মহাসড়ক অবরোধ : বিক্ষোভ-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
গাজীপুরে পুলিশের হেফাজতে থাকা এক সুতা ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে গতকাল সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে এলাকাবাসী।
বিক্ষোভকালে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে চারটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং ট্রাফিক পুলিশ বক্সের মালামাল রাস্তায় ফেলে এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধরা ট্রাফিক বক্সে ব্যাপক ভাঙচুর করে। ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনায় বাসন মেট্রো থানার দুই এএসআইকে ক্লোজড করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. খায়রুল ইসলাম। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের নাম রবিউল ইসলাম (৪৫)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকায় বসবাস করে একটি ছোট দোকান দিয়ে সুতার ব্যবসা করতেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ থানার শাহজাদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল বাকী। নিহত রবিউলের ইসরাত (১০) ও নুসরাত (৫) নামে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, মোবাইলে অনলাইনের মাধ্যমে বিটকয়েন দিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে গত শনিবার রাতে রবিউল ইসলামসহ চারজনকে আটক করে বাসন থানার দুই এএসআই মাহবুব ও নূরুল ইসলাম। পরদিন আটক তিনজনকে ছেড়ে দিলেও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে থানায় আটকে রাখে পুলিশ।
তিনি আরও জানান, রাত দুইটার দিকে বাসন থানা থেকে মোবাইল ফোনে নূপুর আক্তারকে জানানো হয় তার স্বামী রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে নূপুর আক্তার ও নিহতের ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলাম ও বাড়িওয়ালা এমারত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে রবিউলকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, রবিউল ইসলামকে মঙ্গলবার রাত ২টা ৫০ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদিকে রবিউল ইসলাম মারা যাওয়ার খবর গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় ওই দুটি সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেয় এবং সাউন্ড গ্রেনেট ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আনে। পরে বেলা ১২টার দিকে ওই দুই মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে আরিফ ওরফে সজিব নামে এক দোকানদারকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে গেলে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়রা ছবি তুলতে গেলে তাদের বেধড়ক মারধর এবং মোবাইল ভেঙে ফেলা হয় বলে জানা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান জানান, এ ঘটনায় যারা অপরাধী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বাসন থানার ওসি আবদুুল মালেক খসরু খান জানান, একটি গুজবকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা রাস্তায় ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করেছে। অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে রবিউল ইসলামকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসা থেকে আটক করা হয়। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। থানা থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৫ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪
মহাসড়ক অবরোধ : বিক্ষোভ-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
প্রতিনিধি, গাজীপুর
গাজীপুরে পুলিশের হেফাজতে থাকা এক সুতা ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে গতকাল সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে এলাকাবাসী।
বিক্ষোভকালে ভোগড়া বাইপাস মোড়ে চারটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ এবং ট্রাফিক পুলিশ বক্সের মালামাল রাস্তায় ফেলে এতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধরা ট্রাফিক বক্সে ব্যাপক ভাঙচুর করে। ব্যবসায়ী মৃত্যুর ঘটনায় বাসন মেট্রো থানার দুই এএসআইকে ক্লোজড করা হয়েছে। এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) আবু তোরাব মো. শামছুর রহমান ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার মো. খায়রুল ইসলাম। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে এ কমিটিকে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহতের নাম রবিউল ইসলাম (৪৫)। তিনি গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকায় বসবাস করে একটি ছোট দোকান দিয়ে সুতার ব্যবসা করতেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জ থানার শাহজাদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবদুল বাকী। নিহত রবিউলের ইসরাত (১০) ও নুসরাত (৫) নামে দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী জানায়, মোবাইলে অনলাইনের মাধ্যমে বিটকয়েন দিয়ে জুয়া খেলার অভিযোগে গত শনিবার রাতে রবিউল ইসলামসহ চারজনকে আটক করে বাসন থানার দুই এএসআই মাহবুব ও নূরুল ইসলাম। পরদিন আটক তিনজনকে ছেড়ে দিলেও ব্যবসায়ী রবিউল ইসলামকে থানায় আটকে রাখে পুলিশ।
তিনি আরও জানান, রাত দুইটার দিকে বাসন থানা থেকে মোবাইল ফোনে নূপুর আক্তারকে জানানো হয় তার স্বামী রবিউল ইসলাম সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে। খবর পেয়ে নূপুর আক্তার ও নিহতের ছোট ভাই মো. মহিদুল ইসলাম ও বাড়িওয়ালা এমারত হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে ওই হাসপাতালে গিয়ে রবিউলকে মৃত অবস্থায় দেখতে পান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, রবিউল ইসলামকে মঙ্গলবার রাত ২টা ৫০ মিনিটে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। এদিকে রবিউল ইসলাম মারা যাওয়ার খবর গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া পেয়ারাবাগান এলাকায় পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তারা সকাল পৌনে ১০টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল সহকারে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। এ সময় ওই দুটি সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিক্ষোভকারীদের ধাওয়া দেয় এবং সাউন্ড গ্রেনেট ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রেণে আনে। পরে বেলা ১২টার দিকে ওই দুই মহাসড়কে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে পুলিশের লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেটে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে আরিফ ওরফে সজিব নামে এক দোকানদারকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা মহাসড়কে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করতে গেলে গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয়রা ছবি তুলতে গেলে তাদের বেধড়ক মারধর এবং মোবাইল ভেঙে ফেলা হয় বলে জানা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান জানান, এ ঘটনায় যারা অপরাধী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
বাসন থানার ওসি আবদুুল মালেক খসরু খান জানান, একটি গুজবকে কেন্দ্র করে স্থানীয়রা রাস্তায় ভাঙচুর ও বিক্ষোভ করেছে। অনলাইনে জুয়া খেলার অভিযোগে রবিউল ইসলামকে মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে বাসা থেকে আটক করা হয়। তাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। থানা থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি বাসায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।