সংলাপ হবে না, সহিংসতা করলে ছাড়ব না : শেখ হাসিনা

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না বলে আবারও জানালেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে অনেকেই বলেন, ডায়ালগ (সংলাপ) করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। কারো নির্বাচন করার শক্তি না থাকলে, হয়ত করবে না। তবে বাংলাদেশে মানুষ নির্বাচন করবে এবং ভোট দেবে বলে জানান তিনি।

সহিংসতা করলে বিএনপিকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বোমা মারলে, মানুষকে অত্যাচার করলে, একটাকেও ছাড়ব না।’

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-গণফোরামসহ নিবন্ধিত অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিল আওয়ামী লীগ। আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ এর জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আলোচনা আছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও মনে করেন, একটি সফল নির্বাচনের স্বার্থে রাজপথে ‘শক্তি প্রদর্শন’ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া প্রয়োজন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা না থাকলে নির্বাচনটাকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সফল হবে না। তাদের সহযোগিতা পেলে নির্বাচনটা আরও বেশি সফল হবে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ডায়ালগ (সংলাপ) একেবারেই হচ্ছে না আমরা দেখছি। এটা হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’

সংলাপ (ডায়ালাগ) কাদের সঙ্গে করবো, এমন প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘যে খালেদা জিয়া বলেছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ একশ’ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এই ধরনের গর্ব করা পছন্দ করে না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে। এখন ওই দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী আর গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী। জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে? আবার মানবাধিকারের কথাও বলে, এটা কেমন ধরনের কথা? সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না বলে এর আগেও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নেবে না বলে আসছে এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার কী ভাবছে? গত ৬ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের (দ্বাদশ সংসদ) আগে কোন সংলাপ হবে না। নির্বাচনে অংশ নেয়া যেকোন রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তবে চাইবো সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।’

গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান, তারা সবাই খুনি। তাদের কী অধিকার আছে দেশে রাজনীতি করার? তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটা প্রমাণিত। তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষী দিয়ে গেছে। এরা মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে?’

‘ভোট চুরি করলে জনগণ মেনে নেয় না’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল- ১৫ ফেব্রুয়ারি, ছিয়ানব্বই সালে, বাংলাদেশের মানুষ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল। ক্ষমতায় আসতে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কিন্তু দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল ভোট চুরির অপরাধে। তাই ভোট চোরেরা ভোট চুরি করতেই জানে। তাই আমি আমাদের মেয়েদের বলব, ভোটের অধিকার সবার, যেকোন নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে।’

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকার একসময় নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। তারা নারীদের রাস্তায় ফেলে তাদের ওপর নির্যাতন করেছে। কিন্তু এখন তাদের মেয়েরা রাস্তায় নেমে মিছিল-মিটিং করছে, কই তাদের তো আমরা নির্যাতন করছি না। তারা তো স্বাধীনভাবে সমাবেশ-মিছিল করতে পারছে। দেশের মানুষ বিএনপির মতো অপরাধী দলকে আর সমর্থন করে না।’

বিএনপির আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওপর যে আঘাত দেয়া হয়েছে আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করছি দেখে যেন এটা মনে না করে যে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। দুর্বলতা না। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোন মানুষের কাজ। জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি জনসমর্থন আদায় করতে সারাদেশে একের পর এক সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগও জেলা সম্মেলনে জনসমাগম করে পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

তবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের ‘নজর রাখা, রাজপথে থাকা এবং পাল্টা সমাবেশের’ নিয়ে আলোচনা রাজনীতিতে উত্তাপ ছাড়াচ্ছে। রাজধানীতে পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ হলে ওইদিন পরিস্থিতি সংঘাতময় হতে পারে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।

বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে বলেছি, আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোন মানুষকে পুড়িয়ে মারার বা বোমা মারার বা গ্রেনেড মারার বা এ ধরনের অত্যাচার করতে যায় তাদের একটাকেও ছাড়ব না। এটা হলো বাস্তব কথা।’

সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, অসহায় নারীদের জন্য ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবার দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। নারীদের সব ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে বর্তমান সরকার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের অধিকার নিয়ে সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি (বঙ্গবন্ধু)। তাই বর্তমান সরকারও নারীদের অধিকার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।’

এর আগে বিকেল তিনটার কিছু আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে জাতীয় পতাকা ও পায়রা উড়িয়ে নিজ দলের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২ , ১২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ৩১ রবিউস সানি ১৪৪৪

সংলাপ হবে না, সহিংসতা করলে ছাড়ব না : শেখ হাসিনা

image

গতকাল প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আ’লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন -সংবাদ

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না বলে আবারও জানালেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আজকে অনেকেই বলেন, ডায়ালগ (সংলাপ) করতে হবে। কাদের সঙ্গে? ওই বিএনপি খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া, সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যারা গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র আছে, নির্বাচন কমিশন আছে। যাদের ইচ্ছা নির্বাচন করবে। কারো নির্বাচন করার শক্তি না থাকলে, হয়ত করবে না। তবে বাংলাদেশে মানুষ নির্বাচন করবে এবং ভোট দেবে বলে জানান তিনি।

সহিংসতা করলে বিএনপিকে ছাড় দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আন্দোলনের নামে বোমা মারলে, মানুষকে অত্যাচার করলে, একটাকেও ছাড়ব না।’

গতকাল রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি-গণফোরামসহ নিবন্ধিত অন্যান্য দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিল আওয়ামী লীগ। আগামী বছর ডিসেম্বরের শেষ দিকে কিংবা ২০২৪ এর জানুয়ারির শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ওই নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ নিয়ে আলোচনা আছে।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালও মনে করেন, একটি সফল নির্বাচনের স্বার্থে রাজপথে ‘শক্তি প্রদর্শন’ না করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপ হওয়া প্রয়োজন। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় নির্বাচন ভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা না থাকলে নির্বাচনটাকে কাক্সিক্ষত মাত্রায় সফল হবে না। তাদের সহযোগিতা পেলে নির্বাচনটা আরও বেশি সফল হবে। রাজনৈতিক দলের মধ্যে ডায়ালগ (সংলাপ) একেবারেই হচ্ছে না আমরা দেখছি। এটা হওয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।’

সংলাপ (ডায়ালাগ) কাদের সঙ্গে করবো, এমন প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘যে খালেদা জিয়া বলেছিল, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসা তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। আর আওয়ামী লীগ একশ’ বছরেও ক্ষমতায় যাবে না।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এই ধরনের গর্ব করা পছন্দ করে না। আর বাংলাদেশের মানুষ তো একেবারেই পছন্দ করে না। সেজন্য খালেদা জিয়ার মুখের কথা তার বেলায়ই লেগে গেছে। এখন ওই দুর্নীতিবাজ, সাজাপ্রাপ্ত, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী, অর্থ পাচারকারী, অস্ত্র পাচারকারী আর গ্রেনেড হামলাকারী, আইভি রহমানের হত্যাকারী। জিয়াউর রহমান ছিল আমার বাবার হত্যাকারী। আর এদের সঙ্গে ডায়ালগ করতে হবে, আলোচনা করতে হবে? আবার মানবাধিকারের কথাও বলে, এটা কেমন ধরনের কথা? সেটাই আমি জিজ্ঞেস করি।’

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে কোন সংলাপ হবে না বলে এর আগেও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আগামী নির্বাচনে বিএনপিসহ অনেক দল অংশ নেবে না বলে আসছে এমন পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সরকার কী ভাবছে? গত ৬ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে এ ধরনের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘নির্বাচনের (দ্বাদশ সংসদ) আগে কোন সংলাপ হবে না। নির্বাচনে অংশ নেয়া যেকোন রাজনৈতিক দলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। আমরা কিছু চাপিয়ে দিতে চাই না। তবে চাইবো সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক।’

গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান, তারা সবাই খুনি। তাদের কী অধিকার আছে দেশে রাজনীতি করার? তারপরও আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি, এটা প্রমাণিত। তারেকের বিরুদ্ধে এফবিআই সাক্ষী দিয়ে গেছে। এরা মানুষের কল্যাণে কী কাজ করবে?’

‘ভোট চুরি করলে জনগণ মেনে নেয় না’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল- ১৫ ফেব্রুয়ারি, ছিয়ানব্বই সালে, বাংলাদেশের মানুষ তাকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামিয়েছিল। ক্ষমতায় আসতে ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন করেছিল। কিন্তু দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। ৩০ মার্চ জনগণের আন্দোলনে খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল ভোট চুরির অপরাধে। তাই ভোট চোরেরা ভোট চুরি করতেই জানে। তাই আমি আমাদের মেয়েদের বলব, ভোটের অধিকার সবার, যেকোন নির্বাচনে আমাদের মহিলারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দেবে। গণতান্ত্রিক অধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করবে।’

বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত সরকার একসময় নারীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করেছে। তারা নারীদের রাস্তায় ফেলে তাদের ওপর নির্যাতন করেছে। কিন্তু এখন তাদের মেয়েরা রাস্তায় নেমে মিছিল-মিটিং করছে, কই তাদের তো আমরা নির্যাতন করছি না। তারা তো স্বাধীনভাবে সমাবেশ-মিছিল করতে পারছে। দেশের মানুষ বিএনপির মতো অপরাধী দলকে আর সমর্থন করে না।’

বিএনপির আমলে আন্দোলন করতে গিয়ে হামলার শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের ওপর যে আঘাত দেয়া হয়েছে আমরা তা ভুলিনি। আমরা সহ্য করছি দেখে যেন এটা মনে না করে যে, সহ্য করাটা আমাদের দুর্বলতা। দুর্বলতা না। বাংলাদেশের জনগণ আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছে, আমাদের সঙ্গে আছে। খুনিদের সঙ্গে নেই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের বাধা দিচ্ছি না। কিন্তু যেভাবে তারা ওই অত্যাচারগুলো করেছিল আমরা ভুলব কীভাবে? সাধারণ মানুষ ভুলবে কীভাবে? তার ওপর তাদের অগ্নিসন্ত্রাস, এটা কোন মানুষের কাজ। জীবন্ত মানুষগুলোকে আগুন দিয়ে দিয়ে পুড়িয়ে মারা, এটাই নাকি বিএনপির আন্দোলন!’

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনরত বিএনপি জনসমর্থন আদায় করতে সারাদেশে একের পর এক সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগও জেলা সম্মেলনে জনসমাগম করে পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

তবে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের দিন আওয়ামী লীগের ‘নজর রাখা, রাজপথে থাকা এবং পাল্টা সমাবেশের’ নিয়ে আলোচনা রাজনীতিতে উত্তাপ ছাড়াচ্ছে। রাজধানীতে পাল্টা-পাল্টি সমাবেশ হলে ওইদিন পরিস্থিতি সংঘাতময় হতে পারে বলে মনে করছে বিভিন্ন মহল।

বিএনপির চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা হুঁশিয়ার করে বলেছি, আপনারা আন্দোলন করেন, সংগ্রাম করেন, মিছিল করেন, মিটিং করেন কোন আপত্তি নেই। কিন্তু যদি কোন মানুষকে পুড়িয়ে মারার বা বোমা মারার বা গ্রেনেড মারার বা এ ধরনের অত্যাচার করতে যায় তাদের একটাকেও ছাড়ব না। এটা হলো বাস্তব কথা।’

সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, অসহায় নারীদের জন্য ভাতা, বিধবা ভাতাসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যসেবার দিকেও নজর দেয়া হচ্ছে। নারীদের সব ধরনের কাজের সুযোগ সৃষ্টি করছে বর্তমান সরকার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বাস করতেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘নারীদের অধিকার নিয়ে সবসময় সোচ্চার ছিলেন তিনি (বঙ্গবন্ধু)। তাই বর্তমান সরকারও নারীদের অধিকার উন্নয়নে কাজ করে চলেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর করে দিচ্ছি। সেখানে নারী ও পুরুষকে সমান ভাগ দিচ্ছি। কেউ বউ ছেড়ে দিলে ওই বাড়ি হবে নারীর, পুরুষের নয়। যাতে নতুন ঘর পেয়ে কেউ নতুন বউ না নিয়ে আসে।’

এর আগে বিকেল তিনটার কিছু আগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসে জাতীয় পতাকা ও পায়রা উড়িয়ে নিজ দলের সহযোগী সংগঠন মহিলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।