গত মৌসুমে পেঁয়াজের বাজারমূল্য অনেক বেশি থাকায় আগাম পেঁয়াজে ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেক বেশি জমিতে এ মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন সদরপুরের কৃষকরা। এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের। বাজারমূল্য মৌসুমের শুরু একটু বেশী থাকলেও বর্তমানে স্থিতিশিল, ফলে কৃষক এখনও আশানুরূপ দাম হয়নি বলেই কৃষক চিন্তিত। তাই ফসলের মাঠে মুখে বড় হাসি ফুটলেও বাজারে এসে সে হাসি কিছুটা মলিন, ক্রেতারা খুবই খুঁশি হালে রয়েছে।
অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসের দিকে মজুদ পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক থাকায় পেঁয়াজে বাজারদর তেমন একটা বাড়েনি, ফলে চলতি মৌসুমে পিয়াজ নিয়ে কোন কথাই উঠেনি। এ সময় নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাহিদা বাজারে বেশি থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়ার আশায় পেঁয়াজ চাষিরা জমি থেকে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। অন্যদিকে অনেক কৃষকই চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পিয়াজ তুলে সেই জমিতে হালি পিয়াজ রোপন করছে। যদিও বর্তমান সময়ে মুড়িকাটা পিয়াজ তুলার ভরা মৌসুম চলছে।চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ার ফলে পিঁয়াজের বাম্পার ফলন ফলবে বলেই কৃষকের আশা।
এ অঞ্চলের উল্লেখ্যযোগ্য পিঁয়াজখালী, কৃষ্ণপুর, হাজিগঞ্জ, চৌধুরিরহাট, রসুলপুর, খাসেরহাটসহ বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকারভেদে ১২শ’ টাকা থেকে ১৪০০শ’ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বেচাকেনা হচেছ। পেঁয়াজের বাজারদর নিয়ে কথা হয় বিষ্ণুপুর গ্রামের খেঁজুরতলার পেঁয়াজ চাষি হুমায়ুন মোল্লা, জাহাঙ্গীর, চৌধুরীরহাট এলাকার সামসু মুন্সী, শাহিন মুন্সী, মোতালেবসহ বেশ কয়েকজন পিঁয়াজ চাষীর সঙ্গে। পেঁয়াজের এই দাম পেয়ে হতাশ নন তারা কেউ। তবে বর্তমান দাম নিয়ে চাষিদের চেয়ে ক্রেতারাই বেশী খুশি। অনেক চাষীই আশা করছেন এই ভাবে থাকলে হয়তো আগামীতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাবে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, ভাষানচর, বিষ্ণুপুর, আকোটেরচর, ঢেউখালীসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কম-বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদী বেষ্টিত উপজেলা হওয়ায়প্রতি বছরই এ অঞ্চলে পলি মাটির আবরন পরে। এতে জমির উরর্বর শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে সব ফসলই ভাল হয় বিশেষ করে পলিমাটির জমিতে পিয়াজ-রসুন বেশী ভালো হয়। যে কারণে এ অঞ্চলে পিয়াজ-রসুন খুবই ভাল ফলে। এ অঞ্চল পিয়াজ-রসুনের জন্য উপযোগি অঞ্চল। উপজেলার চরাঞ্চালে প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় চার-সাড়ে ৪ মন পিয়াজ উৎপন্ন হয়ে থাকে। যে জন্যে এ এলাকার চাষিরা খুশি হালেই পিয়াজ-রসুনের চাষ করে থাকে, লাভের আশায়।এ বছর উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায়২২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।
বেলে, দো-আঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য আদর্শ। এই এলাকার মাটি বেলে, দো-আঁশ হওয়ায় পেঁয়াজের উৎপাদন আশানুরূপ হয়ে থাকে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে সবথেকে ছোট পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বেছে নেওয়া এবং রোপণ করা হয়, যা দুই-আড়াই মাসে তিন-চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। মোটকথা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে সময় লাগে কম এবং চাষে খরচও পড়ে তুলনামূলকভাবে কম। বছরের এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকার কারণে পেঁয়াজের দামও থাকে বেশি। নগদ অর্থের জন্যে সেই বেশি দাম পাওয়ার কারণে চাষিরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তুলেছে এবং এ মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য ভাষানচর ,বিষ্ণুপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী ক্ষেত রয়েছে, এবং প্রতিটি প্রদর্শনী ক্ষেতের পরিমাণ প্রায় পাঁচ বিঘা (২ একর) করে। সদরপুর উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এছাড়াও কৃষক পিয়াজের (দানা)বীজের জন্যে কয়েক শ’ হেক্টর জমি আবাদ করছে। হঠাৎ কোনো বিপর্যয় না হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় মনে করেন।
তিনি আরো জানান যথা সময়ে যাতে করে পিঁয়াজ চাষে সমস্যা না হয় সে কারনে কৃষকের সাথে পরামর্শ করি এবং মাটির রূপ দেখে সঠিক পরামর্শ দিয়ে আসি।
বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৫ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
প্রতিনিধি, সদরপুর (ফরিদপুর)
গত মৌসুমে পেঁয়াজের বাজারমূল্য অনেক বেশি থাকায় আগাম পেঁয়াজে ভালো দাম পাওয়ার আশায় অনেক বেশি জমিতে এ মৌসুমে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাষ করেছেন সদরপুরের কৃষকরা। এবারও বাম্পার ফলন হয়েছে মুড়িকাটা পেঁয়াজের। বাজারমূল্য মৌসুমের শুরু একটু বেশী থাকলেও বর্তমানে স্থিতিশিল, ফলে কৃষক এখনও আশানুরূপ দাম হয়নি বলেই কৃষক চিন্তিত। তাই ফসলের মাঠে মুখে বড় হাসি ফুটলেও বাজারে এসে সে হাসি কিছুটা মলিন, ক্রেতারা খুবই খুঁশি হালে রয়েছে।
অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসের দিকে মজুদ পেঁয়াজের সরবরাহ ঠিক থাকায় পেঁয়াজে বাজারদর তেমন একটা বাড়েনি, ফলে চলতি মৌসুমে পিয়াজ নিয়ে কোন কথাই উঠেনি। এ সময় নতুন মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাহিদা বাজারে বেশি থাকায় এবং ভালো দাম পাওয়ার আশায় পেঁয়াজ চাষিরা জমি থেকে অপরিপক্ক পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। অন্যদিকে অনেক কৃষকই চলতি মৌসুমে মুড়িকাটা পিয়াজ তুলে সেই জমিতে হালি পিয়াজ রোপন করছে। যদিও বর্তমান সময়ে মুড়িকাটা পিয়াজ তুলার ভরা মৌসুম চলছে।চলতি মৌসুমে এই অঞ্চলে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ার ফলে পিঁয়াজের বাম্পার ফলন ফলবে বলেই কৃষকের আশা।
এ অঞ্চলের উল্লেখ্যযোগ্য পিঁয়াজখালী, কৃষ্ণপুর, হাজিগঞ্জ, চৌধুরিরহাট, রসুলপুর, খাসেরহাটসহ বেশ কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, প্রকারভেদে ১২শ’ টাকা থেকে ১৪০০শ’ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বেচাকেনা হচেছ। পেঁয়াজের বাজারদর নিয়ে কথা হয় বিষ্ণুপুর গ্রামের খেঁজুরতলার পেঁয়াজ চাষি হুমায়ুন মোল্লা, জাহাঙ্গীর, চৌধুরীরহাট এলাকার সামসু মুন্সী, শাহিন মুন্সী, মোতালেবসহ বেশ কয়েকজন পিঁয়াজ চাষীর সঙ্গে। পেঁয়াজের এই দাম পেয়ে হতাশ নন তারা কেউ। তবে বর্তমান দাম নিয়ে চাষিদের চেয়ে ক্রেতারাই বেশী খুশি। অনেক চাষীই আশা করছেন এই ভাবে থাকলে হয়তো আগামীতে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাবে।
সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় জানান, ভাষানচর, বিষ্ণুপুর, আকোটেরচর, ঢেউখালীসহ উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে কম-বেশি পেঁয়াজের চাষ হয়ে থাকে। এছাড়া পদ্মা-আড়িয়াল খাঁ নদী বেষ্টিত উপজেলা হওয়ায়প্রতি বছরই এ অঞ্চলে পলি মাটির আবরন পরে। এতে জমির উরর্বর শক্তি বৃদ্ধি পায় ফলে সব ফসলই ভাল হয় বিশেষ করে পলিমাটির জমিতে পিয়াজ-রসুন বেশী ভালো হয়। যে কারণে এ অঞ্চলে পিয়াজ-রসুন খুবই ভাল ফলে। এ অঞ্চল পিয়াজ-রসুনের জন্য উপযোগি অঞ্চল। উপজেলার চরাঞ্চালে প্রতি শতাংশ জমিতে প্রায় চার-সাড়ে ৪ মন পিয়াজ উৎপন্ন হয়ে থাকে। যে জন্যে এ এলাকার চাষিরা খুশি হালেই পিয়াজ-রসুনের চাষ করে থাকে, লাভের আশায়।এ বছর উপজেলায় প্রায় ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায়২২ হাজার ৪৫০ মেট্রিক টন।
বেলে, দো-আঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য আদর্শ। এই এলাকার মাটি বেলে, দো-আঁশ হওয়ায় পেঁয়াজের উৎপাদন আশানুরূপ হয়ে থাকে। মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে সবথেকে ছোট পেঁয়াজ বীজ হিসেবে বেছে নেওয়া এবং রোপণ করা হয়, যা দুই-আড়াই মাসে তিন-চারগুণ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায়। মোটকথা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে সময় লাগে কম এবং চাষে খরচও পড়ে তুলনামূলকভাবে কম। বছরের এ সময়ে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কম থাকার কারণে পেঁয়াজের দামও থাকে বেশি। নগদ অর্থের জন্যে সেই বেশি দাম পাওয়ার কারণে চাষিরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে বেশি আগ্রহী হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতিমধ্যে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমির পেঁয়াজ কৃষক ঘরে তুলেছে এবং এ মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনের জন্য ভাষানচর ,বিষ্ণুপুর ইউনিয়নসহ বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী ক্ষেত রয়েছে, এবং প্রতিটি প্রদর্শনী ক্ষেতের পরিমাণ প্রায় পাঁচ বিঘা (২ একর) করে। সদরপুর উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এছাড়াও কৃষক পিয়াজের (দানা)বীজের জন্যে কয়েক শ’ হেক্টর জমি আবাদ করছে। হঠাৎ কোনো বিপর্যয় না হলে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় মনে করেন।
তিনি আরো জানান যথা সময়ে যাতে করে পিঁয়াজ চাষে সমস্যা না হয় সে কারনে কৃষকের সাথে পরামর্শ করি এবং মাটির রূপ দেখে সঠিক পরামর্শ দিয়ে আসি।