তার নাম জসিম। সে দিনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালাতো। আর রাতে মোটরসাইকেল চুরি করতো। এতে কেউ তাকে সন্দেহ করত না। এই সুযোগ ও কৌশলে একটি দলও গড়ে তোলে জসিম। সেই দলবল নিয়ে বাসাবাড়ির সামনে পার্কিং করে রাখা মোটরসাইকেল রাতে চুরি করত তারা। এভাবে ১০ বছরে পাঁচ শতাধিক মোটরসাইকেল চুরি করেছে জসিমের চোর চক্র। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। অবশেষে গ্রুপের কয়েকজন নিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়তে হয়েছে জসিমকে। গ্রেপ্তার অন্যরা হলো হারুন, মহসিন, রাজিব ও আশিষ চন্দ্র বিশ্বাস।

পুলিশ জানায়, জসিমের একটি দল রয়েছে। এই দল জসিমের নেতৃত্বে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল চুরি করে আসছে। ২০১৩ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করেছে ‘বাইক’ জসিম। গতকাল দুপুরে মিরপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মিরপুর বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লা বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মিরপুর মডেল থানার একটি বাসার গেট কেটে দুটি মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। যার মোটরসাইকেল চুরি হয় তার নামও জসিম। তিনি পরে এ সংক্রান্ত একটি মামলা মিরপুর থানায় দায়ের করেন। মামলাটি তদন্ত করে আমরা জানতে পারি, এই চক্রের মূল হোতা মো. জসিম ওরফে বাইক জসিম। পরে গত ১৪ জানুয়ারি তাকে আমরা নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে বাকি ৪ মোটরসাইকেল চোরকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। তাদের কাছ থেকে আমরা ৪টি চোরাই মোটরসাইকেল জব্দ করেছি।

তিনি বলেন, জসিম দিনে অটোরিকশা চালায়। আর রাতে মোটরসাইকেল চুরি করে। সে মূলত রাতে বাসাবাড়ির পার্কিংয়ে রাখা মোটরসাইকেলই চুরি করে। দিনে কিংবা সড়কে চুরি করলে ধরা পরার ঝুঁকি বেশি থাকে তাই রাতেই চুরি করে। দিনে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালানোর ফলে কেউ তাকে সন্দেহ করে না।

জসিমকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে ডিসি বলেন, সে ২০১৩ সাল থেকে মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত। এই ১০ বছরে ৫০০টি মোটরসাইকেল চুরি করে। তার একটি দল রয়েছে, সেই দলের সদস্য সংখ্যা ২০ জন। এই ২০ জনের দলটি কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ মোটরসাইকেল চুরি করে নিয়ে যায়। এই গ্রুপটি অন্য আরেকটি গ্রুপের কাছে চুরি করা মোটরসাইকেল হস্তান্তর করে। পরে আরেকটি গ্রুপ মোটরসাইকেলগুলোকে মেরামত করে অন্য আরেকটি গ্রুপের সহায়তায় বিক্রি করে ফেলে।

জসিমের বিরুদ্ধে ঢাকার বিভিন্ন থানায় কমপক্ষে ১২টি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে সে কারাগারে যায় ১০ বার। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে কারাগার থেকে ছাড়া পায়। জেল থেকে বের হয়ে আবারও মোটরসাইকেল চুরি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় জসিম। তার বাবা একজন কৃষক। মাদারীপুর জেলার বেলদারহাট গ্রামের বাড়িতে কৃষি কাজ করেই তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু তার ছেলেরা সবাই অপরাধ জগতে বেপরোয়া। জসিমের বড় ভাই ডাকাত হানিফ ২০১৮ সালে এবং তার ছোট ভাই ডাকাত ইয়াসিন ২০১৪ সালে অপরাধমূলক কর্মকা-ে গিয়ে মারা যায় বলে জানা যায়।