মঞ্চে নেতাকর্মীদের ভিড়

বিরক্ত ওবায়দুল কাদের ৩ বার থামলেন, সরেও গেলেন, অবশেষে বক্তব্য

মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় আর বিশৃঙ্খলার কারণে চরম বিরক্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বন্ধ করে দিলেন বক্তৃতা। সবাইকে সরে যেতে বললেন। কে শোনে কার কথা!

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তিনবার বক্তৃতা দেয়া বন্ধ করে দেন তিনি। একবার ডায়াস থেকেও সরে যান। বলেন, ‘তারপরেও সবাই দাঁড়িয়ে আছে? এত কথা বলার পরেও! আমি কিন্তু বক্তৃতা করব না।’

এক পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসে মঞ্চের সামনে থেকে নেতাকর্মীদের সরিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর আবার বক্তব্য শুরু করে বক্তব্য শেষ করেন ওবায়দুল কাদের।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।

গত ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ওবায়দুল কাদের। অতিরিক্ত নেতাকর্মীর চাপে ওইদিন মঞ্চ ভেঙে পড়ে যান তিনি। এরপর অন্যান্য অনুষ্ঠানে মঞ্চে বেশি লোক দেখলেই তাকে বিরক্ত হতে দেখা গেছে।

গতকাল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তিনি বক্তব্য দেয়ার আগে থেকেই মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ডায়াসে এলে উৎসুক নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ ও সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলায় গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিডিও করতে সমস্যায় পড়ছিলেন।

বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানানোর পরেই ওবায়দুল কাদের সামনে দাঁড়ানো নেতাকর্মীদের সরে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আজকে এই আলোচনা সভায় এসে কিছু বলতে দাঁড়িয়ে আমি বিব্রত বোধ করছি। কারণ, তিন তিনবারের সাধারণ সম্পাদক, যখন আমাকে বলে, তখন আমি লজ্জা পাই, লজ্জা পাই শৃঙ্খলার অভাব দেখে। কেন এখানে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে?’

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরপর ওবায়দুল কাদের আবার বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। কিন্তু দুটি বাক্য বলার পরেই আবার তিনি বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তার পরেও সবাই দাঁড়িয়ে আছে? এত কথা বলার পরেও! আমি কিন্তু বক্তৃতা করব না।’

তখন নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মুখে বলি আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বলি শেখ হাসিনার কর্মী। কিন্তু আমরা সবাই নেতা হই, সবাই মঞ্চে উঠি। তখন আদর্শের কথা মনে থাকে না।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এত নেতা! নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা মুশকিল। নেতার ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ ভেঙে পড়ে। এত নেতা তো আমাদের দরকার নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কর্মী বাহিনী দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সুশৃঙ্খল আওয়ামী লীগ চাই।’

এ পর্যায়ে কথা বলার মিনিট পাঁচেকের মাথায় তৃতীয়বারের মতো এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বিরক্ত হন ওবায়দুল কাদের। বক্তৃতা মঞ্চের সামনে তখনো ভিড় করা ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোথায় আজ শৃঙ্খলা? আবারও সরলা না এখান থেকে?’ এ সময় কয়েকজনকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কে, সাংবাদিক?’ এরপর ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা থামিয়ে মঞ্চ থেকে সরে যান।

এ সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসে বক্তৃতা মঞ্চের সামনে থেকে নেতাকর্মীদের সরিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর তিনি আবার তার বক্তব্য শুরু করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতারা মঞ্চে বসেন। বক্তৃতা করতে না পারলে যাদের মুখের ওপর বর্ষার আকাশের মেঘ এসে যায়। মন খারাপ হয়ে যায়। সবার বক্তৃতা করতে হবে কেন?’

আওয়ামী লীগকে সুশৃঙ্খল এবং কলঙ্কমুক্ত করতেই হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে যারা চাঁদাবাজি করবে, মাস্তানি করবে, মাদক ব্যবসা করবে, জমি দখল করবে, তাদের সঙ্গে কোন আপোষ নেই। তাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই চলবে। আমি এই কথাগুলো আজকে পরিষ্কার করে বলতে চাই। মুখে বলবেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক, কাজে বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী কাজে লিপ্ত হবেন।’

নেতাদের বক্তব্য দীর্ঘায়িত করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মঞ্চে নেতা বসে আছেন ধরেন ৫০ জন। সবাইকে বিশেষণ দিয়ে দিয়ে নাম বলতে হবে কেন? সভার সভাপতি, প্রধান অতিথি এবং মঞ্চে উপস্থিত অন্য অতিথিরা; এভাবেই বললেই হয়।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘২০ জন নেতা বক্তব্য দিতেই সভার অবস্থা খারাপ। আর কিছু আছে, জামা-পাঞ্জাবি টানলেও বসতে চায় না, ভাষণ দিয়েই যাচ্ছে। এক কথা বারবার বলেই যাচ্ছে। কোন সারকথা নেই। বলছে তো বলছেই। ম্যারাথন ভাষণগুলো বন্ধ করতে হবে।’

বক্তব্যে বিএনপির আন্দোলন, রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

হতাশায় বিএনপির ‘জোটের বাজার ভেঙে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই জোট দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার হটাবেন, সেই আশা দুরাশার বালুর মতো হয়ে যাবে।’

সরকার হটাতে বিএনপির চলমান আন্দোলন ও জোটগঠন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৫৪ দল, ৫৪ মত, ৫৪ পথ। ফখরুল নেই, মির্জা আব্বাস হাসপাতালে; এখন পাতি নেতারা কথা বলছে। এক পাতি নেতা বলেছে, সরকার হটাবেন আন্দোলনের সুনামি দিয়ে। হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে কত জল।’ বিএনপির আন্দোলনের টাকা আসে কোথা থেকে, এমন প্রশ্নে করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা আমরা জানি, যারা শেখ হাসিনা সরকারকে হটানোর জন্য টাকা দিচ্ছে তাদের খবর আছে।’

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনে বিএনপি নেতারা অসুস্থ হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব অসুস্থ, মির্জা আব্বাস অসুস্থ, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে। আসলে কী অসুস্থ? নাকি রাজনৈতিক অসুস্থ? তারপর শুনি মান্নান সাহেব হাসপাতালে, আ স ম রব ভাইও হাসপাতালে। হাসপাতালে যাওয়াটা, সব কী হতাশা থেকে অসুস্থ হয়ে গেছেন?’

বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সব কিছু ছেড়ে দিয়ে, সরকারের পরিবর্তন যদি চান; নির্বাচনে আসুন। আমরা যারা সরকারে আছি, এই সরকার হবে রুটিন সরকার।’

বর্তমান সরকার নির্বাচনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হোম মিনিস্টারের যে কাজ, সেই কাজ তখন নির্বাচন কমিশন করবে। পুলিশের লোকজনকে সরানো, প্রমোশন দেয়া, তাদের ট্রান্সফার করা, এসব কাজ তখন হোম মিনিস্টার করবে না, করবে নির্বাচন কমিশন।’

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল বাতেন বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।

বুধবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৪ মাঘ ১৪২৯, ২৫ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

মঞ্চে নেতাকর্মীদের ভিড়

বিরক্ত ওবায়দুল কাদের ৩ বার থামলেন, সরেও গেলেন, অবশেষে বক্তব্য

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

image

মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় আর বিশৃঙ্খলার কারণে চরম বিরক্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বন্ধ করে দিলেন বক্তৃতা। সবাইকে সরে যেতে বললেন। কে শোনে কার কথা!

বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে তিনবার বক্তৃতা দেয়া বন্ধ করে দেন তিনি। একবার ডায়াস থেকেও সরে যান। বলেন, ‘তারপরেও সবাই দাঁড়িয়ে আছে? এত কথা বলার পরেও! আমি কিন্তু বক্তৃতা করব না।’

এক পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসে মঞ্চের সামনে থেকে নেতাকর্মীদের সরিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর আবার বক্তব্য শুরু করে বক্তব্য শেষ করেন ওবায়দুল কাদের।

গতকাল বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ ঘটনা ঘটে। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ওই সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ওবায়দুল কাদের।

গত ৬ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ওবায়দুল কাদের। অতিরিক্ত নেতাকর্মীর চাপে ওইদিন মঞ্চ ভেঙে পড়ে যান তিনি। এরপর অন্যান্য অনুষ্ঠানে মঞ্চে বেশি লোক দেখলেই তাকে বিরক্ত হতে দেখা গেছে।

গতকাল কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে তিনি বক্তব্য দেয়ার আগে থেকেই মঞ্চের সামনে নেতাকর্মীরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি ডায়াসে এলে উৎসুক নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ ও সামনে দাঁড়িয়ে সেলফি তোলায় গণমাধ্যমকর্মীরাও ভিডিও করতে সমস্যায় পড়ছিলেন।

বক্তব্যের শুরুতে উপস্থিত সবাইকে শুভেচ্ছা জানানোর পরেই ওবায়দুল কাদের সামনে দাঁড়ানো নেতাকর্মীদের সরে যেতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আজকে এই আলোচনা সভায় এসে কিছু বলতে দাঁড়িয়ে আমি বিব্রত বোধ করছি। কারণ, তিন তিনবারের সাধারণ সম্পাদক, যখন আমাকে বলে, তখন আমি লজ্জা পাই, লজ্জা পাই শৃঙ্খলার অভাব দেখে। কেন এখানে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে?’

এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। এরপর ওবায়দুল কাদের আবার বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। কিন্তু দুটি বাক্য বলার পরেই আবার তিনি বক্তব্য থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘তার পরেও সবাই দাঁড়িয়ে আছে? এত কথা বলার পরেও! আমি কিন্তু বক্তৃতা করব না।’

তখন নেতাকর্মীদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মুখে বলি আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বলি শেখ হাসিনার কর্মী। কিন্তু আমরা সবাই নেতা হই, সবাই মঞ্চে উঠি। তখন আদর্শের কথা মনে থাকে না।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘এত নেতা! নেতার ভিড়ে কর্মী চেনা মুশকিল। নেতার ভিড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চ ভেঙে পড়ে। এত নেতা তো আমাদের দরকার নেই। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য স্মার্ট কর্মী বাহিনী দরকার। স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য সুশৃঙ্খল আওয়ামী লীগ চাই।’

এ পর্যায়ে কথা বলার মিনিট পাঁচেকের মাথায় তৃতীয়বারের মতো এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে বিরক্ত হন ওবায়দুল কাদের। বক্তৃতা মঞ্চের সামনে তখনো ভিড় করা ব্যক্তিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোথায় আজ শৃঙ্খলা? আবারও সরলা না এখান থেকে?’ এ সময় কয়েকজনকে তিনি জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কে, সাংবাদিক?’ এরপর ওবায়দুল কাদের বক্তৃতা থামিয়ে মঞ্চ থেকে সরে যান।

এ সময় পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা এসে বক্তৃতা মঞ্চের সামনে থেকে নেতাকর্মীদের সরিয়ে সেখানে অবস্থান নেন। এরপর তিনি আবার তার বক্তব্য শুরু করেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নেতারা মঞ্চে বসেন। বক্তৃতা করতে না পারলে যাদের মুখের ওপর বর্ষার আকাশের মেঘ এসে যায়। মন খারাপ হয়ে যায়। সবার বক্তৃতা করতে হবে কেন?’

আওয়ামী লীগকে সুশৃঙ্খল এবং কলঙ্কমুক্ত করতেই হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করে যারা চাঁদাবাজি করবে, মাস্তানি করবে, মাদক ব্যবসা করবে, জমি দখল করবে, তাদের সঙ্গে কোন আপোষ নেই। তাদের বিরুদ্ধে আপোষহীন লড়াই চলবে। আমি এই কথাগুলো আজকে পরিষ্কার করে বলতে চাই। মুখে বলবেন বঙ্গবন্ধু সৈনিক, কাজে বঙ্গবন্ধুর আদর্শবিরোধী কাজে লিপ্ত হবেন।’

নেতাদের বক্তব্য দীর্ঘায়িত করা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘মঞ্চে নেতা বসে আছেন ধরেন ৫০ জন। সবাইকে বিশেষণ দিয়ে দিয়ে নাম বলতে হবে কেন? সভার সভাপতি, প্রধান অতিথি এবং মঞ্চে উপস্থিত অন্য অতিথিরা; এভাবেই বললেই হয়।’

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘২০ জন নেতা বক্তব্য দিতেই সভার অবস্থা খারাপ। আর কিছু আছে, জামা-পাঞ্জাবি টানলেও বসতে চায় না, ভাষণ দিয়েই যাচ্ছে। এক কথা বারবার বলেই যাচ্ছে। কোন সারকথা নেই। বলছে তো বলছেই। ম্যারাথন ভাষণগুলো বন্ধ করতে হবে।’

বক্তব্যে বিএনপির আন্দোলন, রাজনীতি নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

হতাশায় বিএনপির ‘জোটের বাজার ভেঙে যাচ্ছে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই জোট দিয়ে শেখ হাসিনার সরকার হটাবেন, সেই আশা দুরাশার বালুর মতো হয়ে যাবে।’

সরকার হটাতে বিএনপির চলমান আন্দোলন ও জোটগঠন প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘৫৪ দল, ৫৪ মত, ৫৪ পথ। ফখরুল নেই, মির্জা আব্বাস হাসপাতালে; এখন পাতি নেতারা কথা বলছে। এক পাতি নেতা বলেছে, সরকার হটাবেন আন্দোলনের সুনামি দিয়ে। হাতি ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে কত জল।’ বিএনপির আন্দোলনের টাকা আসে কোথা থেকে, এমন প্রশ্নে করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘সেটা আমরা জানি, যারা শেখ হাসিনা সরকারকে হটানোর জন্য টাকা দিচ্ছে তাদের খবর আছে।’

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনে বিএনপি নেতারা অসুস্থ হয়ে গেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ফখরুল সাহেব অসুস্থ, মির্জা আব্বাস অসুস্থ, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে। আসলে কী অসুস্থ? নাকি রাজনৈতিক অসুস্থ? তারপর শুনি মান্নান সাহেব হাসপাতালে, আ স ম রব ভাইও হাসপাতালে। হাসপাতালে যাওয়াটা, সব কী হতাশা থেকে অসুস্থ হয়ে গেছেন?’

বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘সব কিছু ছেড়ে দিয়ে, সরকারের পরিবর্তন যদি চান; নির্বাচনে আসুন। আমরা যারা সরকারে আছি, এই সরকার হবে রুটিন সরকার।’

বর্তমান সরকার নির্বাচনের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করবে না দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘হোম মিনিস্টারের যে কাজ, সেই কাজ তখন নির্বাচন কমিশন করবে। পুলিশের লোকজনকে সরানো, প্রমোশন দেয়া, তাদের ট্রান্সফার করা, এসব কাজ তখন হোম মিনিস্টার করবে না, করবে নির্বাচন কমিশন।’

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ও আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল বাতেন বক্তব্য রাখেন। সভা সঞ্চালনা করেন ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ।