আ’লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার বিচার ৯ বছরেও হয়নি, ক্ষোভ প্রকাশ পরিবারের

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার ৯ বছরেও শেষ হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ফারুক আহমেদের পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা। আর এই ক্ষোভ নিয়েই ফারুক আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে গতকাল বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেছে তার পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগ। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলাটি টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামক দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অন্য তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমানের চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান আত্মসমর্পণের পর তিন বছর হাজতে থাকার পর বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। তার অন্য ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান দুই বছর আগে আদালতে আত্মসমর্পণের পর এখন পর্যন্ত কারাগারে রয়েছেন। আরও কারাগারে রয়েছেন আলমগীর হোসেন। আমানুরের অন্য দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান ও সানিয়াত খানসহ মো. কবির এবং ছানোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন। অন্য আসামিদের মধ্যে আনিসুর রহমান রাজা ও মো. সমীর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। আরও জামিনে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাসির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ ও বাবু।

মামলার বাদী নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানান।

এই হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইল অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, বাদী, চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জেরাও শেষ হয়েছে। এখন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ দুই-একজনের সাক্ষ্য হলেই মামলাটি যুক্তিতর্কে যাবে। তারপর রায় হবে। ফারুক আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজপাড়ার বাসায় কোরআন খানি ও দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, দলের পক্ষ থেকে সকালে দলীয় কার্যালয়ে কোরআন খানি, শোকযাত্রাসহ কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে সমাবেশের পর গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।

আরও খবর
সবার জন্য আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
মানবাধিকার উন্নতির কারণে যুক্তরাষ্ট্র আর নিষেধাজ্ঞা দেয়নি আইনমন্ত্রী
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জীবনে আরও সংকট নিয়ে আসবে : সিপিবি
ডলারের অস্থিতিশীলতার নেপথ্য উদ্ঘাটনে তদন্ত শুরু : ১৪ জন গ্রেপ্তার, প্রায় ২ কোটি টাকা জব্দ
বিএসএমএমইউতে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসায় কালো মেঘের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু
হিরো আলম ‘একতারা’ প্রতীক পেলেন
পাঠ্যবইয়ে ভুল থাকলে ঠিক করা হবে : শিক্ষামন্ত্রী
কাল থেকে শুরু হচ্ছে বিশ^ ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব
ব্যাংকের ভেতর থেকে দুই আনসার সদস্যের মরদেহ উদ্ধার
হেলিকপ্টারে কুড়িগ্রাম থেকে বধূ নিয়ে গেলেন নেত্রকোনার এক হরিজন যুবক

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৩ , ০৫ মাঘ ১৪২৯, ২৬ জমাদিউল সানি ১৪৪৪

আ’লীগ নেতা ফারুক হত্যা মামলার বিচার ৯ বছরেও হয়নি, ক্ষোভ প্রকাশ পরিবারের

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক, টাঙ্গাইল

টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার বিচার ৯ বছরেও শেষ হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত ফারুক আহমেদের পরিবারের সদস্য ও দলীয় নেতাকর্মীরা। আর এই ক্ষোভ নিয়েই ফারুক আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী পালনে গতকাল বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করেছে তার পরিবার ও জেলা আওয়ামী লীগ। বহুল আলোচিত এই হত্যা মামলাটি টাঙ্গাইল প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। আদালত সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ২৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ রয়েছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের কলেজপাড়া এলাকায় নিজ বাড়ির কাছ থেকে জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সদস্য ফারুক আহমেদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনার তিন দিন পর তার স্ত্রী নাহার আহমেদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়। ২০১৪ সালে এই মামলায় জড়িত সন্দেহে আনিসুল ইসলাম ওরফে রাজা এবং মোহাম্মদ আলী নামক দুইজনকে গোয়েন্দা পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিতে এই হত্যার সঙ্গে টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা, তার অন্য তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার তৎকালীন মেয়র সহিদুর রহমান খান ওরফে মুক্তি, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান ওরফে কাকন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সহ-সভাপতি সানিয়াত খান ওরফে বাপ্পার জড়িত থাকার বিষয়টি বের হয়ে আসে। তদন্ত শেষে গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৬ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়। এতে সংসদ সদস্য আমানুর রহমানের চার ভাইসহ ১৪ জনকে আসামি করা হয়।

এই মামলার আসামি আমানুর রহমান খান আত্মসমর্পণের পর তিন বছর হাজতে থাকার পর বর্তমানে জামিনে মুক্ত আছেন। তার অন্য ভাই সাবেক পৌর মেয়র সহিদুর রহমান খান দুই বছর আগে আদালতে আত্মসমর্পণের পর এখন পর্যন্ত কারাগারে রয়েছেন। আরও কারাগারে রয়েছেন আলমগীর হোসেন। আমানুরের অন্য দুই ভাই জাহিদুর রহমান খান ও সানিয়াত খানসহ মো. কবির এবং ছানোয়ার হোসেন পলাতক রয়েছেন। অন্য আসামিদের মধ্যে আনিসুর রহমান রাজা ও মো. সমীর কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন। আরও জামিনে রয়েছেন মোহাম্মদ আলী, মাসুদুর রহমান, নাসির উদ্দিন নুরু, ফরিদ আহমেদ ও বাবু।

মামলার বাদী নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদ বলেন, আসামিরা প্রভাবশালী। তারা নানাভাবে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করছেন। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যার বিচার পেতে আর কত অপেক্ষা করতে হবে। তিনি দ্রুত হত্যাকারীদের বিচার সম্পন্ন করার দাবি জানান।

এই হত্যা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী টাঙ্গাইল অতিরিক্ত সরকারি কৌঁসুলি মনিরুল ইসলাম খান জানান, বাদী, চিকিৎসক, ম্যাজিস্ট্রেটসহ এই মামলার গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। তাদের জেরাও শেষ হয়েছে। এখন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাসহ দুই-একজনের সাক্ষ্য হলেই মামলাটি যুক্তিতর্কে যাবে। তারপর রায় হবে। ফারুক আহমেদের নবম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তার পরিবারের পক্ষ থেকে কলেজপাড়ার বাসায় কোরআন খানি ও দরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণের কর্মসূচি নেয়া হয়েছে। টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাম কিবরিয়া জানান, দলের পক্ষ থেকে সকালে দলীয় কার্যালয়ে কোরআন খানি, শোকযাত্রাসহ কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে শহীদ মিনারে সমাবেশের পর গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।