মায়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় দুই পক্ষের গোলাগুলি, নিহত ১

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগুন

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আড়াই মাস থেমে থাকার পর গতকাল ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত চলে এই গোলাগুলি। দুপুরে কিছু সময় বন্ধ থাকলেও বিকেলে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই আগুন কারা দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের এপারে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।

এই নিয়ে তুমরু সীমান্তের মানুষের মাঝে আবারও আতঙ্ক তেরি হয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন আওয়াজ ভেসে আসলেও তা ছিল মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ দূরবর্তী এলাকায়। তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া ও বাজারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ভোর সাড়ে ৫টার পর বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত তুমব্রু কোনারপাড়া ঘেঁষে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি বাংলাদেশের কোনারপাড়ায় জনবসতি এলাকায় এসে পড়ে। ঘটনার পর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কোনারপাড়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের কয়েকজন মুঠোফোনে জানান, আল ইয়াকিন ও আরএসওর মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে মহিবুল্লাহ (২৩) ও মো. হোসেন (১২) নামে দুইজন আহত হয়েছে। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে হামিদুল্লাহ (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা।

তবে এ তথ্য বাংলাদেশ সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পর শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উখিয়া কুতুপালং সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নেয়া হয় বলে জানান উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোনারপাড়া এলাকাটি মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আল রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিয়ন্ত্রণে রেখে নানা রকম অপরাধ ও মাদক পাচার করে আসছিল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে এই অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মায়ানমারের অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী দল রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এরই ধারাবাহিকতায় দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গতকাল সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ওপারে কী ঘটছে তা জানা যায়নি। তবে গোলাগুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

এদিকে শূন্যরেখায় গোলাগুলির পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশারীফাঁড়ি, কোনাপাড়া, মধ্যমপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড তাদের টহল জোরদার করেছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, তুমব্রু সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমারেখায় গোলাগুলির খবর তিনি স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছেন। সীমান্তের উদ্ভূদ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৫ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

মায়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় দুই পক্ষের গোলাগুলি, নিহত ১

রোহিঙ্গা আশ্রয় শিবিরে আগুন

প্রতিনিধি, বান্দরবান

image

বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ব্যাপক গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। প্রায় আড়াই মাস থেমে থাকার পর গতকাল ভোর সাড়ে ৫টা থেকে শুরু হয়ে থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত চলে এই গোলাগুলি। দুপুরে কিছু সময় বন্ধ থাকলেও বিকেলে শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবিরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে এই আগুন কারা দিয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ সময় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের এপারে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়।

এই নিয়ে তুমরু সীমান্তের মানুষের মাঝে আবারও আতঙ্ক তেরি হয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ থেকে তুমব্রু সীমান্তে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। মাঝেমধ্যে বিচ্ছিন্ন আওয়াজ ভেসে আসলেও তা ছিল মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ দূরবর্তী এলাকায়। তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া ও বাজারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ভোর সাড়ে ৫টার পর বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত তুমব্রু কোনারপাড়া ঘেঁষে ব্যাপক গোলাগুলি শুরু হয়। এ সময় কয়েক রাউন্ড গুলি বাংলাদেশের কোনারপাড়ায় জনবসতি এলাকায় এসে পড়ে। ঘটনার পর আহত কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়। কোনারপাড়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের কয়েকজন মুঠোফোনে জানান, আল ইয়াকিন ও আরএসওর মধ্যে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে মহিবুল্লাহ (২৩) ও মো. হোসেন (১২) নামে দুইজন আহত হয়েছে। গলায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে হামিদুল্লাহ (২৭) নামে এক রোহিঙ্গা।

তবে এ তথ্য বাংলাদেশ সীমান্তের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনার পর শূন্যরেখার রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উখিয়া কুতুপালং সংলগ্ন এমএসএফ হাসপাতালে নেয়া হয় বলে জানান উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে কোনারপাড়া এলাকাটি মায়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দল আল রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নিয়ন্ত্রণে রেখে নানা রকম অপরাধ ও মাদক পাচার করে আসছিল। সাধারণ রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে এই অপরাধের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় মায়ানমারের অন্য বিচ্ছিন্নতাবাদী দল রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও)। এরই ধারাবাহিকতায় দুই গ্রুপের মধ্যে বুধবার গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, গতকাল সকাল থেকে অব্যাহত গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। ওপারে কী ঘটছে তা জানা যায়নি। তবে গোলাগুলির শব্দে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

এদিকে শূন্যরেখায় গোলাগুলির পর থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে ঘুমধুম, তুমব্রু, বাইশারীফাঁড়ি, কোনাপাড়া, মধ্যমপাড়া এলাকায় বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড তাদের টহল জোরদার করেছে।

এ বিষয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) রোমেন শর্মা বলেন, তুমব্রু সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমারেখায় গোলাগুলির খবর তিনি স্থানীয়দের মাধ্যমে শুনেছেন। সীমান্তের উদ্ভূদ পরিস্থিতি নিয়ে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।