এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি : ফখরুল

ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ হবে

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রে চুরি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস মিশে গেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। এখন নতুন করে ভোট চুরির মাধ্যমে কোন রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ বলে ধারণা দিচ্ছে। ইভিএমে ভোট নেয়ার কথা বলে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার, শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হতে হলে আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দেবে। তারপরই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লাকে নদীর নামে নয়, কুমিল্লা নামেই বিভাগ করা হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ দেশে আর ২০১৪ সালের বিনাভোট ও ২০১৮ সালের নিশি রাতের ভোটের মতো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে আর কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তারেক জিয়াকেও মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন, অথচ নিজেরা আগুন দিয়ে আমাদের ওপর দোষ দিয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। আগের মতো এখনও রাজশাহীতে ১১ দিনে ১০৪টি গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাকশাল গঠন করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। এখন এ সরকার দেশের বিরোধী দলকে দমন করতে গুম-খুনসহ মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার এ সমাবেশ নস্যাৎ করতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারসহ হয়রানি করছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করে আসছি। ওই সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দেয়া হবে। দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ ন্যায়বিচার পায় না। আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। দেশের মানুষের ওপর দীর্ঘ বছর ধরে একটা দানবীয় সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। এ সরকারের কারণে মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, বাংলার মানুষ গান গাইতে শিখেছে, ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না’। এ সরকার রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। এখন বাংলার মানুষ তাদের বিদায় ঘণ্টা দেখতে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের জামানতও থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, রিজার্ভ নাকি তিনি চিবিয়ে খান নাই, আমরা বলি, রিজার্ভ তিনি গিলে খেয়ে ফেলেছেন। আগামী ৩ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করার মতো টাকা নেই। দেশে ডলার সংকট। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা মানুষকে হত্যা ও গুম করছে। সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, কুমিল্লার লাকসামের সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুনের পরিবার আজও জানে না নিখোঁজ স্বজনদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। বাঞ্ছারামপুরের নয়নকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। তার স্ত্রী ও স্বজনরা এখন আহাজারি করছে। সারাদেশের বিভাগীয় সমাবেশের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ আজ জেগে উঠেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মানুষ আজ গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছে। জনগণকে জেগে উঠতে হবে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকি। আজকের সমাবেশে প্রমাণ হয়েছে, আমরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধীকার পুনরুদ্ধার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘেœ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার, গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা, মামলাসহ সরকারের নানা নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ সফল করায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, অধিকার ফিরে পেতে হুমকি-ধমকি ও ভয়কে জয় করে সবাই এখানে এসেছেন। এখানে রান্না করে খেয়েছেন। বাধার আশঙ্কা থেকে আগে থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে এসেছেন। আজ (গতকাল) ভোর থেকে খ- খ- কয়েকশ’ মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন, এজন্য ধন্যবাদ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সব কিছুর দাম বিএনপি আমলের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। সরকার দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির কথা শোনাচ্ছে। কেন দুর্ভিক্ষ? এতদিন তো দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে ঢোল পিটিয়েছে সরকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিনাভোটের এ সরকার গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লাকসামের ২ জনসহ আমাদের ৬শ’ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। মধ্যবিত্ত গরিব হচ্ছে, দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে এ সরকার ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দিতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, আমেরিকা ব্যাখ্যা দিয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ নয়, এটা হাইব্রিড দেশ।

মাঠেই ছিলেন বহিষ্কৃত সাক্কু ও কায়সার

দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে টাউন হল মাঠের পূর্ব পাশে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের রফিকুল ইসলাম মঞ্চে দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত) অবস্থান নেন। অন্যদিকে একই কারণে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশ মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, আমি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম সমাবেশে আসবো। আমি দলেরই লোক, দলে ফিরতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনও করেছি। অন্য বহিষ্কৃত মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমরা দলের জেলা পর্যায়ের নেতা। ভুল থাকতে পারে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভুলের বিষয়টি ক্ষমা করে শীঘ্রই দলে ফিরিয়ে নেবেন এমন আশা করছি।

এদিকে কুমিল্লার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর কান্দিরপাড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। এছাড়া নগরীর মনোহরপুর, টমছমব্রিজ, বাদুরতলা, ঝাউতলা, রানীর বাজার, শাসনগাছা, চকবাজার, ইয়াছিন মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। তবে সমাবেশ উপলক্ষে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।

রবিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২২ , ১২ অগ্রহায়ণ ১৪২৯, ৩১ রবিউস সানি ১৪৪৪

এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি : ফখরুল

ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লা নামেই বিভাগ হবে

জেলা বার্তা পরিবেশক, কুমিল্লা

image

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগের চরিত্রে চুরি, দুর্নীতি ও সন্ত্রাস মিশে গেছে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে ভোট চুরি করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়েছিল। এখন নতুন করে ভোট চুরির মাধ্যমে কোন রকমে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছে। এজন্য নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ বলে ধারণা দিচ্ছে। ইভিএমে ভোট নেয়ার কথা বলে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার, শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচন হবে না। এ সরকারের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন হতে হলে আগে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে। নতুন নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দিতে হবে। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচন দেবে। তারপরই জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লার টাউন হল মাঠে বিএনপির কুমিল্লা বিভাগীয় গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ফখরুল বলেন, ক্ষমতায় গেলে কুমিল্লাকে নদীর নামে নয়, কুমিল্লা নামেই বিভাগ করা হবে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ দেশে আর ২০১৪ সালের বিনাভোট ও ২০১৮ সালের নিশি রাতের ভোটের মতো নির্বাচন হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে আর কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। দেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে এ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। তিনি বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে। তারেক জিয়াকেও মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। আপনারা (আওয়ামী লীগ) আমাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাসের অভিযোগ তোলেন, অথচ নিজেরা আগুন দিয়ে আমাদের ওপর দোষ দিয়ে মামলা দেয়া হয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামেও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা হয়েছে। আগের মতো এখনও রাজশাহীতে ১১ দিনে ১০৪টি গায়েবি মামলা দেয়া হয়েছে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাকশাল গঠন করে দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। এখন এ সরকার দেশের বিরোধী দলকে দমন করতে গুম-খুনসহ মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। ঢাকায় ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার এ সমাবেশ নস্যাৎ করতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং ঘরে ঘরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তারসহ হয়রানি করছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষার আন্দোলন করে আসছি। ওই সমাবেশ থেকেই সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা দেয়া হবে। দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, দেশের মানুষ আজ ন্যায়বিচার পায় না। আমাদের দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছে। দেশের মানুষের ওপর দীর্ঘ বছর ধরে একটা দানবীয় সরকার জগদ্দল পাথরের মতো বসে আছে। এ সরকারের কারণে মানুষ আজ অতিষ্ঠ। তিনি বলেন, বাংলার মানুষ গান গাইতে শিখেছে, ‘আগে জানলে তোর ভাঙা নৌকায় উঠতাম না’। এ সরকার রাষ্ট্রের সব সেক্টরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে ফোকলা করে দিয়েছে। এখন বাংলার মানুষ তাদের বিদায় ঘণ্টা দেখতে চায়। সুষ্ঠু ভোট হলে তাদের জামানতও থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, রিজার্ভ নাকি তিনি চিবিয়ে খান নাই, আমরা বলি, রিজার্ভ তিনি গিলে খেয়ে ফেলেছেন। আগামী ৩ মাসের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করার মতো টাকা নেই। দেশে ডলার সংকট। তারা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার করেছে। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা মানুষকে হত্যা ও গুম করছে। সিলেটের বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, কুমিল্লার লাকসামের সাইফুল ইসলাম হিরু ও হুমায়ুনের পরিবার আজও জানে না নিখোঁজ স্বজনদের ভাগ্যে কি ঘটেছে। বাঞ্ছারামপুরের নয়নকে পুলিশ গুলি করে মেরেছে। তার স্ত্রী ও স্বজনরা এখন আহাজারি করছে। সারাদেশের বিভাগীয় সমাবেশের কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ আজ জেগে উঠেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মানুষ আজ গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য লড়াইয়ে নেমেছে। জনগণকে জেগে উঠতে হবে। মির্জা ফখরুল আরও বলেন, আমরা জনগণের সঙ্গে থাকি। আজকের সমাবেশে প্রমাণ হয়েছে, আমরা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন নই। আমরা কথা দিচ্ছি, আমরা জনগণের সঙ্গে ছিলাম, আছি এবং থাকব। গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধীকার পুনরুদ্ধার, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্বিঘেœ স্বদেশ প্রত্যাবর্তন, অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, ব্যাংক থেকে অবৈধভাবে বিদেশে টাকা পাচার, গুলি করে বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যা, হামলা, মামলাসহ সরকারের নানা নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতিবাদে দেশের সব বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ সফল করায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, অধিকার ফিরে পেতে হুমকি-ধমকি ও ভয়কে জয় করে সবাই এখানে এসেছেন। এখানে রান্না করে খেয়েছেন। বাধার আশঙ্কা থেকে আগে থেকেই হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশস্থলে এসেছেন। আজ (গতকাল) ভোর থেকে খ- খ- কয়েকশ’ মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন, এজন্য ধন্যবাদ। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চিত্র তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, সব কিছুর দাম বিএনপি আমলের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। সরকার দুর্ভিক্ষের পদধ্বনির কথা শোনাচ্ছে। কেন দুর্ভিক্ষ? এতদিন তো দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে ঢোল পিটিয়েছে সরকার।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিনাভোটের এ সরকার গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হত্যা করেছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য লাকসামের ২ জনসহ আমাদের ৬শ’ নেতাকর্মীকে গুম করেছে। এক হাজারেরও বেশি নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। মধ্যবিত্ত গরিব হচ্ছে, দারিদ্র্যসীমা ২০ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করে এ সরকার ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে সাজা দিতে বাধ্য করেছে। তিনি বলেন, আমেরিকা ব্যাখ্যা দিয়েছে, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক দেশ নয়, এটা হাইব্রিড দেশ।

মাঠেই ছিলেন বহিষ্কৃত সাক্কু ও কায়সার

দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে টাউন হল মাঠের পূর্ব পাশে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশের রফিকুল ইসলাম মঞ্চে দলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সিটি মেয়র মনিরুল হক সাক্কু (দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ায় দল থেকে বহিষ্কৃত) অবস্থান নেন। অন্যদিকে একই কারণে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের বহিষ্কৃত সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার সমর্থকদের নিয়ে সমাবেশ মঞ্চের সামনে অবস্থান নেন। এ বিষয়ে মনিরুল হক সাক্কু বলেছেন, আমি আগেই ঘোষণা দিয়েছিলাম সমাবেশে আসবো। আমি দলেরই লোক, দলে ফিরতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে আবেদনও করেছি। অন্য বহিষ্কৃত মেয়র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সার বলেন, আমরা দলের জেলা পর্যায়ের নেতা। ভুল থাকতে পারে। তবে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভুলের বিষয়টি ক্ষমা করে শীঘ্রই দলে ফিরিয়ে নেবেন এমন আশা করছি।

এদিকে কুমিল্লার গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীর কান্দিরপাড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। এছাড়া নগরীর মনোহরপুর, টমছমব্রিজ, বাদুরতলা, ঝাউতলা, রানীর বাজার, শাসনগাছা, চকবাজার, ইয়াছিন মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। তবে সমাবেশ উপলক্ষে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।