চলনবিলে ৩৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

চলতি সরিষা মৌসুমে পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, ও নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়াসহ চলনবিল এলাকার বিল গুলো থেকে মৌচাষীরা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যমানের মধু উৎপাদনের আশা প্রকাশ করছেন। এ এলাকায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই সরিষা খেতের পাশে মৌচাষীরা মৌবক্স স্থাপন করেছেন। আগামি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে মধু সংগ্রহ শুরু হবে।

চলনবিল এলাকার মাঠগুলোতে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। দেখলেই যেন চোখ জুড়ি–য়ে যায়। হলুদ ফুলে-ফুলে, নেচে-নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারীদের মৌবক্সে পালন করা মৌমাছি। মৌমাছির দাড়াবার যেন সময় নেই, রাত ব্যতীত একটু সময়ও যেন অবসর নেই।

জানা গেছে, প্রতিবছর পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার মাঠগুলো হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে যায়। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে এ এলাকার কৃষকেরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে মাঘী সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে এসব জমিতে বোরো চাষ করেন তারা। এবছর অগ্রহায়নের শেষে পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারীদের পাশাপাশি সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মৌখামারী মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকায় এসে মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলে সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মৌচাষী রফিকুল ইসলাম ১১ বছর যাবত মৌচাষ করে আসছেন। অতি সম্প্রতি তিনি চাটমোহরের নিমাইচড়া মাঠের সরিষা খেতের পাশে ১৩০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। রফিকুল ইসলাম জানান, এখনো মধু সংগ্রহ শুরু হয়নি। দুচার দিনের মধ্যেই মধু সংগ্রহ করা শুরু করবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ মন মধু সংগ্রহ করতে পারবেন তিনি। মধুর পাইকারি ক্রেতারা এখনো মধু কিনতে মাঠে নামেন নি।

পাবনা মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কে কোথায় মৌবক্স স্থাপন করবে এজন্য খামারীদের এলাকা ভাগ করে দেই। গত বছর এক লাখ বিশ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। অপরিশোধিত মধু ছয় হাজর টাকা মন বিক্রি হয়েছিল। এ বছর এখনো মধু বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে। সে হিসেবে চলনবিল এলাকায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করায় সরিষার ভাল পরাগায়ন ঘটবে।

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৫ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

চলনবিলে ৩৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা

প্রতিনিধি, চাটমোহর (পাবনা)

image

চাটমোহর (পাবনা) : সরিষার খেতের পাশে মৌচাষিদের স্থাপন করা সারি সারি মৌবক্স -সংবাদ

চলতি সরিষা মৌসুমে পাবনা জেলার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর, ও নাটোরের বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়াসহ চলনবিল এলাকার বিল গুলো থেকে মৌচাষীরা প্রায় ৩৫ কোটি টাকা মূল্যমানের মধু উৎপাদনের আশা প্রকাশ করছেন। এ এলাকায় প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। ইতিমধ্যেই সরিষা খেতের পাশে মৌচাষীরা মৌবক্স স্থাপন করেছেন। আগামি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পুরোদমে মধু সংগ্রহ শুরু হবে।

চলনবিল এলাকার মাঠগুলোতে এখন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। দেখলেই যেন চোখ জুড়ি–য়ে যায়। হলুদ ফুলে-ফুলে, নেচে-নেচে, ছুটে-ছুটে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারীদের মৌবক্সে পালন করা মৌমাছি। মৌমাছির দাড়াবার যেন সময় নেই, রাত ব্যতীত একটু সময়ও যেন অবসর নেই।

জানা গেছে, প্রতিবছর পৌষ মাসে চলনবিল এলাকার মাঠগুলো হলুদ সরিষা ফুলে ছেয়ে যায়। জমি থেকে বর্ষার পানি নেমে যাবার সাথে সাথে এ এলাকার কৃষকেরা উদ্বৃত্ত ফসল হিসেবে মাঘী সরিষার বীজ ছিটিয়ে দেন। মাঘ মাসে সরিষা তুলে এসব জমিতে বোরো চাষ করেন তারা। এবছর অগ্রহায়নের শেষে পাবনা নাটোর সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার মৌখামারীদের পাশাপাশি সাতক্ষিরা, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, গাজীপুর, রংপুর, দিনাজপুর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাও, নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শত শত মৌখামারী মধু সংগ্রহের জন্য চলনবিল এলাকায় এসে মাঠ গুলোতে অস্থায়ী আবাস গড়ে তুলে সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করেছেন।

সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর গ্রামের মৌচাষী রফিকুল ইসলাম ১১ বছর যাবত মৌচাষ করে আসছেন। অতি সম্প্রতি তিনি চাটমোহরের নিমাইচড়া মাঠের সরিষা খেতের পাশে ১৩০ টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। রফিকুল ইসলাম জানান, এখনো মধু সংগ্রহ শুরু হয়নি। দুচার দিনের মধ্যেই মধু সংগ্রহ করা শুরু করবেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ মন মধু সংগ্রহ করতে পারবেন তিনি। মধুর পাইকারি ক্রেতারা এখনো মধু কিনতে মাঠে নামেন নি।

পাবনা মৌচাষী সমবায় সমিতির সভাপতি ও উত্তরবঙ্গ মৌচাষী সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমে চলনবিল এলাকায় দেড় লাখ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। কে কোথায় মৌবক্স স্থাপন করবে এজন্য খামারীদের এলাকা ভাগ করে দেই। গত বছর এক লাখ বিশ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছিল। অপরিশোধিত মধু ছয় হাজর টাকা মন বিক্রি হয়েছিল। এ বছর এখনো মধু বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি চলতি মৌসুমে সরিষা ফুল থেকে দুই হাজার মেট্রিক টন মধু উৎপাদন হবে। সে হিসেবে চলনবিল এলাকায় প্রায় ৩৫ কোটি টাকার মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

চাটমোহর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ.এ মাসুম বিল্লাহ জানান, সরিষা খেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করায় সরিষার ভাল পরাগায়ন ঘটবে।