকি। পাশাপাশি মৌসুমি সবজি, ধান, ইত্যাদি চাষাবাদ করি। খেজুর গাছে আমাদের বছরের মৌসুমী বাড়তি রোজগার। তবে আশংকার কথা হলো এই কৃষকদের সুদিন আবার দুর্দিনে রুপ নেয় কিনা। এই বেড়িবাঁধ যদি কখনো সরকার মেরিন ড্রাইভ সড়ক করা শুরু করলে হারিয়ে যাবে এই রসের হাঁড়ির উৎস।